মাধু: অভ্র ঘোষাল

অভ্র ঘোষাল

বড়ো ঝামেলায় পড়েছে দীপেশ। সে সকাল ন’টায় অফিসের জন‌্য রওয়ানা হয়। তার একটু পরেই বেরুতে হয় তার স্ত্রী মেঘবালা-কে। তাড়াতাড়ি হয়ে গেলে মেঘবালা অনেকদিন তার সঙ্গেই বেরোয়। দুজনে এক রিক্সায় চেপে বাসস্টপে যায়। তারপর দুজনে দু-দিকে। কারণ, মেঘবালার স্কুলের উল্টোদিকে দীপেশের অফিস। তা সে ঠিকই আছে। এসব কোনো সমস‌্যা নয়। দীপেশের বিয়ে হয়েছে প্রায় ন-বছর। বিয়ের কয়েকদিন পরই মেঘবালা আহ্লাদী মুখ করে বলেছিলো, দ‌্যাখো, এখনই কিন্তু বাচ্চা নয়। নিজেদের জীবনটা আগে উপভোগ করা দরকার। তারপর। …তার কথা শুনে দীপেশ বোধ-হয় জীবনটা উপভোগ করার জন‌্যই জোরে বউয়ের কোমর জড়িয়ে ধরেছিলো। আর, বিয়ের ন’বছর চলাকালীন তাদের বাচ্চার বয়স মাত্র দেড় বছর। সমস‌্যাটা এখানেই। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিতে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাচ্চাটাকে দেখবে কে? এ প্রশ্নের উত্তর সবাই জানে, লোক রাখতে হবে। কিন্তু বাচ্চাকে দেখবে এবং বাচ্চাসহ ঘরদোর খোলা রেখে যাওয়া যাবে এমন বিশ্বাসী লোক পাওয়া সহজ নয়। মেঘবালা চেয়েছিলো একজন চব্বিশ ঘন্টার লোক। যে থাকবে-খাবে, দুপুরে বাচ্চাকে দেখবে, সকালে-সন্ধ‌্যায় রান্নাবান্না, ঘরের কাজে তাকে সাহায‌্য করবে। ধরে ধরে দু-তিনজন লোক আনা হয়েছিলো। তাদের মাইনে কম দেওয়া হয়নি, গালমন্দ করা হয়নি তবু লোক টেকে না। এ কাজে নাকি ধকল বেশি। কেউ তিন মাস, কেউ পাঁচ মাস কাজ করে চলে গেছে। শেষজন ছিলো দিন সাত-এক। যাওয়ার সময় দুটো দামী ফাউন্টেন পেন আর একটা হাতঘড়ি নিয়ে গেছে। তবু রক্ষে বাচ্চার কোনো ক্ষতি করেনি, বড়ো মাপের চুরিও করেনি। …এরপর চেনা, অর্ধেক চেনা একজনও বাকি নেই যাকে দীপেশ একজন কাজের লোক জোগাড় করে দিতে বলেনি। মেঘবালাও বলেছে স্কুলের অন্যান‌্য দিদিমণিদের। সবাই শুনে নানা পরামর্শ দিয়েছে কিন্তু লোকের খোঁজ কেউ দেয়নি। একদিন দীপেশ অফিস কামাই করে বাচ্চা সামলায় তো মেঘবালা কামাই করে দু-দিন। কিন্তু এভাবে ক’দিন চলে? স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দিকে প্রায়ই বিষণ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মুখে ভাষা নেই। দীপেশ বুঝতে পারে না কী করা উচিৎ! দুজনের চাকরিগুলোকেও তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই বাজারে একজনের চাকরি ছাড়াও কি মুখের কথা? অফিসে গেলে, একবার ঢুকলে, কখন বেরুতে পারবে তার কোনো স্থিরতা নেই। মেঘবালার স্কুলের কাছাকাছি কোনো ক্রেশও নেই। অবশ‌্য থাকলেও যে বাচ্চাকে ​সেখানে প্রাণে ধরে দিতে পারতো তা নয়। ফলে কাজের লোক ছাড়া গতি নেই।

