নিউ ইয়র্ক: হাডসন নদীতে লুকিয়ে আছে যে শহরের আত্মা- কাজী রাফি

কাজী রাফি 

 পর্ব-১

বিমানের জানালা থেকে নিউইয়র্ক শহরকে উঁকি দিয়ে দেখলাম। আটলান্টিকের এই প্রান্তের মহাদেশটিতে আমার প্রথম আগমন। করোনার মহামারির কারণে বাংলাদেশ থেকে যাত্রারম্ভে বিমানবন্দরে করোনার পি সি আর ল্যাব টেস্ট ক্লিয়ারেন্স লাইনটা ইমিগ্রেশন লাইনের চেয়ে লম্বা ছিল। এই করোনার মহাকাল আমাদের শিখিয়ে দিল একটা স্বাভাবিক জীবনের, স্বাভাবিক চলাচল কত মূল্যবান। স্বাভাবিকভাবে বাতাসের অনেক উপাদানের মাঝে অক্সিজেনকে গ্রহনে মানব-শরীরে স্রষ্টা যে অক্সিজেনকে গ্রহণের যে অনন্য পদ্ধতি এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রত্যঙ্গ তা কত মহামূল্যবান তাও এই করোনাকাল আমাদের শিখিয়ে দিলো।

প্রতিটি নতুন দেশে পা রাখার আগে আমার কল্পনা কিছুটা স্বপ্নের মতো করে সবকিছু দেখে নিতে চায়। মানুষ, তাদের জীবন এবং প্রকৃতি। কিন্তু সব দেশে ঢোকার আগে এই কল্পনায় একটা অদ্ভুত খেয়াল আমার মাঝে ভর করে। আফ্রিকায় প্রবেশের আগে, বিমান যখন আকাশ থেকে আফ্রিকার মরু-মাটির দিকে মনোযোগী তখন ভেবেছিলাম, দিগন্তছড়ানো ভূমিতে একদল মেষশাবক অলস ভঙ্গিতে মেঘ অথবা গাছের ছায়া খুঁজছে। মাটি দিয়ে পিরামিডের মতো করে বানানো ঘরগুলো দূরে দূরে এখানে সেখানে ছড়ানো। মেয়েরা কৃষি আর ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।  তাদের রান্না করা পোড়া পোড়া খাবারের ঘ্রাণটুকুও আমি বিমানের সৌরভমণ্ডিত খোপের মধ্যে থেকেও অনুভব করেছিলাম। বলাবাহুল্য, জগতটা এখন ছোট নাকি বই-সিনেমা, ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা কোনো দেশ নিয়ে তার ঠিক ঠিক ছবিই শুধু আঁকতে পারি না, সেখানে বহমান মনুষ্য জীবনের ঘ্রাণটুকুও পাই! আফ্রিকাকে আমেরিকার মতো টেলিভিশন অথবা ইন্টারনেটের পর্দায় না দেখলেও তাদের জীবনাচরণ, অনন্ত সময়ের সাথে খাঁ খাঁ অথবা বনজ প্রকৃতির যে চিত্রকল্প আমি এঁকেছিলাম তার অনেকটাই বাস্তবেও সেরকম।

কিন্তু আমেরিকার এত এত সিনেমা দেখে, টেলিভিশনের খবরের প্রধান শিরোনামে আমেরিকার প্রতিনিয়ত বসবাস সত্বেও আমি যেন আমেরিকার সঠিক চিত্রটি কল্পনাতে আঁকতে পারছিলাম না। রাত তখন নয়টা। মনোজগত দিয়ে এতক্ষণ যে আমেরিকাকে আমি এঁকে নিয়েছি বিমানের উপর থেকে দেখে সেই স্বপ্ন-কল্পনাটার মিল খুব যে পেলাম তা নয়। অথবা হাজার জাতি-গোষ্ঠীর বিচিত্র জীবন আর সংস্কৃতি নিয়ে নিউইয়র্কবাসীর জীবনে যে বৈচিত্রময়তা তার কূল-কিনারার সূত্র খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

