শনিবারের জার্নাল-৪

দোলনচাঁপা চক্রবর্তী

পাশের বাড়ির ছাতের কার্নিশে দুটো ঘুঘু। ওই বাড়িটার গায়ে রঙের প্রলেপ নেই – ইট বার করা। তার ওপর ঘুঘুর ছায়া মানায় না। কিন্তু ঘুঘু এত বোঝে না। ওরা উচ্চতা বোঝে। রোদ বাড়ছে – ওরা পিঠ পেতেছে রোদে। দূর থেকে দেখলে লাল পায়রা বলে ভুল হয়ে যায়। আমি অবশ্য দূর থেকে দেখছি না। ঘুঘুরাও আমাকে দেখছে। কিন্তু আমি যে দূর থেকে দেখছি না,বস্তুত তাদের খুবই কাছের মানুষ – এইটা তারা বুঝছে না। তুমি কারুর কাছের মানুষ,এইটা তুমি কাউকে কি ভাবে বুঝাবে ? এই বোঝাটা তো তার নিজস্ব ! সেইখানে তোমার তো অণু-পরমাণুও প্রবেশাধিকার নেই। পাখিদের উচ্চতায় তাকানোও দুর্বহ সময়ে সময়ে,ফলত অধিকারের ভাবনা আরও সীমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু অধিকার না থাকলেই ভাবনা থাকবেনা, এমন তো নয়। কেননা, স্মৃতি সময়ের সমস্ত পরিচিত ও প্রচলিত ধারণাকে অবজ্ঞা করে। সমস্ত খারাপ মূহুর্ত ভুলে গিয়ে নিজেকে নিরাপদে না রাখার একটি জন্মদায় আছে তার।

কেবলমাত্র, গত এক বছরের শীতকালের খণ্ড খণ্ড ঘটনাগুলো মনে পড়তে থাকলে শীতকালের প্রতি আমার সার্বিক মায়ামোহ কেটে যায়। তন্দ্রার মত যে আবছা নীল আমার আচ্ছন্নতাকে ঘিরে ধরেছিল নভেম্বরের প্রাক্কালে, তা সম্পূর্ণ মুছে গিয়ে খসখসে রুক্ষতা ফিরে আসে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয় টাটকা নতুন রক্তের ধারা। এই সময়টা যেন আমাদের জীবনে পচে যাওয়া ক্ষতের মতন, কেবলই বিষরক্ত ছড়ায়।

১) ৯ই ডিসেম্বর,২০১১: ঢাকুরিয়া, কলকাতার মাল্টিস্পেশালিটি আমরি হাসপাতালে ভোর চারটেয় আগুন। আগুনে পুড়ে ৯৩ জনের মৃত্যু। কর্তৃপক্ষ বাঁচানোর চেষ্টাই করেনি। শেষ মূহুর্তে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের কিছু রোগীকে উদ্ধার করে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে তাঁরা সেখানেই মারা যান।

২) ৭ই নভেম্বর,২০১২: ধর্মপুরী, তামিলনাড়ু – দলিত ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের খবরে মেয়েটির বাবা আত্মহত্যা করলে, নাথাম কলোনি সহ মোট তিনটি কলোনিতে অন্ত্যজদের বস্তি আক্রমণ করল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। ২০০টি বাড়ি ভস্মীভূত।

৩) ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১২: দিল্লী – চলন্ত বাসে ২৩ বছরের মেডিক্যাল ছাত্রীকে ৫ জনে মিলে ধর্ষণ; তাকে ও তার প্রেমিককে পিটিয়ে চলন্ত বাস থেকে রাজপথে ছুঁড়ে ফেলা হল।

৪) ১৯শে ডিসেম্বর,২০১২: কর্ণাটকে আট বছরের এবং বিহারে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ।

অনেক ঘটনা বাদ পড়ল তালিকা থেকে। বাদ পড়ারই তো কথা। আমি তো তালিকা তৈরি করতে বসিনি। কেবল কয়েকটা ক্ষতের উদাহরণ, যা এখনও শুকোয় নি।

