আমার পরী, রাজপুত্র তোমার

মঈন চৌধুরী

ফেসবুকে আমার ১৮ বছর বয়সে লেখা একটি কবিতা পোস্ট করেছিলাম। কবিতাটির শিরোনাম ছিল–“এ কেমন ভালবাশা ?” প্রমা নামের একটি মেয়ের উল্লেখ ছিল কবিতার শেষ স্তবকে। শেষ স্তবকটি ছিল:

প্রমা, তুমি কেমন ভালবাস?
অন্তরে বাস ফুলের সুবাস প্রকাশ করনিতো
জীবন আঁকার তুলি ধরে রঙ রেখেছ অন্ধকারে
মনের ময়ূর বন্ধ ঘরে ছন্দ তুলনিতো।
প্রমা, তুমি কেমন ভালবাস?

কবিতাটি পড়ে আমার এক বন্ধু, মিতা হোসেন, আমাকে প্রশ্ন করলেন–“প্রমা এখন কই ?” প্রশ্নটি যৌক্তিক ছিল, আর আমিও আমার মনস্তাত্ত্বিক যুক্তি নিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম–“প্রমা এখন আমার মনে, তবে প্রমার পর লাবন্য, নন্দিনী, বনলতা, সুরঞ্জনা, নীরা, ডেসডিমোনা নামের আরও অনেকেই আমার মনে এসেছে। এমন ঘটনা কেন ঘটে, তার একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আমি আমার লেখা “পরী ও রাজপুত্র প্রকল্প” শিরোনামের প্রবন্ধে দিয়েছি। পুরো প্রবন্ধ এখানে তুলে দেয়া যাবে না, তাই আমি আমার মনস্তত্ত্বের কিছু ব্যাখ্যা পাঠক-পাঠিকার কাছে তুলে ধরতে চাই। আমার মনে হয় আমার মনের সাথে সব পাঠক পাঠিকার মনও একই তত্ত্ব মেনে চলে।

আমার জন্মের পর আমার কোন প্রমা, লাবণ্য, নন্দিনী, বনলতা কিংবা অন্য কেউ ছিলনা। তবে আমার মা ছিলেন আমার প্রথম প্রেমিকা, এতে কোন সন্দেহ নেই। মায়ের শরীরের গন্ধ ও ওম, স্তনের স্পর্শ আর ঠোটের চুমু আমাকে আমার বৈপরীত্য সম্পর্কে হয়তো কিছু জানিয়েছিল আর আমিও আমার মা-প্রেমিকাকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়েছিলাম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার জগত ও জীবন নতুন নতুন অর্থ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হচ্ছিলো আর আমিও নতুন নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। একসময় আমার মা আমাকে পরীর গল্প শোনালেন, আমি জানতে পারলাম লালপরী, নীলপরী, ঘুমপরী ও অন্যান্য আরও অনেক পরীর কথা, আমার মাঝে তৈরী হলো পরী-বাস্তবতার এক ফ্যান্টাসি জগত। পরীদের সাথে সাথে আমার কাছে এলো মধুমালা, চম্পাবতী, রাজকন্যা এবং আরও অনেক নারী চরিত্র। আমার বয়স যখন সাত কি আট, তখনই আমার ইচ্ছে হতো পরীর রাজ্যে যাবার, ইচ্ছে হতো মদনকুমার হয়ে মধুমালার ঘুম ভাঙানোর এবং এমন আরও অনেক কিছু। আমি আমার পাঠকদের বলতে চাই, আমার এ চাওয়ার প্রেক্ষাপটে কোন যৌন আবেগ ছিল না, হয়তো আমি ভাবতাম এরা সবাই আমার মা-পরীর প্রতিচ্ছবি।

