আঞ্জুমান রোজী: বিমুর্তধারার অনন্য শিল্পী জর্জিয়া ও’কিফ

জর্জিয়া ও’কিফ (Georgia O’Keeffe) আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পীদের অন্যতম এবং বিশ্বে আর্টজগতের এক বিস্ময়। বর্ণাঢ্য শিল্পজীবনের অধিকারী ও’কিফ আর্টজগতকে দিয়েছেন ভিন্নমাত্রার এক শৈল্পিক চেতনা। তিনি অবহেলিত ক্ষুদ্রাকারের ফুলকে বড় আকারের ক্যানভাসে তুলে আনেন। তাতে ক্ষুদ্র ফুলগুলোর নান্দনিক গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে যায়। তাছাড়া, নিউইয়র্কের উঁচুউঁচু তলার অর্থাৎ স্কাইস্ক্র্যাপারের দৃশ্য, নগরদৃশ্য এবং নিউ মেক্সিকোর ল্যান্ডস্কেপের ছবির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বিমূর্ত ভাবের সম্পূর্ণ নতুন ধারা আর্টে প্রয়োগ করেন। নাটকীয়ভাবে আধুনিক কম্পোজিশন ব্যবহার এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যকে নিজের ছবিতে তুলে আনার জন্য তাঁর ছিল বিশেষ ধরণের শিল্পশৈলী। এসব গুণাবলির অনন্য সমন্বয়ের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ও সমাদৃত। অবিস্মরণীয় চিত্রকলার জন্য ও’কিফকে “আমেরিকান আধুনিকতার মা” (Mother of American modernism”) হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জর্জিয়া ও’কিফের চিত্র প্রদর্শনী ছিল ২০১৭ এর গ্রীষ্মের কোনো একসময়, অন্টারিও আর্ট গ্যালারিতে। দেখতে গিয়েছিলাম। অভিভূত হয়ে ছবিগুলো দেখেছিলাম। বিশেষ করে ফুল ও বিমূর্তধারার ছবিগুলো আকৃষ্ট করে বেশি। তাছাড়া, নিউ ম্যাক্সিকোর প্রকৃতির রুক্ষতা অনেকটা মরুভূমির সাদৃশ্যে আঁকা তাঁর ছবিগুলোতে দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কয়েকটি ফুল এবং পাহাড়ের রঙিন চিত্র, যেমন কটনউড তৃতীয় (১৯৪৪), হাড়ের চিত্র, কালো রোজেস ১৯৩১ বিখ্যাত। এই চিত্র প্রদর্শনী দেখার পর থেকে জর্জিয়া ও’কিফকে জানার আগ্রহ বেড়ে যায়।

জর্জিয়া ও’কিফ নিজের মতো করে তাঁর শৈল্পিক জীবন তৈরি করেছিলেন। প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করেছেন আঙ্গিক বদলানোর এবং বিমূর্তরীতির ছবির উপকরণ। অন্য শিল্পীরা যে সীমাকে অলঙ্ঘ্য মনে করতেন, সেই সীমারেখা ভেঙে অথবা অতিক্রম করে তিনি অবলীলায় এগিয়েছেন। স্বাধীনভাবে তিনি এমন এক জীবন তৈরি করেছেন, যা সম্পূর্ণ নিজের মতো এবং বিশিষ্ট। অ্যালফ্রেড স্টিগ্রিৎস, একজন শিল্প ব্যবসায়ী এবং ফটোগ্রাফার, তিনি ১৯১৬ সালে ও’কিফের কাজের প্রথম প্রদর্শনী করেন। স্টিগ্রিৎসের অনুরোধে পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯১৮ সালে ও’কিফ নিউ ইয়র্কে এসে বসবাস শুরু করেন। এসময় তিনি নিউ ইয়র্কের স্কাইস্ক্র্যাপার বা উঁচু ভবন এবং বিশ্ব-প্রকৃতির বিমূর্ত রূপ নিজের ছবিতে তুলে ধরেন। এই বিমূর্তায়নের রীতি ও ভঙ্গিটি তাঁর নিজস্ব।বড় আকারের অসংখ্য ক্যানভাসে বিভিন্ন ধরনের ফুলের ছবি এঁকে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন; কিন্তু তিনি তাঁর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন।