দিল্লিতে ধর্ষণের এই ঘটনাটা যেন ঝাঁকি মেরে ঝুড়ির নিচের দাগ ধরে যাওয়া অথবা পচা আলু-বেগুন তুলে আনার মত করে পুরনো অপমানগুলোর ওপর থেকে আস্তরণ সরিয়ে দিল। অথবা যেমন করে কুলোয় চেলে ডাল থেকে কাঁকর সরায়; তেমন ভাবে সমস্ত ক্ষোভ উগরে আসতে চাইছে গলা দিয়ে। সারা বছরে যত মানুষ মরেছে, যত ঘরবাড়িতে আগুন লেগেছে, যত মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে, যত যন্ত্রণা, যত অপমান ছুঁড়ে দিয়েছে মানুষ একে অন্যের গায়ে, সেইটুকুই ‘মানবিকতা’ শব্দটাকে শব্দকোষ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। দিল্লিতে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সামান্য একটা আইন প্রণয়ন বা পরিবর্তন করে এই বিক্ষোভকে ঠেকানো সম্ভব নয়। এর শিকড় আরও অনেক গভীরে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে ২৩ বছরের ওই মেয়ের শরীর থেকে এক লিটার মত রক্ত বেরিয়ে গেছে,এবং এখনো তার অন্ত্রে রক্ত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঘটনাটি এত নৃশংস যে ডাক্তাররাও স্বীকার করেছেন যে কোন ধর্ষিতার শরীরে এত ভয়াবহ নৃশংসতার চিহ্ন তারা আগে দেখেন নি। ঘটনাটির প্রতি সম্পূর্ণ গুরুত্ব রেখেও ভাবতে বাধ্য হলাম যে, কি ভীষণ গুরুত্বহীন তাদের এই বক্তব্য। রাজধানীর এই চিকিৎসকেরা– কতখানি দেখেছেন ভারতের আদত জীবন? ভারতবর্ষের ধর্ষণ-কেন্দ্র হল দুর্গ-ছত্তিসগড়। সেখানে ধর্ষণের মত ঘটনা মেয়েদের জীবনযাপনের প্রচ্ছন্ন অঙ্গ এবং এসব নিয়ে তারা বা তাদের পরিজনেরা পুলিশ, হাসপাতাল, মিডিয়া– কোথাওই যাওয়ার সময় সুযোগ পায়না। এই সব সামাজিক সুবিধা থেকে তারা সাধারণ ভাবেই বঞ্চিত এবং তাদের হয়ে বলারও কেউ নেই।

ছত্তিসগড় অনেক দূরে। অতদূর নাই গেলাম। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অনুযায়ী, আমার সাধের বাংলায়, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ধর্ষণ, অপহরণ, পণের জন্য অত্যাচার, সম্মানহানি, যৌন হয়রানি এবং নারী পাচার। গত এক বছরে শুধু এ রাজ্যেই ২৯,১৩৩টি মামলা নথিভুক্ত রয়েছে,এবং সারা দেশে ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত রয়েছে ৪০,০০০। ১.২২ বিলিয়ন মানুষের দেশে নথিভুক্ত মামলা মাত্র ৪০,০০০ যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। বিচারের আশায় বসে থাকা মানুষের মধ্যে অনেকে আছেন যারা সাত থেকে দশ বছরের বাচ্চাদের বাবা-মা। সেইসব বাচ্চা, যারা ধর্ষণের শিকার। কোন বিচারপতির এজলাসে এর বিচার হওয়া সম্ভব ?

ধর্ষণ প্রমাণ হলে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আইন প্রণয়ন করার কথা ভাবছে পার্লামেন্ট। রাষ্ট্রের হাতে যে সার্বভৌম চূড়ান্ত ক্ষমতা তুলে দিচ্ছি আমরা, রাষ্ট্র যদি তার অপব্যবহার করে, কে ঠেকাবে? দুর্নীতিবাজ প্রশাসন যদি দোষীর বদলে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসি দিতে থাকে, কি করব তখন? দ্বিতীয়ত, কত মানুষকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব? একটা সময় আমাদের মনে হতে থাকবে যে ফাঁসিও যথেষ্ট নয়।

কাসভকে ফাঁসি দেয়া হল– একজন মানুষ, যার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সে বস্তুত নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার। তাকে পালটা খুন করার জন্য একটি বিশাল রাষ্ট্রের এত বছরের এত আয়োজন যে আমার মত সাধারণ মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিতে নিদারুণ মূর্খতা বলে মনে হয়। কাসভের মৃত্যু-সংবাদে, টিভির পর্দায় ২৬-১১-তে মুম্বাই হামলার ভিকটিমদের পরিবারের মানুষের হাসিমুখ আমাকে আরও বিপাকে ফেলে। এত বছর ধরে তারা এইভাবে একজন মানুষের মৃত্যু-সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে নিজেদের জীবনকে গড়িয়ে নিয়ে গেল? এ কি রকম অসহায়, প্রতিশোধ প্রবণ মানসিকতা যা আসলে এটাই বোঝায় যে আমার বেঁচে থাকা, আমার এগিয়ে চলার ওপর আমার নয়– সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অন্য মানুষের? কাসভকে ফাঁসি দিয়ে আমাদের রাষ্ট্র কি এই অসহায়তাকেই আরও তুলে ধরলনা ? আমাদের তো ভাবা উচিত, রাষ্ট্রের কি স্বার্থ এতে ? নিজের ব্যতীত রাষ্ট্র কবে অন্য কারোর স্বার্থ দেখেছে ?

