অকপট কাব্য মাধুর্যের কবি লুইজ গ্লিক

[২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অ্যামেরিকান কবি/প্রাবন্ধিক লুইজ এলিজাবেথ গ্লিক। সাহিত্যে নোবেল অর্জনকারী নারীদের ভেতরে লুইজ ১৬ তম। লুইজ গ্লিকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ শে এপ্রিল নিউ ইয়র্ক শহরে, বর্তমানে বসবাস করছেন অ্যামেরিকার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজ শহরে। পেশাগত জীবনে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক। লুইজ গ্লিক অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি এন্ড ইন্সটিটিউট অফ আর্টস এন্ড লেটারস এর একজন সদস্য। ১৯৯৯ সালে তিনি অ্যাকাডেমি অফ অ্যামেরিকান পোয়েটস এর চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন। ২০০৩ থেকে ২০১০ সময়কালে তিনি ইয়েল সিরিজ অফ ইয়ংগার পোয়েটস এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ কাব্যযাত্রায় তাঁর অর্জিত সম্মাননা পালকগুলোর অন্যতম পুলিৎজার পুরস্কার, ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড, ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল এওয়ার্ড, বলিনজেন পুরস্কার ইত্যাদি। আর এ বছর সাহিত্যে নোবেল তাঁকে এনে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মাননা।

লুইজ গ্লিক আধুনিক জীবনচিত্র আঁকেন কাব্যিক মগ্নতায়, হাত ধরে পাঠককে তা নিয়ে যায় এক ধ্যানমগ্নতার ভুবনে। শৈশব, পারিবারিক জীবন, ট্রমা, কামনা-বাসনা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ব্যর্থতা, বিষাদ কাটিয়ে সেরে ওঠা, নবজাগরণ, একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা ইত্যাদি বিষয় তাঁর কবিতার মূলস্রোতে ফিরে ফিরে আসে। তাঁর কবিতার পরতে পরতে তীব্র আবেগ, মিথ, ইতিহাস ও প্রকৃতির চিত্রায়নে ব্যক্তি লুইজের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আত্মজীবনীমূলক উপাদানের উপস্থিতি সত্ত্বেও তাদেরকে কোনভাবেই স্বীকারোক্তিমূলক (confessional) বলা যাবেনা। তাঁর কবিতার অনুপম বৈশিষ্ট্য হলো, কবিতাগুলো ব্যক্তি লুইজকে ছাপিয়ে পাঠকের কাছে সব সময়ই এক সার্বজনীন আবেদন নিয়ে প্রতিভাত হয়।

ছেলেবেলায়ই গ্রীক মিথলজি, এবং ‘জোন অফ আর্ক’ ইত্যাদির মতন বিভিন্ন ক্লাসিক্যাল গল্পের সাথে লুইজের পরিচয় হয়। এসব অভিজ্ঞতা তাঁর কাব্যভাবনায় প্রভাব রেখেছে খুব গভীরভাবে, যা তিনি নিজেই বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন। খুব অল্প বয়সেই লুইজ কবিতা লিখতে শুরু করেন।

কৈশোরে লুইজ গ্লিক এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, যা প্রথম তারুণ্যেও তাঁর জন্যে ছিলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমনও সময় গেছে যখন তিনি ভেবেছেন তিনি মারা যাচ্ছেন, অথচ তিনি প্রাণপণ চাচ্ছেন বেঁচে থাকতে। স্কুলের শেষ বর্ষে চিকিৎসার জন্যে স্কুল ছেড়ে দিতে হলেও লুইজ হাই স্কুল গ্রাজুয়েশন অর্জন করলেন ১৯৬১ সালে। সাত বছর যাবত থেরাপি নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন এবং এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শেখেন বিভিন্ন বিষয়ে গভীর ভাবে ভাবতে। মানসিক রোগের কারণেই তিনি কলেজে ফুল টাইম কোর্সে ভর্তি না হয়ে সারাহ লরেন্স কলেজে কবিতার ক্লাসে ভর্তি হলেন। এরপরে তিনি ১৯৬৩-১৯৬৬ পর্যন্ত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জেনারেল স্টাডিজ এর কবিতার ওয়ার্কশপগুলোতে অংশগ্রহণ করেন, যেখান থেকে প্রথা-বহির্ভূত ছাত্রদের ডিগ্রী প্রদান করা হয়। উচ্চতর শিক্ষার প্রথাগত পথে না
হাঁটার এই সিদ্ধান্তই পরবর্তী সময়ে তাঁর জন্যে খুলে দেয় নতুন এক সম্ভাবনা। লুইজের নিজের ভাষ্যমতেই এই পর্যায়ে লিওনী অ্যাডামস, স্ট্যানলি কুনিটজ এর মতন শিক্ষকদের সান্নিধ্য এবং পরামর্শ কবি হিসেবে তাঁর বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ডিগ্রী শেষ না করেই লুইজ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। এই সময়েই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ফার্স্টবর্ন’, যা সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে। এরপরে দীর্ঘদিন রাইটার্স ব্লক এর কারণে তিনি লিখতে পারেন নি। ১৯৭১ সালে লুইজ গডার্ড কলেজে কবিতার শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করলেন এবং আবার লেখালেখিতে ফিরলেন। এরপরে একের পর এক লুইস সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর কাব্যগ্রন্থ এবং প্রবন্ধগুচ্ছ দিয়ে।

