বইপত্রেরর খবর: স্বাধীনতা ব্যবসায়

[সলিমুল্লাহ খান লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও শিক্ষক। গুরুচণ্ডালী, যাবতীয় রসবোধ, জ্ঞানের গভীরতা ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা দিয়ে তিনি সাধুভাষাকে শিল্পে রূপান্তরিত করেছেন, দিয়েছেন নতুন জীবন। আগামী প্রকাশনী এবং এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়’ বইটির বিভিন্ন প্রবন্ধে আমরা দেখব তাঁর এই ভাষাশৈলীর চমৎকার বহিঃপ্রকাশ।

বইটির শুরুতে আছে প্রবেশিকা ও চেতাবনী। মূল অংশে স্থান পেয়েছে এস্তেহার, স্বাধীনতা ধর্ম রাষ্ট্র, সমাজ বিষয়,সংবর্ধনাও স্বাধীনতা ব্যবসায় শিরোনামের আওতাধীন ৩১টি প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলি সমসাময়িক, বিভিন্ন দেশিবিদেশী চিন্তকের চিন্তার আলোকে ও সলিমুল্লাহ খান-এর নিজস্ব বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ। বইটি সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহল মেটাতে ‘চেতাবনী’ ও ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়’ লেখাটি তুলে ধরা হচ্ছে সাহিত্য ক্যাফে-তে। —সম্পাদক]

চেতাবনী

[বাংলাবাজারে আজিকালি ‘উদারনীতি’, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’, ‘অবাধ বাণিজ্য’ আদি পদ অবাধে কাটিতেছে। ক্ষণকাল তিষ্ঠিলে দেখিবে সব রসুনের এক গোড়া—‘লিবারেলিজম’। গোড়ার গোড়ায় যাইবে তো পাইবে ‘লিব্র’—অর্থাৎ স্বাধীন। অধীন যে পদার্থের নাম ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়’ প্রস্তাব করিতেছে তাহা মনে হয় এই গোত্রেরই।

স্বাধীনতা ব্যবসায় কি পদার্থ? একখণ্ড রূপকাহিনীযোগে তাহা আমল করা যায়। ধর তোমার একপ্রস্ত ছেলে আর এক টুকরা মেয়ে। আরো ধরা যাউক যুদ্ধমধ্যে তুমি শত্র“হস্তে আটক হইয়াছ। তোমার নয়নের দুই মণির একটিকে খুন করিবেই সে। শর্তের মধ্যে, কোনটিকে করিবে তাহা সে ঠিক করে নাই—তাহার হইয়া কাজটি তোমাকেই করিতে হইবে। না করিবে তো নয়নের দুই মণিই হারাইতে তুমি বাধ্য। এমতাবস্থায় কি করিবে তুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

চাহ তো এলান পাকুলার ছবি সুফিয়ার নির্বাচন হইতে সাহায্য লইতে পার। ধরিয়া লইলাম সোনার টুকরা ছেলেটি তুমি আঁকড়াইয়া থাকিবে। আর হীরার প্রমাণ মেয়েটি সে ছোঁ মারিয়া লইয়া যাইবে। তুমিও আঁক কষিবে দুইয়ের সাক্ষাৎ এক বাঁচাইলাম। বেশ করিলাম। এই তো মন্দের ভাল। হিশাবশাস্ত্রের এহেন গোপন কথাকেই স্বাধীনতা ব্যবসায় বলা হইয়া থাকে। এমানুয়েল কান্ট হইতে জন রল্স পর্যন্ত বেবাকেই এই বাক্য বলিয়া আসিতেছেন।

এসায়ি আঠার শতকের ফরাশি বিপ্লব হইতে ‘স্বাধীনতা’ ও ‘সাম্য’ নামক দুই চিৎকার পর্যায়ক্রমে কি সঙ্গীতেই না পর্যাবসান মানিয়াছে! অদ্য স্বাধীনতা মানে দাঁড়াইতেছে অসাম্য। আর সাম্য মানে পরাভব—পরাধীনতা। আজিকার স্বাধীনতা ব্যবসায়ের ফল মানে কালিকার মূলধন। হালফিল ন্যায়বিচারের খুনে স্বাধীনতা ব্যবসায়ীর শাদা হাত রাঙ্গা হইয়াই আছে। এক্ষণে অবিচারেরই অপর নাম স্বাধীনতা ব্যবসায়। এখনো স্বাধীনতা ব্যবসায়ের অনুষ্টুপ ছন্দ পরাধীনতা—উপনিবাস ব্যবসায় ওরফে পরধনতন্ত্র।

ভাগ্যদোষে মনে হয় স্বয়ং সূর্যদেবই ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন এই দুনিয়ার চারিধারে। চ্যাপ্টা দুনিয়াটা গোল বলিতেও মাঝে মাঝে সাহসের কাজ বলিয়া ভ্রম হয়। স্বাধীনতা ব্যবসায়ের মুখ প্রকৃত প্রস্তাবে কয়েক প্রস্ত। মুখোশের পর মুখোশ পাহাড়সমান উপস্থ, শিব হইয়া উঠিয়াছে। এইসব মুখোশ—সমির আমিন প্রভৃতি মনীষীর মুখে এতদিনে শুনিতেছি—স্বাস্থ্যের লক্ষণ নহে, সংক্রামক ব্যাধিবিশেষ।

তো এই ব্যাধির প্রতিকার? অধীন তেত্রিশ বৎসর (১৯৭৯-২০১১) ধরিয়া এইখানে আহরিত একত্রিশ প্রবন্ধযোগে এই রোগেরই প্রকৃতি সন্ধান করিতেছে। সাধ্যে কুলায় নাই ব্যবস্থাপত্র লেখে। শুদ্ধ এস্তেহার রচিয়াছে।

বলিয়াছে স্বাধীনতা ব্যবসায় নহে—স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রাম। শুনাইয়াছে ‘স্বাধীনতা বনাম ন্যায়বিচার’ নহে, ‘স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার’। স্বাধীনতা ব্যবসায় নহে, মুক্তিযুদ্ধ। লিবারেলিজম নহে, লিবারেশন।

আরো বলিতেছে সাম্রাজ্যবাদের যুগে এই অশনির প্রতিধ্বনি ভিন্ন অন্য ধ্বনি নাই।

সলিমুল্লাহ খান

শ্রাবণ ১৪১৮]

 

স্বাধীনতা ব্যবসায়

 

             যতেক প্রবন্ধ করে নিশাচরগণে
             ব্রহ্মাবরে নিদ্রা যায় কিছু নাহি জানে।।
             —কৃত্তিবাস

মানুষ একদা স্বাধীন ছিল। লোকমুখে কথাটা হামেশা শুনিতে পাই আর লোকেও দেখি দোষের কিছু নাই ভাবিয়া কথাটা এস্তেমাল করে। বড় বড় চিত্রশিল্পীও মধ্যে মধ্যে প্রথম মানব আঁকিবার ছলে গায়ে-গতরে কাপড়-চোপড় বড় একটা রাখেন না। পোশাকের স্থান পেশিতে পূরণ করিলেই তাঁহারা মনে করেন স্বাধীন মানুষ আঁকা হইল। এই স্বাধীনতা প্রকৃতি জগতের বা সমাজ গড়িবার আগের স্বাধীনতা।

