হঠাৎ মৃত্যুযুগ
হীরক-রোদের উত্তরে এসে
মাটিমাখা ভাষার গোধূলি পাবো, সে আমি নিজেই ভাবিনি!
ছায়া মেলে দুলছে পাতারা, গাছে-
ধানী গন্ধের পাথারে ডেকে, ঈর্ষাকে, ঘোড়ায় এনে বসাই
গম্ভীর দাবার ছকে এসে, মহামারী, ইশারা পাঠালো কি যে!
অনেকটা হেঁটে এসে পা রাখি দ্বিধাচিহ্নে-
এইদিকে মৃত্যুও, ভ্রাতৃপ্রতীম;
আর হে বিপন্নতার গান, কিন্নরী রাত্রির শেষে, চোখে চোখে এতো যে
অনিদ্রা রপ্ত হলো। এতে কার অন্তর্ধান, তোমাকে তৃপ্ত করে, বলো?
পৃথিবীকে প্রতিহত করে, এ কেমন ট্যাবুর
হঠাৎ মৃত্যুযুগ?
ভীন্নতর গোধূলির কাছে, স্বরলিপি গচ্ছিত রেখে
ছোপ-দাগা হরিণীরা চায়, নিজ নিজ কান্নাকে ফিরে!
এই বাঁক থেকে নিজ নিজ গান, তোমার করবী ছেড়ে
চাঁদলাগা হাওয়ার আঘাতে কুশল;
ফিরে যাচ্ছে ইছামতী, বুকে নাও তাকে।
আড়াল
আমরা কত না মশকরা শিখে গেছি, সকাল সকাল-
ডানে সরে যাচ্ছে মেঘ, কলোনিতে বৃষ্টি হবে হয়তো-বা;
কাছে কারো উচ্চারণের ভিতর, ঘূর্নি ওড়ে, কুরসিনামার মেঘে!
আমরা সকলে হাত উঁচিয়ে, ডাকছি কাউকে কেউ
হয়তো-বা মাঠে ঘাসের স্মৃতিকে পেয়ে
হর্ন বাজাচ্ছে অফিস-বাস!
তারপর শক্ত এক ঝাঁপটাঅলা বাতাস
কব্জিটা ঘুরিয়ে এই দিকে আসে!
প্রজাপতি নেই, কাশফুলেরা হৃদয় হতে, লাফিয়ে নামে
আর, তোমার চোখের ঘন তারায়, হালকা ঢেউয়ের পুকুর
এদিক চেয়ে, হাতছানি দেয়-
এতটা সকালে এসে, গাড়িদের ভীড় আর তাড়াহুড়া নিয়ে
এতসব আলোচনা ফেলে, তুমি কেনো বলো, আড়াল খুঁজছো বাজান?
ঝাড়বাতি জ্বলে টের পাও?
আমার তুমি আশ্চর্য কলি, জানো ঝিলিমিলি?
আমার তুমি, একার তুমি
কুঁড়েঘর আলো করা নারী, দ্বিতল চাঁদের
মেঘছোঁয়া পাড়, বিজলি-কিনার ঢের!
আমার বিশদে তুমি কালো মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে
দৌড়হীন ঘর, সে-ঘর বিস্মিত, পাহাড়ের চেয়ে
কতো উঁচু হলে মনে ছাপ পড়ে চেহারার, আর
দু’দিকে নদীকে নিয়ে জনপদ উপমিত কবিতার
ধ্বনি, আমার তেমন তুমি, মাটি ফুঁড়ে গাছের শেকড়
দাগ কেটে ছাড়ায় নিজেকে, সে-রকম মাটির ওপর
আলো আর আলোকিত ঘর, সে-তুমি আমার
দ্যুলোক-ভরাট হাসি, সে-হাসি মেঘের সাঁতার!
আমার তুমি আশ্চর্য ফুল, এইদিকে চাও
লোকে ব’লে যাক, ঘুরেফিরে যাক ব’লে
ঝাড়বাতি, নিভু দমে জ্বলে, তুমি টের পাও?
