সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের একগুচ্ছ কবিতা

[সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কবিজীবন বেশ দীর্ঘ। চার দশকেরও অধিক। এই সময়কালে  তাঁর কবিতার নানা বাঁকবদল তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে এমন এক বন্দরে যেখানে কোনো নোঙর ফেলতে হয়না। কবিতা তার আপন স্বভাবে দাঁড়িয়ে যায় । আবার যাত্রা শুরু করে নতুন বন্দরের দিকে। তাঁর কবিতা কখনও ছিন্নপত্রের মতো ওড়ে আবার কখনও তা চরমপত্রের মতো কষাঘাত করে। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা তাঁর কবিতায় এমনভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে যা বাংলাদেশের কবিতারই কন্ঠস্বর। আবার দ্বাবিংশ শতকের মূল প্রবণতা অর্থাত আপাত সরল ভাষাভঙ্গির ভিতরে গভীর অভিজ্ঞানের নাটকীয় প্রকাশ। তিনি যে নিয়মিত কবিতাস্রোতে ভেসে চলেছেন তার প্রমাণ মিলবে আগস্ট ২০২১ মাসে লেখা তাঁর কবিতায়। কবিতাগুলিতে সমসাময়িক এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে যা তরুণ কবি ও পাঠকদের কবিতার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী করে তুলবে। — সম্পাদক]

একুশে পদক

বর্ষাকালে আকাশের ছাদ চুয়ে
আমার শহরে এবং শাহবাগে বিশ্রি বাজে বৃষ্টি হয়,
আপনি নিজে ভিজে ভিজে জুব জুব, তবু
বিতাতদের জন্য অতি যত্নে পর্দা রাখেন
সিটের নিচে।
.
গ্রীষ্মের গগন থেকে রোদ ঝলসানো ত্রিপল থেকে
মতিঝিলের জ্যামে, মালিবাগের মোড়ে, কাওরান বাজারে
কাঠফাটা কঠিন তাতানো রোদ্দুর
আপনি অগ্নিতপ্ত রোদে ঘামে চুপসে গিয়েও
ফিকিকদের জন্য ছাতার মতো খুলে দেন
রিক্সার হোট।
.
তীব্র শীতের কনকনে হিম শীতল বাতাসে
থিরথির আপনার হাত কাঁপে, পা কাঁপে
তবু মুনানদের জন্য
রিক্সার ছেঁড়া-ছিদ্র সেলাই-তালি দেন যাত্রী সেবায়
.
আপনি পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের লাঠি পেটা খান
কোন কোন যাত্রীর ঢাকাইয়্যা গালি খান,
বকা খান ম্যাডামদের ড্রাইভারের।
.
ভাই রিক্সাওয়ালা, আপনি একটু প্যাডেল থামান,
সিট থেকে নামুন।
আপনাকে একুশে পদক দেবো!

টরন্টো, ২৯ আগস্ট, ২০২১

 

ভ্রমণকাহিনি

ষড়ঋতুর দূরত্বে
বহু বহু দূর থেকে তোমাকে দেখতে যাই
তোমাদের তিন রাস্তার মোড়ের দোকানে সাইকেল হেলান দিয়ে
বাঁশের বেঞ্চিতে বসে রেডিও শুনি,
চা খাই।
.
ডালিম গাছে টকটকে ডালিম দেখি
ঢেউটিন, কবুতর, কামিনী, কুমড়ো ফুল দেখি
বাইরের তারে তোমার আধাভেজা ঝুলন্ত জামা দেখি
তোমাকে দেখিনা!
.
সাইকেল হারানোর বেদনা নিয়ে
মন পকেটে ঘামে ভেজা চিঠি ফেরৎ নিয়ে
ভ্রমণকাহিনির মতো ফিরে আসি— বহু পথ, বহু বছর হেঁটে হেঁটে।
.
তোমার পাড়ার ছেলেরা বখাটে; মোটেও ভালো না!