‘মানুষ স্বাধীনে জন্মিয়াছিল, আর সর্বদেশেই তাঁহার হাত-পা শিকলি দিয়া বাঁধা’—রুসোর এই বিধেয়ের অনুবাদ তাঁহার শিষ্যরা খানিক রঙ্গ চড়াইয়া করিলেন, ‘মানুষ জন্মিয়াছে স্বাধীন আর স্বাধীন সে বিরাজও করিতেছে।’১ ক্রিয়ার লকারকে অতীত হইতে বর্তমানে এই পদোন্নতি দেওয়াটা ১৭৮৯ সালের বিপ্লবীগণের কীর্তি। এই স্বাধীনতা সভ্য জগতের বা সমাজ গড়নের পরের জিনিশ।

আর মানুষ একদা স্বাধীন ছিল বলিতে যদি বুঝায় সমাজ গড়নের আগের স্বাধীনতা, তবে বনের আর দশ পশু আজও যেমতি স্বাধীন আছে সেমতি স্বাধীনই ছিল মানুষ।

লকারের এই অগ্রযাত্রায় আমরাও খানিক সামিল হইব না কেন? কেন বলিব না, মানুষ একদিন স্বাধীন হইবে? এই কথা বলিলে হয়ত রুসোর কথার সত্যতা অধিক রক্ষা পাইবে। দু কঁত্রা সোশিয়াল ওরফে ‘সমাজ পত্তননামা’ এস্তেহারে রুসো একাধিকবার স্পষ্ট বলিয়াছেন, সমাজ গঠিবার পর মানুষ আর স্বাধীনতা শব্দ দুইটা সমার্থক হইয়া গিয়াছে। জন্মিলে স্বাধীন হইতেই হইবে।২

অথচ এই রুসোই কিনা ঘোষণা করিয়াছিলেন—বর্তমান জগতে কোন মানুষই আর স্বাধীন নাই। যাঁহারা মনে করেন তাঁহারা অপর কাহারও প্রভু, তাঁহারা দাসেরও অধম দাস। এই পরাধীন জগতে তাহা হইলে স্বাধীন হইবার পথ কি?

রুমি সাম্রাজ্যের তত্ত্বজ্ঞানী, ন্যায়বিচারের পরাকাষ্ঠা কাতো (‘কনিষ্ঠ’ ওরফে উতিকার কাতো, খ্রিস্টপূর্ব ৯৫-৪৬) প্লাতোন প্রণীত পুস্তক ফায়দননামা পড়িয়া নিশ্চিত হইয়াছিলেন, মানুষের মন বা আত্মা মরে না। তাই সিজার ওরফে কৈসরের হাতে ধরা পড়িবার দুর্ভাগ্য এড়াইতে তিনি নিজের পেটে ছুরি চালাইয়া আত্মঘাতী হইয়াছিলেন। উল্লেখ করা যাইতে পারে, কৈসরের সহিত পম্পের গৃহবিবাদে তিনি পম্পের পক্ষাবলম্বন করিয়াছিলেন। আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া তাঁহার স্বাধীন থাকিবার আর কোন উপায় ছিল না।

বছর দুই আগে প্রকাশিত মদীয় আদমবোমা পুস্তকে ‘আদমবোমা না স্বাধীনতা-ব্যবসায়’ নামে একটি প্রবন্ধ গুঁজিয়াছিলাম। (খান ২০০৯[১]) স্বাধীনতা ব্যবসায় বলিতে আমি কি বুঝাইতে চাহি তাহা ঐ প্রবন্ধের মধ্যে খানিক প্রকটিত করিয়াছি। বাকি এখানে বলিব।
‘প্রাণের চেয়েও স্বাধীনতা বড়।’ কথায় কথায় যাঁহারা এই কথায় আস্থা রাখেন তাঁহাদিগকে সংক্ষেপে ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়ী’ বলা যায়। মানুষ মানুষ হইয়াছে হয়ত এই স্বাধীনতা ব্যবসায়ের জোরেই।


‘স্বাধীনতা সোনার চেয়েও দামি’—এই কথা অনেকেই বলিয়াছেন। বর্তমান যুগের (মানে রুসোর যুগের) তত্ত্বজ্ঞানীদের মধ্যে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী হইতেছেন জার্মান এমানুয়েল কান্ট। তিনি স্বাধীনতা শব্দটির ব্যাখ্যা দিয়াছিলেন ‘আপনকার অধীনতা’ আকারে। পরের আদেশে নয়, মাত্র নিজের আদেশে যখন মানুষ কোন কাজে নামে তখনি সে স্বাধীন।

এখানে একটা সমস্যা দেখা যায়। আপন বলিতে যাহা বুঝায় তাহা দুই প্রকারের। এক ‘আপন’কে মানুষের প্রকৃতি বা স্বভাব বলা যাইতে পারে। এই স্বভাব অনুসারে মানুষের তো কেবল নিজের কোলেই ঝোল টানিবার কথা। সমস্যার মধ্যে, সকলে যদি এইরকম কেবল নিজের কোলে ঝোল টানে তো সমাজ চলিবে কি করিয়া? চলিবে দূরের কথা, সমাজ গঠিবেই না।

বাহিরের কাঁহারও—যেমন এয়াহুদি জাতির ঈশ্বরের— আদেশ মানিলে স্বাধীনতা আর ‘স্বাধীনতা’ থাকে না। পরাধীনতা হইয়া যায়। (কান্ট ১৯৬০) এদিকে কাহারও আদেশ না মানিলে, অর্থাৎ শুদ্ধ স্বভাবের অনুবর্তী হইলে সমাজই থাকে না।

কান্ট বলিলেন, মানুষের ‘আপন’ আরো এক প্রকারের হয়। মানুষ শুদ্ধ স্বভাবের আদেশ নয়, নিজের ভিতর যে পদার্থের অভাব, সেই অভাব বা নিখিলের আদেশও অনুসরণ করিবে। তাহাতে কার্যসিদ্ধি হইবে। কেননা স্বভাব ও অভাব দুই মিলাইয়াই দ্বিপদ মানুষের আপন বা ‘নিজ’ দাঁড়াইয়াছে।
কান্টের এই ব্যবস্থাপত্র অনুসারে নিজের স্বভাব বা বিশেষ প্রকৃতি নিজের অভাব বা সামান্য প্রকৃতির অধীন হইবে। ইহাকেই তিনি নাম দিলেন ‘স্বাধীনতা’। কিন্তু কেন এমন করিবে মানুষ? স্বাধীন হওয়া কি মানুষের স্বভাব? কান্ট বলিলেন: ইহা স্বভাব নহে, নিতান্ত কর্তব্য। তাঁহার আপন ভাষায়, ‘স্বাভাবিক’ বা ‘শর্তহীন’ কর্তব্য। ইংরেজিতে ইহা ‘কেটেগোরিকাল ইম্পারেটিব’ নামে সমধিক পরিচিত।

বর্তমান যুগের আরেক জার্মান তত্ত্বজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ হেগেল তাহাতে প্রমাদ গুনিলেন। তাঁহার বিচারে এয়াহুদি জাতির ঈশ্বর যদি পরকিয়া শাসক বা প্রভু হইয়া থাকেন, তবে কান্ট যাহাকে অভাব বা স্বাভাবিক কর্তব্য বলিতেছেন তাহা তো সেই পরকিয়াকেই ঘরে পোষার অপর নাম। ইহাতে নিজের উপর খামাখা জবরদস্তি ঘটে। ইহাও তো এক ধরনের পরাধীনতা বৈ নয়।

