মুম রহমান
গল্প : ০১. আমার এক লক্ষ প্রেমিকা
তার নাম যদি আমি এক লক্ষবার লিখতে চাই তবে আমার আয়ু লাগবে ২৭৩.৯৭২৬০২৭৩ বছর। সে ভাবে, শুধু নামই লিখবো না, আমি ওকে যেদিন যে নামে ডাকবো, সেদিন সে রকমও দেখবো।
এভাবে সে একেকদিন প্রেমিকাকে পেয়ে যাবে গান, পাথর, নদী, আগুন, জলপাই,সন্দেশ, পৃথিবী… রূপে।
ডাকতে ডাকতে সে পেয়ে যাবে সমুদ্র, পাহাড়, বই, পাখি, ফুল, পুতুল, ছবি, মা… আরো কত কী।
তাছাড়া ফুল নামে ডাকা হয়ে গেলে তাকে ডাকবে বেলি, গোলাপ, হাসনাহেনা, কামিনী, মাধবী নামে…।
নদী নামে ডাকা হয়ে গেলে তাকে ডাকবে মেঘনা, পদ্মা, যমুনা, শীতলা, ধানসিঁড়ি, রূপসা নামে…।
পাখি নামে ডাকা হয়ে গেলে তাকে ডাকবে বুলবুল, টুনটুনি, চড়ুই, টিয়া, দোয়েল, কোকিল, শ্যামা… নামে।
আর যেদিন যে নামে ডাকবে সে রূপে পেয়ে যাবে বলেই, বেলি নামে ডাকলেই তার প্রেমিকার রঙ হবে সাদা, গন্ধ হবে তেমন শান্ত মধুর। আর বলবে আজ আমাকে নাও ফুলদানিতে।
এভাবে যেদিন প্রেমিকাকে সে ধানসিঁড়ি নামে ডাকবে সেদিন তার বাড়ি হবে বরিশাল। মনে পড়বে জীবনান্দকে আর বলবে, আবার আসিবো ফিরে।
এভাবে যেদিন তাকে টুনটুনি নামে ডাকবে সেদিন তার প্রেমিকা হবে বড্ড ছটফটে। এই ডাল থেকে ছুটে যাবে সেই ডালে। আর বলবে, তেল আনো নুন আনো, পিঠা বানাই আজ।
এভাবে সে তার একলক্ষ প্রেমিকাকে পেয়ে যাবে একজনের মধ্যেই। এ জন্য সে শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে ২৭৩.৯৭২৬০২৭৩ বছরের আয়ু।
গল্প : ০২. চুড়ি
আমি তাকে সর্বস্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরি। তীব্র চুম্বন করি। সে আমাকে আঁকড়ে ধরে। আমরা শরীরের সব জোর দিয়ে আমাদের সঙ্গে মিশে যেতে থাকি। আর তখনই পুট করে একটা চুড়ি ভাঙে। তার হাতের চুড়ি ভেঙে আমার পিঠে গেঁথে যায়।
সে ছেড়ে দেয় আমাকে।
উ, হুঁ, ছেড়ো না আমাকে।
তোমার পিঠ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে, ভাঙা চুড়ি ঢুকে গেছে পিঠে।
যাক, কিছু হবে না।
দেখি না, দেখি! ওর ওড়নাটা আমার পিঠে চেপে ধরে।
স্যরি, তোমার চুড়িটা ভাঙলো।
ধুরও পাগল!
তুমি আমাকে খুব ভালবাস, তাই না, জান?
একটুও না।
আমার কেন যেন খুব কান্না পায়।
কী হলো, আরে আমি মজা করছিলাম, মন খারাপ করছো কেন!
না, এমনি।
এমনি!
জানো, সুলতানা চুড়ি পরতো না।
কেন?
ও বলতো চুড়ি নাকি শৃঙ্খল। মেয়েদের একসময় দাসী করে রাখা হতো, তারই প্রতীক চুরি।
দাস তো ছেলেদেরও করা হতো। ছেলেরা তো ব্রেসলেট পরে।
জানি না, এইসব ইতিহাস আমি কখনও পড়ে দেখিনি।
তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করি, তুমি রাগ করবে নাতো?
বলো।
তুমি কি এখনও সুলতানাকে ভালবাস?