টরন্টো, ২৯ আগস্ট ২০২১

 

গোয়েন্দাগিরি

সালভাদর দালি আর সন্তোষ ঢালী
কামরুজ্জামান কামু এবং আলবেয়ার কামু
সহোদর বা বাপবেটা এই ধারনা নিয়ে কবিতা লেখা যায়,
গোয়েন্দাগিরি চলেনা!
.
কানাডাতেও আরেকটি ‘লন্ডন’ আছে,
এটা জানাও জরুরি।
.
কেউ কেউ নিজেকে মৃত ঘোষণা করে
পোকামাকড, কীটপতঙ্গের মতো বেঁচে থাকে
বেঁচে থাকে দালির শিল্পকর্মে; অথবা কোনো এক লন্ডনে
অথবা লন্ডনের বাইরে।
.
গাধার বংশধর ঘুমিয়ে গেলে কিছুই দেখতে পায় না?

টরন্টো, ২৫ আগস্ট, ২০২১

 

খাদ্য-ক্ষুধা এবং নগ্নতার আনন্দ

প্রেম একটি ক্ষুধা, প্রেম একটি খাদ্য
প্রেম পড়ে গেলে মাটিতে বীজ হয়
উড়ে গেলে ভেঙে ভেঙে বৃষ্টি হয়।
.
‘খাঁটি প্রেম একেবারে উলঙ্গ করে তুলে
নেংটো করে দেয়!
নগ্নতার আনন্দ বিশ্বশান্তির সমতুল্য।
.
খাদ্য-ক্ষুধা এক সাথে থাকে, সহবাস।
খাদ্য এবং ক্ষুধা পরস্পরের সম্পূরক!

টরন্টো, ২২ আগস্ট, ২০২১

 

ঘুমকুমারী 

কন্ট্রাক ল্যান্সের মতো ঘুমগুলো খুলে বালিশের নিচে রেখে দেই। রাত গভীর হলেই ঘুমগুলো অস্থির হয়ে ইঁদুরের বাচ্চার মতো ছটফট ছুটাছুটি করে! আর তখনই নিদ্রার ফরমান জারি হয় সামরিক নির্দেশে!
*
অথচ রানী শাসিত নির্দেশের আগে গণতন্ত্রের বিপরীতে আমাকে রাজ্য দেয়, রাজা বানায়। আমার গায়ে জড়িয়ে থাকে বাদশাহ-সম্রাটদের ঝলমলে পোশাক, শিরদেশে গ্রেজুয়েশনের চমৎকার টুপির মতো মাথায় রাজকীয় কারুকাজ করা মুকুট, কোমরের খাপে নাটকের নকল চকচকে তলোয়ার, পায়ে খন্ডিয়াতৎ’এর মতো নায়েগ্রা জুতো। অভিষেক স্বরূপ সুদূর লক্ষ্ণৌ থেকে আনা হচ্ছে- বিখ্যাত বাঈজি। আমার ঘুমের ভেতর বেজে উঠে নাচনিওয়ালির ঝাঁঝালো ঝনঝনানো নূপুর।

*

তুমি তো সম্রাজ্ঞী নও; সৃষ্টিকর্তী। সৃষ্টি করো সজ্ঞীত। বানাও পুতুল, পর্বত, দ্বিতীয় পৃথিবী। সামরিক অধ্যাদেশের ঘুম, সেই ঘুমের বিরুদ্ধে তথাকথিত গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তালেবানীয় তলোয়ারের স্থলাভিষিক্ত হলো বিষাক্ত ছুরি। আমার বিদ্রোহ টের পেয়ে তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে অভিশপ্ত ব্যাং না বানিয়ে- বানালে ক্ষমতাহীন বৃটেনের রাণী; বানালে নারী, পরী!

টরন্টো, ২১ আগস্ট, ২০২১

 

কাবুলিওয়ালার দেশে

কয়েকটি কালো কালো আলখেল্লা বাদরনৃত্যে
সূর্যের মুখে আলকারতা মেখে
তেতে উঠলো, মেতে উঠলো তলোয়ার-তীর-ধনু খেলায়!
.
কাবুলের কস্তুরির ঘ্রাণে মিশে যাচ্ছে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ
আংশিক অন্ধকার, আংশিক হযবরল
বুধবার দিবাগত রাত বারোটায় থেমে গেছে
স্তব্ধতায় সমস্ত ঘড়ি!
কাশ্মীরের দিকে পাখিরা দেশান্তরী হচ্ছে খাইবার গিরিপথে
নদী থেকে মাছগুলো চলে যাচ্ছে প্রতিবেশি সিন্ধু নদে।
.
কাবুলিওয়ালার অস্থির মন ছুটে যায় মেয়ের কাছে,
মেয়েটাকে কি ওরা তুলে নিয়ে গেছে …
কান্দাহার ক্যাম্পে!
.
হু হু করা বুকে ফিরে যাবে মেয়ের কাছে
তখনই তালেবানদের তালিকায় ভেসে উঠলো-
কাবুলিওয়ালার নাম!

