তিনটি কবিতা

ফকির ইলিয়াস

 

পরিচিত জলধ্বনি

 

রত্নের রহস্য নিয়ে থাকো, আর রাখো বিছিয়ে আঁচল
এরকম এই ঘাটে কতোবার ছুঁয়েছি যে জল
তার হিসেব মনে আছে আমার, কৌশলে
ধারণ করে পরিচিত জলধ্বনি রঙ, পিছু ফেলে
সেইসব শকুনের নগ্ন নখর
পরিখা পেরিয়ে এসে আমিও, সাজিয়েছি উনুন প্রহর।

রূপের আয়না ধরে রাখো, আমি দেখি মুখ— সান্ধ্য সুরের
যেভাবে প্রণতি গাই সূর্যঘেরা নমিত দূরের
কিংবা কাছের মাটির কাছে রেখে যাই প্রিয় অভিপ্রায়
এ গাঁয়ে ঝড়ের পাখি গা ঝেড়ে যেভাবে দাঁড়ায়।

 

হারানো বোতাম

 

এখানে আমরা খুঁজতে এসেছি ছ’টি পতাকার দাগ। এক নবীন
শিকারী ফেলে গিয়েছিল যে দূরবীন তার কালোচূর্ণ আর একটি
শিশুর হারিয়ে যাওয়া বোতাম, লাল রঙের একটি লাটিম। যা খুব
ঘুরঘুর করে খুঁড়তো এই চত্বরের মাটি। ঘাসের ঘর্মাক্ত সিথান।

আমরা আরো খুঁজতে এসেছি আঠারো শতকের একটি বিকেলে
এই বেঞ্চে বসে কাগজ পড়েছিলেন যে বৃদ্ধটি, তার নখচিত্র।
দূর নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে যে চোখজোড়া নির্ণয় করতো সুষম
আকাশের নীল, তার পরিধিও এঁকে যেতে এসেছি আমরা। বিচূর্ণ
বৈভব নিয়ে হাঁটছি খালি পায়ে পশ্চিমের প্রত্যন্ত পার্কে, ছায়া সংসারে…

 

ঝড়ের চেকপোস্ট

 

হাঁ যাবেই তো সবগুলো সাম্পান সাজিয়ে। ভূমধ্যসাগরের চোখে রেখে
চোখ। কিংবদন্তি ভোরের বদান্যতা ছুঁয়ে এই আগলের ছায়া। যাবে রূপ
তপস্যারত রাতের নগরে। যারা আকাশ শিয়রে রেখে আরামে ঘুমায়, আর
স্বপ্ন দ্যাখে নির্মাণ করার বিশুদ্ধ মেঘমন্দির। ঝড়ের চেকপোস্ট। বিজলীর
প্রশাখা। বিরহের বিনম্র বিপণন। তারাই যাবে, যারা প্রতিভার পতংগ খুঁজে
হাত রেখেছে এইসব নুড়ির পরাণে। শিখে মানুষনামতা, দেবতার ভ্রূণচিত্রণে।

 

Facebook Comments

4 Comments

  1. Shakib Chowdhury

    বেশ লাগল।

    রূপের আয়না ধরে রাখো, আমি দেখি মুখ— সান্ধ্য সুরের
    **************************************************
    আমরা আরো খুঁজতে এসেছি আঠারো শতকের একটি বিকেলে
    এই বেঞ্চে বসে কাগজ পড়েছিলেন যে বৃদ্ধটি, তার নখচিত্র।
    ******************************************************
    ঝড়ের চেকপোস্ট। বিজলীর
    প্রশাখা। বিরহের বিনম্র বিপণন।
    ************************************************

    বাহ !

  2. Saif Mohseen

    তিনটি কবিতাই একই সূত্রের প্রকাশ।
    এই কবির কবিতায় একটি দূরগামী ধ্বনি
    লক্ষ্য করা যায়। খুব সাবলীল ভাবে কবি
    তার বুনন সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
    যা খুব কাছে টানে পাঠককে।

    – সাঈফ মহসিন,সুইডেন

  3. Niloya Shraboni

    ফকির ইলিয়াসের কবিতায় মাটি ও মননের ঋজুতা
    বেশ ভাল্লাগে।

    ‘ঘাসের ঘর্মাক্ত সিথান’
    ‘সুষম আকাশের নীল’
    ‘ঝড়ের চেকপোস্ট’
    ‘মানুষনামতা’

    এমন কিছু শব্দাবলী কবির নিজস্বতা চিহ্নিত করেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top