যাপন
ভাঙা হারমোনিয়ামের মতো সকাল।
ফাটা বাজারে থলে থেকে যেটুকু রোদ্দুর পিছলে পড়ে সেই আমাদের ডাল, ভাত।
সকাল দশটার টাইমের জলের মতো সরু হয়ে বিষাদ পড়ে আমাদের বারোয়ারি চানঘরে।
কতটা পথ হাঁটলে তবে গরিবি ভোলা যায়।
কতটা নেশা করলে তবে আমীর হওয়া যায়।
এইসব ভাবতে ভাবতে জং ধরা সাইকেলের মতো আমাদের যাপন
বুঝতে পারে না ডুবতে গেলে কতটা জল লাগে।
মাতৃতান্ত্রিক
আমরা দুজনে একসঙ্গে একটা বই পড়ি।
কখনো ও আমাকে রান্না করে খাওয়ায়।
কখনো আমি।
উর্দু সিরিয়ালের সেই স্পর্ধিত যুবকটির জন্য আমরা দুজনেই ফিদা।
ফুচকা খেতে খেতে তেঁতুল জলে দুজনে চাঁদের ছায়া দেখি।
মনখারাপ লাগলে দুজনে ভোদকা খাই।
যদিও স্কচই আমার পছন্দের ড্রিঙ্কস।
এইভাবে প্রতিদিন নিজেদের গায়ের তেলজলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আমরা ভাবি
আগামী কোনোদিনে আমরা একসঙ্গে মাচ্চুপিচু যাব।
টুপি, সানগ্লাস, সানস্ক্রিম মেখে মেডিটেরেনিয়ান এ রোদ পোহাবো।
আমি আর আমার মেয়ে।
প্রতিদিন একটু একটু করে
মাতৃতান্ত্রিক হই।
আপনাকে বলছি স্যার
আপনাকে বলছি স্যার! হ্যাঁ, হ্যাঁ আপনাকে। আমার চোদ্দপুরুষ কাউকে স্যার বলেনি কখনো। আমি ই বললাম। আপনাকে পেত্থম। অবাক হবেন না। আমাদেরও জমিদারি এককালে ছিল। এখন পার্টি অফিস। তুতুর নেতা বলেছেন পার্টি অফিস যদি করতেই হয় শালা এই জমিদারের দালানেই হবে। এই পার্টিতেও এককালে রাজা-উজির ছিল। নীল রক্ত ছিল। আপনি সেই চোদ্দপুরুষের শেষ সলতে। শেষ সলতেরা এমনই ন্যালাখ্যাপা হয়। অনেক দেখেছে কিন্তু কিছুই পায়নি গোছের। তাদের ভগবান এমন ন্যালাখেপা করে দেয়। না পাওয়ার দুঃখ যেন না পায়। সবকিছুর একটা ইয়ে আছে। মানে হিসেব। ভগবান জানে। তাই সাপের মতো ঠান্ডা করে আর খসখসে করে ছেঁড়ে দিয়েছে। তাই তো স্যার বললাম। কিন্তু ছোঁবল আছে। আমার ও ফতুয়ায় গোটানো আছে মৃত্যুর মতো ঠান্ডা অথচ সজীব ছোঁবল। মৃত্যুর মতো নীল অথচ কান্নার ছোঁবল। মৃত্যুর মতো বিঘৎ অথচ শিথিল ছোঁবল।
আপনার মতো, আমার মতো ঠান্ডা জমিদারের শেষ সলতে দের এখন শুধু দেখে যাওয়ার পালা। দালানকোঠায় টিকটিকির মতো ঘোরা। সাপের মতো লুকিয়ে থাকা। না ঘাটালে নড়া নেই। তারপর সুযোগ আসলেই সব তুঁতুঁর দালান এক করে দেব। তার আগে শুধু স্যার বলে যান। স্যারের মধ্যেই সব গোপন সিঁড়ি আপনার, আমার, আমাদের সন্ততির।
ম্যাডাম! থুড়ি স্যার! মাই বাপ! শুনতে পাচ্ছেন?
আজ পিকনিক হোক
সেইসব ধূসর, ধাতব সম্পর্ক রা আসুক বউ, বাচ্চা নিয়ে।
রঙিন ছাতার নীচে দেখা হোক কতটা ছায়া পড়লে পরিবার সুখী হয়।
কতটা বিস্মরণ জমে, জমে আসলে তুমি আমি কিছু নয়, ক্ষণিকের ভ্রম।
পিকনিক
আজ পিকনিক হোক। সামনে জলাধার বুঝে নেবে কোন ছায়া সততা ধুয়ে খায়।
কোন হাওয়ায় মেছো গন্ধ যায়।
আজ পিকনিক হোক।
ভাঙা সম্পর্কেরা আসুক বউ-বাচ্চা নিয়ে।
চলো গুগল স্টোরে যাই
থরে থরে সাজানো মৃতদেহ থেকে খুঁজে নিই আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট দিন কতটা রঙিন বরফ নিয়ে জাগে।
কতটা রঙিন হলে আঙুরলতা খসখসে লাগে।
কতটা রঙিন হলে মুখোশেরাও আরো রঙিন হয়ে বাঁচে।
চলো গুগল এর দোকানে গিয়ে দু-আঁজলা বাসি শ্যাওলা নিয়ে আসি।😒
আঠা
কাল যদি আর ফিরে না আসি।
এই বনভূমি, মেঠো পথ।
রোজ মায়া কুড়োতে আসি।
সংসারে নিয়ে যাব বলে।
মায়া ছাড়া এই নশ্বর সংসারে কী ই বা আছে।
সেই তো দিনান্তের আঠা।
সন্তানের পাশে বেবাক বসে থাকি।
পাঁজরেও ঘুণ ধরে। ঘুণাক্ষরেও জানতে দিই না।
রোজ মায়া কুড়োতে যাই।
চালে -ডালে রেখে দিই রোজ।
আর যদি না আসি কখনো।
তবু ঘর-দোর আঠালো যেন হয়।
বুবুন চট্টোপাধ্যায়
নয়ের দশকের শেষের দিকে লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত চারটি কবিতা গ্রন্থ। ভারত সরকারের অধীনে স্বাধীনতা পরবর্তী শিশু সাহিত্য এবং বাংলায় ভ্রমণ সাহিত্য বিষয়ক রিসার্চ । সম্প্রতি প্রকাশিত বিলেত বাসের স্মৃতিকথা বিষয়ক গদ্যের বই ‘ফ্ল্যাশব্যাক ‘।
এছাড়া নিয়মিত গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন।