প্যাসিফিক গ্রপের ঝকঝকে অফিসটিতে ঢুকে একেবারে মুগ্ধ হয়ে যায় শামস ইবনে আরিফ। কী চমৎকার ইন্টেরিয়র, ছবির মত সুন্দর সবকিছু। সেক্রেটারিকে নিজের নাম বলে যে সোফাটিতে এসে বসেছে সেটার নরোম শরীরে ডুবে যেতে যেতে ভাবে সঠিক জায়গাতেই সে এসেছে। ইন্টারকমে সেক্রেটারি জানিয়েছিল কেউ একজন দেখা করতে এসেছে। আফজাল চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন, ‘কে? কী নাম?’ কী যেন একটা নাম বলেছিল আগন্তুক যুবক। সেক্রেটারি ভুলে গেছে। বলে, ‘ফটোগ্রাফার স্যার। সঙ্গে ক্যামেরা আছে।’ আফজাল চৌধুরী ভাবলেন, সাংবাদিক নাকি? কী চায় তার কাছে? ইশারায় যুবককে কাছে ডেকে নাম জিজ্ঞেস করেন সেক্রেটারি, সেটাই টেলিফোনে বসকে পাচার করে দিলে আফজাল চৌধুরী সঠিক মনে করতে পারেন না, কে হতে পারে দর্শনার্থী মানুষটি। ইন্টারকমে সেক্রেটারিকে বলেন, ‘ভিতরে পাঠিয়ে দিন।’
ভিতরে ঢুকে আরো মুগ্ধ হয়ে যায় আরিফ। কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো, কপালের উপর সানগ্লাস তুলে রাখা স্মার্টভঙ্গীর যুবকটিকে ঠিক চিনতে পারেন না আফজাল। মুখে ক’দিনের না-কামানো দাঁড়ি, উস্কো-খুস্কো চুল; ফটোগ্রাফাররা বোধহয় এমনিই হয়। দ্রুত মেমোরি সেলগুলো ঘুরে এসে মেলাতে চেষ্টা করছেন এমন সময় যুবক সহাস্য হাত বাড়িয়ে দেয়, ‘আফজাল ভাই, আমি আরিফ।’
আফজাল চৌধুরী তখনো অন্ধকারে। ব্যাপারটা বুঝতে বুদ্ধিমান যুবকটির একমুহূর্ত দেরি হয় না। সে বলে, ‘মনে নেই, সামসুদ্দিন মিরাজের প্রদর্শনীতে আপনার সাথে দেখা হল। আমাকে আপনার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন।’ সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় আফজালের। হ্যাঁ, এই ছেলেটিই তো বিখ্যাত সামসুদ্দিন মিরাজকে আরো বিখ্যাত করে তুল্ল। চমৎকার ছবি তোলার হাত এর।
‘হাঁ, হাঁ, মনে পড়ছে। কেমন আছেন আরিফ?’
‘আপনি আমাকে তুমি করেই বলেন আফজাল ভাই। আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট।’
‘আরে না, না; মেধায় তো আর ছোট নন। কী খাবেন, চা না ড্রিঙ্কস?’
‘চা হলেই চলবে।’ বলতেই আফজাল চৌধুরী ইন্টারকমে এককাপ চায়ের অর্ডার দেন। মুখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার শৌখিন অফিসটি দেখছিল আরিফ। প্রশস্ত, পুরু কাচের দেয়ালের বাইরে গুলশান লেকের চমৎকার দৃশ্য। দামী সব ফার্ণিচার। ভিতরে আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া। রুচি আছে মানুষটির।
‘দারুণ সুন্দর আপনার অফিস, আফজাল ভাই।’ আরিফের মুখ থেকে প্রশংসাসূচক বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বেরিয়ে আসে।
‘থ্যাঙ্ক ইউ।’
এর মাঝে চা চলে আসে। ‘চা নিন’ বলে আফজাল চৌধুরী কাকে যেন ফোন করতে লেগে গেলেন। চায়ের কাপের দিকে হাত না বাড়িয়ে ফটোগ্রাফার যুবকটি তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই ক্যামেরায় তার ও তার কক্ষের কয়েকটি ছবি তুলে নিল। শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে চমকে উঠলেও তিনি টেলিফোনে কথা বন্ধ করলেন না। তবে শাটারের শব্দ শুনলেও স্বল্পালোকিত কক্ষটির ভিতর তিনি কোন ফ্লাশলাইট জ্বলে উঠতে দেখলেন না। কথোপথনের ভিতরেই তিনি যুবকটির কার্যকলাপ দেখতে লাগলেন, যুবক তখন টেবিলের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সরে যাচ্ছে আর তাকে ‘মুখটা একটু বায়ে ঘোরান, ঠিক আছে, এই দিকে, আমার দিকে তাকান’ ইত্যাদি নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিল, আর তিনিও কেমন সিনেমায় নামা নতুন অভিনেতার মত ঐ দৈব-আর্বিভূত পরিচালকের নির্দেশ পালন করছিলেন।
যুবকটি একসঙ্গে অনেকগুলো ছবি তোলে। তারপর কোন অনুমতি না নিয়েই তার টেবিলের এপাশে এসে একের পর এক ছবিগুলো রিওয়াইণ্ড করে তাকে দেখাতে থাকে। অবাক হলেন আফজাল চেীধুরী, সত্যি চমৎকার ছবি তোলার হাত যুবার। যৌবনে আফজাল ছিলেন নায়কের মত দেখতে, এই হেলে পড়া বয়সেও তিনি কম আকর্ষনীয় নন। যুবকটি যেন সেই ফিকে হয়ে যাওয়া হারানো যৌবনের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনেছে। আলো-আঁধারীর পোট্রেটগুলো তাকে মুগ্ধ করল। তার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এল , ‘দারুণ! সত্যি ভাল ছবি তোলেন আপনি।’ ইতোমধ্যে চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
‘আরেক কাপ চা দিতে বলি আপনাকে?’
‘না, না, আমি ঠাণ্ডা চা-ই খাই।’ ততক্ষণে যুবকটিকে কিছুটা সুস্থির দেখাচ্ছে।
সেদিন ঐ পর্যন্তই। যুবকটির কথা তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। ক’দিন পরে আবার সে এসে হাজির, সঙ্গে সেদিনের তোলা ফটোগুলোর প্রিন্ট। একটা ছবি সে আবার বেশ বড় করে প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছে। ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হন তিনি, প্রিন্টে আরো ভালো লাগছে, নিজেকেই অচেনা মনে হচ্ছে। মুখে বলেন, ‘আরে একি করেছেন?’ কিছুটা দায় বোধও করছেন এখন। ‘নিশ্চয়ই অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে আপনার। যদি কিছু মনে না করেন আমি টাকাটা দিতে চাই।’
যুবক কিছুতেই রাজী হল না টাকা নিতে। এটা কিছুই নয়, তার জন্য সামান্য উপহার । সেদিন আর চা নয়, বেশ ভাল আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন আফজাল চৌধুরী। যুবকের সপ্রতিভতায় তিনি মুগ্ধ এবং অবাক হন। অথচ তার সাথে যুবকটির বয়সের পার্থক্য কম করে হলেও কুড়ি বছর হবে।
এরও কিছুদিন পরে একইরকম না জানিয়ে যুবকটি এসে হাজির। তাকে ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন সেই প্রদর্শনীর সময়েই, কিন্তু সে কখনোই ফোন করে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয় না। পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষেরই যোগাযোগের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। আশ্চর্য যে আরিফ যখন আসে তখন তিনি অফিসেই থাকেন, আর সে সময়ে জরুরী কোন কাজও থাকে না।
ঘরে ঢুকে আনন্দে মুখটি হাঁ হয়ে যায় আরিফের। তার দেয়া পোট্রেটটি আফজাল চৌধুরী বেশ বড় করে ফ্রেমে বাধিয়েছেন। অত্যন্ত দামী ফ্রেম। তিনি যেদিকে বসেন তার পশ্চিম দিকের দেয়ালে চমৎকার শোভা পাচ্ছে ছবিটি। ছবির ঠিক উপরেই একটি স্পট লাইট বসানোয় তা একবারে জ্বলজ্বল করছে, আর আফজাল চৌধুরীকে লাগছে হিরোর মত তুখোড়, প্রদীপ্ত।
‘বাহ!’ আরিফের মুখ থেকে একটিই শব্দ বেরিয়ে আসে।
‘তোমার অবদান।’ আফজাল চৌধুরী হাসেন।
‘আমার নয়, ঈশ্বরের, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।’ চমৎকার কথা বলে যুবকটি। চা-টা শেষ হলে আরিফ যা বলে তার সারমর্ম হল, সে দেশের বিখ্যাত মানুষদের পোর্ট্রেট নিয়ে একটি এক্সিবিশন করতে চায়। সেখানে আফজাল চৌধুরীর পোর্ট্রেটও থাকবে।
‘বলো কী? আমি আবার বিখ্যাত হলাম কবে?’ তার সকৌতুক প্রশ্ন।
‘হবেন। এই প্রদর্শনী হলেই বিখ্যাত মানুষদের কাতারে আপনি এসে যাবেন। জানেন এটা উদ্বোধন করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আর প্রধান অতিথি হবেন দেশবরেণ্য কবি।’
‘না, না, এটা ঠিক হবেনা। ঐসব বরেণ্য ব্যক্তিদের কাঁতারে আমি দাঁড়াতে পারব না। আমি একজন মামুলি ব্যবসায়ী।’
‘একজন সফল এন্টিপ্রিনিউর হিসেবে আমি আপনাকে রাখব। এই প্রদর্শনীতে যেমন বিখ্যাত কবি, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা, অর্থনীতিবিদ থাকবেন, তেমনি থাকবেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল কিছু মানুষ। যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনজিওটি যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি থাকছেন।’
‘উনি তো এমনিতেই অনেক বিখ্যাত।’
‘আপনার এ্যাচিভমেন্ট আপনি খাটো করে দেখছেন কেন?’
না, আরিফ নামের যুবকটি কথা বলে ভাল। আফজাল চৌধুরী রাজী হয়ে যান।
তাহলে কী করতে হবে তাকে? তেমন কিছুই নয়। একটা ছোট স্পনসরশীপ জোগাড় করে দিতে হবে। এটা প্রদর্শনীর জন্য যে আমন্ত্রণপত্র যাবে তাতে মুদ্রিত থাকবে। টাকার অঙ্কটা শুনে তিনি একটু বিচলিত বোধ করেন। দু’লাখ। আরিফ যা বল্ল, তা হচ্ছে টাইটেল স্পন্সর হতে রাজী হয়েছে বিখ্যাত মোবাইলফোন কোম্পানিটি। আসলে মোট টাকা লাগবে সাত লাখ, পাঁচ লাখ দিবে ঐ কোম্পানি।
আফজাল চৌধুরী ভাবছেন, এত টাকা কেন লাগবে? বোধকরি এটা অনুমান করেই ফটোগ্রাফার যুবাটি বলে, একশটি পোট্রেট বড় করে প্রিন্ট করে ফ্রেমিং করতে বেশ টাকা লাগবে। প্রচারণার জন্য বড় রঙীন পোষ্টার ছাপাতে হবে কয়েক হাজার। এ ছাড়া প্রদর্শনী হলের ভাড়া, আমন্ত্রণপত্র ছাপানো, ব্যানার তৈরি, আপ্যায়ণ ইত্যাদি মিলিয়ে টাকার অঙ্ক বেশি নয়।
‘ওরা দিবে এত টাকা?’ সুবোধ বালকের মত প্রশ্ন করেন তিনি।
‘এই টাকা তো ঐ কোম্পানীর জন্য কোন বিষয়ই নয়। ওরা তো এমন একটি আয়োজনের সাথে যুক্ত হতে পেরেই মহাখুশী।’ আরিফ একটি কাগজ বের করল যেখানে বিভিন্ন খরচের হিসাব দেয়া আছে. তিনি যোগফলটি দেখলেন, ৭০০,০০০। এক টাকা বেশি বা কম নয়, পুরো সাত লক্ষ টাকা।
সেই যে টাকা নিয়ে আরিফ অন্তর্ধান হল, এরপর তার আর দেখা নেই। প্রদর্শনী হবার কথা ছিল আগষ্টে, আগষ্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর, সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবর চলে এল, আরিফ বা তার প্রদর্শনীর কোন লক্ষণ নেই।
বহুদিন পরে প্রায়নিখোঁজ আরিফ এসে হাজির। আফজাল চৌধুরী দেখেন আরিফের হাতে একটা নতুন তশিবা ল্যাপটপ। সেটা থেকে সে দেশবরেণ্য মানুষদের ছবি এক এক করে দেখায়। আফজাল চৌধুরীর ছবিও আছে সেখানে, ঐ যে দেয়ালে যেটি তিনি টাঙ্গিয়েছেন, সেটি। না, পুরোপুরি অবিশ্বাস করা যাবে না, ঐ তো ছবি।
‘আগস্টে এক্সিবিশন হবার কথা ছিল না?’
‘হাঁ, সে সময় ভালো কোন হলঘর পাওয়া গেল না, আফজাল ভাই। আমাদের উদ্বোধকও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাছাড়া ঐ মোবাইল ফোন কোম্পানিও টাকা দিতে দেরি করে ফেল্ল।’
‘পরে দিয়েছে?’