তাকালে তোমার চোখে, তাকালে অতলে!
তুমি সে-অতল, তোমার সাক্ষাত পেয়ে*
শতাব্দী পেরিয়ে আসা পাখী নির্ভয়ে
বুকে আসে সবুজ উড়াল নিয়ে, চঞ্চল;
আমার সে-তুমি ঝুমকালতা, ও’প্রাঞ্জল!
কাছেই ফারাও
আমাদের স্বপ্নের মুখ তালাবদ্ধ
প্রত্যাশার গলা ধরে ছোবল দিতেছে সাপ;
দূর কোনো গ্রামে ঢুকে পড়া অতিথি পাখির
বিপন্নতার মতো, ফ্যালফ্যাল করে আছে আমাদের চোখ!
আর জবানে জখম নিয়ে করতালি সমেত আমরা
হেসে উঠি মাঝেমধ্যে, যেহেতু প্রায়ই আমাদের
নগর-জীবন বাউন্সি পিচ; আমাদের বেঁচে থাকাটা
পোশাকি- প্রতিশ্রুতিরা, হেঁয়ালি!
এর ভিতর গভীর রাতে
বীণার উজ্জয়িনী শুনি, ফাতিহা কিরাত যেনো
শাদা কবুতর, কোনো দূর মেঘলা জাদুর কাছে
রেখে গেছে গুপ্তচিঠি, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার গায়
ফিরে আসা রপ্ত করে তারা, একে অন্যের কাছে।
ডুমুর ধরেছে ডালে, লেবুগাছ কাছে পেয়ে
কাঠবিড়ালী, মগডালে উঠে গেলো একা!
সমস্ত ভাণ পেরিয়ে আসি, সঞ্জিবনী হাওয়ার কাছে;
মৃতপ্রায় নদীটির সাথে দেখা, মৃতপ্রায় আছিয়ার সাথে দেখা;
কাছেই ফারাও, কাছেই কড়াই, ফুটন্ত তেল!
আত্মপক্ষাঘাত
ঘুরে-ফিরে আসে অন্ধত্বের স্মৃতি, অহমিকা-ঢেউ লেগে ভাসমান তরী;
যেনো বুক থেকে ছুটে আসা বিরান হাওয়ার তোড়ে, ঝাউপাতা নড়ে গিয়ে
আড়াল করছে চাঁদ!
এই জলা থেকে বেরোতে পারি না আমি, দিল-দরোজার সামনে থেকে;
কান পাতলেই নিস্কৃতিহীন রাত-জাগরণ ডাকে, পৃথিবীর দিক থেকে ডাকে
স্মৃতির পশলা!
জ্বর ঘিরে থাকা অথৈ পুষ্পকাল
শিশিরে স্নিগ্ধ করে, ত্রিদিক শূন্য করে-
সব যেনো বালুঝড়ে ঢাকা, ফিরে আসে পিতার ভ্রূ-কুটি;
আর সহজেই
যতসব মিথ্যাকে মগজ থেকে এনে, দাঁড় করে রাখো সত্যের মতো
সরু ও সবাক ধমনীতে! যতো হাসি-করতালি, কান্নাকে লুকানো
রিং-টোনে বাজে, ততোদূর নিরাময় নাকি?
ঘুমাক সকলে, এই ভেবে পাথর ভরেছো বুকে?
শেষমেশ দেখো, ভুলে থাকা ভাণের ধাক্কা লেগে
সারে নাকি আত্মপক্ষাঘাত?
সাজ্জাদ সাঈফ
লেখক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
জন্ম-১৯৮৪, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
সম্পাদনা- নীহারিকা (রম্য পত্রিকা, ২০০২ইং), ঈক্ষণ (লিটলম্যাগ, ২০০৭)
কাব্যগ্রন্থ- কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা, মায়ার মলাট, ভাষার সি-বিচে, বহুদিন ব্যাকফুটে এসে।