নুশান জান্নাত চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা

ঘুম

ব্যর্থতার পদচিহ্ন ম্লান করে
সবুজ পাতার ঝলকানির মতো আমাদেরই
কারও কারও স্বপ্ন মাটিতে পড়ে ফুল হয়ে গজায়
যদিও ওরা ফুলের গাছে নয়।

সূর্যাস্তের স্নিগ্ধ উষ্ণায়নে,
আবাল-বৃদ্ধ দু:খ-সুখের শব্দ উচ্চারণে,
তুমি হৃদয়ের ভাগাভাগি করে নিয়ো
একটি জীবন জুড়ে।

হয়তো ততদিনে বিস্তৃত অন্ধকারে,
অলস নোঙ্গর ছায়া হয়ে থাকে আমাদের উপকূলে।
নির্মাণ-ভূমি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর,
সোনালি রশ্মি পাগড়ি মেলেছে আমাদের আঙুলে।

একটি নিখুঁত কবিতার লোভে
তোমার নতুন মন ও হেমন্ত স্পর্শ করেছিল যাকে,
হয়তো ততদিনে সেও এক অপেক্ষার ভূগর্ভে
ঘুমন্ত স্তন্যপায়ী হয়ে আছে-
ঘুমের অতীত একটি ফুলের গাছে।

 

সেইসব রঙে

ফুল নেই তবু বাগানের মতো জ্বলজ্বল!
জীবনের যত আক্ষেপ
আর কী কী সব যেন থাকে,
আমি সবকিছু ভুলে যাই;
আমি একবারই সেই আকাশের দেখা পাই

ওরা কি অসীম, নাকি ওরা কোনো চিরকাল?
ওরা কি রঙ, নাকি ওরাই সব তারাদের স্নান?

সেইসব রঙে,
আমি আকাশ পালানো ছায়া।
শীতের ধূসর কাপে আগের দিনের মতোই
আজকে হেসে কাল মরে যাওয়া ফুল।

আমার উড়ন্ত সব ডানা
শেষ না করে দাঁড়িয়ে থাকার যুদ্ধে
দমকা হাওয়ায় নকশা বোনার মতোই
উড়ে যাওয়া, দিন ফুরিয়ে যাওয়ার ভুল।

 

কাহাদেরও কেউ না

আমি অন্য এক খানে।
নীরব উচ্চারণে, ভয়-ভাবনায় জুড়ে
আমার বহুদিনের স্বপ্নযত ছিল,
ওরা ভিন্ন কারও নামে
এখন সাক্ষী তারে মানে।

তবু ধরাযাক, আমি অসার কল্পনাতে।
চিহ্নহীন ঠিকানাসমেত যতটুকু
পথে পথে ঘুরে বাঁচার উপায় খুঁজি,
কথা দিতে পারি, ভূত্বকের ততটুকু ভাগে
আগামী হেমন্তের গাঢ়তম আবরণে,
আমি হেঁটে যাব চনমনে,
তোমার তুলে দেয়া
অচেনা পৃথিবীর মানচিত্র কে করে পুঁজি।

আমার নিদ্রাপাড়ে ভিন্ন তরঙ্গ,
আমি গোত্রহীন, আমি সম্পূরকের
অদল-বদল একটি মুহুর্ত।
আমি কাহাদেরও কেউ না তো।

 

দেখতে পাচ্ছো কি?

আমি শুভ্র সুনীল নধর কমলেরে নিতে পারি
দিতে পারি মানুষের থেকে দূরে
সূর্যালোকিত পাখিদের অবসর।

বিকেল ডুবে যায়,
সন্ধ্যা তারার তরঙ্গ নামে আমার বারান্দায়
পালগুলোকে গুটিয়ে রাখি চলো

এমনই শীতের রাতে
সর্বপ্রথম জন্মের মতো রাজসিক
একলা হেঁটেছে যারা,
তাদের সকল স্রোত আমার দেখা হয়ে গেছে সারা।

সন্ধ্যাগুলো আগুনের উষ্ণতায়
বুঁদ হয়ে আছে আমার গ্রামাঞ্চলে,
ঘাসের শরীরে মেঘ জমে জমে তাহাদের কথা বলে;
অহং থেকে মুক্তি মেলে এমন সাধ্য আছে?

এতদিনে নগ্ন শরীরের শিরায় শিরায় বৃষ্টির স্পর্শ;
সাক্ষী সূর্য, জলকুক্কুট সকালের জলছবি।

দেখ দেখ, মেঘের সৈন্যদল বাড়ির কাছাকাছি
স্যাঁতস্যাঁতে ওই জানলা খুলে দেখ,
দেখতে পাচ্ছো কি;
সিঁদুর পরাগ আরও আরও কত বেলে বাতাসের নদী?

আমাদের নদী স্রোতের টানে ভাসে
আমাদের নদী কোন পথে গিয়ে মেশে?

ও পথ এখন দূর্গম হতে হতে মানুষ গিয়েছে ভুলে
সেই যাতায়াতে মাদুর বিছানো নামহীন ফুলে ফুলে।
যে পথে গিয়েছে মানুষের দল হেঁটে
সেই পথে রূপ খোলে কি কখনও, পুষ্পবৃক্ষ ফোটে?

 

পথে

মরুভূমি এসে গেলে উত্তাপ হলাম
বৃষ্টি নামলে অধীর ডুবে গেলাম
চাঁদ দেখা দিলে আবর্তনে রাত হলাম
গ্রীষ্ম এসে গেলে ততদিনে দৃশ্যমান
শীত এলে সাহস করে নদী হলাম

পরিপাটি পথে অন্য নাম নিলাম,
দুঃখ এসে গেল, আশীর্বাদ হলাম।
সময় চলে গেল, মনে পড়ে
হৃদয়ে ঘণ্টা বেঁধেছিলাম।

কোথায় তুমি?
আছো কি কোথাও
শুকনো মাটিতে
জলের খেলায়
চিকন রোদে
সুতাফড়িংয়ের
রতির মেলায়…?

 

লেখক পরিচিতি

নুশান জান্নাত চৌধুরী বর্তমানে সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কর্মরত। পড়তে ও ঘুরতে ভালোবাসেন।

Facebook Comments

2 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top