কাউকে একবার ভালবাসলে তা কি আর বদলায়! আমাকে কষ্ট দিয়েছে ও, কিন্তু আমি জানি ও-ও কষ্ট পেয়েছে।
ও।
তুমি আহত হলে?
না!
সে আমার মাথায় হাত রাখে। চুলেরমধ্যে হাত বুলিয়ে দেয়।
আমার পিঠে তখন আর ব্যথা নেই।
কিন্তু বুকে কী যেন একটা ব্যথা জমেই থাকে।
গল্প : ০৩. চারটি ভালবাসার গল্প
এক. সে এক দেশ ছিলো। সেখানে একবার একটি মেয়ে ভালবেসেছিলো একটি ছেলেকে। ছেলেটি বোঝেনি মেয়েটির ভালবাসা, অথবা বুঝলেও গুরুত্ব দেয়নি। তারপর মেয়েটি চলে গেছে। কোথায়? কেউ জানে না।
দুই. সে আরেক দেশ ছিলো। সেখানে একবার ছেলেটিও ভালবেসেছিলো একটি মেয়েকে। মেয়েটি বোঝেনি ছেলেটির ভালবাসা, অথবা বুঝলেও গুরুত্ব দেয়নি। তারপর ছেলেটিও চলে গেছে। কোথায়? কেউ জানে।
তিন. আবার অনেক দূরে এক দেশে দেখা হয়ে গেল একটি ছেলে আর একটি মেয়ের। তারপর কাছে এলো তারা। ভালবাসার আদরে-চাদরে জড়ালো নিজেদের। তখন সবাই বললো, ছিঃ, এ সব কী, এতো মাখামাখি! তবুও ছেলেটি চেয়েছিলো মেয়েটিকে, মেয়েটিও চেয়েছিলো ছেলেটিকে। কিন্তু পাওয়া হয়নি কিছুই। ছেলেটি চলে গেছে, মেয়েটিও চলে গেছে। কোথায়? কেউ জানে।
চার. আবারও আরেক দেশে ছেলেটি ভালবেসেছিলো মেয়েটিকে। মেয়েটিও ভালবেসেছিলো ছেলেটিকে। তাদের ভালবাসাবাসি দেখে সবাই বলেছিলো, বাহঃ, বেশ তো, দারূণ! তারপর তারা দুজনে এতো কাছে এসেছিলো আলাদা করে আর চেনা যায়নি দুজনকে। তবু তারপর কেমন করে যেন তারা একজন আরেকজনের কাছ থেকে ছিঁড়ে চলে গেলো দূরে। ছেলেটি কোথায় কেউ জানে না। মেয়েটি কোথায় কেউ জানে না।
হায়, ভালবাসা সম্পর্কে এর বেশি আমি কিছুই জানি না! শুধু জানি, এইভাবে ভালবাসার সব গল্পগুলো শেষ হয়ে যায়। এইভাবে ছেলেগুলো চলে যায় দূরে। এইভাবে মেয়েগুলো চলে যায় দূরে। কেউ কাউকে খুঁজে পায় না। শুধু ভালবাসা একা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।
[উৎসর্গ : ইশ্, এইভাবে কেউ চলে যায় – এর গায়ক অঞ্জন দত্তকে]
গল্প : ০৪. শিখার জন্য
কী বলতে পারি শিখাকে আমি! আমি বলতে পারি, শিখা আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি আমার কাছে থাকো। আর কোথাও যেও না। আমার কাছেই সব পাবে। হ্যাঁ, এই সবই আমি বলেছি ওকে। বলেছি আমার প্রত্যেকটি পছন্দ অপছন্দের কথা। কিন্তু তাতে কী লাভ!
