সুস্মিতা চক্রবর্তীর তিনটি কবিতা

ভোল অপচয়

কী অপচয় কী যে অপচয় হৃদয়ের!
কোন সে ক্ষরণ কার খেসারত হিসেবের।
অথচ, জীবন সদা বেগবান–
এই ধুলা-মাটি-গাছ মহীয়ান,
এই জলরাশি চাঁদ আর আলো সকলের।
ভালবাসাবাসি বেঁচে থাকা সব মানুষের।

এই স্বপ্নের নীল চাঁদোয়ার নিচে যে,
কত আদরের-প্রণয়ের মনপাখি সে–
ডেকে ডেকে আজ ক্লান্ত বৃথাই বেলা যে;
অথচ, সময় এত অপচয় কোথা সে!

ভরা মেঘে ডাকে মত্ত আকুল ধারা যে,
সূর্যের সাথে আড়ি দেয়া তবুও বাতাসে;
কানাকানি কথা গনগনে আঁচে ভাদরে,
সামনে শরৎ সাদা মেঘে রথ আকাশে।

কার্তিকে তার কুয়াশার সুর সাধা যে
ফিরে পাবে আর আগুনের মত পাখা সে!
জানে না সময় শুধু জাগরন জনমের;
জানে তার মন কেন অকারণ করে সে!

জানে এই মন বেঁচে থাকা ধন বড় যে,
আর জানে তার ডানা ঝাপটানো খাঁচা সে;
খোলা খাঁচা বলে জল কেন ঝরে চোখে যে!
ভোল অপচয় বিরহবিজন বৃথা সে!।

রাবি-ক্যাম্পাস: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩।

 

হাওরের জল-হাওয়ায়

সাত সমুদ্দুর ঢেউয়ের বজরায় দিব্যি বসে!
ভাটি-জল-হাওয়ার দেশে–
পেরিয়ে এসেছি সাময়িক;
উজানের ধূর্ততা, একঘেয়েমী জীবিকার কুস্তির সংসার,
পেরিয়ে এসেছি দয়িতার অহর্নিশি অবজ্ঞার উপেক্ষার ঝার।
জানি এটা চতুরতা শিকারের যুগ!
এইখানে প্রেম আর অন্তর্গত বোধ,
পরাজিত পদানত হয় বার বার।
তবুও এই নির্জন হাওরের বিশুদ্ধ হাওয়া আর জলে,
শেকড়ের শেষ সীমা যদি জলে অস্পষ্ট ছায়া আজও ফেলে!
আমি তাকে বলে দেব: নাগরিক অসুখের প্রতিবেশ প্রকটতা রূপ।
এই জল-হাওয়া আর বন্ধুতার উন্মুক্ত মন,
আমায় ভুলিয়ে দিও গো নগরের নগ্নতা আরো কিছুক্ষণ।
যেন আমি পুণ্য-জলরাশি আর হাওরের হাওয়ায়;
ক্লান্তি ভুলে এই দেহতরী দীপ্ত শলাকায়!
পুড়ে পুড়ে পুনরায় দূরে সেই উজানে ভিড়াই।

ইটনা-নিকলি হাওর ভ্রমণের সময়: জুলাই, ২০১৩।

 

ওরা গুম হয় ওরা খুন হয়!

কতটা পীড়ন রক্তের মত ঝরে!
ওরা গুম হয় ওরা খুন হয়,
দেশে দেশে ঘরে ঘরে!

বঞ্চনা-ভরা ওদের বসতি,
কেড়ে নেয়া মাঠে ওদেরই অস্থি;
সূর্য-শিশিরে ঝরে!
ওরা গুম হয় ওরা লাশ হয়,
পথে পড়ে থাকে অগোচরে!

মেয়েরা ওদের ধর্ষিত হয়।
জঙ্গলে-জিপে লুণ্ঠিত হয়।
বিচারের নামে ভাইয়েরা ওদের–
হাতকড়া হাতে পাহারা-প্রহারে;
রক্তের বমি করে।
ওরা খুন হয় ওরা লাশ হয়;
মরবার আগে-পরে!

বাঁচার আশার সম্বলটুকু–
ক্রমাগত দূরে সরে।
ওরা গুম হয় ওরা খুন হয়,
দেশে দেশে ঘরে-ঘরে!

এক হয় তারা নিপীড়িত দল,
বুকের ভেতরে খাঁ খাঁ করা মন;
কিসের যুদ্ধ করে!
ওরা গুম হয় ওরা খুন হয়,
সামরিক চড়া সুরে।

ভূমি-বন আর জলের কসমে,
নিভে যাওয়া মনে বেদনা-জখমে;
মৃত্যুর মতো প্রতিরোধ আর
প্রতিশোধে ফেটে পড়ে।
ওরা খুন হয় ওরা লাশ হয়,
জঙ্গলে ঘরে-ঘরে!

রাবি-ক্যাম্পাস: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩।

* অরুন্ধতী রায়ের লেখা আর লুনা রুশদীর অনুবাদ করা দ্যা ব্রোকেন রিপাবলিক বইটা পড়ার বেদনার্ত প্রতিক্রিয়ায় এটি রচিত।

 

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top