মাসুম বিল্লাহ’র গল্প: পাপ ও প্রার্থনার গল্প

রৌদ্র-ছায়ার খেলা আকাশজুড়ে। চূড়ান্ত আয়োজন—ঝমঝমিয়ে এই নামল! মুহূর্তে ফকফকা রোদের নাচন—সকাল থেকে এই চলছে। জামালের মন-মেজাজও তিরিক্ষি হয়ে আছে, লম্বাটে মুখটা শুকিয়ে আরো লম্বা দেখাচ্ছে, গাল দুটো বসে গর্তের মতো হয়েছে, চোখের নিচে কালচে দাগ; দাঁড়ি-গোফে মুখভর্তি, ব্লেড পড়েনি অনেকদিন—জামাল যে সুখে নেই তা বুঝতে কষ্ট হয় না। সবসময় তার চোখে-মুখে বুদ্ধির লক্ষণ প্রকাশ পায় বটে, তবে এখন চোখে অস্বচ্ছ সঙ্কোচন ভাব; তাই মনটা তার আশ্রয়হীন নিরালম্ব হয়ে আছে। দোকানে বেচাকেনা নেই কিছু দিন ধরে। অফ সিজন। সকালবেলা দোকান খোলার মোটেও ইচ্ছে ছিল না—বউ এক প্রকার ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে। ইদানিং দোকানে উদাস হয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে—’কাস্টমার সব মরছেনি’! আজ অমুক নেতা মরেছে—দোকান বন্ধ, শোক করো; আরেকদিন মুরগীঅলার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে মাছঅলা মকবুল—প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাজার কমিটি; দোকান বন্ধ! এরপর প্রায়দিন বাজারে ঝটিকা অভিযানে আয়কর বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এসে হানা দেয়, টপাটপ দোকানের ঝাঁপ নেমে আসে। দেখে মনে হবে বিরাণভূমি। শোক নেমেছে বাজারের রাস্তায়! এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে রোদ-বৃষ্টি, বৃষ্টির নামার কোনো টাইম-টেবিল নেই। ঘর ছেড়ে বাইরে বের হবে কি হবে না—মানুষের হিশেবে গড়বর হয়ে যায়।
জামাল চাপা স্বরে একচোট অনুযোগ করে—’আকাশের যে তামশা শুরু হইছে, ব্যবসাপাতির গোয়া মারা সারা’!
সকাল থেকে দোকানে ‘বউনি’ হয়নি। ছেলেটা না-ক্ষেপে কী করবে!
জামালের চাওয়া—রোগ-শোকমুক্ত আকাশ, যেন বৃষ্টি না-নামে, যেন চড়া রোদও না-ওঠে।
সকালটা কেটে গেল। মরা-সূর্য এখন মাথার উপর। ঈশ্বর জামালের প্রার্থনা মঞ্জুর করে দিল বুঝি—মেঘ সরে গেল, সহনীয় রোদে এল কালো পিচ-গলার নোংরা সড়কের বুকে। এ সময় হেলেদুলে একজন দোকানে এল, জামালের পরিচিত কাস্টমার; জামাল রসিকতা করল—’হারাদিন ঘরের মইধ্যে কম্বলের নিচে চিতাইয়া থাকলে আমগো ব্যবসাপাতি তো চাঙ্গে উঠবো রে রবিউল্লা’!
রবিউল নামের লোকটিও স্বহাস্যে বলল, হের লাইগ্গাই ম্যানেজার ছার মোরে পাঠাইছে —এই লও মেমোরি কার্ড, ভইরা দিতে কইছে!
ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হলো রবিউল, জামাল হাত টেনে বসায়—’কই যাও, বইসো, গ্যালে তো গ্যালাই…’
রবিউল সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে, বওনের টাইম না বাই, ম্যালা কাম পইড়া রইছে…
—খালি ‘ম্যানেজার ছার’ নেয়, তুমি কবে নিবা? লাগলে একটা টার্চ মোবাইল বাকিতে লও, কিস্তিতে শোধ দিবা।
—মুবাইলে নেংটা মাইয়া মাইনষের গতর দেইখ্যা সুখ নাই…ম্যানেজার যে কী সুখ পায় তা হেয়-ই জানে! রবিউল চোখ-মুখে বিকৃত করে ‘ছ্যা-ছ্যা’ করে ওঠে, তারপর দ্রুত দোকান থেকে বের হয়ে আসে, আবার ফিরেও আসে—ভুইল্ল্যা গেছিলাম, ‘বড় হুজুরের মেমোরি দিতে, এই নেও, নতুন গজল, ওয়াজ দিতে কইছে…, জামাল ভাই লোড দিয়া রাইখো, বিয়ালে নিয়া যামু…গেলাম…

