অনুবাদ: রিয়াদ চৌধুরী
[হারুকি মুরাকামির জন্ম ১২ জানুয়ারি, ১৯৪৯, জাপানের কিয়েটো শহরে। এপর্যন্ত ১২টি উপন্যাস ও তিনটি ছোট গল্পের বই লিখেছেন। এই গল্পটি তাঁর ‘ব্লাইন্ড উইলো, স্লিপিং উইমেন’ বই থেকে নেওয়া। গল্পটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন ফিলিপ গ্যাব্রিয়েল।]
১৯৭১ ছিল স্প্যাগেটি রান্নার বছর।
ঊনিশ’শো একাত্তর সালে আমি বেঁচে থাকার জন্যে স্প্যাগেটি রান্না করতাম, এবং স্প্যাগেটি রান্নার জন্যেই বেঁচে ছিলাম। অ্যালুমিনিয়ামের কড়াই থেকে উঠে আসা স্প্যাগেটির ধোঁয়া ছিল আমার গর্ব ও আনন্দ, আর সসপেনে ফুটতে থাকা টমেটো সস ছিল তখন আমার জীবনের একমাত্র আশা।
আমি একদিন রান্নার জিনিসপত্র বিক্রির বড় একটা দোকানে গেলাম, সেখান থেকে আমার রান্নাঘরের জন্য একটা টাইমার আর পুরো একটা এ্যালসেশিয়ান কুকুর ধরে যায় এমন সাইজের একটা অ্যালুমিনিয়ামের কড়াই কিনলাম, তারপর সেখান থেকে গেলাম বিদেশীদের মশলার বাজারে, যতরকম মশলা পারি যোগাড় করলাম, বইয়ের দোকানে গিয়ে কিনলাম একটা পাস্তা রান্নার বই, এরপর কিনলাম কয়েক ডজন টমেটো। বাজারে যত ব্র্যান্ডের স্প্যাগেটি পাওয়া যায় সব কিনলাম, যোগাড় করলাম সব রকমের সস, যত ধরনের সসের নাম মানুষের জানা আছে। এরপর একদিন রসুন, পেঁয়াজ আর অলিভ অয়েলের গন্ধ বাতাসে গানের মত ছড়িয়ে পড়লো, ঢুকে পড়লো আমার এ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটা কোণায়, ফ্লোরে, সিলিঙয়ে আর দেয়ালে, কাপড়-চোপড়ের ভাঁজে ভাঁজে, বই-পত্রের র্যাকে, রেকর্ড শেলফে, আমার টেনিস র্যাকেটটায়, পুরনো চিঠিপত্রের বান্ডেলে। এমন এক গন্ধ যা হয়তো পাওয়া যেতো প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের রান্নাঘরে।
এটা একটা স্প্যাগেটি রান্নার বছরের গল্প, খ্রীস্টাব্দ ১৯৭১।
আমার নিয়ম মতো, আমি স্প্যাগেটি রান্না করতাম এবং খেতাম, পুরোপুরি একা। আমার মনে হতো, স্প্যাগেটি হলো এমন একটা ডিশ, যেটা একা খেতে হয়, একা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। কেন এরকম মনে হতো, ব্যাখ্যা দিতে পারবো না, কিন্তু এরকমই।
স্প্যাগেটির সাথে আমি সবসময় চা এবং শসা আর লেটুসের সালাদ খেতাম। খেয়াল রাখতাম এগুলো যেন বাসায় সবসময় থাকে। সবকিছু টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে, খবরের কাগজ হাতে নিয়ে, সেটায় চোখ বুলিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া সারতাম। এভাবে রবি থেকে শনি একটার পর একটা স্প্যাগেটি দিন আসতো। আর প্রতি রবিবার শুরু হতো একটা নতুন স্প্যাগেটি সপ্তাহ।
প্রতিবার আমি যখন স্প্যাগেটির প্লেট সামনে নিয়ে খেতে বসতাম- বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে- আমার কেমন এক অনুভূতি হতো, মনে হতো কেউ একজন এখনই দরজায় কড়া নাড়বে। নির্দিষ্ট কেউ না, প্রত্যেকবার আলাদা কারও কথা মনে হতো। কখনো অচেনা কেউ, কখনো এমন কেউ যাকে আমি চিনি। একবার এলো এক মেয়ে, স্কুলে পড়ার সময় যার সাথে ডেট করতাম, একবার আমি নিজেই, কেবল কয়েক বছর আগেকার আমি, এখনকার আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। একবার তো জেনিফার জোনসের হাত ধরে চলে এলেন স্বয়ং উইলিয়াম হোল্ডেন।
উইলিয়াম হোল্ডেন?