বয়স বাড়তে লাগলো, আর আমার জীবনে এলো লাবণ্য, বনলতা, নন্দিনী, সুরঞ্জনার মতো আরও অনেকেই। রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ পড়ে আমার শিলং যাওয়ার ইচ্ছে হত লাবণ্যের খোঁজে, নিজেকে ভাবতাম আমি অমিত। জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ পড়ার পর নাটোরের বনলতা আমাকে এতোটাই মোহিত করেছিল যে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে একবার নাটোর চলে গেলাম ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ’-এর খোঁজে। আমি বাবা মা’র একমাত্র ছেলে হিসেবে সুখী ছিলাম, কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছিলো পাখির নীড়ের মতো চোখ দেখলেই জীবন সার্থক হয়ে যাবে। নাটোর গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেটে, কলেজের সামনে, রাস্তায় শুধু মাত্র ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ’ খুজেছিলাম, কিন্তু দেখলাম সব চোখই সাধারণ মানুষের মতো, বনলতা সেন এর মতো নয়। আমার এই চোখ দেখার ইচ্ছেতে কোন রকম যৌনতা ছিল না, ছিল এক দুর্বার মানসিক সুখ এবং আমি আমার এই কর্মকাণ্ডকে পাগলামি বলতেও রাজী নই।

আমার জীবনে প্রথম প্রেমিকা হয়তো ছিলেন আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়া, যিনি ছিলেন আমার থেকে ১২ বছরের বড়। আমাদের সম্পর্কটা ছিল প্লাতোনিক ভালবাসার, এতে কোন রকম যৌনতা ছিলোনা। আমি মহিলাকে আপা বলে ডাকতাম, তার সাথে প্রতিদিন কথা না বললে আমার চলতো না, তার জবাকুসুম লাগানো চুলের গন্ধ পেলে মনে হতো কোন এক ঐশ্বরিক সুগন্ধ আমার নিশ্বাসের সাথে আমার গহীনে মিশে যাচ্ছে। আপাও ভালবাসতেন আমাকে খুব, তিনিও চাইতেন যে প্রতিদিন আমি তার সাথে দেখা করি। আপা এম এ পাস করার পর একটা কলেজে বাংলার প্রভাষক ছিলেন। আমি তার কাছ থেকে বৈষ্ণব পদাবলী ও চর্যার বিভিন্ন পদের বিশ্লেষণ শুনতাম, ভাল লাগতো খুব। একদিন হঠাৎ আপার স্বামী, আমার দুলাভাই, এক দুর্ঘটনায় মারা যান। আপা চাকুরী ছেড়ে চলে যান চাঁদপুরে বাবার বাড়িতে। অল্প কিছুদিন পর তার ছয় বছর বয়সের ছোট্ট ছেলে পুকুরে ডুবে মারা গেলে আপা পাগল হয়ে যান স্বামী ও পুত্রশোকে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি চাঁদপুরে যাই। কিন্তু হায়, আমার ভালবাসার আপা আমাকে চিনতেও পারেনি, এক দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে শুধু আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। আমি এমন কষ্ট পেলাম যার কোন তুলনা নেই। এমন কষ্ট আমি আমার জীবনে আর পেয়েছি কিনা সন্দেহ।

তারপর বয়স বাড়লো, কিন্তু আমার অন্তর থেকে ‘পরী-বাস্তবতা’ দূর করা গেল না। আমি বিভিন্ন শিরোনামে পরীদের নিয়ে কবিতা লিখতে থাকলাম। একটা কবিতা তুলে দিচ্ছি:

পরী

১.০

এখন সে তো জলের পরী
চুল রেখেছে মেঘে
শুভ্র ফেনায় ভাবছেটা কি
বলতে পারে কে!
সবকিছুতো অন্ধকারে,
শব্দে বলা যায়
জলের রানী মেঘ জড়িয়ে
আছে তপস্যায়।
আমি এখন সময় শুধু
বলতে পার–ঘড়ি,
মেঘগুলো সব ভাসছে জলে
স্বপ্নে দেখি পরী।