ও’কিফ যখন আর সবার মতো অন্য শিল্পীদের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন তখন তিনি, শুধু চারকোল দিয়ে শুরু করেছিলেন বিমূর্ত রেখাচিত্র অঙ্কন। তারপরে জলরং বা গ্রাফাইট এবং জলরঙের মিশ্রণের মাধ্যমে বিমূর্ততার চর্চা করেছেন। খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর মনের অনুভূতিগুলোকে কাগজে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তিনি সফল হয়েছিলেন এবং ধীরে ধীরে তিনি আংশিক বিমূর্ততায় চলে যান, যেখানে আমরা দেখি ফুল কিংবা গাছের অবয়ব। পাহাড় বা মৃত পশুর কঙ্কাল, হাড়গোড় তাঁরশিল্পকলার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।

এমনকি সারি সারি মেঘের মিছিল বা নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী বিল্ডিংয়ের সারি তাঁর শিল্পকলার বিষয়বস্তুতে প্রাধান্য পেতে থাকে। জর্জিয়া ও’কিফের ফুলের চিত্রকলাগুলোর জন্য তিনি সুপরিচিত হলেও, তাঁর এই অসাধারণ ভূদৃশ্যগুলো শিল্পকলার জগতে ছিল নতুন এবং আধুনিক সংযোজন। তার জন্য এই কাজের অর্থ হলো, চিত্রকলার শিক্ষায় যে জ্ঞান তিনি আয়ত্ত করেছিলেন প্রথমেই তা বিসর্জন দেওয়া। তার বদলে নিজের দেখার ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতাকে সরাসরি পরিশুদ্ধ করে নিজস্ব রং ও আঙ্গিক দিয়ে তাকে প্রকাশ করা। এমনভাবে তা প্রকাশ করা, যেন সেটা নিছক দৃষ্টিনন্দন না হয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি ভাব প্রকাশ করে।

প্রথমজীবনে ১৯০৫ সালে ও’কিফ ‘আর্ট ইন্সটিটিউট অফ শিকাগোর’ স্কুলে আর্টের ছাত্র হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক শিল্প প্রশিক্ষণ শুরু করেন। কিন্তু তিনি তার পাঠ্যধারাকে সীমাবদ্ধ বোধ করেন যা প্রকৃতির পুনরাবৃত্তি বা অনুলিপি করার উপর নিবদ্ধ ছিল। ১৯০৮ সালে শিক্ষায় যথাযথ অর্থায়ন করতে অক্ষম হলে তিনি বাণিজ্যিক ইলাস্ট্রেটর হিসেবে দুইবছর কাজ করেন। তারপর ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, এবং দক্ষিণ ক্যারোলিনার মধ্যে সাতবছর কাটিয়ে দেন। সেই সময়ের মধ্যে, তিনি ১৯১২ থেকে ১৯১৪ এর মধ্যকার গ্রীষ্মকালে পড়াশুনা আবার শুরু করেন এবং আর্থার ওয়েসলি ডো এর নীতি ও দর্শনের সাথে পরিচিত হন। কিন্তু তিনি কপি করার চেষ্টা করার চেয়ে বরং ব্যক্তিগত শৈলী, ডিজাইন এবং বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শিল্পকর্ম শুরু করেন বা তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর ফলে তিনি যেভাবে অনুভব করেছিলেন সেভাবে শিল্পের দিকে অগ্রসর হলেন। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণার মাধ্যমে জলরঙের প্রারম্ভিক পর্যায়ে দেখা এবং ১৯১৫ সালে নির্মিত কাঠকয়লা আঁকাগুলিতে নাটকীয়ভাবে দেখা গিয়েছে এক নতুন বিমূর্তরূপ।সেই সময় ও’কিফ বিমূর্ত ছবির বিভিন্ন নতুন ফর্ম সৃষ্টি করেন। যারমধ্যে খুব কাছ থেকে দেখা ফুল, যেমন, ‘রেড কান্না'(Red Canna (paintings) পেইন্টিং সহ অনেক ধরনের বিমূর্ত ছবি এঁকেছিলেন। যা অনেকে নারীর জননেন্দ্রিয়-তত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করে, যদিও ও’কিফ ধারাবাহিকভাবে এ অভিপ্রায়টি অস্বীকার করে যান। নারীর যৌনতার চিত্র স্পষ্ট এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হওয়াতে স্টিগ্রিৎস অনুপ্রাণিত হয়ে তা গ্রহণ করেন এবং ও’কিফের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন।