‘হ্যাঁ, দিয়েছে তবে একলাখ টাকা কম দিয়েছে।’ ছবি সব প্রিন্ট ও ফ্রেমিং করা হয়ে গেছে। এখন ব্রশিউর প্রিন্ট ও ব্যানার তৈরির জন্য এক লাখ টাকার ঘাটতি রয়ে গেছে।’
‘পোষ্টার আর ইনভাইটেশন কাডের্র কি হবে? সেগুলো তো নিশ্চয়ই আউটডেটেট হয়ে গেছে।’
‘না আমি সে সব ছাপাই নি। ছাপালে তো আউটডেটেট হতোই। সেই টাকাটা আমি রেখে দিয়েছি।’
আফজাল চৌধুরী অনুমান করার চেষ্টা করেন যুবক কোনপথে এগুচ্ছে। তিনি বলেন,
‘অন্য কোন কোম্পানীকে এ্যাপ্রোচ করোনি?’
‘সবাইকে তো এ্যাপ্রোচ করা যায় না। সবাই কি আর এসবের মূল্য বুঝবে? ক’জন আছেন আপনার মত, যিনি একাধারে ব্যবসায় সফল, আবার শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগী এবং একইসঙ্গে এতখানি উদারমনা?’
এবার তিনি যুবকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হলেন। আর একটি কড়িও তিনি ছাড়বেন না বলে মনঃস্থির করেন। যুবকের দেয়া এক লাখ টাকার হিসাবের কথা ভাবতে ভাবতে তার চোখ চলে যায় উষ্কুখুস্কু চুল, ক’দিনের দাড়ি –না-কমানো মুখ, খুবই ক্যাজুয়াল পোষাক পরা যুবকের ল্যাপটপটির দিকে। নতুন যে বোঝাই যায়, ঝকঝক করছে মেশিনটি।
এরপরেও কীভাবে তিনি যেন পুনর্বার রাজী হয়ে যান টাকা দিতে। বেশ ক’বার ঘোরাঘুরি করে আরিফ সফল হয়। কথা হয় ব্রশিউর ছাপানোর টাকা তিনি দিবেন, তবে প্রদর্শনী হতে হবে এ বছরের মধ্যেই। এর মাঝে আফজাল চৌধুরীর আরো কিছু ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিয়ে যায় আরিফ, পার্শ্ব থেকে তোলা একটি ছবিতে তাকে অনেকটা উত্তমকুমারের মত লাগছে।
ডিসেম্বর পেরিয়ে নতুন বছর এসে যায়, আরিফ বা তার প্রদর্শনীর কোন খবর তিনি আর পান নি। নভেম্বরের শেষদিকে তিনি বিদেশে চলে গিয়েছিলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ফিরে হঠাৎই তার মনে পড়ে এক্সিবিশনটি হয়ে গেল কি না। তিনি তার কর্মাশিয়াল ম্যানেজারকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, সে কিছু জানে কি না। ম্যানেজার মাথা নাড়ে। আরিফের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে তাকেই জানতে বলেন আপডেট। নাম্বার চাপতেই ওপাশে একটি ঘুমজড়ানো কন্ঠ শোনা যায়। কর্মাশিয়াল ম্যানেজার ঘড়ি দেখেন, ঘড়ির দুটো কাঁটাই একসঙ্গে টানটান উর্ধ্বমুখী, অর্থাৎ বারোটা। অত বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমাতে পারে, তিনি ভাবতে পারেন না। তার নিজের দিন শুরু হয়েছে ভোর ছ’টায়। পরিচয় দিয়ে তিনি বাক্যালাপ শুরু করতে যাবেন ওপাশ থেকে শুনতে পান, ‘ভাই, আমি ঘুমাচ্ছি। একঘন্টা পরে ফোন করেন।’ বলেই ফোন রেখে দিল ঘুমজড়ানো মানুষটি।
ঠিক একঘন্টা পরে কর্মাশিয়াল ম্যানেজার আবির হায়াত আবার ফোন করেন। ওপ্রান্তে রিং বেজে যাচ্ছে, কেউ ধরছে না। বেশ ক’বার ট্রাই করে তিনি নিশ্চিত হলেন, ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না আরিফ নামের যুবকটি। তিনি তার বসকে ব্যাপারটি অনুপুঙ্খ জানালেন।
বিকেল নাগাদ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার ল্যাণ্ডফোন থেকে ফোন করলেন। এবার সাড়া মিল্ল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বিখ্যাত মানুষদের ছবির প্রদর্শনী কি হয়ে গেছে? তখন ও প্রান্ত থেকে বেশ কড়া গলায় ‘না, হয়নি’ শুনলেন। যখন জানতে চাইলেন, কেন তা হলো না, তখন যুবকের রাগী কন্ঠস্বর ভেসে এল, ‘আরে ভাই, সেটা আমি আপনার বসকেই বুঝিয়ে বলব।’ ‘আমি তো স্যারের নির্দেশেই জিজ্ঞেস করছি।’ অন্য প্রান্তের লাইন কেটে গেল।
