সাগুফতা শারমীন তানিয়া
৩০০ বছরের পুরানো স্যাডলার্স ওয়েলস্ থিয়েটারে আকরাম খানের শো ‘ইটমই’ (ITMOI– In the mind of Igor) দেখেছিলাম, দেখে আমার রীতিমত বোম্বাগড়ের রাজার পিসীর মতন তালকানা দশা হয়েছিল। কে বলে নাচ কেবল নাচ, নাচ যে গাছের মতন স্টেজ ফুঁড়ে বের হয়, শামুকের মতো মাথার উপর টেনে দেয় খোলস। নাচ যে উপাসনা, নাচ যে যজ্ঞ। আর সেই আলো-ছায়া-রং-রস-আকারের মোচ্ছবের ভিতরে হাত পা নেড়ে যায় আমাদের দিশি নাচের মুদ্রাবলী। রাতের খবরের পরে ‘নৃত্যের তালে তালে’ দেখবার সময় যেসব মুদ্রা আমাদের আন্দোলিত করে যেত জেলেপাড়ার বাসিন্দা হয়ে, বেদেবহর হয়ে, কৃষাণ হয়ে– সেইসব মুদ্রাদের হাতছানি, পদে পদে। আবহ আন্তর্জাতিক কিংবা হয়তো বলা ভাল অন্তর্জাতিক, কিন্তু তার সাধনার প্রস্থচ্ছেদ যে গ্রোথ-রিং দেখায়, সেগুলিতে আমাদের বসন্ত আর গ্রীষ্ম মিশে আছে।
ঠিক করেছিলাম, যা থাকে কপালে, আকরাম খানের ‘দেশ’ দেখব। এই ‘দেশ’ তৈরি করার জন্যে আকরাম খান তার কম্পোজার, ভিশুয়াল ডিজাইনার সমেত বিশাল বাহিনী নিয়ে বাংলাদেশে থাকতে গেছিলেন, তাদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশকেই বসবাস-গ্রহণ-ঘ্রাণ-ভোজন-শয়ন করতে, জেলেপাড়ায় গেছেন, গ্রামে গেছেন, জাহাজঘাটায় গেছেন, পোড়াবাড়ি গেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গেছেন- বাংলাদেশের জল আর মাটির বিথার দেখে অভিভূত হয়েছেন। প্রথমদিকে ট্রাফে চিত করে রাখা ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদের মতো করে জানতে চেয়েছিলেন দেশটাকে, দেখলেন চিত্তের যোগ হয় না। গ্রামের একটা ছেলেকে আই-ফোনে ভিডিও করছিলেন আকরাম, ছেঁড়া জামা, জুতাহীন পা, শূণ্য চোখের দৃষ্টি– একসময় তাঁর মন খারাপ হয়ে গেল, ফোন রেখে দিলেন তিনি। ফোন রেখে দেয়া মাত্র ছেলেটা ফিক করে হেসে ফেল্লো, তাঁর পকেট থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে তাঁকে ভিডিও করা শুরু করলো। আকরাম চমৎকৃত হয়ে গেলেন ছেলেটার পারঙ্গমতায়! ঐ দেখা যায় বাংলাদেশ! পরনে কাপড় নাই, পেটে খাদ্য নাই, কিন্তু মানুষের ভিতরে চিকচিক করছে অপার সম্ভাবনা।
‘দেশ’ দেখতে গেলাম ১৫ জুন সন্ধ্যাবেলা। সোয়া এক ঘন্টার শো, আকরামের একক অভিনয় ও নাচ নিয়ে পুরো অনুষ্ঠান। শুরুতে নেপথ্য থেকে আকরাম খান রানা প্লাজার মৃতমানুষদের জন্যে সাহায্যের আবেদন করলেন একটি সংস্থার হয়ে। এরপর অন্ধকার নেমে এলো।