অবশ্য এদের কেউ এ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে ঢুকতো না। স্মৃতির ছোট ছোট টুকরোর মতন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো সবাই, দরজায় কড়া না নেড়েই, তারপর এক সময় চলে যেতো।
*
বসন্ত, এরপর গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মের পর হেমন্ত, আমি রান্নাই করে চললাম, যেন স্প্যাগেটি রান্না এক ধরনের প্রতিশোধ। যেভাবে একটা নিঃসঙ্গ, খেয়ালী মেয়ে তার প্রেমিকের লেখা পুরনো চিঠি ফায়ারপ্লেসে ছুঁড়ে মারে, সেভাবেই আমি হাতের মুঠো করে স্প্যাগেটি নিয়ে দিনের পর দিন কড়াইয়ে ছুঁড়ে মেরে যেতে লাগলাম।
আমার পায়ের সামনে পড়ে-থাকা সময়ের ছায়াগুলো অতি আদরে জমিয়ে নিয়ে, স্প্যাগেটিগুলো হাতে চেপে এ্যালসেশিয়ান কুকুরের শেপ দিতাম, এরপর ফুটন্ত পানির মধ্যে ছেড়ে দিয়ে, ছিটিয়ে দিতাম লবণ, তারপর বড় একটা চামচ হাতে নিয়ে কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, যতক্ষণ না টাইমারটা তার একঘেয়ে স্বরে বেজে ওঠে।
স্প্যাগেটির সুতাগুলো জটিলভাবে একটা আরেকটাকে জড়িয়ে রাখে, আমি রান্নার সময় কখনোই এগুলোকে চোখের আড়াল করি না। আমি অন্য দিকে ফিরলেই আমার মনে হয় সেগুলো কড়াইয়ের কোণা থেকে পিছলে গিয়ে রাতের আঁধারে হারিয়ে যাবে। ঘন জঙ্গল যেভাবে অপেক্ষা করে থাকে রঙ্গিন প্রজাপতিদের সময়ের অসীমতার মাঝে গিলে নিতে রাত্রিও তেমনি নীরবে শুয়ে থাকে, আশা নিয়ে, চঞ্চল স্প্যাগেটিগুলোকে ওৎ পেতে ধরে নিতে।
Spaghetti alla parmigiana
Spaghetti alla napoletana
Spaghetti al carcioft
Spaghetti aglio e olio
Spaghetti alla carbonarca
Spaghetti della pina.
এরা ছাড়া আরও কিছু স্প্যাগেটি ছিল তখন, বিষণ্ন, নামহীন। অনাদরে পড়ে থাকতো ফ্রিজের কোণায়। কোন কোন স্প্যাগেটি রোদে পুড়তে পুড়তে একসময় হারিয়ে যেতো ১৯৭১ এর নদীগুলোতে। এবং আমি তাদের সবার জন্যে শোক করি, ১৯৭১ এর সমস্ত স্প্যাগেটির জন্যে।
*
ঠিক তিনটা বিশ মিনিটে যখন ফোনের রিং বাজলো আমি তখন মেঝেতে পাতা মাদুরের উপর হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে বাসার সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। শীতের দুপুরবেলার সূর্যের একখণ্ড রোদ আমার গায়ের উপর। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসের রোদে, ঠিক যেন একটা মরা মাছির মত শুয়ে ছিলাম।
প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না যে ফোনের রিং এটা, বরং মনে হলো এটাও কোন অচেনা স্মৃতি, বাতাসের মাঝে আটকে পড়ে আছে। ধীরে ধীরে শব্দটা একটা আকার পেল, শেষপর্যন্ত বুঝতে পারলাম, এটা ফোনের রিং। একশত ভাগ সত্যিকারের বাতাসে একশত ভাগ ফোনের রিং-ই ভেসে আসছে। শুয়ে থেকেই হাত বাড়িয়ে ফোনটা ধরলাম এবং রিসিভারটা তুললাম।
অন্য দিক থেকে একটা মেয়ের গলা, এত হালকা এক মেয়ের, যে কিনা হয়তো বিকেল সাড়ে চারটের ছায়ায় পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। আমার এক বন্ধুর এক্স গার্লফ্রেন্ড। কোন এক কারণে তারা দু’জনে এক হয়েছিল, আমার বন্ধু আর এই সাধারণ মেয়েটা, আবার কোন এক কারণে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। প্রথম দিকে ওদেরকে মিলিয়ে দিতে নিজের অনিচ্ছাতেই আমার একটা ভূমিকা ছিল।
‘স্যরি, তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম।’ মেয়েটা বললো, ‘কিন্তু তুমি কি জানো, ও এখন কোথায়?’
আমি ফোনটার দিকে তাকালাম। রিসিভারের কর্ড বরাবর চোখ ঘুরালাম। হুমম, কর্ডটা ফোন সেটের সাথেই লেগে আছে। কোন রকমে একটা জবাব দিলাম। মেয়েটার গলার স্বরে কেমন যেন ঝামেলার গন্ধ। আর, যে ঝামেলাই হোক আমি তাতে জড়াতে চাই না।
‘কেউ আমাকে বলছে না ও কোথায়।’ ঠাণ্ডা গলায় সে বললো। ‘সবাই ভাব করছে জানে না কিন্তু সত্যিই ওর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা ছিল। প্লিজ, ও কোথায় আমাকে বল। কথা দিচ্ছি, তোমাকে এসবে জড়াবো না। কোথায় আছে ও?’