বরং, শিখা আমার সঙ্গে চালাকি করেছে। যার সঙ্গে মেলামেশা আমি পছন্দ করি না তার সঙ্গে মিশেছে। অন্য আরেকজনকে দিয়ে ওই লোকটির কথা বলিয়েছে। আমি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি। শিখা আরও আঁকড়ে ধরেছে। রাগে দুঃখে আমি মাথার চুলগুলো ফেলে দিয়েছি। শিখা তাৎক্ষনিক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, কিন্তু একটা টুপি কিনে দেয়নি কোনাদিন। শিখা একটা ডায়েরি কিনে দেয়নি আমাকে। শিখা এখন গানের ক্লাস শেষ করে আমার খোঁজ নেয় না। ওর এখন আড্ডা মারার অনেক জায়গা। ওর এখন অনেক বন্ধু। শিখা কবিতা আসরে যায়, গান গাইতে যায়, লিটল ম্যাগাজিন করে। শিখা বইমেলায় যায়, আর্ট কলেজে যায়। শিখা এখন হুট করে আমার কাছে আসে না।
কিন্তু কী করতে পারি আমি! শিখার পায়ে মুখ ঘষে মিনতি করতে পারি! বলতে পারি, আমার কাছে তুমি একটু আসো। সপ্তাহে অন্তত একদিন আমাকে সময় দাও। বলতে পারি, দেখো শিখা, আমি একটা ভিক্ষুক।
হ্যাঁ, তা-ও বলেছি আমি। না, কিছুই হয়নি।
হবেও না।
এখন আমি শুধু প্রার্থনা করি, শিখা, তুমি ভালো থাকো। তোমার ইচ্ছে হলে, তুমি ভালো থাকো। নইলে আমি শান্তি পাইনা।
গল্প : ০৫. প্রতিশোধ
সর্বস্ব দিয়ে তাকে ভালবেসে ছিলাম আমি। বাবা,মা, ভাই, বোন সব কিছু ছেড়ে ছিলাম আমি। সেই মানুষটা যখন আমাকে ছেড়ে গেলো তখন পাগলের মতো এলোমেলো ঘুরি আমি। সবাই আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। ওরা আমাকে মানা করেছিলো এর সঙ্গে ঘর বাঁধতে। কিন্তু তার চোখ, হাসি, মুখ সব কিছু আমার সর্বস্ব দিয়ে চেয়েছি। পেয়েওছিলাম; পেয়ে হারিয়ে ফেলেছি। এখন আর আমি কোন কিছু ফিরে পাবো না। আমি এখন মৃত মানুষের মতোই। এখন আমিও আছি ঝলসে যাওয়া মানুষদের তালিকায়।
মানুষ মানুষের হৃদয় ঝলসে দেয়, জীবন ঝলসে দেয়; মুখ ঝলসে দেয়া এমন আর কী! খুব সাধারণ ব্যাপার, একটা পুরনো ফিলিপস কিংবা অন্য কোনও বাল্বের মধ্যে এসিড রাখবো, তারপর যার মুখটা ঝলসে দিতে চাই তার কাছে গিয়ে বাল্বটা মুখের উপর ছুঁড়ে মারবো। ব্যাস, সব শেষ। এইভাবেই আমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি। তার জীবনটাকেও আমি ঝলসে দিতে চেয়েছি।
কিন্তু আমি পারিনি। সর্বস্ব দিয়ে যাকে ভালবেসে ছিলাম তাকে যেমন ধরে রাখতে পারিনি, তেমনি ঝলসে দিতে পারিনি তার জীবনটা। বরং তাকে ঝলসে দেয়ার চেয়ে বাল্বটা নিজের মুখের উপর ভেঙে ফেলা আমার জন্য সহজ ছিলো। আমি সেই সহজ কাজটিই করেছি শেষ পর্যন্ত। যার সব পুড়ে গেছে তার মুখটাও পুড়ে গেলে কী আসে যায়!