মেঘবালার এক বিধবা পিসি আছে। ইস তাঁকে যদি এখানে এনে রাখা যেতো। মাইনের টাকা লাগতো না। বুড়োমানুষ কতোটুকু আর খেতেন। কিন্তু তাঁকে আনার উপায় কই? দাদা তাঁকে আটকে রেখেছে। পিসির জন‌্য দরদ উথলে উঠছে। কারণ তার বউয়ের শিগ-গির বাচ্চা হবে। চিরকালের স্বার্থপর দাদাটা। চিরকাল আটঘাট বেঁধে কাজ করে। বাচ্চা হওয়ার আগেই বাচ্চা দ‌্যাখার ব‌্যবস্থা ঠিক করে রেখেছে। আর দীপেশ একটা লোক, তার তিনকূলে কেউ নেই। এখন তার সংসারের যা হাল তাকেই বোধ-হয় বলা হয় ‘অচলাবস্থা’…

ঠিক এরকম সময় দীপেশদের অফিসের এক পিওন গগন এসে জিগ‌্যেস করলো, আপনি কাজের লোক খুঁজছিলেন না? পেয়েছেন লোক?

দীপেশ পিওনের সঙ্গে সাধারণত গম্ভীর গলায় কথা বলে। রঙ্গ-তামাসা কখনও করে না। কিন্তু এখন তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো আর্তনাদ, না রে কী বিপদে যে পড়েছি!

গগন গম্ভীর গলায় আবার প্রশ্ন করলো, খাওয়া-পরার ওপর মাইনে দেবেন তো, কতো দেবেন?

দীপেশ লাফিয়ে গগনের হাত-দুটো ধরতে যাচ্ছিলো, ব‌্যাকুল হয়ে জিগ‌্যেস করলো, আছে লোক তোর খোঁজে?

গগন নিস্পৃহ গলায় বললো, বলতে বলতে পকেট থেকে চিরুনি বার করে মাথার চুল আঁচড়াতে লাগলো, হ‌্যাঁ ওই মানে আমার ওয়াইফ। আমার কাজ করতে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। তবে শুনলাম আপনি বিপদে পড়েছেন, তাছাড়া জানাশোনার মধ‌্যেও হবে। ওয়াইফের খুব ইচ্ছে কাজ করার…

কৃতজ্ঞতায় দীপেশ কী করবে ভেবে পায় না। কোনোদিন কোনো পিওনকে যা বলেনি তাই বললো, চা খাবি?

গগন চিরুনি পকেটে ঢুকিয়ে এবার হাত দিয়ে মাথার পেছনের চুল ঠিক করতে লাগলো। বললো, না টাইম নেই। তাহলে আপনার ঠিকানাটা দিন। কাল সকালে ওয়াইফকে আপনার বাড়ি পাঠিয়ে দেবো। মাইনে-টাইনেগুলো ঠিক করে নিন।

গগনের বউ মাধু পরের দিন থেকেই বহাল হলো, সঙ্গে নিয়ে গেলো তারও দেড় বছরের বাচ্চাকে। শেষ অবধি লোক পাওয়া গেছে এই আহ্লাদেই কয়েকদিন কেটে গেলো। মাধুর বড়ো গুণ সে মুখে মুখে তর্ক করা দূরে থাকুক, বিশেষ কথাবার্তাই বলে না, বাড়ি থেকেও বেরোয় না। কয়েকদিন যেতে দ‌্যাখা গেলো, মাধু যে কেবল কম কথা বলে তাই নয়, তাকে প্রশ্ন করেও সবসময় উত্তর পাওয়া যায় না। দরকারী কথাও তার পেট থেকে বার করা মুশকিল। কেবল বাড়ির বাইরে যাওয়া নয়, তার পক্ষে এক ঘর থেকে আর-এক ঘরে যাওয়াও যেন কঠিন। তার থাকার জায়গা থেকেই সে বিশেষ নড়তে চায় না। রান্নাঘর থেকে মেঘবালা হয়তো কোনো কাজে ডাকলো, মাধু সাড়া দিয়ে পৌঁছাতে-পৌঁছাতে মেঘবালা নিজেই কাজটা সেরে ফেললো। কারণ সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে তার অপেক্ষা করার সময় থাকে না। …সব কাজেই এরকম। মাধু যেন হাত-পা নাড়াতেই চায় না।