এয়াহুদি জাতির ঈশ্বর নয়, এমানুয়েল কান্টের অভাব নয়, মানুষকে স্বাধীন করিতে পারে একমাত্র প্রেমের আদেশ— কথাটা প্রস্তাব করিলেন হেগেল। মানুষ কেন স্বভাব ছাড়িয়া অভাব বা নিখিলের আদেশ শুনিবে? হেগেলের মতে, কান্টের প্রস্তাবে এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর নাই। হেগেল তাই বলিলেন, একমাত্র প্রেমের টানেই মানুষ অপরের জন্য নিজের স্বার্থ বা স্বভাব ত্যাগ করিতে পারে অথচ তাহাকে মোটেও জবরদস্তি মনে হয় না।
কান্ট এক জায়গায় দাবি করিয়াছিলেন, শুদ্ধ প্রেমের উপর দাঁড়াইয়া নিখিল নীতির প্রতিষ্ঠা দেওয়া যায় না। হেগেল এই প্রতিষ্ঠা ঘুরাইয়া দিলেন। বলিলেন: কান্ট প্রস্তাবিত কঠোর আত্মপীড়নের তুলনায় প্রেমাস্পদের পাণিপীড়ন অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাব। ইহার মধ্যবর্তিতায় কান্ট নির্দেশিত স্বভাব আর অভাবের অর্থাৎ প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বিবাদটা ভঞ্জন করা যায়।

হেগেলের ব্যাখ্যা অনুসারে, মহাত্মা এসা এই নিখিল প্রেমনীতির প্রচারেই অধিক ব্যস্ত ছিলেন। মনে রাখিতে হইবে স্বাধীনতার অপর নাম হজরত এসা। কারণ তিনিই নিখিলের সাক্ষাৎ অবতার। আর তাঁহার কারণে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রেমের মধ্যে লুকাইয়া আছে। মজাটা এইখানে যে আমরা একই সঙ্গে প্রেমের মধ্যে নিজ স্বভাব খুঁজিয়া পাই, আর সেই স্বভাবের ঢিলে অভাবের পাখিটিও ঝরিয়া পড়ে। নিখিলের আদেশ পালিত হয়। (হেগেল ১৯৭৫[২])
কান্টের কর্তব্যজগতে যে জবরদস্তি ছিল তাহার মতন কোন জোরজবরদস্তি এই প্রেমের দুনিয়ায় নাই। প্রেমের মধ্যে স্বভাব আর অভাবের, স্বার্থ আর পরার্থের বিরুদ্ধতা থাকে না।

সমস্যার মধ্যে, এই প্রেম দিয়া সারা জগৎ বাঁধা যায় না। এখানেই থামিতে হইয়াছে হেগেলকে। তাহা হইলে, মহাত্মা এসার অনুসারীদের কি হইল? তাঁহারা কি করিয়া তাঁহার প্রেমের ধর্ম হইতে সরিয়া গিয়া পুরানা এয়াহুদি ধর্মের চেয়েও কঠোর বিধিবিধান অনুসারী নতুন এক ধর্মে নামিয়া গেলেন?
কথাটার জবাব হেগেল দিয়াছেন খানিক ঘুরপথে। তাঁহার বিচারে পুরানা দিনের এয়ুনান ও রুমের জগতে স্বাধীনতার যে শর্ত বিরাজমান ছিল তাহা ততদিনে—মানে মহাত্মা এসার জমানায়—আর বিরাজ করিতেছিল না।

বিধির বিধানের ধর্ম ছাড়িয়া যিনি প্রেমের ধর্ম ধরিয়াছিলেন তাঁহাকেও নিত্য নিজেকে ভবের বাজারে হাজির করিতে হইয়াছে, বলিতে হইয়াছে আমাতে বিশ্বাস রাখিবে। বিধির ধর্মের সম্মুখে তিষ্ঠিবার ডাকে তাঁহাকে এই বিশ্বাসের দাবি তুলিতে হইয়াছে। না হইলে তাঁহার কথা কেহ শুনিতই না। কেননা সেই দূষিত সমাজে শুদ্ধ ন্যায়নীতির দোহাই দেওয়ার অর্থ দাঁড়াইত নিছক ‘মাছের ঝাঁকের সামনে খোতবা দেওয়া’। (হেগেল ১৯৭৫[১]: ৮২)

হজরত এসার ধর্ম ছিল প্রেমের ধর্ম, স্বাধীনতার ধর্ম। কিন্তু তাঁহার সাহাবাগণের ধর্মও ফের নতুন বিধির ধর্ম হইয়া উঠিল। তাহাতে স্বাধীনতার স্বাদ থাকিল না। এই জায়গায় হেগেল এসার সঙ্গে এয়ুনানি মহাত্মা সক্রাতেসের তুলনা কাটিয়াছেন। সক্রাতেসের শিষ্যশাবকেরা তাঁহাকে পূজিতেন তাঁহার শিক্ষা ও চরিত্রের খাতিরে আর মহাত্মা এসার সাহাবাগণ তাঁহার শিক্ষা ও চরিত্র পূজিতেন স্বয়ং তাঁহার খাতিরেই। (পিঙ্কার্ড ২০০০: ৬৫; হেগেল ১৯৭৫[১]: ৮২)
যিনি আসিয়াছিলেন প্রেম বিলাইতে, তাঁহার পরিণতি হইল নতুন বিধি প্রবর্তকের। তাঁহার সাহাবাগণ তাঁহাকেই স্বয়ং বিধি বলিয়া জাহির করিলেন। আপন হইয়া গেল নতুন পর।


ফরাশি বিপ্লবের যুগে ‘চেরাগি কি পদার্থ?’ নামা এক প্রবন্ধে এমানুয়েল কান্ট ডাক দিলেন্তএতদিনে মানবজাতির আর পরের মুখে শিখা বুলি আওড়াইবার দরকার নাই। তাহার বিধির বিধান মানিবার দিন ফুরাইয়াছে। এতদিনে সে নিজের বিধান নিজে রচিতে পারিয়াছে। আসিয়াছে তাঁহার স্বাধীন হইবার দিন। (কান্ট ১৯৯১)

কান্টের এই স্বাধীনতার ঘোষণা শ্রবণ করিলেন হেগেল। শুনিয়া ক্ষেপিয়া গেলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করিলেন, মানবজাতি এই স্বাধীনতা আদপে হারাইল কি করিয়া? হেগেলের মনে হইল, কান্ট যে স্বাধীনতার ধর্ম প্রস্তাব করিতেছেন তাহার শর্ত তো এসায়িধর্মে পূরণ হইবে না!