এখন আমি এখানে থাকি, যাদের মুখ ঝলসে গেছে, বুক ঝলসে গেছে, হৃদয় ঝলসে গেছে তাদের সঙ্গে থাকি আমি।
গল্পকারের কথা:
গল্পকার তার রাগ, ঘৃণা, ক্ষোভ, ভালবাসাই তুলে ধরেন তার গল্পের। গল্পের ক্যানভাস যাই হোক না কেন তার আড়ালে গল্পকারের ব্যক্তি জীবনের ছাপ থাকেই। সে ছাপের মাত্রা ও মানের পার্থক্যও থাকে। তবে আমার ক্ষেত্রে পরিচিতজনদেও কাছে যে মন্তব্য বা অভিযোগ প্রায়শই শুনে থাকি তা হলো, আমার গল্পে ব্যক্তি আমি বড় বেশি তীব্র। এ যদি অভিযোগ হয় তবে আমি তা মাথা পেতে নিতে রাজি আর যদি মন্তব্য হয় তবে তার সঙ্গে আমি একশত ভাগ একমত। আমার গল্পের কাহিনী, প্রেক্ষাপট বা আদল যে রকমই হোক না কেন আমি সচেতনভাবেই তাতে উপস্থিত। যেমন, এই সিরিজের প্রথম গল্পটি [আমার এক লক্ষ প্রেমিকা]। এ গল্পের নায়ক আসলে আমি নিজেই। হয়তো সত্যিই এক লক্ষবার এক লক্ষ নামে এখনও ডাকা হয়নি, তবে আমি সত্যিই আমার প্রেমিকাকে প্রতিদিন নতুন নতুন নামে ডেকেছি এবং সে নামের সাথে মিলিয়ে নতুন নতুনভাবে ভেবেছিও। আর এই গল্পটি সরাসরি আমার প্রেমিকার প্রতি নিবেদিত। আজও আমার ঘরণী হওয়ার পরও তাকে নানা নামে ডাকতে আর নানা রূপে দেখতে ভাল লাগে আমার। এই ভাল লাগা আর ভালবাসা নিয়েই আমি আর আমার গল্প।
শুরুতেই বলেছিলাম গল্পকার তার নিজস্ব রাগ, ঘৃণা, ক্ষোভ, ভালবাসা ইত্যাদিই তুলে ধরেন তার গল্পে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমার একটু পক্ষপাতও আছে। হ্যাঁ, ভালবাসার গল্প লিখতেই আমার বেশি পছন্দ করি। কারণ আমার এইটুকু ছোট্ট জীবনটাও ভালবাসাতেও পূর্ণ। সংসারের খুঁটিনাটি নানা মাকড়শার জাল ভেদ করে প্রতিদিনই আমার ঘরের জানালায় ভালবাসার রোদ এসে পড়ে। সেই রোদে আমার নিজের লাগানো বনসাইয়ের মতো আমিও বসে থাকি। আমার বর্তমান জীবনযাত্রায় প্রতিদিনই ঘন্টা দুয়েক কেটে যায় বনসাই চর্চায় আর সেই চর্চার তালে তালে নিজেকেও আমার মনে হয় বনসাই। নাগরিক টবের মাপে আকারে ছোট হলেও পূর্ণ গাছের মতোই আমিও পূর্ণ এবং সুন্দর। সেই সুন্দরের বিচিত্র প্রকাশই আমি পাই ‘প্রতিশোধ’ গল্পে। প্রতিদিন খবরের কাগজে এসিড মারার যে বিভৎসতা ব্যক্তি আমাকে খুবড়ে ফেলে তার প্রতিশোধ হিসাবেই আমি এই ভালবাসার গল্প লিখেছি। অধিকাংশ এসিড নিক্ষেপের পেছনে ব্যর্থ প্রেমের ঘটনা থাকে। কিন্তু একজন প্রেমিক হিসেবে আমার কখনোই বিশ্বাস হয় না সত্যিকারের প্রেমিক কখনো ভালবাসার মানুষের মুখ ঝলসে দিতে পারে। একটা সুন্দর মুখ ঝলসে দেয়া মানে তো একটা জীবনও ঝলসে দেয়া। আমি আমার নিজের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারি কিন্তু আমার ভালবাসার মানুষের ক্ষতি করতে পারি না। এই বিশ্বাস থেকেই আমি ‘প্রতিশোধ’ গল্পটি লিখেছি।
চুড়ি গল্পটিতেও আমার ব্যক্তিজীবনের একটি ঘটনা লুকিয়ে আছে। একটি ব্যর্থ প্রেমের পরই আমার জীবনে এসেছিলো সফল প্রেম। কিন্তু ব্যর্থ হলেও সে প্রেমের প্রতি, সেই প্রেমিকার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই, অভিযোগ নেই। তাই সফল প্রেমিকার আলিঙ্গনে তার চুড়ির স্পর্শ আমার পিঠে লাগলে আমি ব্যর্থ প্রেমিকার জন্যে দুঃখ অনুভব করি। সেই সঙ্গে নারীবাদীদের প্রতিও আমার দৃষ্টিভঙ্গিও কিছুটা প্রকাশ এখানে ঘটেছে। একবার এক তীব্র নারীবাদী নারী আমাকে বলেছিলো, চুড়ি নাকি নারীদের দাসত্বের প্রতীক; সেই মন্তব্য আমাকে কষ্ট দিয়েছিলো। কারণ আমি যাকে ভালবাসি সে ভালবাসে হাত ভর্তি কাচের চুড়ি পড়তে। আর আমি ভালবাসি তার ভরা হাতের চুড়ির রিনিঝিনি শুনতে। যে নারীকে ভালবেসে বিয়ে করেছি, যে নারীর গর্ভে আমার সন্তান লালিত হয়, কই তার হাতের চুড়িতে তো কোন দাসত্বের ইতিহাস খুঁজে পাই না আমি!
