মেসোপটেমিয়ার ছেলে
এনহেদুয়ান্না,
হে আমার প্রেমের দেবী
দেবী তুমি জ্ঞানেরও
কেউ না মানুক, আমি জানি, তুমি পৃথিবীর প্রথম কবি নও
তোমার আগেও ছিল আমার পূর্বপুরুষ
কে না জানে ইতিহাস ক্ষমতাচারিদের হাতেই লালিত
তোমার রাজকন্যাময় চেহারা
দেবতাকে খুশি করার স্তুতিপ্রলাপ
কিংবা প্রার্থনা সংগীতের পবিত্রতম দানা
দুনিয়াকে জানিয়ে দিলো কাব্যের দরদ
সংসারের বাইরেও তোমার ছিল কবিতার সংসার
তুমি যে মন্দিরের পুজারী ছিলে
আমিও সেখানে রেখে এলাম আমার প্রস্তরলিপি
ওই যে উর শহরের কাছে তোমার সন্ধ্যেবাগান
আজ ইরাকে তোমার সেই উকরু শহরের দিকে তাকাও
দেখো লোকে আর কী কী রকমভাবে অসহায়
তোমার মনে পড়ে দেবী
টাইগ্রীস নদীতে ভাসিয়ে দেয়া
সেই জগৎখ্যাত বায়তুল হিকমার কথা?
আমি শুধু অনুভব করি
প্রথম কাব্যের লিখিত তোমার হাতের আঙুল
কতটা সুন্দর আর হেলায়িত স্পর্শময় ছিল?
আমি তোমাকে প্রার্থনার মতো ভালোবাসি দেবী
কসম এই মেসোপেটিমিয়া সভ্যতার
এই কৃষিময় দুনিয়ার কসম
আমি তোমার হৃদয়ের কম্পন অনুভব করি
তোমার লেখাই সেই প্রথম প্রার্থনা সংগীত
কতটা মধুর আর রসালো ছিল।
আমি ঘোষণা করেছি—
আমার মায়ের ভেতরে তোমার ছায়া
আমার বউয়ের উপর তোমার কায়া
আমার প্রেমিকাদের কোমরে তোমার মেদ
আমার মেয়ের ঠোঁটে তোমার হাসি
লেগে লেগে তুমি বিলিন হয়ে গেছ!
কিন্তু হৃদয়ের রেহালে বসিয়ে
সদা জপছি তোমার তরল দানা
যার দ্যুতি ছড়িয়ে ইনানাই ও ইস্তারে
গ্রিক আফ্রোদিদি আর রোমের ভেনাসে
তুমি ছিলে চন্দ্রদেবী সুয়েনের কোলে
আগুনের মতো তোমার হাসি
আমাদের কাব্য বাগানে লাগিয়ে দিচ্ছে দাহ্য
আমরা সবাই ছাইদানিতে বসে বসে
ফুল হবার বাসনায় মজে আছি
কিন্তু তোমার বাসরে পৌছাবার ভার আমি কাকে দিব?
এই যে মরুভূমি
তোমার শিক্ষাদানের প্রথম শ্লেট
বিশ্বাস করো, তার প্রত্যেকটি বালু আমাকে সাক্ষ্য দিচ্ছে
আমি মেসোপটিমিয়ার প্রথম কাব্যফসল।
চাবুকের সুখ
অনুযোগগুলো চাবুকের মতো
মনের উপর বয়ে দিচ্ছে
অসম্ভব ক্ষরণ
দীর্ঘ পথের শেষে
গন্তব্য রেখে
দুজন ফিরছে হাসি
কান্নার সংগীতে সুর গেঁথে
দুঃখের গজল লিখছে পাপী
অনাগত সব সুখের বাঁশিতে
কারা ফুঁ দেয় হাওয়া?
এসো মিলিত সময়ের সাগরে
খানিকটা সরু হয়ে শুই
তারপর জলের জীবন লিখে
কোলে তুলে চুমু খাবো নদী
বিষমবিষয়ক বিষ
বিয়ের আগে যে পুরুষরা প্রেম করেনি
তারা বউকে কতটা ভালোবাসবে
তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে
আতরের ঘ্রাণের মতন গোপন
ও কাকলোর ফুলের প্রকাশ্য মিলন
প্রমাণ করে, প্রেমও অনেক রকম!
ফলে আমি যত প্রেম করেছি
সব আমার বউ জানেন
এরপরও যত প্রেম করব
সেগুলো তিনি জানবেন
আমি চরিত্রহীন বেগানা পুরুষ
বউ আমাকে সন্দেহ করেন
তার ভাষ্য,
‘বিয়ের আগেও আমি
কমছে কম
আরো দুটো বিয়ে তো করেছিই..
