শামীম আজাদের কবিতা

দেন দরবার

যে ভাবে জীবনকে কামড়ে ধরেছি
তাহার খবর আছে,
এখন ঝেড়ে ফেলে দিলে
ঝামেলা আছে…

শুদ্ধ পাথরের পাড়ে
অদৃশ্যের সাথে দ্বিধাদাগ ফেলে
স্বপ্নসামুখে দেহতন্তু কেটে কেটে
পালং শাক আর বরবটি মটরসুঁটি তোলা
এক অথবা দুই দণ্ড দাঁড়িয়ে থাকাইতো ব্যাপক ব্যাপার

সেখানে আমি কিনা প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর
ঘাড় ও হাড়ের কল চেপে চেপে ক্যালসিয়াম আর
অযথা শিল্পকলা নামে আসলে
বেঁচে থাকার অনুপান কিনেছি
দ্বন্দের দানাগুলো করতালি আর
দীর্ঘ সাঁতারে করেছি সিলভার
প্রাচীন প্রবচন পড়ে পড়ে
আরো খামচে ধরেছি তাকে
দাঁড়িয়েছি অদৃশ্যের হাতে হাতে
কাটা কুড়াল আর কিরিচকে
কবুতর অথবা কাছিম বানিয়ে নখ সানিয়েছি
এখন ঝেড়ে দিলে জীবনের গায়ে দাগ রয়ে যাবে
এ আমি অনেকটা নিশ্চিত

জীবনতো বোন অথবা ভাই নয়
সে এক বেপোরোয়া সাথী
আমিও তাহার
আর এখন এ বোঝাপড়া আমার ও তাহার
হয় দাগ নিয়ে বাঁচো
নয় দোহাই তোমার আমিও …

১৫.৯.১১

মালিকানা

এ এমন মাটি যে মমী গলে গলে
গাজর গজায়
ভোর বেলা পায়ে বাজে ঘাসের ঘুঙ্গুর
প্রতিবেশি পালং, বাতাসের বারিতে ফাটে হর্স চেস্টনাট
ওদিকে গহনাচেরী
আর যত বাগানের ফুল
একসাথে তুলে আনে জুন ও ফাগুন

পেছনের বাগানে বিজিলিজি, বেগুন টম্যটোর টাল
ইলফোর্ডে আমার ব্যাক ইয়ার্ড
সেই কবে লাল সেতু তীরে
নাও নিয়ে ভিড়েছিলাম…

চেলসির চঞ্চু চষে
ফরাসী বীজ থেকে বেড়ে ওঠা বসরাই ফুল,
রোজমেরী হার্ব— হৃদরোগ নিরামক রশুন
বর্ষার ঠিক আগে আগেই ব্রিকলেনের বোতাম খুলে
অনাবাসী তিমিরের
তিরতির করে বয়ে যাওয়া সুরমার তুন

তাতেই কি এ মাটি, এই সামার
রাত জাগা যত যত তারার খামার
সকলেরই প্রভু আমি

কিন্তু তা না হলেও
হয়তো গোলাপের মাপ আরো বড় হতো
পিটুনিয়া, পপি হয়ে যেতো সূর্যমুখী ছবি
অন্যকোন কবি
একদিন দৈব ভোরে
এভাবেই বা অন্যকোন ভাবে
এ পৃথিবীর স্নায়ু ধুয়ে দিতো
চাঁদের মলম দিয়ে মমতার এই মাঠে কবিতার ফুল ফোটাতো

জানিনা তখন এভাবে তারো কি মনে হতো
সেই ফুল সে বাগান
জলস্রোতে জলন্ত জোছনা
দীপ্রহরের দারুচিনি ঘ্রাণ
সে শুধু তাহার সৃষ্টি-
সে শুধু তাহার

১০.৯.১১

চিহ্ন

নগরীতে বায়ুর বাগানে
বসে আছি শিথিল
শৈত্যে লিমেরিকে আর অন্ত্যমিলে
দেহখানি ঝুলে আছে দেশে
পলির আর নুনে।

পরিপূর্ণ এক আপেলের গ্রামে ঝুলিতেছি
প্রমত্ত ঝিনুকে জল কেটে কেটে
শ’য়ে শ’য়ে পাথর গলে
হয়ে গেছে পৌরাণিক মানব
সেই থেকে
বসে আছি মেঘের ওপর
দেহগত নুনে আর পলির ফাগুনে!

মানচিত্রে
দাগ বসিতেছি দুস্তর
খয়েরী শিশুদের
অনাবাসী আস্তর
রক্ত নুনে আর অবিমিশ্র পলির কারণে।

কুয়াশা ভেজা এই দু’খানা হাতে
এখনো সব্জী ফলে চন্দ্র কিরণে।

২০১১

পুনরায় আক্রান্ত

জলস্রোতে জোছনা জ্বলছে
হাওয়াতে ঘাসের ঘুড়ি
ফণা হয়ে যাই…
চতুর্থ আকাশ থেকে পরী নেমে আসে
কিশলয় কবুতর ও পরিশ্রান্ত প্রজাপতি পাথর হয়ে যায়
আমি ফণা ভেঙে তাহাদেরে মেঘের মাজেজা বোঝাই
প্রকৃতি ও প্রবাদের দাঁতগুলো খুলে খুলে আগুনে বিছাই

এ এক দারুণ ঝড়ের ঝাঁড়
যুবতী জাফরান রাত আফিমের গলি দিয়ে চুল খুলে হাঁটে
গগনে গ্লেসিয়ার গলে
আমি আর স্বপ্নশব্দ খুলে বেরুতে পারি না

 

নিদ্রাকুসুম

দু’চোখে অসংখ্য ঘুমের
বীজ, চারা গজিয়েছে
রতিক্লান্ত শব্দমালা শুষেছে অগ্নি ও জল
বাহুদ্বয় বেদনা জরজর
ভরা বৈশাখ কেটে দিচ্ছে
কোমরের তাবিজ, তাঘা ও হরিতকি ফল
তুমিকি একবার দুঃস্বপ্নের গুঁড়োগুলো গেলে দেবে?

এভাবে মাইলকে মাইল মৃত ড্যাফোডিল দেখে আর বাঁচা যায়না
সারারাত ডলফিন দেহ নিয়ে ডাঙায় বসে আছি
বালির বিছানা উড়িয়ে নিচ্ছে দেহাতীত দেহ
দূরদেশে সুখবতী কন্যা আমার ডুকরে কেঁদে উঠছে।

বৈশাখের বিশ্বাস ফাটিয়ে
কে আমাকে শুশ্রুষা দেবে?

বত্রিশ বছর কাঁচিতে হেলান দিয়ে আছি
বার বার পিঠ ফালি ফালি করে
কেটে গেছে অর্ধেক সাধ
কিন্তু এমন দমবন্ধ রাতে,
গরম ঘাম আর কাম
এভাবে যুথবদ্ধ হয়েছে কি কখনো!

এন্তার আলো এলায়ে পড়েছে
দুধ ধান মগজের আল ছিঁড়ে ছড়ে যাচ্ছে

প্রিয়, পাহাড়ের পৈথান থেকে
নিদ্রাকুসুমের একটি মাত্র পাপড়ি
বল দেবেকি!

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top