কান্ট তো বলিয়াছিলেন, আমাদের মনের স্বাভাবিক প্রকৃতিকে খেলিতে দিলে যে তরঙ্গ জাগিবে তাহার নামই সুন্দর। এই সুন্দর আর স্বাধীনতা সমার্থক কথা। জগতে এসায়িধর্মের যে অভিজ্ঞতা জমিয়াছ্তেমানুষের মনে ‘বিধির বিধান’ আকারে তাহার যে ছাপ আঁকা হইয়া গিয়াছে—তাহা হইতে ছাড়াইয়া লইয়া মানুষকে আবার স্বাধীন করা এক প্রকার অসম্ভব বলিয়াই হেগেলের মনে হইল।

যদি তাহাই হয়, যদি বিধিবদ্ধ এসায়িধর্ম ‘সুন্দর’ হইয়া উঠিতে অসমর্থই থাকে, তো স্বীকার করিতে হয়—ইহার দ্বারা মানুষ স্বাধীনও হইতে পারিবে না। আর এই কথা সত্য হয় তো কবুল করিতে হইবে, বর্তমান জগতে—বিশেষ এয়ুরোপখণ্ডের—চাহিদা মিটাইবার সামর্থ্যই তাহার নাই। এই সিদ্ধান্ত হেগেলের।

এই সময় ফরাশিদেশের বিপ্লবীরাও একই সিদ্ধান্তে পেঁৗছাইয়াছিলেন। তাঁহারা সরকারি ফরমান জারি করিয়া এসায়িধর্মের একচেটিয়ার ‘বিলোপ’ ঘটাইলেন।
সমস্যার মধ্যে, সেই ধর্মের জায়গায় যে নতুন যুক্তিধর্মের প্রতিষ্ঠা তাঁহারা দিলেন তাহার মধ্যেও প্রেমের ধর্ম দেখা গেল না। এয়ুনানি ও রুমি জগতের স্বাধীনতাও আর ফিরিয়া আসিতেছে না—এ কথা তো আগেই জানা হইয়া গিয়াছে। প্রেম নাই, স্বাধীনতাও অসম্ভব। তাঁহার জায়গা জুড়িয়া বসিল শীতল ভয়ের ধর্ম। একদিকে পয়মন্ত শ্রেণির বিষয় হারাইবার আর অন্যদিকে প্রাণ হারাইবার ভয়। স্বাধীনতা নামক ঘড়ির কাঁটা বারটায় আসিয়া স্থির হইল।

এয়ুনানি স্বাধীনতার গোড়া পোঁতা ছিল যাঁহার যাঁহার রাষ্ট্রের মধ্যে। এসায়ি স্বাধীনতা তাহার জায়গায় অনন্ত জীবনের ওয়াদা শুনাইল। এতদিনে দুইটাই চলিয়া গিয়াছে। স্বাধীনতার রাহা তাহা হইলে কোথায় পাইব?


রুসোর কথায় ফিরিয়া আসি। মানুষ পূর্বজন্মে—যখন বনেজঙ্গলে বাস করিত তখন—এক রকম স্বাধীন ছিল। সেই স্বাধীনতা ছিল জন্মিবার পরের স্বাধীনতা, শুদ্ধ একের জোর নির্ভর স্বাধীনতা। পরজন্মে সে গ্রামেগঞ্জে বসতি পত্তন করিয়াছে। তখন অন্য রকম স্বাধীন সাজিয়াছে সে। নতুন এই স্বাধীনতা দশের বল নির্ভর।
যে মানুষ জন্মিবার সময় স্বাধীন ছিল সে মানুষ কোন পদার্থের নাম? সেই মানুষ জীব মাত্র। আর মানুষ মানুষই বা হইল কি করিয়া? নিঃসন্দেহে, শুদ্ধ কথা বলিয়া। কথা না বলিলে মানুষ মানুষ হইতে পারিত না। যে মানুষ কথা বলে না, সে জীব মাত্র থাকিয়া যায়। ভাষাই মানুষকে মানুষ মাপের স্বাধীন করিয়াছে বলিলে আরো সত্য বলা হয়।

কিন্তু যে কথা বলে সে তো ভাষার অধীন। ভাষার তো বিধি আছে। এই বিধান তো বিধির বিধানের চেয়ে কোন দিকেই কম যায় না। কোন মানুষই এই বিধি হইতে স্বাধীন হইতে পারে না। (লাকাঁ ২০০৬)

যখন আমার কথা আমি শুনিতে পাইতেছি তখন সেই কথা আমার কানে পশিতেছে আর কাহারও পাশ ঘুরিয়া। সেই অন্য কাহার নামই ভাষা।
তাহা হইলে কি দাঁড়াইল? ভাষার গুণেই মানুষ মানুষ হইয়াছে অর্থাৎ স্বাধীন হইয়াছে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আবার ভাষার অধীনও বটে। স্বাধীনতার অর্থ তাহাই, যাহা কাহারও না কাহারও অধীনতা বরণ করে। কান্টের কথা খানিক অসার মনে হইতেছে ইহার মধ্যেই।

মানুষ নিজের বিধান নিজে রচে না। তো ভাষার বিধান কোন মানুষে রচিয়াছে? ভাষার মধ্যে অপরের্তহিশাব করিয়া দেখিলে দেখিতে পাই, খোদ পরমেরই্তবসবাস। অতয়েব দেখা যাইতেছে, স্বাধীনতা কোন ক্রমেই বিধির অপর নয়, এই পদার্থ বরং বিধির অধীন। সংশয় জাগে, স্বয়ং বিধিই কি স্বাধীনতা?
মানুষের সহিত তাহার এই পরম অপরের সম্বন্ধ দুই ভাগে ভাগ করা। এক সম্বন্ধ জ্ঞানের, আর সম্বন্ধ সত্যের। জ্ঞানের সম্বন্ধ যাহাকে স্বাধীন করে সত্যের সম্বন্ধ তাহাকে অধীন রাখে। জ্ঞান ও সত্যের মধ্যখানে স্বাধীনতা ও অধীনতার টানাপড়েনই মানুষের ঠিকানা, তাহার পরিচয়পত্র।

মানুষ বিধির অধীন। তাই বলিয়া তাহার স্বাধীনতা অলীক পদার্থও নহে। শুদ্ধ এই স্বাধীনতার কারণেই মানুষের সংজ্ঞা মানুষ হইয়াছে। অথচ মানুষ তাহা জানে না। দেখা গেল সত্য ও জ্ঞান ভাগ হইয়াই গিয়াছে। স্বাধীনতার স্থান তাই ঐ ভাগফল বরাবর কোথাও দাঁড়াইয়া আছে। (লাকাঁ ২০০৬: ৯_১০; মিলার ১৯৯১)
ব্যক্তি মানুষ তিনি যত বড়ই হোন না কেন বিধির বিধান হইতে স্বাধীন হইতে পারেন না। ফ্রয়েডের আবিষ্কার হইতে আমরা দেখিয়াছি, মানুষ নিজের পরম নিজে নয়। তাঁহার পরম ভাষার মধ্যেই বাস করে। আহমদ ছফা ঠিকই বলিয়াছেন, ‘একমাত্র অপরকে মুক্ত করিয়াই মানুষ নিজেকে মুক্ত করিতে পারে।’ (ছফা ২০০৮[২]: ৮৪)

প্রশ্ন হইতেছে, এই অপর আর পরমের সম্বন্ধ কি? পরমের পথ গিয়াছে এই অপরের উপর দিয়াই। মানুষের মনুষ্যত্ব সবসময়ই অপর মানুষের সহিত তাহার সম্বন্ধের উপর নির্ভর করে। আর তাহার স্বাধীনতাও তাই দুই ভাগে ভাগ হইয়া যায়।