২.০

চিত্রগুলো পরীই বটে, স্বপ্নে আসার পরে
লালপরী আর নীলপরীরা মদন তুলে নেয়,
মধুমালার সঙ্গে তো হয় রুপকথাতে দেখা
পরীরা স মুচকী হেসে অর্থ তুলে দেয়।
তারপরেতো ছলাৎ ছলাৎ জলের কোলাহল
জলকে দেখি জলে থেকেই, জলের ভালবাসা
চিত্ত পরী নৃত্য করে আয়না ঘরে এসে
শব্দ হলে বুঝতে পারি সময় সর্বনাশা।

৩.০

ঐ পরীদের নিয়ে এখন কাব্য করা যায়
আরশি ঘরের পড়শী ওরা নিঝুম তপস্যায়।

আমার কবতায় শুধুমাত্র পরীরা আনাগোনা করে, তা কিন্তু ঠিক নয়। অনেকসময় পরীদের সখি প্রমা, মালতি, মিতা, লাবণ্য, বেহুলা ও আরও অনেকে মুচকি হেসে উপস্থিত হয় আমার কাব্য ভাবনায় ও কবিতায়। আমি বুঝি এই সব চরিত্র আমার সত্তার অংশ হয়ে আমার ‘আমি’-তে মিশে গেছে। মাঝে মধ্যে এই পরী-বাস্তবতার রূপ ও স্বরূপ বদলে যায়, তাদের অস্তিত্বের নাম বদল হয়। তারা হয়ে যায় সুচিত্রা সেন যিনি হয়তোবা আমার বাবার পরীও ছিলেন, হয়ে যায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যে আমার ছেলের পরীও হতে পারে। এমনও হয়, আমি হরণ করি রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সুনিল, হুমায়ূন আহমেদ, আল মাহমুদের এবং আরও অনেকের মনস্তাত্ত্বিক পরীদের। মাঝে মাঝে পরীদের এই বিবর্তন দেখে আমি অবাক হই, ভাবি এ কেমন অস্তিত্ব, ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না, অথচ আমার মাঝেই আছে ?

ব্যাপারটি নিয়ে আমি আমার স্ত্রীর সাথেও আলাপ করেছি। সে আমাকে প্রশ্ন করেছে–“আমি কী পরী ?’ আমি আমার স্ত্রীকে যেহেতু বন্ধু মনে করি, তাই তাকে মিথ্যে বলিনি। আমি তাকে বলেছি–‘তুমি একদিন পরী ছিলে, এখন আর পরী নও, বউ হয়ে গেছ।’ আমার স্ত্রী হেসে আবারো প্রশ্ন করেছিল–‘তোমার বন্ধুর বউ আর এফ বি বন্ধুরা কি পরী ?’ অনেক দ্বিধা আর দ্বন্দের পর আমার উত্তর ছিল–‘ঠিক ধরেছ, তাদের মাঝে কেউ কেউ অবশ্যই পরী, তাদের অবস্থান তো কল্পনায়, ধরে ছুঁয়ে তো আর দেখতে পারিনি।’ আমার স্ত্রী যথেষ্ট আধুনিক, সে কিছুটা চিন্তা করে বললো–‘আসলে বাস্তবে এলে পরীদের পরী-সত্তা হারিয়ে যায়, পরীরা তাদের পরীত্ব হারিয়ে ফেলে’ এবং এ কথা বলে সে একটা গান গাইলো। গানের প্রথম কলিটা ছিল:

‘নিশীথে যাইও ফুল ননে রে ভোমরা, নিশীথে যাইও  ফুল বনে’

একজন পুরুশ হিসেবে নিজেকে ‘ভ্রমর’ ভাবতে ভালই লাগে, শত সহস্র ফুলের মাঝে পরী অস্তিত্বকে খোঁজার মজাই আলাদা। আমি এ কথাও ভাবি যে একজন পুরুষের মনে বিমূর্ত আভায় সবসময় এক নারী বা পরী অস্তিত্ব অবস্থান করে আর এ কারণেই আমার যে কোন বাস্তব কিংবা বিমূর্ত প্রকাশের প্রেক্ষাপটে থাকে পরী বা নারী বিষয়ক মনস্তাত্ত্বিক ভাষা কাঠামো। পুরুষের জগতে যেহেতু নারী মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের শিকার, সেহেতু সামাজিক পুরুষও পুরুষতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে নারীকে করে রাখে তার নিজস্ব সম্পদ। আমার শম্পদ, আমার সপ্ন, আমার নারী  আমার লেখায় বারবার ফিরে আসে। আমি লিখি–