সিরিজের তৃতীয় গল্প [চারটি ভালবাসার গল্প] অবশ্য সে অর্থে সরাসরি ব্যক্তি অভিজ্ঞতার ফসল নয়। আমার প্রিয় একজন গায়ক অঞ্জন দত্তের একটি গান শুনতে শুনতেই এ গল্পটি আমার মাথায় আসে। সে গানের কথাগুলো এই রকম–
দুটো মানুষ একসাথে কতো পথ চলা
‘হাতে হাত রেখে কথা বলা
কেন সব করে অবহেলা
কেন শেষমেষে এসে বিদায়…
ইস্ এইভাবে কেউ চলে যায়।’
এই গানের কথা ও সুর শুনতে শুনতে বারবার আমার চোখে কান্না জমে। আমার কষ্ট লাগে সেই সব প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যে যাদের ভালবাসা মিলনে নয়, বিরহে বড় হয়েছে। জীবন তাদেরকে হয়তো সুখ দেয়নি, কিন্তু ভালবাসার পৃথিবীতে তারা আমার ‘প্রাতঃস্মরণীয়’।
শিখার জন্য গল্পটি আমার জীবনের দুটো ভিন্ন ঘটনার মিলন। এ গল্পের শিখার মতো আমার প্রেমিকাও একসময় আমাকে রেখে লিটল ম্যাগ, ছায়ানট, বন্ধুবান্ধব এই সব নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ঠিক সেই সময়টাতেই শিখা নামের এক নারীর সংসার ভাঙতে দেখেছি আমি। আমার দেখা নারীদের মধ্যে শিখা নামের সেই নারীর প্রতি আমার বিশেষ সহানুভূতি ছিলো। তিনি স্কুলে পড়া বয়সে এক পুরুষের হাত ধরে ঘড় ছেড়ে ছিলেন, সেই পুরুষ পরে তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো! এই শিখাকে নিয়ে আমার গল্পটি শেষ হয়নি। আমি আশা রাখি শিখাকে নিয়ে আরও গল্প লিখবো আমি, ভালবাসার গল্প।
এই বার আমার গল্পের দেহতত্ত্ব নিয়ে দুটো কথা বলি। আমার এই গল্পগুলোকে আমি বলি ‘ছোট ছোট ছোটগল্প। প্রতিটি ছোট ছোট ছোটগল্পই ২০০ শব্দে লেখা। জানা মতে, পদ্যকাররা শব্দের বাঁধা ধরা সীমানায় বহুবার হেঁটেছেন, সনেট শুধু ১৪ অক্ষরই নয়, ১৪ লাইনেও লেখা। কিন্তু গদ্যের জগতে এমন আঙ্গিক মেনে চলার উদাহরণ আমার হাতে নেই। এও আমার এক খেয়াল বলতে পারেন। আমি চাইনি যেভাবে যা মনে চায় কেবল তাই লেখে যেতে, নিজেকে একটা সীমানায় বাঁধতে ভাললাগে আমার। আর সব লেখকদেও সীমালঙ্ঘনের স্পর্ধাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি সব ক্ষেত্রেই সীমার মাঝে অসীমের সন্ধানী। তাই আমার জীবনের মতো আমার ছোট ছোট ছোটগল্পও কিছু আঙ্গিকের সীমানায় বাঁধা থাকে।