রবিউলের চলে যাওয়া দেখতে দেখলে অনুচ্চারিত স্বরে জামাল বলে—যা যা, তাড়াতাড়ি যা, গিয়া জয়তির লগে হুইয়া থাক; ব্যাটা সাধু,
তুই তো ওই কাজের বেটি জয়তিরে চাঞ্জ-মতো দিনে-রাইতে পিষতাছোস? তুই আর ব্যাডাগো কষ্ট বুঝবি কেমনে!… তয় কিছু মানুষ আছে যাগো ঘরে বউ থাকতেও মোবাইলে ভিডিও ছাড়া একদিনও চলতে পারে না…এগো লাইগ্গাই তো মোর তিনবেলা খাওয়োন চলে… মোর আর এই মেমোরি লোডের দোকান চালাইতে মন চায় না, ঘরে মাইয়াডা বড় হইতাছে…মোর খালি শরম লাগে…

জামালের চিন্তায় বাঁধা পড়ে, একটা কিশোর ছেলে এসে বলল, নতুন কালেকশন আইছে?
জামাল বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে, হ, আইছে মনু, ইংলিশ না বাংলা দিমু?
কিশোর নিচুগলায় বলে, দুইডা-ই ফুললোড দিয়া দেন।
জামাল মাথা নাড়ে, তারপর কাজে লেগে পড়ে। তার মোটেও ইচ্ছে করে না এরকম ছোট ছোট ছেলেপুলেকে এসব দিতে, কিন্তু তার দোকান এখান থেকে উঠে গেলেও কোনো লাভ হবে না—বাজারে আরো দশটা মোবাইলের মেমোরিকার্ডের দোকান আছে! জামাল স্বপ্ন বুঁনে শহরে একটা বড় দোকান দেবে, মেমোরি লোডের ব্যবসাটা সে ছেড়ে দেবে, কিন্তু অতো টাকা তার নেই, দোকানে যা ইনকাম তাতে তিনবেলা সংসার ঠিকমতো চলে না। একটা উপায় অবশ্য আছে এবং প্রার্থনা করে—’পথে যদি একটা টাকার ব্যাগ কুড়াইয়া পাইতাম’!

২.
জয়তি এখনো রান্না করতে আসেনি। বাজার এনে বসে আছে রবিউল। ‘বরফ দেওয়া মাছ’ এই ছেমড়ি কহন কাটবো আর কহন রানবো; মোহনচাঁদ বাবু দুপুরে ঠিকসময়ে ভাত খাইতে না-পারলে মোর চাহরি এইফির ছুইট্টা যাইবো!—কঞ্চির একটা টুকরো দিয়ে মাটির বুকে আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে জয়তির উপর রাগের পাহাড় জমে রবিউলের মনে। ঠিক করে আজ আর মিষ্টি কথায় সে গলবে না। মুখের উপর দুই-পাঁচটা কথা শুনিয়ে দেবে, তাছাড়া মেয়েলোককে বেশি লাই দিতে নাই, একদম মাথায় চড়ে ছড়ি ঘুরাতে থাকে। অবশ্য এমন ঘটনা আজ নতুন নয়, এর আগে অনেকবার ঘটেছে, কিন্তু প্রতিবার জয়তি এত সুন্দর করে ওর পান খাওয়া লাল ঠোঁটজোড়া এমন করে হেসে ওঠে—রবিউল ও-হাসিতেই নুন হয়ে যায়, শেষে পানি হয়ে জয়তির আঁচলের তলে গিয়ে শুকোয়। তারপর জয়তির সঙ্গে রান্নাঘরে বসে থাকে, জয়তির নিষেধ শোনে না, সে নানান বাহনায় থেকে যায়। আর চোরা চোখে পেছন থেকে জয়তির ঘামেভেজা আধখোলা পিঠ দেখার সময় চোখ থেকে লুব্ধতা ঝরে পড়ে!

