রুহিনা ফেরদৌসের কবিতা

দূরবর্তী

বাতাসের হাসি ছুঁয়ে তোমাদের গল্প শুনি
পায়ে পায়ে জীবন জড়িয়ে যায়
দুহাতে নিজেকে ছাড়িয়ে হেঁটে যাই
বয়েসি সমুদ্রের জলে,
যেখানে আজ ও আগামীরা থাকে।
আমার গল্পেরা বলে, এখন ঘুমাও মেয়ে
অনেক তো হলো।
আমি তাদের ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ি, ভেজা রাস্তায়
ঘুম পাড়ানি পাখিটা পাশ ফিরে চায়,
আমি তার পালকে গোপন বিদ্যুত্ দেখি
দেখি উড়ে যাওয়ার আয়োজন।

তুষার ও তাসের গল্প

বাতাসে হাত রেখে রাতভর বসে থাকি,
পথচারী আলোরা হেঁটে যায়; ইশারায়।
তুমি ছুটে যাও তীব্র আর্তনাদ হয়ে—
কাঠবিড়ালি ও প্রজাপ্রতির খুনসুঁটি দেখতে দেখতে
আমি এক পুরানোতে তলিয়ে যাই।
বুকের ভাঁজে তীব্র ব্যাথারা ফুরায় না
ছুটে বেড়ায় মিথ্যা পিঁপড়ার মতো।
তোমার তুষার ও তাসের গল্পগুলো পড়তে পড়তে
নিজেকে খুঁজি।
পনেরোটি আকাশ একসঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে।
আরো পনেরোটি শরত্ ও স্বপ্নের মৃত্যু হয়।

কিছু মুহুর্ত 

মানুষের মতো পৃথিবীরও কিছু রুগ্নতা আছে
আছে ব্যাথা গোপনের ক্ষত,
কিছু গোধুলী আছে, যেখানে পৌঁছাতে
খানিকটা সময় পোড়াতে হয়,
যারা পুড়ে যায়, তারা হেরে যায় হয়তো;
তবে হার-জিতের মাঝখানে যে অদৃশ্য আয়ু থাকে
তাকে তুমি কীভাবে মেটাবে?
তুমি হয়তো পলকের পতন দেখছো,
জেনেছো জোনাকি জীবন,
কিছু ভোর আছে, যা তুমি দেখনি—
হয়তো শোনোনি কিছু সুরের কারুকাজ,
তবুও তো বেঁচেছো তোমার মতো।
তবে ওই সুর ও ছন্দের মতো কিছু মুহুর্ত আছে
যা পৃথিবীর ব্যাথার মতোই গোপন।

পরিযায়ী

কম্পাসের কাঁটা গুনে তোমার দিক খুঁজি
আমি তো ব্যর্থ নাবিক, জলের ঝাপটা বুজি না,
আলোর বুকে অস্তমিত করুণ দেখতে দেখতে
বাতাসের ফিসফাস শুনি; ওরা বলে তুমি নেই—
অথচ দূর কোনো দ্বীপ হতে তুমি হেসে ওঠো
আমি সেই দিকেই তীব্র হয়ে জাহাজ ছোটাই।
কতসব দিন নোঙ্গরহীন এভাবেই কেটে যায়—
সায়বের নোনা জলে ভাসতে থাকি,
এক টুকরো কাঠের মতো, এখানে শ্যাওলা জমে না।
মাঝে মধ্যে দুই একটা যাযাবর পাখি উড়ে যায়—
আমাদের দেখে ডেকে ওঠে, শীষ দেয়;
আমার আর কোনো দ্বীপে যাওয়া হয় না।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top