“ক্রিয়ামুলে শব্দ হয়, হয় প্রমিলাস্বরূপ, ঐ শব্দ ঐ রূপ বিম্বিত হয়, উত্তর হয়–‘কী কও ? বাষ্প কই, অন্ধকারে আলো কই শূন্যতার !নরম বাস্তবে ঐ, ঐ যে ওখানে দেখো, তোমার দখলে আছে স্পর্শের পাহাড় ।

অতঃপর আলো হয়, সন্ধ্যা হয়, রাত হয়, নিজেই নিজেকে ছোঁয় প্রতিধ্বনির মন। স্পেকট্রাম বিশ্লেষণে বৈচিত্র্যহীন সারারাত, সারারাত, সারারাত, তবু হৃৎপিণ্ডে আটকে থাকে স্তন আঁকা যোনি আঁকা বিপরীত আয়ন।”

নিজেকে পরী-বাস্তবতার ‘ভোমরা’ ভেবে আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করেছি–‘আমার তো পরী-বাস্তবতা আছে, তোমার আছে কী ?’ আমার কথা শুনে তার উত্তর ছিল–‘আমার আছে একজন রাজপুত্র, যে সব দৈত্য দানব মেরে আমাকে উদ্ধার করবে।’ আমার স্ত্রীর কথা শুনে মনে পড়ে গেল অনেকদিন আগের একটা ঘটনা। আমার বিয়ের মাত্র এক মাস পরে একদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করল–‘বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স এখন কত হতো ?’ উত্তর দিলাম–‘তা একশত বিশ বছর তো হতই।’ আমার স্ত্রীর উত্তর ছিল–‘যদি উনি বেঁচে থাকতেন তবে তাকে দুদিনের জন্য হলেও বিয়ে করতাম, প্রয়োজন হলে ঠাকুরের হাতে পায়ে ধরতাম।’ আমি অবাক হলাম, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে মাস্তানি করে টিকে থাকতে পারবো না বিধায় উত্তর দিলাম–‘তিনি বেঁচে থাকলে আমি নিজেই তোমাকে তাঁর কছে দিয়ে আসতাম।’ আসলে আমার স্ত্রীর মনের গহীনে রবীন্দ্রনাথ একজন রাজপুত্র হিসেবেই অবস্থান করছে, এ সত্য আমি বুঝেছিলাম।

ইদানিং হুয়ায়ুন আহমেদ আর শাওন প্রসঙ্গে অনেক উলটাপালটা কথা শুনতে হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ আমার বন্ধু ছিল এবং আমি খুব ভাল করেই জানি যে তার চরিত্রদোষ ছিল না। আসল সত্য হল, মনস্তাত্ত্বিক আকর্ষণের বলী হয়েছিল হুয়ায়ুন ও শাওন। শাওন হুয়ায়ুনের মাঝে দেখতে পেয়েছিল এক ‘রাজপুত্র’-কে আর হুমায়ুন শাওনের মাঝে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিল তার হারিয়ে যাওয়া ‘পরী’-কে। এই পরী ও রাজপুত্রের মনস্তাত্ত্বিক আকর্ষণ এতটাই প্রবল ছিল যে তারা সমাজের প্রচলিত আইনকে অগ্রাহ্য করতে পেরেছিল। আমরা সমাজের লোকজন তাদের সমালোচনা করতে পারি, দোষ ধরতে পারি, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবো তাদের কোন দোষ নেই।