টরন্টো, ২০ আগস্ট ২০২১

 

অপরধাসমুহ

প্রিয় পাকিস্তানটাকে ভেঙ্গে, শেষ করে
তিনি দশ মাস লাহোর জেলে আরামসে
হালুয়া-রুটি খেলেন।

সাজানো নাটক থেকে নায়কের মতো কি সুন্দর ফিরে এলেন
১০ জানিয়ারি!

*
তিনি তো স্বাধীনতা চান নি; চেয়েছিলেন স্বায়িত্বশাসন,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে
সাত কোটি বাঙালিকে ক্ষেপিয়ে গুলিও সামনে ঠেলে দিয়ে
চেয়েছিলেন বিশাল নেতা হতে—
৭ মার্চ!
*
ত্রিশ লাখ শহীদ, লক্ষ নারীর সম্ভ্রম হারানো হরণকারীদের
স্বাধীনিতা বিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
জনগণের সংবিধানে হাত দিয়ে
কায়েম করেছিলেন এক নায়কতন্ত্র- বাকশাল
২৪ জানিয়ারি।
*
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটার অপরাধসমূহ
আমরা কি ভাবে ক্ষমা করি?
তাই ১৫ আগস্ট!
*
গুড়িয়ে তার মাথা, ভেঙ্গে দাও তার হাত।
চুরমার করে দাও তার ‘মূর্তি’, ভাসিয়ে যাও বুড়ি’গঙ্গায়।

টরন্টো, ১৫ আগস্ট ২০২১

 

জ্বীন পরীদের আসর 

জ্বীন পরীদের আসর বসবে আজ মদ্য রাতে মধ্যরাতে।
ক্লাশমেড নয়, গ্লাসমেড।
চমৎকার চিয়ার্স!
হৈচৈ, নাচগান, পর্নো বিনোদনে বশিকরনে জমবে যৌনখেলা।
*
আজকের আসরের আগে আসুন একটু পাঠ করি—
জেনে নেই- মীথলজিক্যাল উচ্চবিত্ত জ্বীনের উৎস, উৎপত্তি
আর নিম্নবিত্ত থেকে শীর্ষ পরীদের পরিচয়।
*
ফেরেস্তারা আলোর তৈরি আর জ্বীনেরা আগুনে উৎপাদিত
তবু মানব-জ্বীন স্বর্ণলোহার মতো গলে গলে যায়…
পরীদের পরশে।
*
প্রাক ইসলামী যুগে জ্বীন অবাধ্য জাতি। বিদ্রোহী, উগ্রবাদী।
আরবীয় পৌরাণিক উপকথায় মৃতদের আত্মা, গুপ্ত এবং অদৃশ্য—
নৃতত্ত্বে এন্টিম্যাটার,
আংশিক প্রতিপুরুষ, আংশিক প্রতিফেরেস্তা।
আংশিক কাল্পনিক, আংশিক সত্য
এবং ৭২তম সুরা আল-জ্বিন।
*
পরীরাও সাবেক স্বর্গদূত। স্বর্গচুত্য, বিতাড়িত, নিক্ষিপ্ত,
প্রাগৈতিহাসিক রূপকথার জাদুকরী নারী
প্রাক-খ্রিস্টীয় ইউরোপীয় কিংবদন্তী লোককাহিনীর প্রাক-প্রাকৃতিক
অভিশপ্ত মৃতদের আত্মা।
কিন্তু পরীদের নিয়ে কোন সুরা নাজিল হয়নি।
*
জ্বীনের জিন আছে যারা আসরে অদৃশ্য, ন্যুড ক্লাবের সদস্য
তাদের ‘জিপার খোলার শব্দে’
লালপরী, নীলপরী, মনপরী, বনপরী, জলপরী…
আজকের আসরে হুইস্কি হয়ে যাবে।