পিনপতন নিস্তব্ধতার ভিতরে স্টেজে একটু একটু করে পাড়াগাঁয়ের রাতের আকাশের রঙ ফুটলো। স্টেজে অস্পষ্ট আলোয় একটা ঢিবি (এটা কখনো কবর, কখনো শ্রমিকের কাজের জায়গা) আর তার পাশে একটা কুঠার। রাতের আকাশের চালচিত্রে একটা আলো ফুটলো, একখানা জ্বলন্ত হ্যারিকেন হাতে আকরাম খান স্টেজে ঢুকলেন, যেন এখুনি কেরায়া নৌকার জন্যে ডাক দেবেন খেয়াঘাটে এসে কিংবা অন্ধকার চিরে কেউ ডেকে উঠবে- “কেডা যায়!” এক মুহূর্তে নর্থ লন্ডনের সেই প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশ তার সমবেত ঝিঁঝিমন্ডলী নিয়ে নেমে এলো।
আমাদের চিৎকৃত ক্রুদ্ধ মত্ত সিটিস্কেপ। তার অশেষ হর্নের আওয়াজ। রিকশার টুরুরুং। গাড়িঘোড়ার যাতায়াতের ভিতরে মানুষের পারাপার। তাদের ছিটকে ওঠা। পড়ে যাওয়া, পুনরুত্থান।
এর ভিতরে মোবাইল ফোনের হেল্প ডেস্কে বৃটিশ বাংলাদেশীর ফোন আর কথা। আর আকরামের নাচ, এ যেন ‘বন্ধনহীন গ্রন্থি’র নাচ।
আকরাম একফাঁকে একটু আড়ালে গিয়ে নিজের চকচকে টাকে নাকমুখ-চোখ এঁকে নেন, তারপর মাথা নিচু করে সেই টাকটাকে মাথা হিসেবে দেখিয়ে আরেকজন মানুষ হয়ে যান। তিনি পিতা, আকরামের পিতা, আমাদের যে কারো পিতা, পিতৃপুরুষ। নাতিদীর্ঘ মানুষ, শ্রমের ভারে কুঁজো আর গরিমাময়। সেই পিতৃপ্রতীক অদৃশ্য শ্রোতাদের বলে যান তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা, ছোটখাট মানুষ তিনি, প্রতিদিন রাঁধেন আর রাঁধেন, বাংলাদেশের কোনো গ্রামে সারা গ্রামকে রেঁধে খাওয়ান, ভাঙাচোরা ইংরেজিতে বোঝান–- বিলেতে এসেও তিনি কেবল রাঁধেন আর রাঁধেন। তিনি সাধারণ মানুষ নন, অন্নপুর্ণা। মাথা নিচু করে টাকটাকেই মুখচ্ছবি হিসেবে দেখিয়ে আকরাম গলদঘর্ম নেচে যান, পিতা স্বগতোক্তি করেন, পিতা সোল্লাসে গল্প করেন, পিতা অস্বীকার করেন। পিতা সরবে চিন্তা করেন। আকরামকে চিৎকার করে ডাকেন নিচতলায় খেতে যাবার জন্যে, সবাই পাতে খাবার নিয়ে বসে আছে তার সাথে খাবে বলে। আকরাম উপরতলায় নাচ প্র্যাকটিস করছেন, নাচ কেন– এই নিয়ে বাপের সাথে তুমুল একচোট হয়ে যায় তাঁর, কোনটা আসলে তাঁর নিজের দেশ–কোনটা নিজের সংস্কৃতি আর পরিচয় সেটা নিয়ে তিক্ত কুৎসিত ঝগড়া।
এই আকরামই আবার মামা হয়ে ছোট্ট ঈশিতাকে গল্প শোনায়, নাচ শেখায়। ঈশিতাকে গল্প শোনানো সহজ নয়। সে পেটে উঠে বসে, কাতুকুতু দেয় আর নেয়, লেডি গাগাকে চেনে আবার গেয়ে ওঠে– ‘জলে ভাসা পদ্ম আমি শুধুই পেলাম যাতনা’ (ছলনার বদলে), শিশুর সরলতম যুক্তিতে অন্যায্য সমর বলতে বোঝে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের যুদ্ধকে, আকরামমামা চিৎকার করে অদৃশ্য আম্মাকে খাস বাংলায় ডাক দিয়ে বলে– “আম্মা তুমি আবার ঈশিতারে তোমার হিস্টোরি শুনাইছ?” এ যেন একচিলতে বৃটিশ-সিলেটী পরিবারের চিত্র, অস্তিত্বসংকটেরত প্রথম প্রজন্ম, পরের প্রজন্মের সংকট আত্মপরিচয়, শেষ প্রজন্ম দিশাহারাভাবে সত্যসন্ধানী।
