পুলক হাসান এর সাতটি কবিতা

ঝালকাঠি

নদী ও নারী যদি না আলাদা করি
তবে সবুজ গাছপালা ও তরুপল্লবে পরিপাটি
ঝালকাঠি
যেন জলের বুকে রূপালী এক বন্দরসুন্দরী!
ডাচ ফরাসী ও ব্রিটিশ বেনিয়া
তার মন জয়ে ছিল মরিয়া।
সতের মুসলমানের বুকের তাজা রক্তে লেখা আছে সেই পরিহাস, ব্রিটিশ নিষ্ঠুরতা!
তারপরও মেঘমুক্ত হয়নি তার আকাশ
বরং স্বদেশী শকুনের প্ররোচনায়
ঝরে গেছে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর আরও চব্বিশ তাজা প্রাণ!
কিন্তু যে যায় সে তো আর আসে না ফিরে।
জীবনানন্দ কেন যে বললেন আবার আসবেন তিনি ফিরে
ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে
বুঝলাম না।
অথচ লাবণ্যের চোখে এটাই কবিতা!

 

মাগুরা

মাগুরা এক ঐতিহাসিক জেলা
তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মগ জলদস্যু ও বর্গী পালা।
মগ জলদস্যুর অগ্রযাত্রা থামাতে গিয়েই তার নামকরণ!
কিন্তু আমার ভ্রমণ অন্যখানে
যখনই মাগুরা যাই
আমার চোখ চলে যায় প্রেমেরবেদী
চÐিদাস ও রজকিনীর সেই ঘাটে
যেন আমি যোগ দিই জীবনের অন্য এক পাঠে।
যদিও ভেতরে জাগায় শিহরণ
মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালীর ঐতিহাসিক ঘোড়দৌড় মেলা।
তবু গড়াই নদীর দিকে তাকিয়ে যেন বলি
এখনও কি সেই অন্ধকারে আছি?
নইলে কেন উচ্চারণ করি
কবি ফররুখ আহমদের পাঞ্জেরী কবিতার
সেই আর্তিঝরা পঙ্ক্তি?
‘রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী’?

 

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ গেলে
এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এসে দাঁড়ালে
কেবলই মনে হয়
তার সঙ্গে আমার গান গেয়ে পরিচয়!
মÐয়ার আঁচলে বন্দী স্বপ্ন নদী
বিছিয়ে দেয় সিংহ-হৃদয়!
তখন তাকে আর আমার দেখতে ইচ্ছে হয় না
দুর্ভিক্ষের আয়নায়
যে আয়নায় জ্বলজ্বল করছে জয়নুলের অমর কীর্তি।
বরং ইচ্ছে হয় তীব্র শীতে নাড়া পোড়া আগুনের উষ্ণতায়
রাতভর জেগে রই গম্ভীরার জ্যোৎস্নায়।

 

চুয়াডাঙা

বাউলের পদভারে চিত্তমথিত চুয়াডাঙা
সহজ নয় তার হৃদয় ভাঙা।
দেশের প্রথম রাজধানী
ঘিরে আছে তাকে মাথাভাঙ্গা, কুমার ও ভৈরবনদী।
সেইসঙ্গে সুবিখ্যাত কেরু এÐ কো¤ণ্ঠানি
কতকিছু নিয়েই না তার পরিচয়
কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে মানবতার বিজয়।
ধর্মাধর্মে বিভক্ত সমাজ
হিংসা ও বিদ্বেষ লালিত মানবজমিনে
এসো মানবতার পতাকাটা উড়াই
তার জন্যই তো দিওয়ানা সাঁই!

 

নেত্রকোনা

আকাশ উন্মুখ মগরা নদীর জল
যেন প্রস্তুত মুছে দিতে সময়ের ব্যর্থ কোলাহল!
নেত্রকোনাকে আমার তাই মনে হয় অন্যরকম
মনে হয় তার টানে বেড়ে যায় জীবনের দম।
সুরের এক অতুল টানে
সব পাখি জড়ো হয় সেখানে।
আর হাওরের বাতাস এসে চুপিসারে
যেন কথা বলে বাউলিয়া ঘোরে!
জীবনের কথা
জীবনের ছলকে মনে হয় না আর ছল।
তুমি যদি বেরিয়ে আসতে পারো নিজের বাইরে
সে তোমাকে রাখবে না দূরে।

 

ঝিনাইদহ

কবির অমল ভাষ্যে
জীবন যাতনা বিষে
ঝিনুক নীরবে সহে!
আমি সেই ঝিনুকের সন্ধানে এসেছি ঝিনাইদহে।
তুমি অহেতু সন্দেহে
আমাকে ফিরিয়ে দিও না
হাস্নুহেনা।
যদিও বইছে এখন গুজবের হাওয়া
আর সেই গুজবে জ্যোৎস্না জলেও পড়ছে কালো ছায়া।
কিন্তু আমি জানি সে-ই হচ্ছে দামি
সকলে যা বলছে তুমি তার ব্যতিক্রমি।
আর তাই প্রেমের টান স্বতঃস্ফ‚র্ত উজান!
নইলে কে ভাঙাবে ফুলের অভিমান?

 

পঞ্চগড়

তোমাকে কে বলেছে মুহিত
পঞ্চগড় মানেই হাড়কাঁপানো শীত?
বরং ওখান থেকেই ভেসে আসে সীমান্ত সংগীত
করুণ সুরে গাওয়া!
সেই সুরের নৈঃশব্দ্যে স্তব্ধ উত্তর জনপদের হাওয়া
যেন চিরল চায়ের পাতার বুক চিরে
সন্ধ্যার আলতায় বুকের মতো গোল সাদা পাথর
রাঙিয়ে যাওয়া!
আর তারজন্যই হয়তো কূলবধূ দোলেনার বুকের দাপানি থামছে না!
মুখ খুলছে না
কেউ মুখ খুলছে না!
তুমি কেন ভাবো তাকে পাহাড় থেকে আনা
ভ‚পেনের কথা কওয়ার ময়না?

 

পুলক হাসান

জন্ম ২৪ জানুয়ারি ১৯৬১ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড জালকুড়ি গ্রামে। পিতা : আবদুল বারেক ও মাতা : নূরুন্নাহার বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং-এ সম্মানসহ ¯œাতকোত্তর। পেশা : সাংবাদিকতা। বিবাহিত। স্ত্রী রীনা ইসলাম ও কন্যা আরিয়ানা ইফফাত নূর রুসামাকে নিয়ে যাপন।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি: চক খড়ি মেয়ে (কবিতা) ১৯৯১; ও জল ও তৃষ্ণা (লিরিক) ১৯৯৭; সব দাগ ওঠে না (কবিতা) ২০০৮; পরকীয়া ওমে (কবিতা) ২০১১; রোদ ও ছায়ার রচিত (কবিতা) ২০১২; কবিতার গদ্যরূপ (প্রবন্ধ) ২০১৩; কবিতা : সহজ করে বলা (প্রবন্ধ) ২০১৭; বাছাই কবিতা (কবিতা) ২০১৮; আরো কিছু বুদবুদ (কবিতা) ২০২০;মুহূর্তের কবিতা (কবিতা) ২০২০; প্রতিবেশি ও বেলুন সভ্যতা (কবিতা) ২০২১ এবং আমার কবিতা (কবিতা) ২০২১

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top