আমি যাহার সহিত কথা বলিতেছি তাহার সহিত আমার স্বাধীনতাটা ভাগাভাগি করিয়া লইতে হয়। আমি যখন ভাষার মধ্যে কথা বলি তখন এক ‘আমি’ শব্দের সহিত আরেক ‘আমি’ শব্দের যোগাযোগ ঘটে। জ্ঞানের সহিত জ্ঞানের যোগ হয়, সত্যের সঙ্গে সত্যের নয়। এই কথাটাই জাক লাকাঁর জবানে এইরকম দাঁড়াইয়াছে: পদের সহিত সাক্ষাৎ ঘটে মাত্র আরেক পদের। পদার্থের সহিত পদার্থের আলাপ মোটেও নাই।

আমি যাহার সহিত কথা বলি সে মানুষ আবার আরেকজনের সহিত কথা বলে। সেই আরেকজন আবার আরেক আরেকজনের সহিত কথা বলে। এই ক্রমে চলিতে থাকে। এই অফুরান অপরের নামই পরম। ভাষায় আমরা মধ্যে মধ্যে বলি, তাহার নাম ‘লোক’। লোকে বলে।

এই ‘পরম’ লোককেও ভাষার মধ্যে একটা জায়গা করিয়া দিতে হয়। যেন সেও আরেকজন ‘অপর’ মাত্র। আমার কথা আমার কাছে ফিরিয়া আসে শুদ্ধ এই পরমের দৌলতেই। পার্থক্যের মধ্যে, আমার কথা আমি শুনিতে পাই অথবা ছবির মতন দেখিতে পাই মাত্র পাশফিরা কায়দায়।

আমি যাহা যাহা বলি শুদ্ধ তাহা তাহাই যদি দান উল্টাইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসে তো কথা বলার এই স্বাধীনতা দিয়া আমি কি করিব?
একটা লাভ তো খালিচোখেই দেখিতে পাই। আমার একজনের কথা আমার মতন হাজার জনে শুনিতে পায় তো আমিও হাজার জনের মধ্যে নিজেকেই শুনিলাম। আর গুনিলাম। হাজার গুণে সংবর্ধিত হইলাম। মন্দ কি! আর হাজার জনও আমার মধ্যে নিজেকে নিজেকে দেখিল, আমার গলায় নিজের নিজের বাণী শুনিল। এই চোখাচোখি, গলাগলির খেলা জমিলে বেশ জমে। পাথর হইয়া যায়। আমরা অমর হইয়া উঠি।

ভাষা হইল—কথা বলিলাম, স্বাধীন হইলাম, অমর হইলাম, ব্যস। খোদ ভাষার কি হইবে?

আমরা যদি কথা না বলিতাম, ভাষা তো ভাষাই হইত না। আর ভাষা না হইলে আমরাও কথা বলিতাম না। ভাষা আমাদের অমর করিতেছে। আর আমরা যদি ভাষার অধীন না হইতাম তো খোদ ভাষারও কোন গৌরব থাকিত না, অমর হইত না সেও।

ভাষা না হইলে মানুষে পশুতে কোন ভেদও হইত না। মানুষ মরণশীল জীব মাত্র থাকিত। ভাষাকে অমর করিতে আমাদের যে সাধনা তাহাই আমাদিগকে অমর করে।

যতই মানুষকে অমর করুক, ভাষা তো প্রকৃতির সমস্ত ঐশ্বর্য আর ধারণ করিতে পারে না। স্বাধীনতা ভাষার মধ্যেই বসবাস করে। স্বাধীনতার স্বাদ যে পাইয়াছে সেই অমর হইয়াছে। মানুষের বাসনা সে অমর হইবে। এই অমরতা শুদ্ধ লোকের মন, পরমের নজর বা দৃষ্টি হইতেই আসে। স্বাধীনতার মধ্যেই সেই অমরত্ব পাওয়া যায়। স্বাধীনতাই হক জিনিশ, অমরত্বটা আসে নিতান্ত ফাও হিশাবে।

ভাষা ভাষা হইয়াছে সে প্রকৃতি মাত্র নয় বলিয়াই। তাহার এই অপূর্ণতা দূর করিলে ভাষা আর ভাষাই থাকিবে না। অপিচ মনুষ্যজাতি ভাষাকে পূর্ণ করিয়া তুলিতে তৎপর। এই চেষ্টারই অপর নাম স্বাধীনতা। এই যে অপূর্ণতা, যাহার কারণে ভাষা ভাষা হইয়াছে, তাহাকে মুছিয়া ফেলাই যেন মানুষের কথার কর্তব্য। এই ভাষার মধ্যে বসিয়া ভাষার স্বভাববিরোধী কর্তব্যের স্ববিরোধী নাম মানুষ রাখিল ‘স্বাধীনতা’। ভালই করিল বলিতে হইবে।

এই অবশ্যম্ভাবী এবং অসম্ভব কর্তব্যের মধ্যে যত ইচ্ছা লিখিবেন। লিখিতে পারেন। আর লেখা যত, মোছাও তত। এই লেখার মুছিয়া যাওয়াটা কখনো বন্ধ হইবে না। তারপরও আপনার কর্তব্য লিখিয়া যাওয়াই।

এই যে অরক্ষণীয়া রক্ষার সাধনা, এই যে স্বাধীনতা, তাহাই মানুষকে মানুষ করিয়াছে। মানুষ স্বাধীন হইয়া জন্মাইয়াছিল—এই বাক্য না বলিয়া আমরাও একদিন হয়ত বলিতে পারিব, স্বাধীনতাই মানুষ আকারে জন্মগ্রহণ করিয়াছে।


স্বাধীনতা ব্যবসায় বলিতে এতক্ষণ যাহা বুঝাইলাম, কাহারও কাহারও কাছে মনে হইতে পারে তাহা বড় দূরের জিনিশ। ফরাশি বিপ্লবের পর স্বাধীনতা শব্দের অর্থ সীমিত হইয়াছে নিছক বিষয় বা সম্পত্তি আগলাইবার স্বাধীনতায়। এতদিনে স্বাধীনতার মানে দাঁড়াইয়াছে বড়জোর প্রাণ বাঁচাইবার স্বাধীনতা। অন্য সকল অর্থ মওকুফ হইয়া গিয়াছে।

এয়ুনান আর রুমের জগতে স্বাধীনতা শব্দের অর্থ ছিল প্রাণ দান করিবার স্বাধীনতা। ফরাশি বিপ্লবের পর যে বড় এয়ুরোপিয়া সভ্যতা গড়িয়া উঠিয়াছে তাহার অভিধানে সেই অর্থ কিছুটা সরিয়া দাঁড়াইয়াছে। পর্দার আড়াল লইয়াছে।

এখন স্বাধীনতা শব্দের অর্থ মালুম হইতেছে খোদ স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়ার স্বাধীনতা। বুঝাইয়া বলিতেছি। সহি বড় এয়ুনানি নাটকে—যথা সফোক্লেসের আন্তিগোনে কাব্যনাটকে—দেখি নায়িকার স্বাধীনতা আছে তাঁহার অপমৃত সোদর ভাইয়ের দেহ গোর দেওয়ার। মূল্য হিশাবে আপনার প্রাণটা মাত্র দিতে হইবে। ইহাতেই প্রমাণ সে স্বাধীন মনুষ্য। এখানে আসলে তাঁহার বাছিয়া লইবার কিছুই নাই। স্বাধীনতা বাছিয়া লইলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুও বাছিতে হইবে। এখানে স্বাধীনতা ও মৃত্যুর মধ্যে কোন একটা বাছিয়া লইবার পথ নাই। কোন ব্যবসায় নাই।