এ পর্যন্ত তাঁর বারোটি কাব্যগ্রন্থ এবং কয়েকটি কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। ‘দ্য ট্রাইয়াম্ফ অফ একিলিস'(১৯৮৫) এবং ‘অ্যারারাট(১৯৯০) কাব্যগ্রন্থগুলো তাঁকে দেশে এবং দেশের বাইরেও ব্যাপক পাঠক পরিচিতি এনে দেয়। ‘অ্যারারাট’ এর কবিতাগুলো তিনি লিখেছিলেন মূলত: তাঁর বাবার মৃত্যুজনিত শোক থেকে, এই বইটিকে ২০১২ সালে সাহিত্য সমালোচক ডোয়াইট গার্নার আখ্যা দেন বিগত ২৫ বছরের মধ্যে প্রকাশিত সবচেয়ে নির্মম এবং বিষাদমাখা কাব্যগ্রন্থ হিসেবে। এর পরের বই ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস'(১৯৯২)। সমালোচকরা এই বইকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ বই’, ‘মাইলস্টোন’ ইত্যাদি হিসেবে উল্লেখ করেন। পরের বছর এটি পুলিৎজার পুরস্কার পায়। ‘অ্যাভার্নো'(২০০৬) বইটিতেও লুইজের মুনশিয়ানা স্পষ্ট। ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের সন্ত্রাসী হামলার(৯/১১) পরিপ্রেক্ষিতে লুইজ ‘অক্টোবর’ নামে একটি বই আকারের দীর্ঘ কবিতা প্রকাশ করেন ২০০৪ সালে। ছয় পর্বের এই কবিতায় তিনি গ্রীক মিথের আলোকে ট্রমা ও যন্ত্রণার কথা বলেন। তাঁর সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চ্যুয়াস নাইট'(২০১৪) তাঁকে এনে দেয় ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, লুইজ গ্লিক যখন তাঁর প্রবন্ধগুলোতে টি এস এলিয়টের ঐকান্তিকতা, কিটস এর অন্তর্গত শ্রবণের আর্ট, অথবা জর্জ অপেন এর আরোপিত নীরবতার কথা উল্লেখ করেন, সেগুলো আসলে গ্লিক এর নিজের কবিতাতেই আলোকপাত করে, যদিও প্রচলিত মতবাদকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপোষহীন অস্বীকৃতির কারণে তিনি যাঁর সবচেয়ে কাছাকাছি, তিনি কবি এমিলি ডিকিনসন।

লুইজ গ্লিকের কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষত্ব হলো, তিনি সচেতনভাবেই জাতি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ বিভেদের মত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যান। একইভাবে তিনি নিজেও কোন বিশেষ বিশেষণে বিশেষায়িত কবি পরিচয়কে স্পষ্ট অস্বীকার করেন: যেমন ‘ইহুদি-অ্যামেরিকান কবি’, ‘নারীবাদী কবি’, ‘প্রকৃতির কবি’ ইত্যাদি। বরং তিনি হয়ে ওঠেন এক সার্বজনীন আইকন। সুস্পষ্ট কাব্যিক উচ্চারণ এবং অকপট কাব্য মাধুর্য লুইজ গ্লিককে করে তোলে বিশ্বজনীন।]

 

লাল পপি
(The Red Poppy / from the book: The Wild Iris-1991)

মন না থাকলেই
সম্ভবত খুব ভালো
হতো। অনুভূতি:
আহ অনুভূতিরাই যে
আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ওই আকাশে
আমার দেবতা সূর্যের বাস। শুধু তার জন্যেই
নিজেকে সম্পূর্ণ মেলে ধরে দেখাই
এই হৃদয়ের অন্তর্লীন তেজ,
ঠিক সূর্যের উষ্ণতার মতই সেই আগুন
এই দ্যুতি যদি হৃদয় না হয়,
তবে কি? হে আমার সহোদর সহোদরাগণ,
তোমরাও কি একদা
আমার মত ছিলে, বহুদিন আগে,
তোমাদের মানব জন্মেরও আগে?
তোমরা কি একদা অকপটে
মেলে ধরেছিলে নিজেদের মাত্র একবারই,
এরপরে আর কোনদিনই নয়? কারণ বস্তুত
এখন আমি তোমাদের ভাষায়
কথা বলছি, আমি কথা বলছি
কেন না আমি ছিন্নবিচ্ছিন্ন।