সব শুনে আফজাল চৌধুরীর মনে পড়ে গেল ন্যাড়া দু-দু’বার বেলতলাতে যাবার গল্পটি। নিজেকে তার ন্যাড়ার চেয়েও অপদার্থ মনে হল।
আরিফ একদিন তার মেঝ মামার অফিসে আসে। মামা ভাল ইংরেজি লিখেন। আগের প্রোপোজালটি তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন। আরিফ বল্ল, ‘মামা, আর একটি প্রোপোজাল বানাতে হবে। আপনার কম্পিউটারে আগেরটি সেভ করা আছে না? সেটাই একটু অদল-বদল করে দিলেই চলবে।’
‘এবার কাকে টার্গেট করেছ?’ আরিফের মামার কৌতুহলী প্রশ্ন।
দ্রুতই তৈরি হয়ে গেল নতুন প্রোপোজাল। আরিফের মামা আবার শখের বশে কবিতা লিখেন। তার ইচ্ছা একশ’টি বিখ্যাত মুখের ভিতর তার মুখটিও থাকুক।
‘আমার ছবি রেখেছ তো?’
‘কী যে বলেন, মামা। আপনি হলেন আমার মামা। যদি চারজন কবির ছবিও থাকে, আপনার ছবি থাকবে।’
নতুন বছরে প্রদর্শনী হবার কথা ছিল জুনে, জুন পেরিয়ে জুলাই, জুলাই শেষে আগস্ট এসে গেল, আরিফের কোন খবর নেই। অনেকদিন ধরেই তার কোন খবর নেই। প্রোপোজাল তৈরির দরকার না হলে সে সাধারণত আসে না। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি একদিন এসে হাজির। ‘মামা, এবার দিনক্ষণ পাকা। প্রদর্শনী হবে ডিসেম্বরের ২-৮ এই সাতদিন, তা চলবে জাতীয় যাদুঘরের গ্যালারীতে। ‘এবার কাকে চীফ গেস্ট করেছ? ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেউ?’ তার খেয়ালই ছিল না যে ইতোমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বদলে গিয়ে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় বসেছে। ‘প্রধানমন্ত্রীকে আনতে পারলে বেষ্ট হত। তবে সেটা মহা প্রটোকলের ব্যাপার। ভাবছি শিক্ষামন্ত্রীকে আনব।’ আর উদ্বোধন করবেন প্যারিসখ্যাত বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। দুর্ভাগ্য যে, দেশবরেণ্য কবি ইতোমধ্যেই মারা গেছেন। তাঁরই তো উদ্বোধন করার কথা ছিল আমার প্রদর্শনী।’
‘আমার কবিতা বেশ শক্তিশালী, কী বল?’ আরিফের কবি মামা প্রশ্ন করেন।
‘অবশ্যই। দেখেন না এই এক্সিবিশনের পরে আপনার কবিতা নিয়ে কী তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।’
‘কিন্তু ওরা কি বুঝবে না যে, তুমি আমার ভাগ্নে?’
‘ক’জন তার খোঁজ রাখে, বলেন? আর আপনি তো নিজের যোগ্যতাতেই এখানে ঠাঁই পাবেন। আপনি আমার মামা সেটা স্রেফ একটা কয়েনসিডেন্স।’
একদিন আফজাল চৌধুরী গিয়েছিলেন ইউনিভার্সাল ফ্যাশনস এণ্ড গার্মেন্টেসের এম ডি’র সাথে দেখা করতে। এক সময়কার সহপাঠি মোজাম্মেল হককে তিনি তুই-তোকারি বলেই সম্বোধন করেন। সহপাঠি বন্ধুর অফিসে ঢুকতেই বিপরীত দেয়ালে, মোজাম্মেল হক যেখানে বসেন তার ঠিক পেছনে, একটি বড় বাঁধানো ছবিতে তার চোখ চলে যায়। সাদা-কালোর বড় ছবিটি যদিও মোজাম্মেল হকের বড় টাকটিকে লুকাতে পারে নি, তবু এমন এক এ্যাঙ্গেল থেকে ছবিটি তোলা যে মধ্যবয়সের সাদামাটা মানুষটিকেও ছবিতে চমৎকার লাগছে।
‘কে তুলে দিল রে, অমন সুন্দর ছবি? চমৎকার হাত তো।’
যার নাম বল্ল মোজাম্মেল হক, তাকে বিলক্ষণ চেনেন আফজাল চৌধুরী, নামটা শুনে একটু কেঁপে ওঠে সে। সেই ফটোগ্রাফার ছেলেটি। তার মুখভঙ্গী দেখে কিছু একটা অনুমান করল মোজাম্মেল। ‘কি চিনিস নাকি?’