টরন্টো, ১৩ আগস্ট, ২০২১

 

মা 

মায়ের শরীরে গরম মসলার সৌরভ
কাঁচা আদা-হলুদের গন্ধ,
শাদা ফুলের সুবাস ঘুমের মধ্যেও মাকে টের পাই-
ঘুমঘোরে এখনো তাঁর বুকের ঋণ খাচ্ছি,
পাচ্ছি মায়ের অদ্ভূত গন্ধ মেশানো আশীর্বাদ।
.
এখন তাঁর দাঁত পড়ে গেছে— কথা জড়িয়ে আসে
মায়ের মুখের মাতৃভাষা, বাংলা ভাষা ভেঙে ভেঙে যায়।
দেখতেও পারেন না—
পৃথিবীটা তাঁর চশমায় ভীষণ ঝাপসা হয়ে গেছে!
হাঁটতে পারেন না—
বাতাসে ঘাসের ডগার মতো
তাঁর হাতের লাঠি থিরথির করে কাঁপে।
কাঁদতেও পারেন না—
মন খারাপ করে গোপনে আমি তাঁর বদলে কাঁদি
মা’র চোখের ঝিলের জল শুকিয়ে গেছে।
দু’ফোটা কষ্টে আমি হোমিও-হোমিও সুবাস পাই।
.
মা’র মনের ঘ্রাণ লিলিফুলের মতো স্নিগ্ধতা
ছড়িয়ে নিশিরাতে চুপচাপ চলে যাবেন!
আর্তনাদের মতো এবং অসহনীয়
তাঁর এই বাধ্যতামূলেক প্রস্তুতি
আমি ভাবতে পারি না, কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা!
.
৫৬ হাজার বর্গ মাইল জুড়ে
হঠাৎ একদিন আমার মায়ের কবর হবে
পুরো বাংলাদেশ!

টরন্টো, আগস্ট ১০, ২০২১

 

সেবিকা 

সেবার শ্রেণি বিন্যাস আছে।
শিক্ষক জাতিকে শিক্ষিত করে, জেলে মাছ সাপ্লাই দেয়,
পাইলট নিয়ে যায় দূরদেশে, বিদেশে
জাতীয় স্বার্থে বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতিতে সই দেন
সেবামুখী খাত আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে
গ্রাহক সেবা
আমাদের জীবনকে জীবন্ত করে রাখে।
*
স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পসেবা, বিবৃতিসেবা, ব্যাংকিক সেবা,
যৌনসেবা, শরীরচর্চায়
সেবক এবং সেবিকাদের অসীম অবদান,
তবে সেবিকাদের সামান্য সম্মান করতে শিখে নি দুর্ভাগা দেশ!
*
প্লাস্টিক প্রেমের চেয়ে দেহসেবা, ন্যাংটোসেবা গুরুত্বপূর্ণ
ভনিতার চেয়ে পর্নোগ্রাফি, সত্য প্রকাশ
সততার মূল্য শূন্য এবং সুন্দর।
*
সে সৎ ভাবে শরীর বিক্রি করে
বই কেনায় লাখ টাকা অনুদান দেয়,
জ্ঞান অর্জনের জন্য।
শরীর বিক্রি করে যৌনার্তদের সেবাদান করছে,
শরীর বিক্রি করে গরীবদের জন্য কুরবানি দিচ্ছে
মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করছে।
সেবিকার মূল্যায়ন করতে পারেনা অকৃতজ্ঞ বাঙ্গাল।
*
‘বিদেশি মদের বোতল
কিংবা মাদ্রাসায় ছুরি, চাকু, চাপাতি, দাড়ালো অস্ত্র
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সাজানো নির্মিত নাটক’!
*
ঘরে তসবি, জায়নামাজ, টুপি, বোরখা, হাদিসের বই ছিলো
তা জব্দের তালিকায় উল্লেখ নেই!

