লিসেল ম্যুলারের কবিতা

অনুবাদ: আবদুর রব

[অনুবাদক ও পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লিসেল ম্যুলার (Lisel Mueller) ১৯২৪ সালে জার্মানির হামবুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে নিউমোনিয়ায় মারা যান তিনি। শিক্ষক মা-বাবার মেয়ে, ম্যুলার এবং তার পরিবার ১৫ বছর বয়সে নাৎসি শাসন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাঁরা আমেরিকায় অভিবাসী হন এবং মিডল-ওয়েস্টে বাস করতে শুরু করেন। ম্যুলার ইভান্সভিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সেখানে তাঁর বাবা অধ্যাপনা করতেন। ম্যুলার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর স্নাতক অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন। তিনি সাহিত্য সমালোচক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, এলমহার্স্ট কলেজ এবং গডার্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন।

ম্যুলার “Alive Together: New and Selected Poems,” গ্রন্থের জন্য ১৯৯৭ পুলিৎজার জিতেছেন। গ্রন্থটি ১৯৬৫ সালে তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন “Dependencies,” প্রকাশের প্রায় তিন দশক পর প্রকাশিত হয়। অনূদিত কবিতাটি তাঁর এই গ্রন্থ থেকে নেওয়া। পুলিৎজার পুরস্কার প্রদানের সময় গ্রন্থটি সম্পর্কে বলা হয়, এ এমন একটা গ্রন্থ যা পাঠককে আমন্ত্রণ জানায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে যা তাঁর দুঃখ, কোমলতা, আকাঙ্ক্ষা ও শিল্পের উন্মোচন। তাঁর কাছে মৃত্যু যেন “কাঁচের দেয়ালে এক কঠিন, শুষ্ক আঘাত”। – অনুবাদক]

যখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়

যখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়
আমি কীভাবে কবিতা লিখতে শুরু করলাম,
আমি প্রকৃতির নিঃস্পৃহতার কথা বলি।

আমার মা মারা যাওয়ার পরপরই,
জুনের এক রৌদ্র করোজ্জ্বল দিন,
সবকিছু প্রস্ফুটিত।

আমি একটা ধূসর পাথুরে বেঞ্চে বসেছিলাম
সযত্নে লালিত বাগানে,
কিন্তু সেদিন লিলিরা ছিল বধির
মাতাল, ঢুলুঢুলু
আর গোলাপগুলো ছিল নত অন্তর্মুখী।
কিছুই কালো বা বিভঙ্গ ছিল না
একটা পাতাও পড়েনি সেদিন ।
আর সূর্যটা ছিল প্রখর, গ্রীষ্মের ছুটির
চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন।

একটা ধূসর পাথুরে বেঞ্চে বসেছিলাম—
গোলাপী আর সাদা ফ্যাকাসে মুখ করে
এবং আমার শোক বসিয়ে দিই
ভাষার মুখে,
যা কেবল আমার হয়ে দুঃখ প্রকাশ করবে।

[When I am asked কবিতার অনুবাদ]

 

ঘটনাক্রমে

কি দ্রুত বিকেলের মিষ্টি আলো
অন্ধকারে মিলিয়ে যায়
এবং বন্ধ কুঁড়ি ঝেড়ে ফেলে
তার গূঢ় রহস্য
ফুলে ফুলে ভরে ওঠার জন্য:

এ যেন যা আছে, আছে
যাতে তা হারিয়ে যেতে পারে
এবং হয়ে উঠতে পারে মহামূল্যবান

[In passing কবিতার অনুবাদ]

 

আমার দৃষ্টিশক্তি হারানো

আমি কখনই জানতাম না যে আগস্টে
পাখিরা থাকে কার্যত নীরব,
এখানে সেখানে কেবল একটা টুইটার ডাকে।
এখন লক্ষ্য করি। গত বসন্তে
তাদের কোলাহল আমাকে চীৎকারকারী
এবং হুইসেল বাজিয়ে কিংবা যারা দীর্ঘ লয়ে কু ও-ও দেয়
তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখিয়েছে।
আমি ইতিমধ্যে
আমাদের বিড়ালের চুড়ান্ত আকস্মিক ও চমৎকার
চৈনিক উচ্চারণ আয়ত্ত করেছি।
নদী আমার চোখের সামনে কর্দমাক্ত হয়ে যায়,
তার দীর্ঘশ্বাস এবং সামান্য কলস্বর
আরও উচ্চকিত হয় । গুপ্তচরের মতো,
আমি নির্বিচারে জিনিসগুলি তুলে নিই:
দূরে ট্রাকের চলে যাওয়া ও অন্ধকারে সিডানের
দরোজা বন্ধ করার আওয়াজ,
পশুদের রাত্রিকালীন জীবন—চিৎকার ও হিসহিসানি,
গ্যারেজের ভিতরে সেক্স এবং পেচ্ছাব করার শব্দ।
আজ রাতে ঝিঁঝিঁপোকার ক্রমাগত ডাক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে,
একটা লম্বা দড়ির শব্দ,
আমার মতো ভালো শ্রোতার দিকে প্রসারিত হয়।

[Losing my sight কবিতার অনুবাদ]

 

আবদুর রব

কবি, অনুবাদক, অনলাইন ম্যাগাজিন সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদ।জন্ম ৩০ জুন ১৯৬১ সালে। পৈত্রিক নিবাস যশোর। বর্তমান বসবাস ঢাকায়। একটি আন্তর্জাতিক কন্সাল্ট্যান্সি ফার্মে কর্মরত। ৩৫টি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু। এ পর্যন্ত নয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘পূর্ণ প্রাণ যাবো’। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ: কে ঘুমায় কে জাগে (১৯৯৪); রূপান্তরের গান (২০০৩); আপেলসূত্র (২০১৪) ও বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় (২০২০)। এছাড়া ছোটদের জন্য চীনা গল্পের তিনটি অনুবাদ গ্রন্থও আছে। এগুলো প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় অনুবাদ কবিতার বই ‘বৃষ্টির ভেতর এক গলিপথ’। বেশকিছু ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন তিনি। 

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top