ধীরে মাথা নাড়ে আফজাল। কথায় কথায় দু’বন্ধুই বুঝতে পারে দু’জনের প্রতিষ্ঠান থেকেই টাকা নিয়েছে আরিফ। আফজালের পুনর্বার মনে পড়ে ন্যাড়ার বেলতলা যাবার চিরন্তন কাহিনীটি। তবে আশার কথা, ন্যাড়ার সংখ্যা বাড়ছে।
ইতোমধ্যে বেশ ক’টি মাস কেটে গেছে। আরিফ আবার হঠাৎ একদিন তার মামার অফিসে এসে উপস্থিত।
‘মামা নতুন প্রোপোজাল বানাতে হবে।’
মামা তার স্বভাব জানে। তবু জিজ্ঞেস করে, পুরনোগুলোর কী হল?’
‘পুরনোগুলো সব বাদ, মামা। এখন টাকা লাগবে আরো বেশি।’ একসঙ্গে অনেকগুলো কথা বলে সে হাঁপাতে থাকে।
‘আরো বেশি কেন?’ হতবাক মামার প্রশ্ন।
‘ছবির একটি এ্যালবাম করব।’
‘তাহলে প্রদর্শনী?’
‘সেটাতো থাকছেই, সঙ্গে ছবির এ্যালবাম হবে। ঐ একশ বিখ্যাত মানুষের ছবি ও বায়োডাটা নিয়ে চাররঙা ছবির বই।’
অতঃপর সে বই কম্পোজ, কাগজ, প্রচ্ছদ মুদ্রণ, মুদ্রণ, বাঁধাই প্রভৃতির দামের অঙ্ক বলে আর তার মামা কবি সিরাজ শরীফ তা কম্পিউটারে টাইপ করে। বইয়ের সাইজ, পাতার পুরুত্ব, মুদ্রণের ধরণ, বাঁধাই ফর্মুলা, প্রচ্ছদে রঙের বিন্যাস, প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম, প্রকাশিতব্য বইয়ের সংখ্যা, টাকার অঙ্ক সব আরিফের মুখস্থ। মোট অঙ্কের পরিমান দাঁড়ায় চার লক্ষ নব্বই হাজার।
আরিফের মামা জিজ্ঞেস না করে পারেন না, ‘এত টাকা লাগবে কেন? একটা বই করতে কি এত টাকা লাগে?’
‘এটাতো ফটোগ্রাফের বই, মামা, সাদামাটা কোন বই নয়। কাগজ কি জানেন? ম্যাট ল্যামিনেটেড। ইয়া মোটা কাগজ, আর ছাপা হবে ওয়ার্ল্ড ক্লাস। আরো লাগত, কিন্তু প্রচ্ছদ শিল্পী কোন টাকা নেবেন না, সেজন্য কিছুটা কম লাগছে।’ আরিফ প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে যার নাম বল্ল, তিনি একুশে বইমেলায় একচেটিয়া প্রচ্ছদ আঁকেন, পুরোদস্তুর সেলিব্রিটি । অবশ্য তার পোট্রেটও থাকছে এক্সিবিশনে।
‘এই প্রোপোজাল কোন কোম্পানির জন্য বানাচ্ছ?’
দু’টি ব্যাঙ্কের সাথে কথা হয়েছে। একটি রাজী হয়েছে টাকা দিতে।’
‘এত টাকা দিতে রাজী হল?’