একদিন মেঘবালা দীপেশকে বললো, এ আবার কোন নতুন উৎপাতে পড়া গেলো বলতে পারো? দীপেশ বললো, দেখলেই তো সোনা লোক পাওয়া কী কঠিন! রাগারাগি না করে একটু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলো একদিন। … মেঘবালা বলতে গেলো একদিন, মাধুর চোখ বেয়ে জল গড়াতে লাগলো। নাক মুছতে-মুছতে বললো, মেয়েমানুষ হয়ে মেয়েমানুষের অবস্থা বোঝো না? আমার পাঁচ মাস চলছে। আমি আর বাঁচবো না। এবার আত্মহত‌্যা করা ছাড়া আর গতি নেই আমার। …মাধু কাঁদছে আর তার সমস‌্যার কথা বলছে, আবার কাঁদছে। … মেঘবালা হাঁ করে শুনছে। আর যতোই শুনছে, হাঁ-টা ততোই বড়ো হচ্ছে। পরে দীপেশও শুনলো মেঘবালার মুখ থেকে। … মাধু গগনের দ্বিতীয়পক্ষের বউ। বাচ্চা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে প্রথমপক্ষের বউকে বাচ্চাসমেত বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর বিয়ে করেছে মাধুকে। বাচ্চা হওয়ার পর তাকেও গ্রামে পাঠিয়ে দিতো কিন্তু সে নেহাৎ জোর করে লোকের বাড়ি গতর খাটিয়ে এখানকার মাটি কামড়ে পড়ে আছে। সে আর বাচ্চা চায়নি। তার স্বামীকে বলেও ছিলো কাজ করে সে তার বাচ্চার খরচ চালিয়ে নেবে। চলছিলোও ঠিকঠাক। কিন্তু একদিন রাতে এক গলা মদ গিলে এসে গগন প্রথমে মাধুকে ধরে মারলো, আর তারপর অনুতপ্ত হয়ে সোহাগ করতে লাগলো। তারপর… ওই অবস্থায় পুরুষমানুষকে কীভাবে ঠেকাতে হয় মাধুর জানা নেই। কিন্তু এখন মাধুর ভাগ‌্যে যা আছে তা সে ভাবতেও পারে না। আবার কিছুদিন তার কাজ করার ক্ষমতা থাকবে না। স্বামী তাকে তখন খাওয়াবে না। দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার পর তাকে জোর করে মাধুর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেবে। এখানে কিছুতেই থাকতে দেবে না। কিন্তু মায়ের কাছে দুটো বাচ্চা নিয়ে হাজির হলে সবাই মিলে অনাহারে মরবে। সেখানে মা-টারই খাওয়ার জোগাড় নেই। মাথা গোঁজার জায়গা নেই। সেখানে যাওয়া মানে একরকম আত্মহত‌্যাই করে বসা। আর এই সব কিছু জেনেশুনেও গগন তাকে সেখানে পাঠাবেই। অথচ, মাধুর ওই দেড় বছরের বাচ্চাটাকে বাঁচাতে হলে, নিজেকে বাঁচাতে হলে কলকাতায় তাকে থাকতেই হবে।

কিন্তু এখন কী করবে মাধু? সে শুনেছে হাসপাতালে কীসব ব‌্যবস্থা আছে যাতে ক’রে বাচ্চা হওয়া আটকানো যায়। …মাধু কাঁদতে কাঁদতে প্রথমে মেঘবালার হাত আর তারপর পা ধরে বলতে লাগলো, দিদি গো, বাচ্চা তো তোমাদেরও আছে। কোলের বাচ্চাটার জন‌্য আমার যে কী জ্বালা, তা কি বুঝতে পারছো? আর এই পেটে যেটাকে পুষছি, সেটা শত্তুর!

তাছাড়া লোক না হলে তো তোমাদেরও চলবে না। আমি চিরকাল তোমাদের দাসী হয়ে থাকবো দিদি। তোমরা যা-হোক একটা ব‌্যবস্থা করে দাও।

দীপেশ শুনলো সব। মেঘবালা জিগ‌্যেস করলো, কী করবে?