একটার কাবিন থাকলেও
আরেকটির প্রমাণ হাওয়া’
তো এটাতে মজা লাগে
নারীরা পুরুষকে সন্দেহ না করলে
তার আর সংসারে কাজ-ই বা কি?
আর সে কারণে পুরুষের বেগানা স্বভাব নিয়েও
এখন আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন!
ব্যক্তিত্ব বিষয়ে আমার সার্টিফিকেট আছে
কয়লার খনিতে হীরে খুঁজতে নিশ্চয়
কারো অপত্তি থাকবে না
ফলে অসামাজিক হতে আমার ভালো লাগে
কারণ অনেক সামাজিকতার গল্প আমি জানি
আমার কতক প্রেমিকার গলাধরা ছবি
বউ সযত্নে বাঁধিয়ে রেখেছেন দেয়ালে
কেউ বাসায় এলে চোখ উল্টিয়ে
প্রশ্ন করেন, উনি কে?
বউ বলেন, উনি আমার বড়
উনি আমার মেঝো
এভাবে
বউ নিজের ছোট পরিচয় শেষ করেন!
আমি বেকূপের মতো হাসতে হাসতে
বউয়ের ভেতর গলে যাই
গলে গলে আমাদের সংসার
গলিত প্রেম ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ
মনে মনে আমি কামনা করি
সন্দেহ যে প্রেমের আদি রূপ
বউ তা যেন কখনো না জানে!
সুবেহ সাদেকের টান
মসজিদে ঘুম ভাঙানো গজল গাইছে কেউ
নিবু নিবু জেগে আছে মিনার ও মহাসড়ক
প্রহরী ও পতিতাদের ঘরে ফেরার মৌসুম
কার চোখে ঘুমের বদলে নেমে আছে জল?
হে রাতের অতিথি
কাউকে সুখী করার মন্ত্র শিখিয়ে দাও
অনেক ছোট ছোট ভুল আর অপরাধে
হয়তো কেউ গেঁথে ফেলবে সাধের জীবন
তসবির দানার মতো জপতে জপতে
সেও ঘুমিয়ে পড়বে সকালের বুকে
হে দিনের আলো
লজ্জিত হওয়ার এই তো সময়!
বৃক্ষ ও পাখিরা জেগে উঠছে
সহবাসে ব্যস্ত রমণীরা প্রেমিককে নামিয়ে দেবে নিচে
পবিত্র হওয়ার তাড়নায় মিটিয়ে নেবে সুখ
ভেজা চুলে তারা দাঁড়িয়ে যাবে প্রভুর সাক্ষাতে
মিষ্টি মুখে বিলিয়ে দেবে হাসি
আহ! সূর্যটা আজ দারুণ ফর্সা আর গোলগাল!
অক্ষমতা – এক
একজোড়া সাদা জুতো
সারারাত দৌড়ালো
এক পিস সাদা শার্ট
শরীরটা পোড়ালো
অক্ষমতা – দুই
এতো এতো অক্ষমতা নিয়ে আমরা কীভাবে বাঁচি?
শুনেছি মানুষের ভেতরে নাকি আগুনের পাহাড়?
তবে কেন রক্তের নদীতে কাটছি অকূল সাঁতার?
এদেশের স্নেহ-শাসন আমরা মনে রাখতে চায়
কারো মিষ্টি চোখে এখন তাকিয়ে থাকতে চাই!
এতো তৃষ্ণা কেন আমার?
বলো, কার চোখে বৃষ্টি দেখতে চাই?
পলিয়ার ওয়াহিদ
২৬ ফাল্গুন ১৩৯২ (বাংলা) শুক্রবার— যশোরের কেশবপুর উপজেলার—ঐতিহ্যবাহী পাঁজিয়ার অন্তর্গত পাথরঘাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গোলাম মোস্তফা সরদার—মা ছাবিয়া বেগম। ফুলটাইম মিষ্টি কোম্পানিতে ম্যানেজারি আর পার্টটাইম মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও ঢাকা কলেজে স্নাতকত্তোর শেষে একটা জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা পেশায় কামলা খাটেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
পৃথিবী পাপের পালকি
সিদ্ধ ধানের ওম
হাওয়া আবৃত্তি
মানুষ হবো আগে
সময়গুলো ঘুমন্ত সিংহের
দোআঁশ মাটির কোকিল
হাওয়া-ডাক : [email protected]
মুগ্ধতার জলসা অভিনন্দন