একটি মেয়ে তার জন্মের পর মা-পরীকে বন্ধু-পরী হিসেবে গ্রাহ্য করে। পরে মধুমালা, চম্পাবতী, লাবণ্য, বনলতা এবং আরও অনেকেই সখির চরিত্র নিয়ে উপস্থিত হয়। অনেকসময় মেয়েরা নিজেকে উল্লেখিত সখি চরিত্রগুলোর মাঝে নিজেকে প্রতিস্থাপন করে এক ফ্যান্টাসির জগত সৃষ্টি করে। নারী বা মেয়েদের প্রথম রাজপুত্র হয় তার বাবা। বাবার সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, যেমন ভাই, মামা, চাচা, ফুপা এবং আরও অনেকে রাজপুত্রের আদল নিয়ে নারীর মনে অবস্থান নিতে পারে। এই রাজপুত্রের বিবর্তন চলতেই থাকে, কোন এক সময় রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, অমিত, হিমু, শুভ্র, আমির খান, শাহরুখ খান কিংবা অন্য যে কেউ নারী-মনে রাজপুত্র হিসেবে উপস্থিত হয়।

এখানে উল্লেখ্য যে একজন পরী আর রাজপুত্রের সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়ায় ‘ভালবাসা’ মুখ্য ভুমিকা পালন করে। শুধুমাত্র ঐশ্বরিক ভালবাসার আকর্ষণে একজন পুরুষ কোন এক নারীর মাঝে খুঁজে পেতে পারে তার কল্পনার পরী বা রাজকন্যাকে। ঠিক একই ভাবে ভালবাসার চুম্বক বন্ধনে একজন নারী তার মনের মানুষকে স্থাপন করে রাজপুত্রের সিংহাসনে।

মানুষের যে সামাজিক ধর্ম আছে, সেখানেও বিভিন্ন নারী চরিত্র এসেছে পরী বা রাজকন্যা হিসেবে। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান পরী/রাজকন্যা কিংবা দেবী  হিসেবে আমরা পাই ডায়ানা, ভেনাস, আফ্রদিতি, মিনার্ভা, এথেনার মতো অনেক চরিত্রকে, আবার রাজপুত্র হিসেবে পাই এপোলো, জিউস, হা্র্মেস, জুনো, হেদেস ও মার্সের মতো আরও অনেক দেবতাকে। বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মে রাজকন্যা বা পরী হিসেবে এসেছে অনেক দেবী। দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা, তারা, যক্ষিণী, কুষ্মান্ডিনী, অম্বিকা, পর্ণশর্বরী, বর্তালী, বদালী, বরালী, বসুধারা, বজ্রসরস্বতী, মহাপ্রতিশরা, মহাময়ুরী, মহেশ্বরী, ঈন্দ্রানী, দুর্গা, কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী সহ অনেক নারী বা প্রকৃতির স্বরূপ সামাজিক ভাবে পূজিত হয়ে আসছে রাজপুত্র বা দেবতা হিসেবে এসেছে ইন্দ্র, বরুণ, যম, কুবের, শিব, কৃষ্ণ, বিষ্ণু এবং আরও অনেক চরিত্র। মুসলমানদের কোন দেবতা বা দেবী নেই। তবে আলী, আমির হামজা, সোহরাব, রুস্তম ইত্যাদি নামের রাজপুত্রদের অবস্থান ইসলাম ধর্মে আছে। আরব্য রজনীর রাত আর হারেমকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মনে জাগ্রত থাকে অসংখ্য পরী। বেহেশতে গেলেও হুর আর পরীদের সাক্ষাত পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

পরী ও রাজপুত্র নিয়ে এতক্ষণ আমরা যা ভাবলাম, তা হতে পারে মানুষের মনস্তত্ত্বকেন্দ্রিক একটি প্রকল্প। আমাদের মনে পরী ও রাজপুত্রের যে অবস্থান আছে, তার সাথে ফ্রয়েড, লাকাঁ, ইয়ুং প্রমুখের মনস্তত্ত্ব যোগ করে আমরা হয়তোবা পেতে পারি মনোবিশ্লেষনের এক নতুন পদ্ধতি।

 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top