রাত নয়টা। মানে একটু আগেই সুর্যাস্ত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে অসংখ্য যান। জে এফ কে অনেকটাই সুনশান। কাতার এয়ার ওয়েজে আসা যাত্রীরা ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র চারজন ইমিগ্রেশন অফিসার। বাকি ডেস্কগুলো ফাঁকা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিটি যাত্রীদের বেশ সময় নিয়ে যাচাই বাছাই করে তবেই তারা ছাড় দিচ্ছে। এই ফাঁকে মুঠোফোনে ওয়াইফাই লাইন সংযুক্ত করলাম। সাথে সাথে বিমানবন্দরের বাইরে আমাকে নিতে আসা আমার বন্ধু জহুর হক ফোন করে আমাকে স্বাগত জানাল এবং দুষ্টুমি করে বলল,

ইমিগ্রেশন অফিসারকে তাড়া দিয়ে বলিস, তোমাদের দেশের একজন ভবিষ্যত সিনেটের আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অনেকক্ষণ ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

লাগেজ নিয়ে কোনদিকে যাব সে ব্যাপারে সে কিছু দিকনির্দেশনা দিল। ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ গ্রহণ থেকে বাকিটুকু এত সহজ ছিল যেন আমার জানাই ছিল, আমার বন্ধুটি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

টার্মিনাল ৮ –এর পার্কিং থেকে কারটা যখন বের হচ্ছিল, আমার মালদ্বীপ বিমানবন্দরের কথা মনে পড়ল। কোনো মিল কি খুঁজে পেলাম? চল্লিশ মিনিট ধরে যে পথে এলাম, চাঁদটা ঠিক আমার চোখ বরাবরই ছিল। রাস্তার দুই পাশে বনানি। ম্যানহাটনের দালান-কোঠার পর শহরটা যেন হারিয়ে গেছে। গাঢ় সবুজের আভাগুলো জোছনার আলোয় ফুটেও যেন ঠিক ফুটছে না। জহুর বলল,

তুই তো কবি…। দেখবি, এখানকার মতো গ্রিন বাংলাদেশও নয়।

চাঁদটা চোখের সামনে আর নেই। জনমানবশূন্য শুনশান রাত। রেলক্রসিং এ থেমে গেলাম। বিশাল একটা মালবাহী ট্রেন দীর্ঘক্ষণ ধরে রেলক্রসিং অতিক্রম করল।

অ্যাভালন নামের অভিজাত এই আবাসিক এলাকায় আমার বন্ধু একটা বাসায় ভাড়া নিয়েছে। পরদিন ভোরে সে আমাকে এই আবাসিক এলাকায় হাঁটতে নিয়ে গেল। চতুর্পাশ্বে  হাঁটার পথে বিচিত্র সব গাছ আর ফুল। মনটা ভরে গেল। এখানে বসবাস করা অনেকেই মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছে। কেউ কেউ নিজে হাঁটার চেয়ে পুকুরকে হাঁটানো আর তার যত্ন-আত্তি নিয়েই বেশি ব্যস্ত। একই ধরনের বিরাট কয়েকটা গাছের সারি পার হয়ে ছোট্ট এক পার্কের একটা সবুজ ঘাসের কার্পেটের মতো চত্বরে এলাম। ভিতর গিয়ে আমার বসতে ইচ্ছা করছিল। আমার বন্ধু আমাকে থামিয়ে বলল,

এটা কুকুরদের পার্ক। সাথে কুকুর না থাকলে এর ভিতর প্রবেশ নিষেধ। কথাটা শোনামাত্র আমার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল। দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললাম,

একটা ছোট্ট আবাসিক এলাকাতে কুকুরের পার্ক আছে? আর কোটি কোটি টাকা খরচ/ঋণ করে আমরা যারা ঢাকা শহরে ফ্লাট কিনেছি সেই লক্ষ লক্ষ বাসিন্দারের জন্য লক্ষ-কোটি টাকা প্রজেক্টের আবাসিক এলাকায় মানুষের জন্য একটা পার্ক নেই! প্লট বিক্রির সময় প্রকল্পের মানচিত্রে দেখানো পার্কগুলো তারা নিজেদের প্রয়োজন অথবা ছোওয়াব হাসিলের উদ্দেশে এবং স্বার্থে ব্যবহার করছে অথবা ঘিরে রেখেছে।

