মেহেরগড়
আদিতে ভারত ভিন্ন প্রস্তর যুগের
পৃথিবীর পুরাতন প্রাচীন সভ্যতা;
বালুচিস্তানের কাচ্চি, সমতল ভূমি
বোলান নদীর পাড়ে কোয়েটা শহর-
উচ্ছ্বল দিনের ভাঁজে রোদের ঝকমক।
কিলেগুল, মহম্মদ, কোটডিজি গুমনা,
মুণ্ডিপাক, মেহের গড়- রানা ঘুনডাই,
প্রাচীন আনজিরা খ্যাত নিত্য পাকিস্তান।
চাষাবাদ ও শিকার, পশুর পালন,
মাটিগৃহে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্যে;
গম ও যবের চাষ, হাড়-হাতিয়ার।
আগুনের ব্যবহার, উনুনে রন্ধন-
তামা ও শিশার গুণ অঙ্গে ঝলমল,
উন্নত গ্রামকেন্দ্রিক সিন্ধু সভ্যতার।
শ্রাবস্তী
প্রত্যাবর্তনের পথ দীর্ঘ হতে থাকে!
কৌশল রাজ্যের দ্বারে ক্ষণিক দাঁড়ালে-
রামপুত্র লব-কুশ ডাকে অন্তঃপুরে।
রাপ্তি নদীর দক্ষিণে শ্রাবস্তীর মেঘ,
তৃষ্ণাকাশ জেগে ওঠে ভিন্নতার মোহে।
যে ভাষা উঠেছে বেড়ে ঋষী বাল্মীকির,
সম্রাট শ্রাবস্তহীন অযোদ্ধার ঘ্রাণ;
সাধু সাবত্থার স্মৃতি বয়ে রামায়ন।
অনাথ পিণ্ডিক স্তুপ, জৈন চৈত্যগৃহ;
কিংবা্ আঙ্গুলিমালার যত লোকাচার-
রাজন্যকুমার জেত, শ্রেষ্টী সুদত্তর,
ছড়ালেন বুদ্ধপ্রীতি সাহেত মাহেত
নির্মাণে গন্ধকুটির ভক্তি পরম্পর
রচিলেন বিস্মৃতির প্রবল পাহাড়।
আম্রপালি
“আজ যে সৌন্দর্য থাকে, কাল তা থাকেনা!”
গণরাজ্য বৈশালীর কবি আম্রপালি।
অনিচ্ছায় অনাদরে একদা নগর নটী,
সবই অনিত্যজ্ঞানে, বুদ্ধের সংস্পর্শে।
“একদা আমার চুল, ভ্রমরের মত,
আজ তা শনের নুড়ি, প্রাণে অবিশ্বাস্য।’
ছুটে আসা যুবকেরা, শত ধনী শ্রেষ্ঠ,
তৃষ্ণার্ত অন্তর খুঁজে হৃদ শান্তি সুখ।
মুক্তি তার প্রয়োজন ক্লান্ত শ্রান্ত মন
নাগরিক দায় নিতে যতটা জীবন!
সমগ্র ভারত ভূমে শত শত নারী,
সপেছে জীবন মান রূপতৃষ্ণা খনি।
বৈশালী নগর ছোটে, পাল্টা পাল্টি ক্ষণ,
বুদ্ধের স্মরণে জ্ঞান, বিম্বিসার রথ।
ব্যাসদেব
‘যথাতে সংযোগ হয় বিয়োগ অবশ্য।
শরীর অনিত্য জান মরণ অবশ্য।’
পিতা পরাশর মুনি মাতা সত্যবতী,
জন্মিলেন জগতদ্বায় যমুনার দ্বীপে।
দু”চোখে ঔজ্জল্য, মুখে নীল দাড়ি,
তপস্যায় মহর্ষিত বদরিকাশ্রমে;
রচিতে মহাভারত, লিপিবদ্ধ রূপে-
গণেশ নিয়োগ পেল, ব্রহ্মার নির্দেশে।
সংকলক,সমন্বায়ক, জ্ঞানান্বেষী ঋষি,
বেদের বিন্যাসে খ্যাত, কৃষ্ণ- দ্বৈপায়ন।
নাটকীয় শর্তযোগে দু”জন সম্মত-
ব্যাসদেব তার শ্লোক সৃজনের মাঝে,
প্রবল জটিল শ্লোক প্রবেশিলা পটে।
ক্রমশ আলোকলতা সমগ্র ভারত-
ব্রহ্ম সূত্র-সূজক সূত্রে স্রষ্টা অন্বেষণ,
শাখাযুক্ত বেদ, চার-বেদান্ত দর্শন।
যাজ্ঞবল্ক্য
‘আত্মাই দ্রষ্টব্য, শ্রোতব্য, মন্তব্য ও নিশ্চিতরূপে ধ্যেয়।
শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যামনের দ্বারা আত্মার দর্শন হইলে
তদ্দারাই এই সমস্ত বিদিত হয়।’
– বৃহদারণ্যকোপনিষদ, দ্বিতীয় অধ্যায়।
মিথিলার বিদেহের এক আশ্রমপতী,
মহারাজা জনকের সমসাময়িক;
সাধারণ গৃহস্থের জীবন যাপন।
‘ব্যক্তি আত্মা থেকে প্রেম হয় উৎসারিত
মূলতঃ ব্রহ্ম ও আত্মা এক ও অভিন্ন।’
পর্বাপর মূলভিত্তি ‘ অদ্বৈত দর্শন’।