ফাঁকে ফাঁকে জয়তির রান্নার কাজে হাত লাগায়, তরকারি কেটে দেয়, মাছে নুন মেশায়; কখনো পেঁয়াজ কেটে দেয়, তারপর চোখের জল বা-হাতে মুছতে মুছতে বলে, ‘পিঁয়াইজ কাটোন অত সোজা না’! শুনে জয়তি হেসে কুটিকুটি হয়, বলে, ‘কাটেন, ভালা কইরা কাটেন; মোর বিয়ার সব পিয়াইজ আপনেরে দিয়া কাটামুনে…’!
জয়তি মুখ টিপে হাসে, রবিউল অভিমান করে, দেখে মনে হয় কষ্টে তার দুই চোখ ফেটে অশ্রুর বান ঢেকেছে, জয়তি আঁচলের খোট নিয়ে রবিউলের চোখ মুছে দেয়, রবিউল আবার গলে যায়, বলে, ‘তুই এইফির রাজি হইয়া যা, জয়তি’!

জয়তি শক্ত গলায় বলে ওঠে—তোর খালি বিয়া বিয়া, ক্যা মোরে তো তুই পাইছো, ক, পাইছো না? আবার বিয়ার হাউস ক্যান…তুই মুসলমান আর মুই হিন্দুর মাইয়া…এইডা তুই ভুইল্লা যাস ক্যা?

রবিউল ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, পাইছোস ওই একখান ছুঁতা…ধর্ম ধুইয়া মোরা পানি খামু নি…ল জয়তি, মোরা শহরে চইল্লা যাই, যাবি?
—না।
জয়তির মুখে প্রতিবার এই ‘না’ শুনে শুনে রবিউলের রাগ জমে, সে কঠিন কিছুর শপথ নেয়, কিন্তু কিছু উপায় বের করতে পারে না। কখনো ভাবে ম্যানেজার ‘মোহন বাবুর’ কাছে বলবে কি না—কিন্তু সাহস হয় না, পরে লোক জানাজানি হলে বিরাট কিছু ঘটে যেতে পারে। জয়তিকে সে হারাতে চায় না; তার চেয়ে বরং এই ভালো—চোখের সামনে ওকে দেখতে পাচ্ছে, ঘামেভেজা পিঠ, কখনো-সখনো বুকের আঁচল খসে পড়ে জয়তির, চুলার আগুনের লোভী আলো এসে জয়তির ধবধপে ফর্সা বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে! রবিউলও চোখ সরাতে ভুলে যায়, তার চোখ দুটি তখন ভয়ংকর লুব্ধক হয়ে ওঠে!

যখন জয়তিকে সে একা ঘরে নিজের করে পায় তখন চারপাশ তার মনের মতো থাকে না—ঘরে আলো জ্বালাতে পারে না, শব্দ করতে পারে না, দুটো ভালোবাসার কথা বলতে পারে না; জয়তির মুখটাও সে ভালো করে দেখতে পায় না…তার পিপাসা মেটে না, আর বিয়ে ছাড়া পিপাসা যে মিটবে না তা সে এতদিনে বুঝে গেছে, কিন্তু জয়তি…

মসজিদের মাইকে যোহরে আযান পড়ে, মোহন বাবু পাউরুটির কারখানা থেকে এখুনি এসে পড়বেন। ম্যানেজার মানুষ সময় মতো গা-গোসল দিয়ে ভাত খেতে না-পারলে মেজাজ দেখাবেন। রবিউল সোজা হয়, আজ তার কপালে কী আছে আল্লাহ-ই জানেন! তখনই জয়তিকে এসে সামনে দাঁড়ায়। জয়তির মুখটা থমথমে। রবিউল রাগ দেখাতে গিয়েও পারে না, চাপাস্বরে বলে, কী হইছে রে জয়তী?