আমি গান্ধীবাদী নই। অহিংসাকে ভালোবেসে বা সমর্থন করে আমি ফাঁসির বিরোধিতা করার কথা ভাবিনা। শুধু একটা কারণেই বিরোধিতা করি। আমি নিজের দেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে নিজের শরীরকে সেই যুদ্ধের ধারালো অস্ত্রে পরিণত করতে চাইনা। আমার বোন, দিদি, বান্ধবী, আমার সন্তান– সবাই একটা অসম যুদ্ধে নিজেদের সামিল করে নিজের মাতৃভূমিকে জতুগৃহ করে ফেলুক– চাইনা।

অন্য অপশন কি আছে, তাও জানিনা। ‘মৌন’মোহন সিং টুইট করেছেন, ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে তার অপরাধের বিশদ বিবরণ সহ ছবি সারা দেশে লাগিয়ে দেয়া। এই বিশাল খরচ কে বইবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনারা আমাদের রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দিতে পারছেন না, উলটে আমরাই আপনাদের আইন বিভাগের কাজে ভর্তুকি দেব– অসাধারণ ইকনমিক প্রস্তাব আপনার!

অপহরণ, পণের জন্য অত্যাচার, সম্মানহানি, যৌন হয়রানি এবং নারী পাচারের কোনটা প্রমাণ হলে বড়জোর সশ্রম কারাদণ্ড। আহ! ‘শ্রম’-এর মত লঘু শব্দ জীবনে শুনিনি বলে মনে হয়।

আসলে, আমরা তো মানুষ নই। আমরা হয় নারী নয় পুরুষ। আমরা হয় হিন্দু, নয় মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান– সকলে মিলে আমরা উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ অথবা বর্ণহীন প্রজন্ম তৈরি করে চলেছি। বিপ্লব, যুদ্ধ, মাইনিং, রেডিয়েশন, দূষণ, ভূমিকম্প, সুনামি, প্রলয়– কোন কিছুই আমাদের অস্তিত্বের এই অহংকারকে ভাঙতে পারেনি। ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছি আমরা– একত্র যাপন নয়, ধরে আছি সমান্তরাল যাপনের কৃষ্টি। এই তো আমার দেশ।

 

MY COUNTRY

My country has yet another name
I have yet another kinship
Where ever there is even one hamlet
Half hungry
Half asleep
Wherever drudgery
Counts the stars
To comfort its aching limbs
Away from my country
Wherever it is
It is my own country, my brotherhood.
Whenever I pick up my sitar
To play a tune for this fraternity
Hordes flock towards me from across the seas.
But who’s there to welcome them?
Who are they that shed rivers of blood
Across these boundaries every year?
My country has yet another name
I have yet another kinship.

‘সেতলুজ্‌ দি হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের অনুবাদে লাল সিং দিল-এর কবিতা। অনুবাদক, কবির বন্ধু অমরজিৎ চন্দন্‌।

 

THE UNEMPLOYED

You have learnt to hide the worn-out edges of your shirt sleeves
And the skill to walk in beggarly shoes
You have trained your tongue to say sweet things
Learnt to smile through eyes hiding corpses under the eyelids …

But your dress and skin are transparent like glass
And I can see your blood coursing through your body
Because we have met so often
In third class compartments
At the tea dhabas and kabaadi shops
I too have gathered together so often
My papers the babu at the employment exchange
Tossed out through the barred window.

গুরমুখী ভাষার প্রধান কবি দিল, মার্ক্সিস্ট কবি দিল  তার যৌবনে বিশ্বাস করতেন যে জীবনে এমন কোন পরিস্থিতিই সৃষ্টি হতে পারে না যা তার জীবন থেকে আশা এবং উদ্দীপনাকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। নকশাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে জেলে থাকার সময়, উচ্চবর্ণের পুলিশ অফিসারের প্রবল অত্যাচারেও তিনি মুখ খোলেন নি। সহকর্মীদের নাম বলেন নি। নিজের গ্রামের নাম পর্যন্ত তাকে দিয়ে উচ্চারণ করাতে পারেনি সেই অফিসার। প্রায়শই ‘চামার’ শব্দে অভিহিত করত সে দিল-কে। লাল সিং ছিলেন রামদাসিয়া চামার গোত্রের একজন যিনি নিজের জাতের মধ্যে প্রথম, মাধ্যমিক পাশ করেন ও পরবর্তীকালে কলেজে ভর্তি হন।