দীপেশকে চুপ করে থাকতে দেখে সে বললো, দ‌্যাখো একজন লোক ছাড়া যে আমাদের চলবে না, তা তো বাস্তবিক। আর মাধু তো এমনিতে খারাপ কেউ নয়। শরীরটা নেহাৎ ভালো নেই, তাই ঢিলেমো দিচ্ছিলো। আমার তো মনে হয় মাধুর ওপর ভরসা করা চলে। দ‌্যাখো না খোঁজ-খবর নিয়ে, একটা কিছু ব‌্যবস্থা করতে পারো কিনা!

– আরে তাতে বেজায় খরচ। আর ঝক্কিও কম নয়।

– কিন্তু কীই বা করা যাবে? লোক ছাড়া তো চলবে না। দেখলামই তো, এই কলকাতা শহরে একজন সবসময়ের লোক পাওয়া কতোটা মুশকিল!

নিরুপায় হয়ে দীপেশকে খোঁজ নিতে হলো। প্রথমে যে নার্সিংহোমে খবর নিতে গেলো তাদের দর শুনেই দীপেশের মুখ শুকিয়ে গেলো। … আর-এক জায়গায় জানা গেলো, কিছু কম লাগবে।

সেদিন অফিসে গিয়ে দীপেশ গগনকে ডেকে পাঠালো। গগন এসে সিনেমার নায়কের কায়দায় দাঁড়ালো। হাত ঘুরিয়ে বললো, আমরা আপনাদের সমস‌্যা নিয়ে ভাবি, আপনারা কিন্তু আমাদের কথা ভাবেন না।

– তোমার আবার কী কথা হে?

– আমার কনফারমেশনটা আটকে আছে। আপনারা একটু বললে তবেই না…

– ওসব পরে হবে এখন। আগে যে কারণে ডেকেছি সেটা শোনো।

– কেন, কী হয়েছে? মেয়েছেলেটা কোনো লাফড়া করেছে নাকি? একটু এদিক-ওদিক দেখলেই ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন। আমি কিস‌্যু বলতে যাবো না!

– নিজের স্ত্রী-এর সম্বন্ধে এসব কথা বলতে… যাকগে, যা বলছিলাম শোনো…

দীপেশ বললো সব। মাধু নিজেই বাচ্চাটা নষ্ট করতে চায়। সেটা করতে হলে কোথায় যেতে হবে, খরচ পড়বে কতো…। সব শুনে গগন বললো, তা করতে চায় করুক গে। আমার কী?

দীপেশ বললো, বউ তো তোমার। খরচাপাতির ব‌্যাপার আছে। তারপর নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা…

গগন বললো, দেখুন স‌্যার, আমার স্পষ্ট কথা। ও কাজ করছে আপনাদের বাড়িতে, আপনাদের ফরমায়েশ খাটছে। কাজেই, যা করার আপনারাই করুন। আমার পকেটের ওতো জোর নেই। আমি এসব লাফড়ায় নেই।

কাজেই, যা করার, অগত‌্যা দীপেশদেরকেই করতে হলো। টাকা খসিয়ে মাধুর গর্ভপাত করানো হলো। মাধু এখন বিক্রমে আছে। ভালোমন্দ খাচ্ছে। তার স্বাস্থ‌্যের ক্রমোন্নতি ঘটছে। গায়ে গত্তি লাগছে। ভাঙা গাল ভরে উঠেছে। রঙটাও যেন পরিষ্কার হয়ে উঠেছে কিছুটা। অথচ তাকে কিছু জিগ‌্যেস করলেই সে করুণ মুখ করে বলে, বড্ড দুব্বল। হাত-পা নাড়তে পারি না গো। তবে আর ক’টা দিন গেলেই উঠে দাঁড়াতে পারবো। তখন আর কিছু ভাবতে হবে না।

আর এদিকে দীপেশ যথাসাধ‌্য পরিশ্রম করলেও মেঘবালার পরিশ্রম দিনে দিনে বাড়তে থাকলো। ঘরে-বাইরে সমান তালে খাটতে খাটতে ক্রমে রোগা হয়ে যাচ্ছে সে। কয়েক দিন পরে আর কিছু ভাবতে হবে না – এই কথাখানা মাথায় রেখেই মেঘবালা আর দীপেশ লড়ে যাচ্ছে, পরিশ্রম করে চলেছে অবিরল। ফল-মিষ্টি থেকে টনিক, সবের পেছনেই টাকা খরচ হচ্ছে। আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে খালি বুঝিয়ে চলেছে, এটা হলো বিনিয়োগ। আর মাধুও প্রায়ই কেঁদে-কেঁদে বলে, আগের জম্মে তোমরা নির্ঘাৎ আমার বাপ-মা ছিলে। তোমাদের ছেড়ে আমি কোত্থাও যাবো না!