অ্যাভালনের মতো আবাসিক এলাকা তৈরি করা আমেরিকান উদ্যোক্তরাও তা চায়। কিন্তু, এরা মানুষের চেতনাকে কুক্ষিগত করে কিছু করে না, মনে হয়। বাইরে হাঁটার জন্য বিরাট অবারিত রাস্তা থাকার পরও এইটুকু স্থানে সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, পার্টি করার সব ব্যবস্থা-সম্বলিত ছোট্ট পার্ক, ঘাস-কার্পেটে মোড়ানো মন কাড়া ছোট ছোট মাঠ… শুধু টাকার চিন্তা থাকলে এভাবে কিছু গোছানো যায় না।

মন খারাপ হয়ে যায়। আমাদের দেশের মানুষের চেতনা কখন এত তলানীতে গিয়ে পৌঁছাল যে, তারা সবকিছু নিজের জন্য কুক্ষিগত করা শিখল? বাঙালি তো শ্বাশত  অতিথিপরায়ন ঐতিহ্যবাহী জাতিসত্তার ধারক! নাকি শোষিতরা ক্ষমতা পেলে শোষকই হয়ে ওঠে? সেজন্যই  ক্ষমতা, ভোগ লিপ্সাকে লগ্নির সমীকরণ এবং টাকা আর পুণ্য দুইহাতে কামাই করার সূত্রকে দেশটার সম্পদ, ক্ষমতা এবং সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষগুলো। পার্ক দেখিয়ে জায়গা চড়া দাম তুলে পার্কগুলোও টাকার লোভে খেয়ে ফেলে যে পাপ হয়েছে মসজিদ বানিয়ে তা লাঘব করতে চায় এরা। এইটুকু জ্ঞান তাদের!

প্রচুর গরীবদের শুক্রবার করে বিরিয়ানির বাক্স তাদের মতো আর কে করে। ওখানেও অশেষ সওয়াব হাসিল আর ক্ষমতা দেখানো (অর্জনের) মহড়া করে। নিচু জাতের মানুষের চেতনা আজীবন এমনই হয়। এরা নিজেদের অর্থ-ক্ষমতা-পুণ্য অর্জনের লোক দেখানো সামাজিকতার বাইরে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছুই করে না।