‘হবে না, এটাতো ঐ ব্যাঙ্কের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ, মামা। এ দেশের সকল বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে এই বই। কিছুদিন পরে তো এটা একটি ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন কে জানেন? নোবেল পুরষ্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ। আর প্রধান অতিথি হবেন প্রধান বিচারপতি।’
পুরনো প্রশ্নটি সিরাজ শরীফ আবারো করেন, কিছুটা বোকার মতই। ‘আমার ছবি কি রেখেছ, নাকি বাদ দিয়েছ?’ বহুবার দেয়া আশ্বাসই দেয় আরিফ, ‘আপনার ছবি না গেলে তো প্রদর্শনী অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’ ‘মামা হিসেবে যাচ্ছি নাকি?’ সিরাজ শরীফের পুরনো হাফ-হার্টেড কৌতুহল। ‘কী যে বলেন মামা আপনি কত বড় কবি, কেবল লোকেরা আপনাকে চেনে না। আপনি হলেন তরুণ কবিদের প্রতিনিধি।’
সিরাজ শরীফ কৌতুকবোধ করেন। এই মধ্য চল্লিশে আজো তিনি তরুণ? ভালোই তো। জগৎপিতা থেকে শুরু করে জগতের সকল বাসিন্দাই প্রশংসা পছন্দ করেন। তিনি তো সামান্য মানুষ। তিনি মনোযোগ দিয়ে কাভার লেটারটি লিখে দেন। এর মাঝে আরিফের ফোন আসে। তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হয়। একটা কথা কানে ভেসে আসে, ‘আরে ভাই, আপনাদের টাকা আমি মেরে খাব না। এক্সিবিশন হবে।’
টাকার শোকটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন আফজাল চৌধুরী। বলা নেই, কওয়া নেই আরিফ এসে হাজির। তার এতটা সাহস হবে তিনি ভাবেন নি । কখনো দেখা হলে তাকে বেশ অপমানিত করবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন, কিন্তু দেখা হবার পরে তিনি আর কঠোর হতে পারলেন না, যদিও আগের সেই সৌজন্যবোধ, অমায়িক ব্যবহার রইল না।
তিনি লক্ষ্য করলেন যুবকের বেশ-ভূষা বেশ পাল্টে গেছে। চোখে একটা দামী সানগ্লাস, রুমে প্রবেশ করার পরে যা সে চোখ থেকে কপালে ঠেলে দিয়েছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি নয়, আজ সে ক্লিন সেভড, গা থেকে ভুরভুর করে একটা কড়া সেন্টের গন্ধ বেরুচ্ছে। টেবিলের উপর রাখা সেই ল্যাপটপটি। পাশে রাখা ক্যামেরাটিও বেশ দামী মনে হল।
‘এটা কি নতুন? কোন ব্রাণ্ড?’ তিনি অনভিজ্ঞের মত জিজ্ঞেস করেন।
‘হাঁ নতুনই বলা যায়, প্রায় নতুন। ক্যানন ডিএক্স ১০০।’
‘দাম কত?’
‘নব্বই হাজার। আমি অবশ্য ষাটে পেয়েছি। একজন ফটোগ্রাফার নিজের জন্য নেপাল থেকে এনেছিলেন। পরে ইর্মাজেন্সী টাকার প্রয়োজন হওয়াতে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আই এম লাকি।’
তাতো বটেই, মনে মনে ভাবেন আফজাল চেীধুরী। তুমি লাকি আর আনলাকি যে লোক, সে তোমার ঠিক সমুখেই বসে আছে। মনঃশ্চক্ষে নন, তিনি দিব্য দেখতে পান তার টাকাটা কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে আর কী কী রূপ পরিগ্রহ করেছে। যাক, এটা এখন ভুলে যাওয়াই ভাল, ভাবেন তিনি।
‘তা এবার কত চাই?’ ভণিতা না রেখেই সরাসরি জিজ্ঞেস করেন।
‘কী যে বলেন আফজাল ভাই। সত্যি আমি খুবই লজ্জিত। আসলে কী জানেন সময়মতো কিছুই মেলে না। চীফ গেস্ট রাজী হলেন তো, হলঘর পাওয়া গেল না, হলঘর পেলাম তো উদ্বোধক অসুস্থ হয়ে পড়লেন, উদ্বোধক সুস্থ হলেন তো স্পন্সর পিছিয়ে গেল, স্পন্সর টাকা দিল তো কম্পিউটারে কম্পোজ করে রাখা ফাইল ভাইরাসে করাপ্ট হল, একটার পরে একটা ঝামেলা লেগেই আছে।’
এ পর্যন্ত এ প্রদর্শনীর ক’জন চীফ গেস্ট আর উদ্বোধক বদল হল মনে মনে সেটাই ভাবতে থাকেন আফজাল চৌধুরী। না কোন টাকার চাহিদা নিয়ে নয়, যুবক এসেছে বিশেষ অনুরোধ নিয়ে। সে আফজাল চৌধুরীকে বিশেষ অতিথি করতে চায়। এবার জানুয়ারীতে প্রদর্শনী হবেই আর আফজাল চৌধুরী হবেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি।
বেশ ক’মাস পরে আরিফ তার মামার অফিসে এসেছে। ‘মামা, আগের প্রোপোজালটি একটু মডিফাই করতে হবে। ‘কেন?’ ‘ছবির সংখ্যা বেড়ে গেছে, মামা। আগে পরিকল্পনা ছিল ১০০ জনকে ঘিরে, এখন ছবি থাকবে ১৫০ জনের।’ আরিফের কবি মামা অবাক হন। এ ক’দিনের মাঝে দেশে ৫০ জন বিখ্যাত লোক আর্বিভূত হল নাকি?’