টরন্টো, ৭ আগস্ট, ২০২১

 

হালাল-হারাম 

রতির পর সামান্য বিরতি।
রতি, বিরতির চূড়ান্তের পরও পর্ব শেষ নয়, শুরু
শেষ দৃশ্য বলে কিছু নেই!
.
এলকোহল জায়েজ নয়,
জ্বীন-পরীদের আরাম, জেনা হারাম
তবু আফটার সেক্স বলতে হয়
-আই লাভ ইউ।
বিফর সেক্স বলতে হয়: মিস, মিস ইউ।
.
হেরেমখানার গল্প আপাতত থাক।
হুর-গেলমান ১০০% হালাল,
সারাবান তহুরা অর্থাৎ জান্নাতের পানি হালাল
হালাল নিয়ে কবিতা লেখা নিষিদ্ধ, হারাম!
………
টরন্টো, আগষ্ট ৫, ২০২১

 

নিরুদ্দেশের দেশে 
………
[“ফাঁসিতে, পাকও খাচ্ছেন, একবার বাঁদিকে
হি…ন..দু…স…তা…ন…আরেকবার ডানদিকে…পা…কি…স…তা…ন!
-মলয় রায়চোধুরী]
…………
১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়
কলকাতা থেকে গিরিবালা দেবী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন, অদৃশ্যে
আর ফিরে আসেন নি
অথবা তাকে আজো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এভাবেই নিখোঁজ অমলকান্তিরা রোদ্দুর হয়ে যাচ্ছে,
বাউল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে,
নিরুদ্দেশের দেশে পাখি হয়ে যাচ্ছে!
*
র‍্যাব তোমরা কি গিরিবালা দেবী সন্ধান দিতে পারবে,
তাকে কি উদ্ধার করতে পারবে তোমাদের অনুসন্ধানী গোয়েন্দা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি?
*
নজরুল রাচীতে, সাথে প্রমীলাও
বঙ্গ সাহিত্যের জন্য আমি একটি প্রবন্ধ লিখতে চাই।

টরন্টো, ৩ আগষ্ট ২০২১

 

শস্যক্ষেত্র

আলবার্টও আমাদের গনি মিয়ার মতো একজন কৃষক
তার নিজের জমি নাই, কিন্তু সত্যবাদী।
সে আফ্রিকান কালো জমিনে হাইব্রিড বীজে চাষ করে ভুট্টা,
এবং স্ট্রবেরি।
*
আবার আলজেরিয়ান কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্যাট্রসান জমিদার
তার জমি আছে কিন্তু নিজস্ব চাষী নাই
তাই তার ভূগোল বর্গা দেয়-
ধবধবে ফর্শা ভূমিহীন একাধিক চাষার কাছে,
শাদা-কালো মেঘের মতো বেড়ে উঠে শস্যদানা।
*
ঘটনাচক্রে বিধর্মী আলবার্ট ধর্মান্তরী হয়ে আল বাতেন নাম ধারণ করে
পাঠ করতে করতে সে পবিত্র গ্রন্থে পেয়ে যায়ঃ
‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র।
যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর’,
চাষ করো।
*
আলবার্ট-আল বাতেন অর্থনৈতিক দেন মোহরের ক্রয়সূত্রে
মাটি ও মাঠের ভূমালিক; প্রকৃত কৃষক-
ভরে উঠে তার খামার, শস্যক্ষেত।
এখন সে নীতি মোতাবেক সীমিত আকারে
মিথ্যে বলে!

টরন্টো, ১ আগষ্ট, ২০২১

 

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

টক,গান ছড়া,ছোটগল্প, প্রবন্ধ-গবেষণা, লিটলম্যাগ সম্পাদনা, সর্বোপরি সাংবাদিকতা। কিসাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল (মে ১৯৫৮) সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় কাজ করেন। কবিতা, নান্তু এত কিছুর পরেও তার পরিচয় প্রধানত কবি। কবিতার সঙ্গে ঘর করছেন প্রায় চার যুগের কাছাকাছি। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালেই সাংবাদিকতার শুরু।

প্রবাসী বাঙালিদের জন্য নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’-এর কর্ণধার। প্রবাস থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সাথে সংযুক্ত। জড়িত আছেন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top