—বাবায় আমার বিয়া ঠিক করছে! ম্যানেজার বাবুর রান্দোন-বাড়োনের লাইগা আর কেউ-রে ঠিক কইরো…
জয়তির কথা শেষ হয় না, তার গলা ধরে আছে, চোখে অশ্রু চিকচিক করছে; মুহূর্তেই মাটিতে গড়িয়ে পড়বে।
রবিউল মুখ খোলার আগে জয়তি ছুটে চলে যায়, সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রবিউল মনে মনে প্রার্থনায় ডুব দেয়—আল্লা জয়তির বিয়াডা য্যান ভাইঙ্গা যায়, বিয়াডা য্যান ভাইঙ্গা যায়’!

৩.
বড় মসজিদের ‘বড় হুজুর’ আজ প্রচণ্ড ব্যস্ত, ঢাকা থেকে একদল মুসল্লি মেহমান এসেছে—দ্বীনের দাওয়াতে; সবার যত্নআত্তির দিকে বাড়তি নজর রাখছেন—যাতে তারা কোনোভাবে অসন্তুষ্ট না-হন। কাফেলার একজন ফার্মের মুগরি খান না, দেশিমুরগির ব্যবস্থা করেছেন তিনি। একদিনের সফর। এশার নামাজ পড়ে তালিম ও বয়ান। তারপর সবাই বিদায় নেবে, কিন্তু বড় হুজুর অনেক চেষ্টা করেছিলেন রাতটাও মেহমানদারী করতে। সিডিউল জটিলতার কারণে তা হয়নি।

সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। আজ আগেভাগে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেন। ঘুমানোর আগে বড় হুজুর বিভিন্ন বই পড়েন, বিশেষ করে কোরআন-হাদিসের বই, কোরআনের তাফসির। তিনি সবাইকে বলেন—’কোরআন খালি আরবীতে পড়লেই হবে না, মাতৃভাষায়ও পড়তে হবে। আরবদেশে গিয়ে আপনি বাংলায় বাতচিত করলে কেউ আপনার কথা বুঝবে না, আর আপনিও আরবদের কথা বুঝবেন না! বোঝা গেল?’ প্রতিবার কথাটা বলেই তিনি হো হো করে হেসে ওঠেন। সরল হাসি। হুজুরকে তখন আরো সুন্দর দেখায়।
‘বাংলা কোরআন’ পড়ার কথাটা তিনি এতিমখানার ছাত্রদের সবসময় বলেন—’বাবারা, তোমরা হলে এক-একটা হীরার টুকরো, একদিন তোমরা সবাই ৩০পারা কোরআনের হাফেজ হবে, এটা রাব্বুল আলামীনের খাস রহমত ছাড়া তো সম্ভব হয় না। কিন্তু বাবারা, পাশাপাশি তোমরা কোরআনের বাংলাটাও পড়বা, বাংলায় না-পড়লে তো কোরআনে কি বলা হয়েছে তার কিছুই বুঝবে না, তাই না?’

বড় হুজুরের চোখে ঘুম নামে। তিনি জোর করে চোখের পাতা খোলা রাখেন। ঘড়ির কাটা রাত ১টার ঘর পেরিয়ে গেছে। আজ সারাদিনে একবারও স্ত্রীকে ফোন দেওয়ার ফুসরত পাননি। তিনি স্ত্রীর নম্বরে ডায়াল করেন, তিনি ভাবেন—এত রাতে ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো সহি কাজ নয়, গুনাহের কাজ।’ মন মানল না, তার এখন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। মাস হয়ে এল বাড়ি থেকে এসেছেন। চাইলেও হুটহাট বাড়ি যাওয়া যায় না। দ্বিতীয়বার রিং হতেই ওপাশ থেকে স্ত্রীর ঘুমজড়ানো কণ্ঠ শুনতে পেলেন—আসসালামু আলাইকুম, এত রাইতে আপনার ফোন!… আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম, বুকটা এখনো ধকধক করছে…টের পাচ্ছেন?
—না, বিবি, আল্লাহর রহমতে সহিসালামতে আছি, অপরাধ নিও না—তোমার ঘুম ভাঙালাম।
—ছিঃ এটা আপনি কী বললেন! দোহাই এমন করে বলবেন না।
—বিবি, অনেক দিন তোমাকে কাছে পাই না, মনটা বড়ই পেরেশানিতে আছে… শরীরের কথা তুমি বুঝে নাও বিবি…
—আপনি আমার কথা ভাবলেন না একবারও?
—বুঝি বিবি, সবই বুঝি…আর কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরো…আল্লাহর ইচ্ছায় সব পেরেশানি দূর হয়ে যাবে।

