লুৎফুল হোসেনের কবিতা

অহল্যা গর্ভকে

অপেক্ষার মাদুলি গলায় ঝুলিয়ে
চন্দ্রালোক স্নানে জোছনা মাখা গায়ে
রূপালি ঢেউ তুলে ডাকলে-চন্দ্রমুখী
সূর্যস্নানে সিক্ত ঘামে কুসুমের স্মৃতি বুনতে
ত্বক ঝলসে রঙিন হলো-সূর্যমুখী
তারার রাজ্য উপেক্ষায় ফেলে
চুম্বনের নাম রাখলে-নক্ষত্র পল্লী
দেখনি আঁধার অমাবস্যার আবছা অবয়বে
খেলা করে যায় যত অযুত প্রশ্ন
পুরুষের সর্বনাম লিখতে গেলেই স্লেট-পেন্সিল
খোলা কাগজ, নোটবুক-সর্বত্র
সেই আঁধার মাখা নৈঃশব্দ্যের পিঠ জুড়ে
লেখা হলো-নাম-ধূসর কালো মেঘ
অনিন্দিতা-বৈরি আকাশের বুকে আর
খুঁজো না অর্ঘ্যের ছায়ায় হারানো অনিকেত
সোমত্ত বর্ষায় আজ পুড়ে গেছে আরাধ্য
ফসলি জমিন-ফুল ফল পত্র-পল্লব দল
কৃষকের স্বপ্নময় বিদ্ধ অর্জুন আক্ষেপ

 

নিঃসঙ্গ সহবত

তবুও বাসন চকমকি হবে
ক্ষুধার গুল্ম ঘরবাড়ি ছেয়ে নেবে
নান্দনিক দৃশ্যের পোশাক
ও সুগন্ধি ওড়ানো হেঁসেল
সক্রেটিসের মতো বলে উঠবে
নো ইওর টেস্ট-বৎস-নো ইওর টেস্ট

আমরা শিষ্য-অগণিত প্লেটো
আপন ইন্দ্রিয় চিনে নিতে ত্রস্ত অবিরত
কুর্ণিশে বাড়াবো জ্ঞানের ক্ষত
বৃক্ষের বৃত্ত হেলেদুলে বাতাসে ছড়াবে
সন্দর্ভ উদ্দীপনার পৌরাণিক মোহর
সংসার ছায়াই গুল্ম-জীবনের পূর্বাপর

আধুনিক ক্ষুধা তেষ্টা পোশাকের ঘর
সম্পর্কের গভীরতায় অনাব্য সহবত
ভেগাসের মদির নিয়ন নীল আগাভে
চুইয়ে নামা অগ্নিজল-এইসব সকলই
ঘিরে থাকে ব্যস্ততার দৈনন্দিন প্রহর
জীবন ক্রমশ পূর্ণ নিস্তব্ধ পানাম নগর

 

দৈনন্দিন মৃত্যু

করতলে সামলে রাখা মুদ্রারও
এক পিঠ আড়ালে রাখে দখলদারিত্ব
সবটুকু তার দৃশ্যে চাইলে
দাঁড়াতে দাও খোলা হাওয়ায়
মাটির সখ্যে চলতে দাও
রোদ বৃষ্টির হল্লা দাও
জীবন থেকে চুমুক চুমুক
সুখ-দুঃখের মেওয়া দাও
মান-অভিমান বোধের ঢালে
ইচ্ছে-খুশি গড়াতে দাও
ভালোবাসার সরল-গরল
নদীর মতন নিরবধি
মগ্ন মোতির সোনালি জল
অগ্নিশিখা কণ্ঠ চুইয়ে নামতে দাও
ইচ্ছে থেকে আধিপত্যের ব্রাকেটগুলো
একটা একটা সরিয়ে নাও
মুক্তবর্ণে আপন সুধায়
মর্জিমাফিক কথার কাচে
জীবনটাকে দেখতে দাও

নইলে শুধু আধেক সুখের
বৃত্তে মাপা পরিসীমায়
গণিত মুখো হিসেবি দিন-
এইটুকুনই গ্রাহ্যে নাও
সুখের ফানুস আঙুলবন্দি
সুতোর ভিতর মৃত্যুসন্ধি খুঁজতে দাও
অন্ধ জীবন যাপনসিদ্ধ
যতির বাঁধে যাবজ্জীবন মরতে দাও

 

লুৎফুল হোসেন

কবি, প্রকাশক ও সাহিত্যকর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। বিভিন্ন রকমের পোর্টাল ও পত্রিকায় নিয়মিত গল্প, কবিতা, ফিচার, প্রবন্ধ এবং গান লিখছেন। বাংলাদেশের লিটলম্যাগ ও নানা প্রকাশনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন সেই ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই। শৈল্পিক মননশীলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলছেন তার নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘রচয়িতা’।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top