স্কুল-শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ নেয়ার সময়েই নক্শালবাড়ি আন্দোলনের তুফান লাল সিং দিল-এর যাপনকে প্রবলভাবে বিদ্ধ করে। জাতপাত মুক্ত সমাজের স্বপ্ন নিয়ে এই আন্দোলনে জড়িয়ে যাওয়ার পরে তিনি অনুধাবন করেন যে তার অতি-বাম সহকর্মীরাই জাতপাতের সংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে, নকশাল আন্দোলন ভেঙে পড়ার পরে তিনি ও তার দলিত সহকর্মীরাই পুলিশের সামগ্রিক নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু এই নির্যাতনও তার মনোবলকে ভেঙে দেয়নি। শব্দেরও নিজস্ব গরিমা আছে। যে শব্দ উচ্চবর্ণের মানুষের কাছে, ভদ্রসমাজের কাছে গালাগালি, অশ্লীল, অশ্রাব্য– তা নিচু বর্ণের একজন মানুষের কাছে, নিম্নবিত্ত ও স্টেশনে রেলের ঝুপড়িতে বা পতিতালয়ের মানুষের কাছে কঠিন বাস্তব। বাস্তব বর্ণময় না হতে পারে। কিন্তু তাই বলে সে নিজের ঘরে অচ্ছুত নয়। এ সত্ত্বেও জাতপাতের সমাজে তিনি আশ্রয়হীনতা বিলক্ষণই অনুভব করতেন; এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন।

এক দশক প্রায় লেগে গেল বুঝতে যে, হিন্দুদের যাপন সংস্কৃতি উপমহাদেশের কৃষ্টিতে এমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত যে শিখ, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদেরও তা প্রভাবিত করে; জাতপাতের সংকীর্ণতা থেকে তারাও পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি। পাঞ্জাব সরকারের ভাষা দপ্তর কোন পেনশনের ব্যবস্থা তার জন্য করেনি। সারা জীবন অত্যন্ত অর্থকষ্টে কাটিয়েছেন। বইয়ের রয়্যালটি বাবদ মাসে পাঁচশ টাকা মাত্র পেতেন একজন প্রকাশকের থেকে। হাইওয়ের ধারে চায়ের দোকানও চালিয়েছেন। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হতাশ দিল্‌ বলেন, খালি পেটে কাব্য হয়না।

সাদাত হাসান মান্টোর জন্মস্থান সামরালায়, কবরস্থানের অভাবে, এই ধার্মিক মানুষটিকে কবর দেয়া সম্ভব হয়নি। পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে তার ভাইয়েরা তাকে দাহ করেন। আজীবন হতাশাগ্রস্ত না হওয়ার,ভেঙে না পড়ার স্বপ্ন দেখা নকশাল কবি লাল সিং দিল,জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লিখে গেলেন–

For us trees do not bear fruits
For us flowers do not bloom
For us there is no Spring
For us there is no Revolution … (For us)

ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাতলা মোমের ফালির মত বয়ে যাচ্ছে নদী। নদীর ওপরে ছোট্ট একটা সেতু। এক বৃদ্ধ বসে আছেন। পায়ের কাছে ভেড়ার পাল। সূর্যরঙের ছিটেফোঁটা নরম পশম উড়ে পড়ছে জলে, শুষে নিচ্ছে অপস্রিয়মাণ উষ্ণতাকে। তারপর আবার ছড়িয়ে পড়ছে বৃদ্ধের পশমি জ্যাকেটে, অপরিসীম স্পর্শকাতরতায়। বৃদ্ধ মানুষটি এ’সব কিছুই অনুভব করছেন না। বোমার আঘাতে তার পা দু’টি উড়ে গেছে। তার জন্য, তার পরিপার্শ্ব বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে ওভাবেই স্থির, সংবৃত। তিনি স্বয়ং জীবন। অনন্ত ঋতুময়। তার বোতামের রঙবদলের সঙ্গে সঙ্গেই লোভ, ঘৃণা, দুঃখ, ভয়, রক্ত, আলোড়ন, যুদ্ধ, খরা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হিমবাহ, অগ্ন্যুৎপাত। আমরা অক্ষের দূরত্ব থেকে তার বোতামকে সূর্য ভেবে উপাসনা করি। অনেক প্রজন্ম ধরে আমাদের অন্তর্বার্তায় এই ভুলের প্রলেপ ক্রমশ কঠিন হতে হতে ছেয়ে ফেলেছে সমগ্র সংসারকে। আমাদের ভুলও ভাঙছেনা, তিনিও উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। বোতামের ঘূর্ণনে তুমুল প্রভাবিত আমরা ক্রমশ নিজেদের অস্তিত্বের সরলতা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। শুধু থেকে যাচ্ছে কথাগুলো, শব্দগুলো– শিমূল তুলোর মত, আমাদের অনাগত কবরের ওপর। জন্মেরও আগে লেখা হয়ে চলেছে আমাদের স্মৃতিকাতর এপিটাফ।

The word has been spoken
Much before us
And even after us
You may cut off our tongues
If you can
But the word has been broadcast

– (The Word / Lal Singh Dil)

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top