‘কী যে বলেন মামা, এদেশে কি বিখ্যাত মানুষের কোন অভাব আছে? চাইলে ১৫০ কেন, আমি ৫০০ জনের পোট্রেট নিয়ে প্রদর্শনী করতে পারি। ইন ফ্যাক্ট, আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সেরকমই।’
তা অবশ্য ঠিক, পনের কোটি লোকের দেশে ৫০০ বিখ্যাত মানুষ খুঁজে পাওয়া বিচিত্র নয়, বিশেষ করে যদি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যাঙ্কার, ক্রীড়াবিদ, গায়ক, অভিনেতা, মডেল, পেশাজীবি প্রভৃতি একত্রিত করা যায়, তবে ৫০০ কেন, ৫০০০ লোকেরও প্রদর্শনী হতে পারে – মনে মনে ভাবেন তিনি আর বাধ্য কেরানির মত প্রোপোজাল তৈরি করতে বসে যান। তিনিও আফজাল চৌধুরীর মত বিশ্বাস করেন প্রদর্শনীটি একদিন না একদিন আলোর মুখ দেখবেই।
আরিফ ফোনের সীম পাল্টেছে। তার আগের নাম্বারে ফোন করলে কেউ আর তাকে পায় না। যন্ত্রসঙ্গীতের মত একঘেয়ে ভয়েসে মেয়েটি বলতে থাকে, ‘আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন, তা এখন বন্ধ আছে। একটু পরে আবার চেষ্টা করুন; The number you have dialled cannot be reached. Plese try again later.’
সবাই যখন পুরোপুরি আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশার তিমিরে নিমজ্জিত, তখন একদিন সত্যি সত্যি প্রদর্শনীটির উদ্বোধন হয়ে গেল। উদ্বোধন করলেন ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমী। তিনি মুম্বাই থেকে উড়ে এলেন প্রদর্শনীর মোড়ক উন্মোচন করতে। প্রধান অতিথি ছিলেন সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকটির প্রধান সম্পাদক আর বিশেষ অতিথি পদ্মা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মিডিয়া কাভারেজ যেন সর্বোত্তম হয় – তাই এই ব্যবস্থা। চমৎকার সব ছবিতে ঝলমল করছে শিল্পকলা একাডেমীর গ্যালারির আলোকিত দেয়ালগুলো। অজস্র মানুষে ভরা হলঘরগুলো, তাদের মাঝে বিখ্যাত সব মানুষেরা এসেছেন দেয়ালে ঝুলানো নিজেদের ছবি দেখতে। স্পট লাইটের আলো পড়ে সাদা-কালো ও রঙীন ছবিগুলো আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। অতশত লোকের ভীড়ে নিজের ছবিটি হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন কবি সিরাজ শরীফ। এক দেয়াল শেষ করে আরেক দেয়ালে, এক ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে আঁতিপাঁতি খুঁজতে থাকেন তিনি। তবে কি আরিফ কথা রাখে নি? অবশেষে কোথাও নিজের ছবিটি দেখতে না পেয়ে তিনি যখন হতাশা ও প্রবঞ্চিত হবার রাগে ফুঁসছেন, তখনই ঘুম ভেঙ্গে যায় সিরাজ শরীফের। বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে তার মনে স্বস্তি ও সুখের একটা যুগল অনুভূতি কাজ করে যায়, যাক বাবা, প্রদর্শনীটি এখনো হয় নি!
—-
কামরুল হাসান
কামরুল হাসান এর জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১, শরীয়তপুরে। তিনি মূলত কবি। অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ গদ্যকার হিসেবেও খ্যাত। আছে নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
ভারতের বিশ্বখ্যাত খড়গপুর আইআইটি থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সমাপ্ত করেন। এছাড়াও স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কামরুল হাসান শিক্ষকতা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। কামরুল হাসান দু’হাতে লেখেন। এপর্যন্ত ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ, ১ টি ছোটগল্প, ১টি প্রবন্ধ, ৪টি ভ্রমণ গ্রন্থ, ২ টি অনুবাদ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সমীর রায় চৌধুরী ও তুষার গায়েনের সাথে পোস্টমর্ডান বাংলা পোয়েট্রি ২০০৩ সম্পাদনা করেছেন।