 

আয়না
(The Mirror / from the book: The Descending Figure-1992)

আয়নায় তোমাকে দেখে ভাবি
এতোটা রূপবান হবার অনুভূতিটা ঠিক কেমন
এবং কেন তুমি নিজেকে ভালো না বেসে,
অন্ধ মানুষের মত শেভ করতে গিয়ে
কেটে ফেলো নিজের গাল।
মনে হয় আমার এই তাকিয়ে থাকায়
তুমি নিজের বিরুদ্ধে আরো নিষ্ঠুরতার ছুতো পাও,
যেন আমাকে দেখাতে পারো কী অনায়াস অবজ্ঞায়
তুমি নিজের মাংস চেঁছে ফেলতে পারো বিনা দ্বিধায়
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি
আমার আকাঙ্ক্ষিত প্রতিবিম্বকে না দেখে,
নির্ভুল দেখি একজন মানুষের রক্তাক্ত চেহারা।

 

অক্টোবর, পর্ব ১
(October, Section I -2004)

আবার কি এলো শীতকাল, ঠান্ডা পড়লো আবার,
সেদিনই না ফ্রাঙ্ক পিছলে পড়ে গেলো বরফে,
তারপরে সেরেও উঠলো, বসন্তের বীজও তো বোনা হয়েছিলো তাইনা

রাত্রির অবসানও তো হয়েছিলো,
বরফ গলা জলে
টইটুম্বুরও হয়েছিলো সরু নালাগুলো তাইনা

আমার শরীরকে উদ্ধার করে
নিরাপদেও তো রাখা হয়েছিলো তাইনা

আমার ক্ষতচিহ্নগুলোর ওপরে
অদৃশ্য আঘাতের দাগও তো বসেছিলো তাইনা

শঙ্কা, শীত,
সব কিছুরই না অবসান হয়েছিলো, বাড়ির পেছনের
বাগানে সার মাটি দিয়ে গাছও তো লাগানো হয়েছিলো তাইনা-

আমার স্পষ্ট মনে আছে, মাটির লালচে রঙ আর তার ঘনত্ব,
কেমন করে মাটির বুকে সারি সারি গাছ লাগানো হয়েছিলো,
দক্ষিণের দেয়াল বেয়ে উঠেছিলো তো লতাগুলো তাইনা

রুখু মাটির ওপরে বয়ে যাওয়া হাওয়ার শিসের আওয়াজ
ঢেকে দেয় তোমার স্বর, আমি আর শুনতে পাইনা তোমাকে

হাওয়ার আওয়াজ কী বলতে চায়,
আমার আর তাতে কিছু যায় আসে না

কবে থেকে আমাকে চুপ করিয়ে দেয়া হলো,
কবে থেকে সেই আওয়াজের বর্ণনা দেয়াও অর্থহীন হয়ে গেলো

শুনতে যেমনই লাগুক, তাতে তো প্রকৃত সত্যটা বদলায় না-

রাত্রি তো শেষ হয়েছিলো,
বীজ বোনার ঋতুতে পৃথিবী তো নিরাপদ ছিলো তাইনা

আমরা তো বীজ বুনেছিলাম,
আমরাও তো পৃথিবীর কাছে প্রয়োজনীয় ছিলাম তাইনা,

লতাগুলো, তাদের ফসল কি তোলা হয়েছিলো?

 

দেশান্তরের রাত
(The Night Migrations / from the book: Averno-2006)

এইতো সেই ক্ষণ, যে মুহূর্তে আবারো
মাউন্টেইন অ্যাশ গাছেরা থোকা থোকা লাল ফলে সাজে!
আর তখন রাতের অন্ধকার আকাশে
পরিযায়ী পাখিরা ডানা মেলে দেশান্তরে।

বেদনা ভারাক্রান্ত মনে ভাবি
মৃত মানুষেরা এই দৃশ্যগুলো আর দেখবে না-
আমাদের দিনানুদিন নির্ভরতার বিষয়গুলো
কী অবধারিতভাবে অদৃশ্যে মেলায়।

আত্মার সান্ত্বনা তবে মিলবে কোথায়?
প্রবোধের ভাষায় নিজেকে বলি, হয়তো তার কাছে
এসব আনন্দ সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন
বরং শুধুমাত্র বেঁচে না থাকাটাই সম্ভবত
কল্পনাতীত এক দুরূহ বাস্তব।

 

গোধূলি
(Twilight / from the book: A Village Life-2009)