আমেরিকায় কয়েকদিন বন্ধুর বাসায় থেকে বাকি দিনগুলো হোটেলে থাকার পরিকল্পনা করে এসেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধু এবং তান্নি ভাবী না করতে দিতে নারাজ। জহুর বলল, এতদিন পর বন্ধুকে পেয়েছি, সুতরাং আমার সব কাজ বন্ধ। তোকে নিয়ে কয়েকদিন শুধু ঘুরে ফিরে বেড়াব। পরদিনই সে আমাকে নিয়ে গেল সংরক্ষিত এলাকার একটা লেকের কাছে।  টিলার মতো আঁকাবাঁকা পাহাড় পরিবেষ্টিত নীল জলরাশির লেক ভর্তি পাখি বিশেষত গাঁঙচিল আর হাঁস (এই হাঁসগুলো বাংলাদেশের হাঁস বা রাজহাঁসের মতো নয়। এদের পালকের রঙ নীলচে ছাই বর্ণের)। বুনো বন-বনান্তরকে আধুনিক ঢঙে সাজানো-গোছানো হয়েছে। এখানে সেখানে লেকের দিকে মুখ করে বসার স্থান। পার্কের ভিতর অনেকদূর ঘুরে-ফিরে ফিরে এলাম রাস্তার পাশে কিছুটা খোলা পার্কে। জহুরের পরামর্শে সেখানে পাউরুটি হাতে দাঁড়াতেই লেক থেকে হাঁসের সাথে অসংখ্য পাখি উঠে এসে আমাকে ঘিরে ফেলল। আহা! এত পাখিবেষ্টিত দেখে নিজেকে ওদের গোত্রীয় একজন বলে মনে হচ্ছিল। ক্ষণিকের জন্য এই পাখিজীবনকে আলিঙ্গন করে ধন্য হয়েছিলাম। লেকটার পাশে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে গেলাম অদূরেই প্রবাহমান নদীর কাছে। নদীর অপরপ্রান্তে গাছের ঘন সারি। খুব সম্ভবত উত্তর থেকে প্রবাহিত নদীটার উত্তর-পশ্চিম কোণটা সীমাহীন এক দিগন্ত বা সাগরের মতো লাগছিল। আমাদের পাশে যে বিশ্রামঘর সেখানে বসে বসে নদী আর বৃক্ষরাজির সীমানাহীন সীমানার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আর ডানে, একটু দূরেই নদীর কিনারে, পেছনের বনের সামনে সন্তানদের নিয়ে কয়েকটা পরিবার এসেছে। তারা নুড়িপাথরে মাদুর বিছিয়েছে। স্বচ্ছ নীল জলে সাঁতারের জন্য বদলে নিচ্ছে পোশাক। সাগরের নোনা জলের চেয়ে এই স্বাদু পানিতে সাঁতারের আনন্দই হয়তো তাদের কাছে অন্যরকম। চোখের ক্যামেরার লেন্স এই দৃশ্যপটের ভিতরে আমার চোখ হৃদয়ের গভীরে তৈরি করছিল অন্যরকম এক আবহ, আলাদা কোনো চিত্রকল্প। তা হয়তো ভবিষ্যতের স্মৃতি!  আমারও জলে নামতে ইচ্ছা করছিল। ইচ্ছা করছিল, নিজের শরীরটা উন্মুক্ত করে রোদ আর নদীর বহমান স্বচ্ছ জলের কাছে সমর্পণ করতে।

 কয়েকদিন ধরে নির্জন, সুপরিসর রাস্তাগুলো দেখে আমার মনে হলো, সুবিস্তৃত, সুবিন্যস্ত নির্জন পথঘাট আর দিগন্ত আমেরিকানদের মনলোকে ফেলেছে বড়ত্বের প্রভাব। কয়েকদিন পর আমার বন্ধুর সাথে বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে এক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলাম (সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মের ছুটি) । এর সুবিন্যস্ত পার্কিং এলাকা এবং খেলার মাঠগুলো মিলে নিঃসন্দেহে আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চেয়ে বড় অথবা সমান হবে। সূর্যাস্ত হলো। জনমানবহীন এই বিদ্যায়তনে বসে ভাবছিলাম- রাজনীতিমুক্ত এই বিরাট, অবারিত চত্বর ছাত্রদের একা একা বড় হওয়ার দীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে আপন করে নেওয়ার, মানুষকে বড় করে ‘দেখা’র প্রবণতাও তৈরি করছে।

আমাদের সমাজে মানুষে মানুষে ঠেলাঠেলির কারণে মানুষের সাথে অতি প্রতিযোগিতার কারণে যেমন বিদ্বেষ আর হিংসাও তৈরি করছে তেমনি নিজের পতিত চিন্তা-চেতনাটুকু দিয়েই আমরা মানুষ এবং সমাজকে বিচার করতে শিখছি। প্রতিটি মানুষের মাঝে মহান কিছু লুকিয়ে থাকে – সেই চেতনা থেকে সরে এসে আমাদের ছোট ছোট ‘দেখা’ দিয়ে দূরকে শনাক্ত করতে আমরা ভুল করছি কিনা, তাই-ই ভাবছিলাম। নিরাপত্তাহীন সমাজ শেখায়, অর্থ আর পদবির চেয়ে বড় কিছুই নেই। নিরাপদ সমাজ শেখায় – মানুষের পাশে নিরাপত্তার ছায়া হয়ে থাকার চেয়ে বড় আর কিছুই নয়।