স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথন চলল আরো কিছুক্ষণ। ঘরোয়া সে আলাপে আমাদের প্রবেশ নিষেধ, ওটা অনধিকারচর্চা। কথার ফাঁকে বড় হুজুরের রবিউলের কথা মনে পড়ল, তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন, পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে কাগজে মোড়ানো মেমোরিকার্ডটি বের করেন। তারপর স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মোবাইলের সংযোগ কেটে দিলেন। রুমের আলো জ্বালিয়ে বিছানায় এলেন। মেমোরিকার্ডটি মোবাইলে ঢুকিয়ে রুমের আলো নিভিয়ে দেন আবার।

সন্ধ্যার আগেই রবিউল মেমোরিকার্ড দিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ভুলে গিয়েছিলেন। ভিডিও ফোল্ডার চেক করে নাক-মুখ বিকৃত করলেন—’নতুন কিছুই নেই, ব্যাটারা সব ফাঁকিবাজ, ফাঁকিবাজি ব্যবসা শুরু করেছে! হুজুরের কণ্ঠে হতাশা ঝরে।

মোবাইল ফোনের ডিসপ্লেতে সানি লিয়নের একটা ছবি ভেসে উঠল। তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললেন—’জাহান্নামানের আগুন থেকে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না নারী, ওরে বদ নারী!

তবুও একা এবং নিঃসঙ্গতার দিনগুলোতে বড় হুজুর এই নারীর কাছেই আশ্রয় নেন, সংসার পাতেন। দু দন্ড শান্তি খুঁজে পান। তিনি চারপাশের সব খবর রাখেন—তার এতিমখানার ছাত্রদের মোবাইলের সব খবরও রাখেন, প্রথম প্রথম নিষেধ করেছেন, তবু কাজ হয়নি, এখন আর কিছু বলেন না। ছেলেগুলো এক-একটা খাঁটি বান্দা, আর কিছু দিন পরই সবাই ‘হাফেজ’ হয়ে সমাজ আলোকিত করবে। তিনি ওদের জন্য প্রার্থনা করেন সবসময়—হে মহান সৃষ্টিকর্তা, তুমি সব জানো, সবই দেখো, অবুঝ ছোট ছোট বাচ্চাগুলো সমস্ত গুনাহ তুমি কবুল করে নাও, ওরা বয়সের দোষে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে হুনাহ করতেছে…’!

সানি ম্যাডামের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সংসারযাপন শেষে তিনি বিছানা ছাড়লেন। তারপর নিজেকে পরিপাটি করে, সুগন্ধি মেখে রাতের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন। আজ প্রথমবারের মতো তিনি হাঁটু ভেঙে পড়ে গেলেন। বড় হুজুর হু হু করে কেঁদে উঠলেন।

 

মাসুম বিল্লাহ

‘গল্প’ লিখতেই ভালোবাসেন—বিশেষ করে ছোটগল্প। জন্মস্থান খুলনাতে, শেষমেশ সেখানেই থিতু হয়েছেন, প্রধান কাজ লেখালেখি। প্রথম লেখা ২০০৯ এর জুলাইয়ের শেষ দিকে, সে-ই শুরু। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন।”ম” নামে একটা লিটলম্যাগ অনিয়মিত বের করেন। প্রথম আলো বন্ধুসভার “লেখার ইশকুল” পরিচালনা ও সম্পাদনা করেছেন, পাশাপাশি বন্ধুসভার জাতীয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫-২০১৬তে।

এ-পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি- প্রথম বই (ফিচারধর্মী)’মেঘের শাড়ি পরা মেয়ে’ (২০১৩); কিশোর উপন্যাস “ভূতু” (২০১৫); উপন্যাস “অবুঝ সেফটিপিন” (২০১৬); গল্পগ্রন্থ “প্রেম অথবা ঘুমের গল্প” (২০১৭)
সর্বশেষ দুটি গল্পের বই “পিঙ্গল প্রেম” এবং কিশোর গল্পগ্রন্থ “ডানা ভাঙা সাইকেল” প্রকাশিত হয়েছে ২০২০তে।

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top