বৃহদারণ্যকোপনিষদ, চতুর্থ ব্রাহ্মণে,
ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্যের কালীন সীমায়।
মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্য সূচনা সংবাদে,
অসম্ভব অমরত্ম বিত্তের ভূবনে।
আত্মজ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান প্রকৃত প্রধান,
অসামান্য বস্তুপ্রেম আত্মার বিকার।
যদিও বৈরাগ্য মন বাণপ্রস্থ কালে-
সত্যসার ডাকে সেই ধ্রূপদ সন্ন্যাসে।
আর্যভ, আর্যভট্ট
‘চাঁদের আলো আসলে,
সূর্যের আলোর প্রতিফলনের প্রতিফলন।’
নর্মদা ও গোদাবরী নদীর মাঝখানে
প্রাচীন অশ্মকা, কালে- গুণে গুণান্বিতা।
পাটালিপুত্রের চিহ্ন বর্ণনা উজ্জ্বল।
কুসুমপারার টান অন্তরে আকূল।
গণিতের স্বর্ণযুগ সম্পূর্ণের জ্ঞান,
নালন্দায় স্থিতি পায় আলোক সম্ভার।
দীর্ঘ সাধনার কথা জানান ভাস্কর;
আর্যভট্টীয় অন্যটি সে আর্যসিদ্ধান্ত।
প্রচলনকারী শূন্য, দশমিক সংখ্যা
আধুনিক ত্রিকোনমিতি, পাইয়ের মান,
বীজগণিতে কুত্তুক, বর্গ ও ঘনের-
সূর্য-চন্দ্র গ্রহণের সময় নির্ণয়ে।
ভারত ভূমির ঘ্রাণ ধারণে-গ্রহণে,
আর্যভট্ট এলো গেলো সভ্যতা নির্মাণে।
খনা
“ যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ।
যদি বর্ষে ফাগুনে, রাজা যায় মাগুনে। ”
সিংহল রাজের কন্যা খণজন্মা খনা-
পালিত পুত্র মিহির, প্রণয় বিজয়ী;
জ্যোতিষশাস্ত্রের সিঁড়ি একত্রে টপকান।
ফিরিলেন নিজদেশ– দীপ্ত উজ্জয়নী;
সমুদ্র গুপ্তের কাল– শ্বশুর বরাহ।
রাজন্যের জিজ্ঞাসার শুদ্ধ সমাধান–
অপারগে, খনা দিল প্রকৃত উত্তর–
সেই রোষে জ্যোতির্বিদ, ক্রোধে অগ্নিসম।
অগত্য পুত্র মিহির– খনা পলায়ন!
পূর্বে কাটা জিহবা তাঁর চন্দ্র কেতুগড়,
বঙ্গভূমি দেউলিয়ায় স্থায়ি বসবাস।
দিনে দিনে বঙ্গবাসী! প্রকৃতির পাঠ–
ভাষা পেল, প্রবচন বাস্তব সম্মত;
গড়ে দিল ঐতিহ্যের চলমান রথ।
শিমুল আজাদ
জন্ম ০৮ নভেম্বর ১৯৭১ খ্রি. বাবুগঞ্জ, বরিশাল। যশোরে বেড়ে উঠেছেন। পেশাঃ অধ্যাপনা। লিখেছেন এবং লিখছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে। তিনি শিল্পগ্রাম নামে একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : বিরুদ্ধ প্রবাসে (একুশের বইমেলা ২০১০, ঢাকা); জন্মান্ধ আয়নার পাশে (একুশের বইমেলা ২০১১,ঢাকা); রোপিত রোদন (একুশের বইমেলা ২০১২, ঢাকা); প্রত্যাবর্তনের কালে (একুশের বইমেলা ২০১২, ঢাকা); আশ্চর্য অপরাধী (একুশের বইমেলা ২০১৩, ঢাকা); আলোরস্ক্রিন: শব্দময় নৈঃশব্দ্য ( সেপ্টেম্বর ২০১৭ কবিতীর্থ, কলকাতা,ভারত)।
প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থ: অদ্বৈত গদ্যের ঘ্রাণ (একুশের বইমেলা ২০১১, ঢাকা); শিল্পের গোপনীয়তা (একুশের বইমেলা ২০২০, ঢাকা)।
সম্মাননা ও পুরস্কার : জয়পুরহাট সাহিত্য সংসদ কর্তৃক সাহিত্য সম্মাননা ২০১৩; পাবনা মহিয়সী সাহিত্য পাঠচক্র কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা পদক ২০১৪; শব্দসাঁকো সাহিত্য সম্মাননা-২০১৭, কলকাতা, ভারত।
খুব ভালো লাগলো। সুন্দর পরিবেশনা।