নিউ ইয়র্কের মূল শহর নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ ছিল। আমরা ইতিহাস থেকে জানি যে, ১৬১৩-১৪ সালের দিকে হাডসন নদী ধরে ইউরোপ থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশে ডাচদের আগমন শুরু হয়। তারা প্রথমে ম্যানহাটনে তাদের আবাসস্থল গড়ে তোলে এবং তারা এক বছরের মধ্যে ফোর্ড আমস্টার্ডাম তৈরি করে। তারা এর নামকরণ করে নিউ আমস্টার্ডাম। ডাচরা ১৫২৪ সালে এই অঞ্চলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে বসবাস আরম্ভ করে। তারও অনেক আগে থেকে বাস করা আদিবাসীদের সাথে ডাচরা কিছুদিনের মধ্যেই স্থায়ী গণ্ডগোল ও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৬৬৪ সালে ডাচদের কাছ থেকে ইংরেজরা এর কর্তৃত্ব গ্রহন করে। এবং তারা আফ্রিকা থেকে সস্তায় স্লেভ জোগাড় করে যা সেই সময় নিউ আমস্টার্ডামের ( বর্তমানের নিউ ইয়র্ক) জনসংখ্যার বিশ ভাগে পৌঁছায়।   আজকের নিউ ইয়র্ক শহরের গোড়াপত্তনটুকু এভাবেই হয়েছিল। আটলান্টিক এবং হাডসন নদীর জলপথ ধরে ফ্রেঞ্চ, ডাচ, ইংরেজদের আগমন ঘটেছিল এবং ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল এক সমৃদ্ধ জনপথ।

হাডসন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এসব অতীত ইতিহাসকে আমি একবার কল্পনায় দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এই শহরের অপূর্ব সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে সন্ধ্যা-আলোর অবনমন আর নিউইয়র্কের নিয়ন বাতির ঝলসানো আলো-রাতে হাডসন নদীতীরে আমি এই শহরের আত্মার স্পন্দনটুকু উপলব্ধি করছিলাম। যারা ঠিক সন্ধ্যা-মুহূর্তে ম্যানহাটানের ব্রুকলিনকে নদীর অন্যপাশ থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন – আমি নিশ্চিত তারা এখানেই এই শহরের আত্মাটাকে খুঁজে পেয়েছেন।

আমেরিকার আমেরিকা হয়ে ওঠার গল্প এই নদীতীরের অপূর্ব সৌন্দর্যের সাথে মানুষের মেধা-মনন আর যুদ্ধ-সংগ্রামে জন্ম নেওয়া অপার্থিব এসব দৃশ্যে। যা একসময় কল্পনায় ঢুকে স্মৃতির দৃশ্যকল্প হয়ে যায়।

বন্ধুর পরিবারের সাথে প্রায় পুরো রাতটুকু এই শহরের সেই স্পন্দনের ভিতর দিয়ে পার হয়ে স্মৃতি করে নিলাম।

 

(চলবে)

দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ঃ আমেরিকার বাক এবং যৌন স্বাধীনতা

 

পরিচিতি

কাজী রাফি – কথাশিল্পী।

জন্ম- ২২ নভেম্বর ১৯৭৫, বগুড়া।

‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ প্রথম এই উপন্যাসেই কালি ও কলম পুরস্কার লাভ করেন এবং পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চাকরির প্রয়োজনে আফ্রিকায় বাস করেছেন দুই বছরের অধিক সময় এবং আফ্রিকার প্রকৃতি-সংস্কৃতি, তাদের প্রান্তিক মানুষের যাপিত জীবনকে দেখেছেন কাছ থেকে। মানুষ ও তাদের যাপিত জীবন এবং প্রকৃতি দেখার প্রয়োজনে ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তর।

পুরস্কারসমূহ :এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার -২০১০; এমএস ক্রিয়েশন সম্মাননা -২০১০; নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ এবং এসএম রাহী পদক ২০১৯

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :

‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’, ‘ত্রিমোহিনী’, রূপডাঙ্গার সন্ধানে’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘রংধনুর সাঁকো’, ‘লে জোঁ নদীর বাঁকে’, নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস’, অরোরার আঙুল’, ‘ছায়ার নির্বাসন নির্বাসনের ছায়া’, ‘আঁধারে লুকানো সুর’,‘গ্রামটির নাম গোধূলিমায়া’, নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাব্লাঙ্কা।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top