১৯২৯ সালে নিউ মেক্সিকো ও’কীফের শিল্পকলার নতুন একটি অধ্যায় সূচিত করে। পরের দুই দশক ধরে প্রতিবছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় তিনি এই রাজ্যে ছবি এঁকে কাটিয়েছেন। এরপর ১৯৪৯ সালে তিনি এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। এখানেই তিনি আয়ত্ত করেন এমন এক দক্ষতা এবং বিমূর্ত কম্পোজিশনের শিল্পকৌশল, যাতে তিনি প্রকৃতিকে ভেঙেচুরে কিছু সুচিহ্নিত আকৃতি ও রং দিয়ে তাকে আবার সৃজন করেন। এমনভাবে এখানকার প্রকৃতিকে বিমূর্ত আকারে পুনর্সৃজন করেন যে তাঁর সেই কালপর্বের ছবি দীর্ঘদিন ধরে খাঁটি আমেরিকান পরিচয়চিহ্ন হিসেবে গণ্য হতে থাকে।

শিল্পী হিসেবে তিনি সুদীর্ঘ সত্তর বছর ধরে নিজের শৈলী নিয়ে অবিরাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন। যদিও তিনি বিখ্যাত এবং সুপরিচিত তাঁর ফুলের চিত্রকলাগুলোর জন্য। যেগুলো অনেক ক্ষেত্রে ফুলের ক্লোজআপ বা বিরাটাকার বিন্যাস। সেগুলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারী যৌনাঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্যতা রয়েছে, মানব শরীরের বাঁকের সঙ্গে সাদৃশ্যতা রয়েছে।

এমনকি যে পাহাড়ের ভাঁজ তিনি এঁকেছেন তার সঙ্গেও মানব শরীরের ভাঁজের সাদৃশ্য লক্ষণীয়। একটি ছন্দে যেন সবাই গাঁথা। তাঁর সৃষ্টিতে দর্শক-সমালোচকরা একটি শক্তিশালী যৌন স্ফুরণ খুঁজে পান। তিনি বারবার অস্বীকার করেছেন এই দাবি। বলেছেন মডেল রাখতে অক্ষম বলে ফুলের চিত্র নির্মাণ করতেন, কারণ ফুলকে পারিশ্রমিক দিতে হয় না। তাঁর শিল্পকলায় বাঁকানো রেখা খুব সহজাত। আমাদের মনে করিয়ে দেয় সংগীতের ধ্বনির কথা, বাতাসের সুরের কথা। জর্জিয়ার শিল্পকলার সামনে দাঁড়ালে যেন মাটির ঘ্রাণ পাওয়া যায়, এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত তাঁর প্রকাশভঙ্গী। তিনি ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে গেছেন তাঁর লৈঙ্গিক প্রভাব বা পরিচয় এবং তিনি একজন স্বাধীন সত্তা হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলেন বলে, স্বামীর প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার একটা সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর শিল্পকর্ম সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা রেখে যাননি।

ও’কিফের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আইরিশ-হাঙ্গেরিয়ান-ডাচ, বলা যায় মিশ্র ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকাতে অভিবাসনের পরে তারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জর্জিয়া ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। দশ বছর বয়স থেকে ও’কিফ সিদ্ধান্ত নেন আর্টিস্ট হওয়ার জন্য এবং তখন সে লোকাল আর্ট ইন্সটিটিউটে একজন ওয়াটার কালারিস্টের কাছ থেকে তালিম নিতে শুরু করেন। পুরো পরিবার ভার্জিনিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে ও’কিফ তার খালার সাথে উইসকনসিনে অবস্থান করেছিলেন এবং চাথাম এপিস্কোপাল ইন্সটিটিউট থেকে উচ্চ বিদ্যালয় সম্পন্ন করেন এবং ১৯০৫ সালে স্নাতকপর্ব শেষ করেন। পশ্চিম ট্যাক্সাসে একটি কলেজে আর্টের উপর কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে টেক্সাসের একটি সামরিক শিবিরে তাঁর ভাই অ্যালেক্সিসের সাথে দেখা করতে গিয়ে সেখানে থাকাকালীন ও’কিফ ‘দ্য ফ্ল্যাগ’ নামক চিত্রকর্মটি করেছিলেন যা যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছিল।