সারাদিন কেটে যায় জ্ঞাতিভাইয়ের কারখানায় কাজ করে,
রাত্রে বাড়ি ফিরে প্রতিদিন সে একই জানালার সামনে এসে বসে,
প্রতিদিনই সে দেখে দিনের একটাই সময়, গোধূলি।
হয়তো এমন আরও সময় দরকার স্বপ্নালু বসে থাকবার।
কিন্তু তার ভাইয়ের ভাষায়:
জীবন সংগ্রাম-জীবন সংগ্রামই মানুষের স্বপ্নালু বসে থাকার অন্তরায়।

জানালায় সে দেখে না সমগ্র পৃথিবী, দেখে চতুষ্কোণ এক ল্যান্ডস্কেপ
এটাই তার পৃথিবী। ঋতু বদল হয়,
প্রতিটা ঋতু তার কাছে দৃশ্যমান মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্যে।
সবুজ বদলে গিয়ে সোনালি রঙ ধরে, সোনালির পরে শুধু শুভ্রতা-
এই সৌন্দর্য আহরণ তাকে দেয় তীব্র আনন্দ,
যেমন আনন্দ দেয় টেবিলে সাজানো ডুমুর।

সন্ধেবেলায় দুই পপলার ঝোপের মাঝখানে লাল আগুন ছড়িয়ে সূর্য অস্ত যায়।
গ্রীষ্মে সূর্য অস্ত যায় দেরীতে-মাঝে মাঝে অতক্ষণ জেগে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

এরপর সব কিছু ঝিমিয়ে পড়ে।
পৃথিবীকে আরো কিছুটা সময়
দেখার, এরপরে শুধু শোনার,
ঝিঁঝিঁ পোকা, উচ্চিংড়ে।
মাঝে মাঝে শুধু ঘ্রাণ নেয়ার, লেবু গাছের সুঘ্রাণ, কমলা গাছের সুঘ্রাণ।
এরপরে নিদ্রার আড়ালে তলিয়ে যায় এসব।

কিন্তু এসবকে বিসর্জন দেয়াও সহজ, পরীক্ষামূলক ভাবে,
কয়েক ঘণ্টার জন্যে।

আমি আমার আঙুলগুলো মেলে ধরি-
বিসর্জন দেই সব কিছু।

দৃশ্যমান পৃথিবী, ভাষা,
রাত্রিবেলায় পাতাদের মর্মরধ্বনি,
লম্বা ঘাসেদের ঘ্রাণ, কাঠ পোড়া ঘ্রাণ।

সব বিসর্জন দেই, তারপরে আমি মোম জ্বালাই।

 

অতীত
(The Past / from the book: Faithful and Virtuous Night-2014)

দুটি পাইন ঝোপের ফাঁক দিয়ে হঠাৎ
আকাশে জেগে ওঠে একটা জ্যোতিষ্কণিকা
পাইনের সূচ্যগ্র পাতাগুলো তার দীপ্তিমান বুকে

ফুটে আছে খোদিত শিল্পকর্মের বিভায়
আরো আরো ওপরে
অলক মেঘে ঢাকা নক্ষত্রলোক-

বাতাসে শ্বাস নাও, শুভ্র পাইনের সুগন্ধ ম’ ম’ করছে।
বহমান হাওয়ায় সে সৌরভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়
পাইন বনের হাওয়ার স্বরও কী আশ্চর্য
ঠিক যেন হাওয়া বইছে বায়স্কোপের ভেতর।

চলমান ছায়া, দড়ির শরশর আওয়াজ।
নাইটিংগেল পাখি ডাকছে
কর্ড্যাটা! প্রণয়াকাঙ্ক্ষী পুরুষ পাখিটি
নারীটিকে ডাকছে তীব্র কামনায়

দড়িটা সরে সরে যায়,
দুই পাইনের মাঝে মজবুত বেঁধে রাখা
হ্যামক বাতাসে দোল খায়

বাতাসে শ্বাস নাও, শুভ্র পাইনের সুগন্ধ ম’ ম’ করছে।

শোন, এই যে আমার মায়ের স্বর
নাকি আসলে এটা শুধুই বয়ে যাওয়া
হাওয়ায় গাছেদের স্বর?

কারণ, অপার শূন্যতার ভেতর দিয়ে
বয়ে যাওয়া হাওয়ার কি কোন স্বর থাকে?

 

লুবনা ইয়াসমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখেন। প্রিয় কবি আবুল হাসান, প্রিয় লেখক পাওলো কোয়েলো।

বর্তমান আবাস কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের টরণ্টো শহরে। তবে লুবনা ইয়াসমিন এর জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে ঢাকা শহরে।  সবচে’ প্রিয় বন্ধু প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করেন, উদযাপন করেন নিয়ত।

তাঁর কাছে কবিতা লেখা হয়তো কখনো কখনো নিজের সাথে কথা বলা, হৃদয়ের কথা বলা, আর কখনো কখনো শব্দ, ছন্দের বিন্যাসে একটা সৃষ্টিশীল ভাষার কোলাজ বোনা। 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top