মামা ঈশিতাকে গল্প শোনাতে থাকে। বনবিবি আর দক্ষিণরায়ের গল্প।
স্টেজের উপরে একটা সূক্ষ্ণ কালো পর্দা নেমে আসে, তাতে প্রজেকশন হয় একটা অপূর্ব অ্যানিমেশনের, যেন ছোটদের বইয়ের পাতায় আকরাম খান ঢুকে গেছেন। একটা ছোট্ট পেটমোটা ন্যাড়ামাথা ঘুনসিবাঁধা ছেলের গল্প, হয়তো বাওয়ালিদের ঘরে জন্ম তার। যে মধু খেতে ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু সমবৎসরের মধু চলে যায় হাটে, সে টাকায় চাল আসবে ঘরে, তার আর মধু খাওয়া হয়না। বাপের সাথে ঢেউয়ের উপর সওয়ার হয়ে সে বনে যায়। কুমিরের চোয়াল থেকে বের করে আনে মাছ। মৌচাক খোঁজে। গাছেদের বেয়ে মগডালে উঠে যায়। দিন ফুরিয়ে রাত আসে, তারার হট্টমেলা নেমে আসে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে, মাথার উপর জোনাকির ফোয়ারা (কেবল তারা কেবল তারা/শিশির শিরে মানিকপারা/হিসাব নাহি সংখ্যা নাহি/কেবল তারা যেথায় চাহি)। এইভাবে মৌ-শিকারী বাপের সাথে বনের কোলে লুটোপুটি খেলে সে, ঢেউ আছড়ে পড়ে তার পায়ের পাতায়, হাতিকে সমীহ করে, জঙ্গল তাকে আপন করে নেয় (আকরাম খান একবার বাওয়ালি বাপ হয়ে একবার ছেলে হয়ে নেচেই চলেছেন, অপূর্ব আবহসংগীত)। একদিন বাঘের গর্জনে পরান কেঁপে ওঠে তাদের, উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াতে দৌড়াতে ছেলেটি একসময় পিছনে ফিরে দেখে বাঘ কই, প্রকাণ্ড এক কামান। কামান, তার সামনে পলায়নপর একটি ছোট্ট পেটমোটা ন্যাড়ামাথা ঘুনসিবাঁধা ছেলে কিংবা আকরাম খান (‘ট্রাক, ট্রাক, ট্রাক/শুয়োরমুখো ট্রাক/ট্রাকের মুখে আগুন দিতে মতিউরকে ডাক’ মনে পড়বে কি আপনার?)। এক হাত বাড়িয়ে কামানটাকে থামিয়ে দিয়েছেন, মাথার উপরে এনিমেটেড মেঘ থেকে অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে আমূল ভিজে একরকম অদ্ভূত ব্যথাবোধ ছড়িয়ে দেন তিনি। আপনার অনেককিছু মনে পড়বে তখন, বীজতলার কৃষককে মনে হবে, সমস্তজীবন বৈরী প্রকৃতির বিপরীতে সংগ্রামরত মানুষগুলিকে মনে হবে, আর মনে হবে বৃষ্টির সন্তান- আমাদের গেরিলাদের, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কথা।
স্টেজে বিক্ষুব্ধ মানুষদের হাত আর মাথা ফুটে ওঠে। ফুটে ওঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- শেষ পর্যন্ত এই একটি লাইনই ঘোষণা হয়ে, আকুতি হয়ে, প্রার্থনা হয়ে, দাবী হয়ে স্থায়ী হয়- ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ (এই মনে করিয়ে দিতে যে, আজো গণতন্ত্র মুক্তি পায়নি?)। আকরাম প্রথমে মিছিলের মুখ দেখে আকৃষ্ট হন, তখনও তাঁর কাছে উত্তোলিত হাত হাস্যাষ্পদ, হাতের ঐ ভঙ্গিটা নকল করতে গিয়ে তাঁর হাতও ঐ ভঙ্গিতে আটকে যায়, আটকে থাকে, বজ্রমুষ্টি তাঁকে বদলে ফেলতে থাকে। তিনি গণমানুষের আন্দোলনে একীভূত হতে থাকেন। এই আত্তিকরণ প্রায় যাদুকরী।