জর্জিয়ার স্বামী ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। আমেরিকার শিল্পকলার জগতে তিনি তখন প্রধান পুরুষ। আলফ্রেড স্টিগলিৎস (১৮৬৪-১৯৪৬), আমেরিকার বিখ্যাত আলোচিত্রকর এবং শিল্পকলার জগতে তাঁর অবদান ছিল বহুমুখী। স্টিগ্রিৎসের সঙ্গে ও’কিফ একটি পেশাগত সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যার ভিত্তিতে কিফের কাজের প্রচার ও প্রদর্শনের কাজ স্টিগ্রিৎস করেন। ১৯২৪ সালে তাদের পেশাগত সম্পর্ক বৈবাহিক জীবনে রূপান্তরিত হয় এবং ১৯৪৬ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত ও’কিফের কাজে উৎসাহদাতা হিসেবে ছিলেন। আলফ্রেড জর্জিয়ার মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল তেইশ বছর। জর্জিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাদের কাজের মাধ্যমে। আলফ্রেড জর্জিয়াকে শিক্ষকতা ছেড়ে, শিল্পচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। যদিও তারা তাদের সম্পর্কের বেশিরভাগ সময় আলাদা থাকতেন, কিন্তু জর্জিয়া আলফ্রেডের কাছ থেকে আজীবন পেয়েছেন মানসিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা। ও’কিফ ১৯৭৭ সালে জেরাল্ড ফোর্ড থেকে রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত হন এবং ১৯৮৫ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান থেকে আর্টস ন্যাশনাল মেডেল অফ আর্টস পেয়েছিলেন।

ও’কিফ এবং স্টিগ্রিৎস নিউ ইয়র্কে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে বসবাস করেন। ও’কিফ সেখানে বছরের অনেকসময় কাটিয়েছিলেন। সেইসময় তিনি নিউ মেক্সিকোর ল্যান্ডস্কেপ এবং জীবজন্তুর স্কালের ছবি, যেমন গরুর মাথার খুলি (Cow’s Skull: Red, White, and Blue), রাম হেড হোয়াইট হোলি হোক এবং লিটল হিলস আঁকতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।। স্বামী স্টিগ্রিৎস এর মৃত্যুর পর তিনি নিউ মেক্সিকোতে Georgia O’Keeffe Home and Studio in Abiquiúতে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সান্তা ফে’তে বসবাস করেন। শিল্পী জর্জিয়া ও’কিফ জন্মগ্রহণ করেন পনেরোই নভেম্বর ১৮৮৭ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ছয়ই মার্চ ১৯৮৬ সালে। প্রায় একশত বছরের সৃষ্টিশীল বর্ণাঢ্য জীবন তাঁর। ২০১৪ সালে, জর্জিয়া ও’কিফের ১৯৩৬এ করা পেইন্টিং জিমসন উইড Jimson Weed (painting) $৪৪,৪০৫.০০০ বিক্রি হয়। আগের যেকোনো নারীশিল্পীর চেয়ে বিশ্বের নিলাম রেকর্ডে তিনগুণ বেশি। নিউ ম্যাক্সিকোর সান্তা ফে’তে মৃত্যুর পর জর্জিয়া ও’কিফের মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