এখন আরেক জাতীয় পরিস্থিতির উদয় হইয়াছে। এই পরিস্থিতি হইতেই আমি স্বাধীনতা ব্যবসায় শব্দটা বাছিয়া লইয়াছি। এইখানে পরাধীনতার রূপটা খানিক অন্য। এখন আপনাকে ব্যবসায়ের সুযোগটা দেওয়া হইবে। শুদ্ধ দেওয়াই হইবে না, আপনাকে সুযোগটা লইতে বাধ্য করা হইবে।

এলান পাকুলার এক ছবির নাম সোফি’স চয়েস বা সুফিয়ার নির্বাচন। (পাকুলা ১৯৮২) ছবির নায়িকা তাঁহার এক কন্যা আর এক পুত্র লইয়া আউশবিৎস বন্দিশিবিরে হাজির হইয়াছেন। একটি জার্মান সৈন্য আসিয়া তাঁহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিল, জানিতে পারিল তিনি কমুনিস্ট নহেন, এয়াহুদিও নহেন। বরং জাতে পোলদেশি আর ধর্মে ক্যাথলিক অর্থাৎ সহি বড় আদি ও আসল নাসারা।

জার্মান সৈন্যটি বলিল, আপনি যখন নাসারাধর্মে বিশ্বাসী তখন আপনি একটা সুযোগ পাইবেন। অর্থাৎ আপনি বাছিয়া লইতে পারিবেন। আপনার ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোন একটিকে আপনি চাহিলে বাঁচাইতে পারিবেন। যদি একটিকেও বাঁচাইতে না চাহেন তাহাও পারিবেন। ধর্মে জোর জবরদস্তি নাই।
যদি বাছাই না করেন তো আমরা সন্তান দুইটাকেই পুড়াইয়া মারিয়া ফেলিব। সুফিয়া পহেলা পহেলা খানিক ইতস্তত করিলেন। কিন্তু সকল দ্বিধার সীমানাই সিধা। জার্মান সৈন্যরা যখন দুই সন্তানকেই চুলার দিকে লইয়া যাইতে উদ্যত হইল তখন তিনি অন্যমনস্ক হাতে ছেলেটিকে জড়াইয়া ধরিলেন। সৈন্যরা মেয়েকে লইয়া গেল।

যাহাকে বলে স্বাধীনতার স্বাদ, তাহা পাইল সুফিয়া। কিন্তু এই স্বাদ এত বিস্বাদ কেন? যাঁহারা স্বাধীনতা বলিতে কেবল বাছাই করিবার সুযোগ, বাছাই করিবার সুযোগ বলিয়া চিৎকার করেন তাঁহাদের উচিত শিক্ষা হইয়াছে এই গল্পে।

কিভাবে সম্ভব হইল এই শিক্ষা?

যে দুইটা পদার্থের মধ্যে আপনাকে একটা বাছিয়া লইতে বলা হইল, তাহাদের প্রকৃতির ভিতরই এই ধাঁধার উত্তর লুকাইয়া। বাছিয়া লইতে বলা পদার্থ দুইটা তো পরস্পরের বিকল্প নহে, বরং একটা আরেকটার অংশবিশেষ। একই সাথে সামান্য ও বিশেষ। বিশেষ বাছিয়া লইলে সামান্য হারাইতে হয়। না লইলে হারাইতে হয় সামান্যের চাইতে আরো বেশি। (জুপানচিচ ২০০০: ২১৫)

সুফিয়া ছেলেটিকে বাছিয়া মেয়েটিকে হারাইলেন। মেয়েটি বাছিয়া লইলে ছেলেটি হারাইতেন। আর না বাছিয়া লইলে দুইটাই হারাইতেন। তো স্বাধীনতা ব্যবসায়ী এই অবস্থায় কি করিবে? সুফিয়া যাহা করিয়াছেন স্বাধীনতা ব্যবসায়ীও তাহাই করিবে। কারণ হিশাব করিয়া দেখিলে সে দেখিবে, দুইটা সন্তান হারাইবার চেয়ে একটা হারান মন্দের ভাল।

এই যুক্তিতেই লোকে ছিনতাইকারীর ছুরির সামনে পকেটের টাকার তোড়া তুলিয়া দেয়। টাকা ছাড়িলে শুদ্ধ টাকাই যাইবে। কিন্তু টাকা না ছাড়িলে টাকা যাইবে তো যাইবে, জীবনটাও যাইবে। অতয়েব টাকা ছাড়াটা মন্দের ভাল।

প্রশ্ন উঠিতে পারে, ছিনতাইকারী কেন ‘তোমার প্রাণ না টাকা’ বলিয়া একটা বাড়তি কথা উচ্চারণ করিবে? করিবে সম্ভবত এই সান্ত্বনা পাইবার উদ্দ্যেশ্যে যে টাকাটা তাহার হাতের শিকার আপনা আপনি আপন ইচ্ছায় খাস দিলে তাহার হাতে তুলিয়া দিয়াছে।

একই যুক্তিযোগে শত্রুসেনা যদি মুক্তিযোদ্ধা ধরিবার পর তাঁহাকে বলে, ‘বাছিয়া লও, কি চাও তুমি—স্বাধীনতা, না মৃত্যু?’ সেই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা চাওয়াই ভাল, কারণ তাহাতে মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা চাহিবার সুখটাও পাইবেন, আর মৃত্যুটাও নিশ্চিত হইবে। এদিকে বেরসিকের মতন শুদ্ধমাত্র মৃত্যুই চাহেন তো মনে সন্দেহ হইতে পারে আপনি নিছক মরিবার জন্যই মরিয়াছেন। মনে হইতে পারে আপনি আত্মঘাতী, আদমবোমারু।

আধুনিক স্বাধীনতা ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় উপার্জন আরেক জায়গায়। জীবনের সবচেয়ে বড় ধন কি? আরস্তু বলিয়াছিলেন, এয়ুদায়মনিয়া বা ‘সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য’। কান্ট তাঁহার সহিত একমত হয়েন নাই। তিনি উত্তরে বলিয়াছিলেন, সবচেয়ে বড় ধন ‘স্বাধীনতা’। এখানেই জটিলতার শুরু।

‘সুখ’ এমন জিনিশ যাহা আপনার থাকিতে পারে, নাও থাকিতে পারে। অনেকটা টাকার মতন। এমনকি আপনার প্রাণও এই স্তরেরই জিনিশ। এই আছে এই নাই।

অথচ স্বাধীনতা বা ইজ্জত-সম্মান অন্য স্তরের জিনিশ। স্বাধীনতা আর মানুষ এই কারণেই সমার্থক শব্দ হইয়াছে। স্বাধীনতা নাই তো মানুষও নাই। স্বাধীনতার জন্যই মানুষ প্রাণধারণ করে। স্বাধীনতার ছায়া মৃত্যুর পরপার পর্যন্ত শুইয়া থাকে।