প্রপস এর ব্যবহার মোহবিস্তার করে, বুদ্ধিকে বারবার চমকে দেয়। বিশাল একটা চেয়ার (তিনমানুষ সমান লম্বা) আর তার পাশে আরেকটা ক্ষুদে চেয়ার। আকরাম চেয়ারে উঠবার এবং পড়ে যাবার নানান ভঙ্গিতে বোঝান, ক্ষমতায় আরোহন, উৎখাত, ক্ষমতায় কোনোক্রমে ঝুলে থাকবার চেষ্টা। একসময় বড় চেয়ারটা ঘুরতে থাকে, এইবার দেখা যায় চেয়ারের উলটো পিঠ জুড়ে একটা জীর্ণ দেয়াল (জসীমের ‘সারেন্ডার’ ছবির পোস্টার আছে তাতে), তাতে চিকা মারা– একটি পুরানো আর্তি– ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, আর দেয়ালে ঝুলানো সেই প্রথম দৃশ্যের টিমটিমে হ্যারিকেন। এইবার আমাদের ভিতর ফুঁড়ে উঠতে থাকে আমাদের দেশ, নেতাদের বদল হয়, কুরসীর অপর পিঠের মানুষগুলির কিছুই বদলায় না, না অবস্থান, না চাহিদা, না প্রাপ্তি।
ঝড়বাদলের এক সন্ধ্যায় ঈশিতা হারিয়ে যায়– তার মামা শোরগোল করে তাকে খুঁজতে বের হয়– বড় চেয়ারের তলাটা এখন টংঘর, ধানক্ষেতের ভিতরে বা নদীর পাড়ে যাদের ভিতরে অল্প আলো জ্বলে–কিংবা এটা মশারির ভিতর– সেখানে লুকিয়ে ভয়ে কাঁপছে ঈশিতা। মামাকে সে একটা গল্প বলতে শুরু করে, সেই ছোটখাট মানুষটার গল্প, সারা গ্রামকে খাওয়াত সে, দিনমান পরিশ্রম করতো, মামা সবিস্ময়ে আর্তনাদ করে ওঠে– ভাগ্নিকে জিজ্ঞেস করে– তুমি আবারও আমার বাপের গল্প শুনছ? সেই ছোটখাট লোকটাকে একটা পাকিস্তানি সেনা ধরে নিয়ে যায় বোমারু বিমানের ইঞ্জিনের ভিতরে, কেননা লোকটা তো ভাল রাঁধতো, রেঁধে খাওয়াক তাদের, ইঞ্জিনের ভিতরে পুরবার সময় লোকটা ছিল পুরো পুর্ব পাকিস্তানি, বের করে দেয়া মাত্র কি করে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করলো, অতএব পাকিস্তানি সেনাটা সেই ছোটখাট লোকটার পায়ের পাতা একটু একটু করে পুঁচিয়ে কেটে ফেল্লো। আর সে দাঁড়াতে পারেনা, কত চেষ্টা, কত কান্না, শেষে সবকিছু ছাপিয়ে তার মৃত্যুঞ্জয়ী ইচ্ছা জয়ী হয়, সে আবার দাঁড়ায়, পায়ের পাতাহীন মানুষটা (আকরাম কিন্তু নেচেই চলেছেন)। জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়…