একজন জাতীয় শিল্পী হিসেবে জর্জিয়া ও’কিফ আমেরিকাতে বহু দশক ধরে সুপরিচিত। সম্প্রতি, তার শিল্পকর্ম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুরূপ মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং সেইসাথে প্রশংসা কুড়াতে শুরু করেছে। জর্জিয়া ও’কিফ মিউজিয়ামের সংগ্রহে প্রায় ১৫০টি পেইন্টিং এবং কয়েকশত কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যারমধ্যে পেন্সিল ও কাঠকয়লা অঙ্কন, পাশাপাশি প্যাস্টেল অঙ্কন ও জলরঙের ছবি রয়েছে। সংগ্রহগুলিতে শিলা ও হাড় থেকে শুরু করে পোশাক,পেইন্টিং ব্রাশ।; এমনকি ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস এবং শিল্পীর জীবন ও সময় সম্পর্কিত নথি ও ফটোগ্রাফের উল্লেখযোগ্য সংরক্ষণাগারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানেই একটি ঘরে প্রদর্শিত হয় শিল্পীকে নিয়ে তৈরি করা একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। খুবই যত্ন নিয়ে তৈরি এ ছবি দেখলে শিল্পীর গুরুত্ব আর তাঁর চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়। সেই সঙ্গে আরো জানা যায়, তাঁর জীবনের উত্থান-পর্বের পূর্ণাঙ্গ কাহিনি। তাঁর প্রথম পর্যায়ের আঁকা ফুলের ক্লোজ-আপ ছবির মধ্যে যৌনতার স্পষ্ট চিহ্ন আছে বলে ব্যাপক আলোচনা হয়। সে অভিযোগ তিনি যতই অস্বীকার করুন, শিল্প-সমালোচক আর সাধারণ শিল্প-দর্শকের কাছে ও’কিফ সেই যৌনতার প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে তাই নিজেই সেই খণ্ডিত পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজ শিল্পীসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হন। এই পথ চলায় তিনি সফল হয়েছেন। শিল্পের মধ্যে নিমগ্ন থেকে একজন শিল্পীর স্বাধীন বিকাশের জন্যই ছিল তাঁর সংগ্রাম।

সান্টাফে শহরের ও’কিফ মিউজিয়ামটি অনন্য এইজন্য যে এই সংগ্রহ বিশিষ্ট শিল্পীর জীবনকাহিনিকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরে। এই মিউজিয়ামে মন দিয়ে কিছুটা সময় কাটালে স্পষ্ট হয় ও’কিফের জীবন, কাজের পদ্ধতি আর আমেরিকান আধুনিকতাবাদে শিল্পীর অবস্থান ও অবদান। আরো আছে একটি গবেষণাকেন্দ্র, যা তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা-প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

 

 

আঞ্জুমান রোজী

আঞ্জুমান রোজী: ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কানাডা প্রবাসী। কবিতার প্রতি প্রেম বেশি হলেও গদ্য এবং গল্প লেখায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।এ পর্যন্ত তার তিনটি কবিতাগ্রন্থ, দুটি গল্পের বই এবং একটি গদ্যের বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কবিতার বই, ‘এক হাজার এক রাত’ (২০১০) , এবং গল্পের বই ‘ মূর্ত মরণ মায়া'(২০১২) সাকী পাবলিশিং ক্লাব থেকে প্রকাশিত হয় । ২০১৩ ও ২০১৫ তে নন্দিতা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতার বই ‘বৃষ্টির অন্ধকার’ এবং তৃতীয় কবিতার বই ‘নৈঃশব্দ্যের দুয়ারে দাঁড়িয়ে’।২০১৭তে গদ্যের বই অনুপ্রাণন প্রকাশনা থেকে ‘মুখর জীবনগদ্য’ এবং চৈতন্য প্রকাশনা থেকে ২০১৯এ গল্পগ্রন্থ ‘সবুজ পাসপোর্ট ও অন্যান্য নিঃসঙ্গ গল্প’ প্রকাশিত হয়।ভ্রমণবিলাসী আঞ্জুমান রোজী লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তি শিল্পের সঙ্গেও জড়িত আছেন । বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আবৃত্তি সংগঠন- ‘কন্ঠশীলন’ এবং বাংলাদেশ গ্রুপথিয়েটারভুক্ত নাঠ্যসংগঠন- ‘নাট্যচক্র’র তিনি সদস্য ছিলেন।বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ করে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিয়ে গঠিত গবেষণামূলক আর্কাইভ 1971GenocideArchive এর সঙ্গে জড়িত আছেন।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top