মানুষ যদি স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে পারে, তবেই না সে স্বাধীন মানুষ। আর যে মানুষ প্রাণের জন্য স্বাধীনতা সমর্পণ করে সে দাস। যে মানুষ স্বাধীনতার জন্য ন্যায়বিচার বিসর্জন দেয় সে মানুষ স্বাধীনতা ব্যবসায়ী। একই যুক্তিতে, যে মানুষ ন্যায়বিচারের স্বার্থে খোদ স্বাধীনতা পর্যন্ত বিসর্জন দিতে রাজি সে হয়ত স্বৈরাচারী। তার মানে অবশ্য এই নহে যে স্বৈরাচারী মাত্রেই ন্যায়বিচার ব্যবসায়ী। স্বৈরাচারীর বন্দুকের নল নানান কারণে নিত্য উচা হইয়া থাকে।

‘হয় প্রাণ নয় টাকা’ অথবা ‘হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু—এই দুই ধরনের পরীক্ষাই স্বাধীনতা ব্যবসায়ীকে নিত্য পাশ করিতে হয়। এমনি তাহার কপাল। এক পরীক্ষায় বিশেষ ধরিয়া সামান্য হারাইতে হয়। আর পরীক্ষায় যাহা চাই তাহা পাই না, যাহা পাই তাহা চাই না।


আমাদের যুগের নাটক আরো জমিয়া উঠিয়াছে। আপনার সামনে প্রশ্নটা আজ আর মাত্র ‘স্বাধীনতা, না মৃত্যু’’ আকারে হাজির করা হইতেছে না। আজ প্রশ্ন তোলা হইতেছে ‘যুদ্ধ, না ভালবাসা’ আকারে। অথচ বিজ্ঞাপন দেওয়া হইতেছে ‘যুদ্ধ ও ভালোবাসা’। এই নির্বাচন অন্য জাতের নির্বাচন। এই জাতীয় আত্মত্যাগের আহ্বান আসিতেছে কোন জায়গা হইতে?

বলা হইতেছে, তোমার ধর্ম—মানে খোদ মানবতা বা মনুষ্যধর্ম—যদি বাঁচাইতে চাহ তো তোমাকে তোমার মান-মর্যাদা, ইজ্জত-সম্মান, তোমার স্বাধীনতা, তোমার জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, এক কথায় তোমার ‘আপন’কেও মারিয়া ফেলিতে হইবে।

তোমাকে, তোমাদের তিরিশ চল্লিশ জনকে, দল বাঁধিয়া আত্মসমর্পণকারী কি বন্দি পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে ভারতে চলিয়া যাইতে হইবে। (ইব্রাহিম ২০১০: ৮) নতুবা যে সকল পুরুষাঙ্গ তোমাকে বিবাহ করিবে, তাহাদিগকে নতুন মডেলের লাল রঙের জাপানি গাড়ি হইতে শুরু করিয়া অপ্রকাশিত কবিতার বহি প্রকাশ পর্যন্ত উপহার দিতে হইবে। (হোসেন ২০১১[১])

এক কথায় বলিতে, তুমি যদি এই জীবন লইয়া কি করিবে তাহা স্থির করিতে চাহ, তো ‘এই জীবন লইয়া কি করিব?’—এই প্রশ্নটাই আর করা চলিবে না। ধরা যাক তুমি বলিলে, আমি তো আমার ‘স্বাধীনতা’ ছাড়িতে পারিব না! তোমাকে তখন বলা হইবে, স্বাধীনতা ছাড়া তোমার তো দিবার আর কিছুই নাই। তোমার সতীত্ব-স্বামীত্ব তো আগেই আমরা কাড়িয়া লইয়াছি।

আর কিছুই যদি না দিলে তো তুমি মানুষ হইবে—তথাকথিত দক্ষিণ এশিয়ার বা যাযাবর প্রাণের মানুষ হইবে—কি উপায়ে? ‘ফ্যান্টাসি ও অলীক বস্তুসামগ্রীর এনসাইক্লোপিডিয়া’ হইতে উদ্ধার করিয়া তোমাকে জানান হইবে, তুমি তো ‘সিংহষাঁড়’ হইয়া গিয়াছ। সেই ১৯৭৭ সালেই কবি বলিয়া গিয়াছেন, ‘যে বস্তু, প্রাণী বা রাষ্ট্রের আত্মবিকাশের কোন সামর্থ্য নাই তাকে সিংহষাঁড় বলে।’ রে সিংহষাঁড়, তোমার মালিক মহোদয় মাঝে মাঝে ভাবেন, খোদ কসাইয়ের ছুরিটা চালাইয়াই তোমার প্রাণধারণ সার্থক করিয়া তোলেন। কিন্তু পারেন না। তাই তিনি তোমাকে যতদিন সম্ভব পুষিবেন। ‘কারণ,’ কবি জানেন, ‘সব প্রাণীই একদিন প্রাণত্যাগ করে। ষাঁড় কিম্বা সিংহ অথবা সিংহষাঁড় সবাই ঐতিহাসিকভাবেই অপসৃত হবে।’ (মজহার ২০০৫: ৮৬—৮৮) তাহাই তাঁহার অপেক্ষার গূঢ় কারণ।

অপেক্ষায় আনন্দ আছে। তাই এতদিন পর ২০১১ সাল নাগাদ আসিয়া দেশের রকমারি সংস্কৃতিবাজারে স্বাধীনতা ব্যবসায়ের মনোহারি সওয়ালটি নতুন আকারে হাজির করিয়াছে মেহেরজান। (হোসেন ২০১১[২]) ছবিটি দেখিয়া অনেকেই ব্যথিত হইয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে চারিজন বুদ্ধিজীবী দেশের প্রথমশ্রেণির এক দৈনিকে ব্যথার বয়ান প্রকাশ করিয়াছেন। সমাপন করিয়াছেন দুঃখের পূজা। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর প্রতি অবমাননার ছবি’—বয়ানের এই নামেই তাঁহাদের তীব্র ব্যথা ধরা পড়িতেছে। (ফেরদৌস গং ২০১১) ইহার মানে কি বুদ্ধিজীবীরা চাহিতেছেন, ছবিটি নিষিদ্ধ করা হৌক, কিংবা এর প্রদর্শনী বন্ধ করা হৌক?
মেহেরবানি করিয়া বুদ্ধিজীবীরা বলিলেন, না, না, সে প্রশ্নই উঠিতেছে না—’না, মোটেও তা নয়। আমরা নিষিদ্ধের বিপক্ষে।’ ধরিয়া লইতেছি তাঁহারা বলিতেছেন, তাঁহারা ‘নিষিদ্ধ করা’র বিপক্ষে, ‘নিষিদ্ধ বস্তু’র বিপক্ষে নহেন। তথাস্তু।

কিন্তু কেন? তাঁহারা লিখিতেছেন: ‘আমরা মনে করি, চিন্তা আর সৃষ্টি প্রকাশের সব জানালা-দরজা খোলা থাকুক। এটি খোলা রাখতে হবে আলো-বাতাস আসার জন্য, সঙ্গে ধুলোবালি তো কিছু আসবেই। জাতির জন্য প্রতারণাপূর্ণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর এই ছবিটি না হয় ধুলোবালি হিসেবেই থাকুক।’ (ফেরদৌস গং ২০১১)