পুরুষের নাচ কিনা তান্ডব আর নারীর নাচ লাস্য, এই ব্যাকরণ ভুলে যেতে হয়, আকরাম ভুলিয়ে দেন, নাচ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে ওঠে, কিংবা সামাজিক দৃশ্য। অনায়াসে মানুষটি তাঁর দৈর্ঘ্য ছাপিয়ে ওঠেন, সাংখ্যমানেও বেড়ে ওঠেন, অসংখ্য মানুষ হয়ে ওঠেন। তাঁর হাহাকার আমাদের বুক চিরে বের হতে থাকেতান– ‘তোমাকে পাবার জন্যে হে স্বাধীনতা, আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়’… আকরাম পিতৃপুরুষ হয়ে ওঠেন, তাঁর পিছনে অদৃশ্য গোষ্ঠী তৈরি হয়, তাঁর পিঠেও যেন অমোচনীয় সেই ‘রক্তজবার মতো ক্ষত’ তৈরি হয়। আমরা বাঙালিরা কেউ অশ্রুরোধ করতে পারিনা।
জাতির উপর কালো ছায়া নেমে আসা দেখান তিনি, স্টেজের উপর অজস্র সমান্তরাল ধারায় কাপড় নেমে আসতে থাকে, সেই কাপড় আন্দোলিত করে আকরাম খান খুঁজে বেড়ান, ঘুরপাক দিতে থাকেন। একসময় এই কাপড়ের ধারাগুলি আবার উঠে যেতে থাকে, অদ্ভূত গোধূলীর লালচে হলুদ আলোয় অজস্র তারে বাঁধা বাতিগুলি নেমে আসে– কে যেন আমাকে বলে দেয়– এটা বধ্যভূমি, অর্ধনগ্ন আকরাম সেই বাতিগুলির ভিতরে আকুল হয়ে ডাকতে থাকেন– আব্বা! আব্বা! কবর খুঁড়ে আবিষ্কার করেন বাপের পিরান, ধুলো ঝেড়ে গায়ে দেন, ঠিকঠাক ফিট করে। সকল দৈব-দুর্দৈব এবং বৈরী বাতাসের বিপরীতে বাংলাদেশের চিহ্নকে ধরে ঝুলতে থাকেন, বারেবারে বাতাস এসে তাঁকে অন্ধ করে দিয়ে যায়।
পুরো ‘দেশ’ এ প্রচুর বাংলা বলা হয়েছে, বাংলা কবিতা, পুরানো সেই গান বারবার গাওয়া হয়েছে ‘জলে ভাসা পদ্ম আমি’ (এমন একটা বাংলাগানের সাথে পাশ্চাত্যের ক্ল্যাসিক্যাল কি করে এভাবে মিলিয়ে দেয়া সম্ভব?), আর নোঙরের মতন কাজ করেছে বারবার আকরামের ডাক– ‘আব্বা’ আর ‘আম্মা’। সুবিশাল প্রেক্ষাগৃহের হরেক জাতের দর্শকের ভিতরে সেই ডাক কেমন লাগে তা জানে আমার শ্রুতি, জানে আমার মন। আমার ভাষা অক্ষম। এমন করে দেশকে দেখতে পারে মানুষ? দেশে না থেকেও? দেশে না জন্মেও? এমন করে হাতড়াতে পারে শেকড়সন্ধানী হাত?
এই প্রোডাকশন দেশে দেশে ঘুরবে, কত মানুষ এমন কান্নার সাথে এমন ভালবাসার সাথে এমন রূপকথার সাথে এমন দূরপারের চুপকথার সাথে বাংলাদেশের নাম নেবে! আনন্দাশ্রুর নামই শুনেছি এতদিন, আমাকে কেউ যদি তার রূপ বলতে বলে, আমি বলবো সুন্দরবনে আকরাম খানের সেই বালকের দিনযাপনের দৃশ্যের কথা, মাথার উপরে আকাশ আত্মহারা, জলের আছড়ানি, প্রায় অলৌকিক। লোহিত সাগর হয়ে এডেনে কয়লা ভরে-ইহুদি বেপারিদের সওদা কিনে জলযানে করে যারা ভারত মহাসাগরে এসে পড়তো, তাদের শরীরমন যেভাবে জুড়িয়ে যেত, ক্রান্তীয় অরণ্য-তালসারি-ঝর্ণা-চাবাগান-জোনাকির মিছিল দেখে–
১৮ জুন, ২০১৩
লন্ডন ইস্ট, ইউ কে
দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং পাঠক কিছুটা হলেও আনন্দ বিহ্বলতায় উদাস হয়ে গেছে বোধকরি 🙂 ধন্যবাদ আপনাকে।