এই শুনে মেঘবালার বড়ো আহ্লাদ হয়। দীপেশও একটু আশায় বুক বাঁধে। সত‌্যিই তো, আর তো ক’টা দিন। তারপর আর কোনো চিন্তা নেই। সেই সঙ্গে তাদের চোখে পড়লো, মাধুর চেহারাটা দিনে দিনে খোলতাই হচ্ছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটা দেখতে ভালোই। এমনকি, মেঘবালার পাশে দাঁড়ালে যে-কোনো লোকের চোখ এখন মাধুর দিকেই আগে যাবে।

এভাবেই চলতে থাকলো। মেঘবালার চেহারা ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে। গায়ের রঙ মলিন হয়ে যাচ্ছে। সামান‌্য প্রসাধনের চিহ্নও নেই তার শরীরের কোথাও। আর এসব করতে ইচ্ছেই হয় না যেন। একদিন সন্ধ‌্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দীপেশ দেখলো মেঘবালা প্রচন্ড উত্তেজিত। ঘটনা কী? মেঘবালা দাঁতে দাঁত ঘষে বললো, সেই বজ্জাতটা এসেছিলো। হয়তো বা আগেও এসেছে, আমরা জানতে পারিনি।

দীপেশ বোঝার চেষ্টা করে জিগ‌্যেস করলো, কে বজ্জাত? একইভাবে মেঘবালা উত্তর দিলো, তোমার ওই গগন!

– তুমি জানলে কীভাবে যে আজ ও এসেছিলো?

– কীভাবে আবার? ভীষণ মাথা ধরেছিলো বলে স্কুল থেকে আধ-ঘন্টা আগে ফিরেছিলাম। দেখি বাড়ি থেকে কে একটা লোফার গোছের লোক বেরিয়ে যাচ্ছে। মাধুকে জিগ‌্যেস করতে জানলাম, গগন।

দীপেশ একটু হতভম্ব হয়ে গেলো। মেঘবালা বলে, মাধুকে বললাম, ও আবার তোর কাছে আসে কেন? বারণ করতে পারিস না? আবার যদি অঘটন ঘটায় কোনো? তাতে সেই মেয়ে কী বলে জানো? ও নাকি নাচার। স্বামীকে আসতে কখনও বারণ করা যায়? রেগেমেগে বললাম, তোর সত‌্যি সত‌্যি বাচ্চা হলে তোদের তো না-খাইয়ে মরতে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো! এখন কোন সাহসে আসে? আর তুইও বা অ‌্যালাও করিস কেন? তা সে কী বলছিলো তোকে? নিয়ে যাবে? তাতে মাধু বললো, না না তোমাদেরকে ছেড়ে আমি কোত্থাও যাবো না। আর উনিও যাওয়ার কথা তোলেননি। বললাম যাওয়ার কথা বলেনি তো বললোটা কী তোকে? তাতে মাগী যেন লজ্জায় মরে যায়! আদিখ‌্যেতা দেখে গা জ্বলে গেলো। এখন বলো, কী করবে?

দীপেশ নিরুত্তর। মেঘবালার দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বুকেই একটা আশঙ্কা চেপে বসতে থাকে। আবার যদি মাধু বলে বসে, পুরুষমানুষকে কি ঠেকানো যায়? সে নিরুপায়। … তখন কী করবে তারা? দীপেশ সোফার ওপর কাঁধের ব‌্যাগটা রেখে চুপচাপ বাথরুমে গিয়ে ঢোকে।

 

অভ্র ঘোষাল

কলকাতা নিবাসী। নৃতত্ত্ব বিষয়ে, বিধাননগর সরকারি কলেজে বিএসসি তৃতীয় বর্ষে পাঠরত।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top