স্বাধীনতা ব্যবসায়ের এমন সুন্দর উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি হইতে পারে না। হয় তো হইতে পারে খোদ মেহেরজান। যে ছবিকে বুদ্ধিজীবীরা ‘ধুলোবালি’ বলিয়া হালকা করিতেছেন, সেই ছবি ধর্ষণ ও ভালবাসার মধ্যে কার্যত কোন তফাত কিন্তু স্বীকার করিতেছে না। বলিতেছে—দুইটাই যুদ্ধমাত্র। ‘একটি যুদ্ধ ও ভালোবাসার কাহিনী’ বলিয়া বিড়ম্বনার দরকার কি? ‘একটি যুদ্ধ ও যুদ্ধের কাহিনী’ কিংবা ‘একটি ভালবাসা ও ভালবাসার কাহিনী’ বলিতে আয়েবের কি ছিল? সে নাম আরো সার্থক হইত।

চির উন্নতশির বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাঁহারা চিন্তা আর সৃষ্টি প্রকাশের মায়ায় ধর্ষণ ও গণহত্যার সাফাই শুনিতে সদাপ্রস্তুত তাঁহাদের প্রত্যেককে একটা করিয়া স্বাধীনতা ব্যবসায় পদক দেওয়ার কথা হয়ত বিবেচনা করা যায়। ‘জাতীয়তাবাদী আবেগ’ দমনের বিহিত নিশ্চয় আরো আছে। আপাতত এইটুকুতেই চলিবে।
কারণ আমরা জানি মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্তই। ঘড়ি বার বাজিলেও তিনি ফজরের আজান দিয়াই যাইবেন।

……………
নতুনধারা, সংখ্যা ১৭ (চৈত্র ১৪১৭)

বোধিনী
১ ‘Man was born free and everywhere he is in chains.’ (Rousseau 1999: 45) ‘L’homme est né libre, et partout il est dans les fers.’ (Rousseau 1971: 518) …
‘Men are born and remain free and equal in rights. Social distinctions may be based only on common utility.’ (‘Declaration of the Rights of Man and Citizen,’ Art. 1) ‘Les hommes naissent et demeurent libres et égaux en droits; les distinctions sociales ne peuvent être fondées que sur l’utilité commune.’ (‘Declarations des droits de l’homme et du citoyen,’ Art. I)
২ ‘Even if each person could transfer himself, he could not transfer his children; they are born men, and free their freedom belongs to them, and nobody except them has the right to dispose of it.’ (Rousseau 1999: 50) ‘Quand chacun pourrait s’aliéner lui-même, il ne peut aliéner ses enfants; ils naissent hommes et libres; leur liberté leur appartient, nul n’a droit d’en disposer qu’eux.’ (Rousseau 1971: Livre I, ch. IV, p. 520) …
‘There is one sole law that by its nature demands unanimous consent: it is the social pact. For civil association is the most completely voluntary of acts; no one under any pretext at all, may enslave him without his consent. To conclude that the son of a slave is born into slavery is to conclude that he is not born a man.’ (Rousseau 1999: 137) ‘Il n’y a qu’une seule loi qui, par sa nature, exige un consentement unanine; c’est le pacte social: car l’association civile est l’acte du monde le plus volontaire; tout homme étant né libre et maître de lui-même, nul ne peut, sous quelque prétexte que ce puisse être, l’assujettir sans son aveu. Décider que le fils d’une esclave naît esclave, c’est décider qu’il ne naît pas homme.’ (Rousseau 1971: Livre IV, ch. II, p. 564)

দোহাই

১ নীলিমা ইব্রাহিম, আমি বীরাঙ্গনা বলছি, ৪র্থ প্রকাশ (ঢাকা: জাগৃতি প্রকাশনী, ২০১০); ১ম প্রকাশ ১৯৯৮।
২ সলিমুল্লাহ খান, আদমবোমা, আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান সম্পাদিত, ইতিহাস কারখানা ২ (ঢাকা: আগামী প্রকাশনী এবং এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা, ২০০৯[১])।
৩ আহমদ ছফা, ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ,’ আহমদ ছফা রচনাবলি, নূরুল আনোয়ার সম্পাদিত, ২য় খণ্ড (ঢাকা: খান ব্রাদার্স, ২০০৮[২]), পৃ. ৯—৮৪।
৪ রোবায়েত ফেরদৌস গয়রহ, ‘মেহেরজান: মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর প্রতি অবমাননার ছবি,’ প্রথম আলো, ২৬ জানুয়ারি ২০১১, পৃ. ১২।
৫ ফরহাদ মজহার, ‘সিংহষাঁড়,’ কবিতাসংগ্রহ, সাইমন জাকারিয়া সঙ্কলিত ও গ্রন্থিত (ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৫), পৃ. ৮৬_৮৯।
৬ রুবাইয়াত হোসেন, ‘”মেহেরজান” যা বলতে চেয়েছে,’ প্রথম আলো, ২৬ জানুয়ারি ২০১১[১], পৃ. ১৩।
৭ ——–পরিচালিত, মেহেরজান (ঢাকা: ইরা মোশন পিকচার্স, ২০১১[২])।
৮ ‘Declaration of the Rights of Man and Citizen,’ August 20-26, 1789, in Georges Lefebvre, The Coming of the French Revolution, trans. R. R. Palmer (New York: Vintage Books, 1960), appendix.
৯ ‘Declarations des droits de l’homme et du citoyen,’ 20-26 août 1789, facsimile illustration, in J.-J. Rousseau, Oeuvres complètes, vol. 2 (Paris: Éditions du Seuil, 1971), p. 577.
১০ G. W. F. Hegel, ‘The Positivity of the Christian Religion,’ Early Theological Writings, trans. T. M. Knox and Richard Kroner (Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 1975[1]), pp. 67-181
১১ _____ ‘The Spirit of Christianity and Its Fate,’ Early Theological Writings, trans. T. M. Knox and Richard Kroner (Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 1975[2]), pp. 182-301.
১২  Immnuel Kant, ‘An Answer to the Question: “What Is Enlightenment?”,’ Kant: Political Writings, trans. H. B. Nisbet, ed. Hans Reiss, reprint (Cambridge: Cambridge University Press, 1991), pp. 54-60.
১৩ _____ Religion within the Limits of Reason Alone, trans. Theodore M. Greene and Hoyt H. Hudson (New York: Harper & Row, 1960).
১৪ Jacques Lacan, Écrits, trans. Bruce Fink (New York: W. W. Norton, 2006).
১৫ Judith Miller, ‘Style is the Man Himself,’ in Ellie Ragland-Sullivan and Mark Bracher, eds., Lacan and the Subject of Language (New York: Routledge, 1991), pp. 143-51.
১৬ Alan Pakula, dir., Sophie’s Choice (UK/USA: IFC Entertainment and Keith Barish Production, 1982).
১৭ Terry Pinkard, Hegel: A Biography (Cambridge: Cambridge University Press, 2000).
১৮ Jean-Jacques Rousseau, Discourse on Political Economy and The Social Contract, trans. Christopher Betts, reprint (London: Oxford University Press, 1999).
১৯ _____ ‘Du Contrat social ou Principes du droit politique,’ Oeuvres complètes, vol. 2 (Paris: Éditions du Seuil, 1971), pp. 513-85.
২০ Alenka Zupancic, Ethics of the Real: Kant, Lacan (London: Verso, 2000).

 

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top