‘সত্যিই জানি না আমি।’ বললাম, ‘অনেকদিন ধরে ওর সাথে আমার দেখা হয় না।’ আমার গলার স্বর নিজের কাছেই নিজের মনে হলো না ওর সাথে দেখা হয় না এই কথাটা সত্যি, কিন্তু অন্য অংশটা না- আমি ওর ঠিকানা, ফোন নাম্বার জানি। মিথ্যা কথা বললে আমার গলার স্বরে কী যেন হয়।
কিছুক্ষণ কোন জবাব এলো না।
ফোনটাকে হঠাৎ করে বরফের মত ঠাণ্ডা লাগলো।
এরপর আমার আশেপাশের সবকিছুই বরফের পিলারের মত হয়ে যেতে লাগলো, যেন আমি জে. ডি. ব্যালার্ডের সাইন্স ফিকশন গল্পের কোন চরিত্র।
‘আমি সত্যি জানি না।’ আবার বললাম। ‘ও কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেছে।’
মেয়েটা হাসলো। ‘ছাড়ো তো, ও এত চালাক কেউ না। আমরা যার কথা বলছি, সে যাই করুক, সেটায় নিজের ছাপ রেখে করে।’ ঠিক। আমার এই বন্ধু একটু বোকার দিকে।
যাই হোক, আমি মেয়েটাকে বলতে যাচ্ছি না ও কোথায়। বললে, এরপর আসবে ওই বন্ধুর ফোন, তারপর শুনতে হবে ওর বকবক। আমি জীবনে অন্য মানুষের ঝামেলায় অনেক জড়িয়েছি, আর না। এ ধরনের সব ঝামেলা এর মধ্যেই একটা গর্ত খুঁড়ে চাপা দিয়ে দিয়েছি, সেই কবর আর কাউকে খুঁড়তে দিচ্ছি না।
‘আমি আসলেই স্যরি।’
‘তুমি আমাকে পছন্দ করো না, তাই না?’ হঠাৎ মেয়েটা বললো।
বুঝতে পারলাম না কী বলবো। আমি অন্তত ওকে অপছন্দ করি না। সত্যিকার অর্থে ওর প্রতি আমার কোন ইম্প্রেশনই নেই। আর যার প্রতি ইম্প্রেশন নেই, তাকে ভাল বা খারাপ লাগার কিছু নেই।
‘আমি স্যরি।’ আবার বললাম, ‘কিন্তু আমি এখন স্প্যাগেটি রান্না করছি।’
‘মানে? বুঝিনি, আবার বলো তো।’
‘আমি বলেছি, আমি এখন স্প্যাগেটি রান্না করছি।’ মিথ্যা বললাম, জানি না কেন মিথ্যা কথাটা বললাম, কিন্তু এর মধ্যেই মিথ্যাটা আমার একটা অংশ হয়ে গেল, এতটাই যে, সেই মুহূর্তে অন্তত আমার মনেই হলো না যে মিথ্যা বলছি।
আমি একটু সামনে এগিয়ে কাল্পনিক একটা কড়াইয়ে পানি ঢাললাম। কাল্পনিক একটা ম্যাচ দিয়ে কাল্পনিক একটা স্টোভ ধরালাম।
‘তো?’ মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো।
আমি ফুটন্ত পানির মধ্যে কাল্পনিক লবণ ছিটালাম, আস্তে করে কাল্পনিক স্প্যাগেটিগুলোকে কাল্পনিক কড়াইটায় ঢেলে দিলাম। কাল্পনিক টাইমারটায় সময় সেট করে দিলাম, বারো মিনিট।
‘তো, আমি এখন কথা বলতে পারছি না। স্প্যাগেটিটা নষ্ট হয়ে যাবে।’
ও কোন জবাব দিল না।
‘আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু স্প্যাগেটি রান্না বেশ জটিল।’
মেয়েটা তখনো চুপ। আবার আমার হাতের ফোনটা বরফ হতে শুরু করলো। আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম, ‘তুমি কি পরে ফোন করতে পারো?’
সে বললো, ‘কারণ, তুমি এখন স্প্যাগেটি রান্নার মাঝখানে আছো?’
‘হুমম।’
‘কারও জন্যে বানাচ্ছো, নাকি একাই খাবে?’
‘একাই খাবো।’
ও কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ছাড়লো না। তারপর আস্তে করে ছেড়ে দিল। ‘তোমার বোঝার কথা না, কিন্তু আমি সত্যিই বিপদে পড়েছি। আমি জানি না কী করবো।’
‘স্যরি, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না।’
‘কিছু টাকা পয়সারও ব্যাপার আছে।’
‘হুমম।’
‘ও আমার কাছে কিছু টাকা পায়।’ ও বললো। ‘আমি ওর থেকে ধার নিয়েছিলাম, নেওয়া উচিৎ হয়নি কিন্তু আমাকে নিতে হয়েছিলো।’ কিছুক্ষণ কোন জবাব দিলাম না। আমার চিন্তা স্প্যাগেটি রান্নার দিকে। ‘আমি স্যরি।’ বললাম, ‘কিন্তু আমার স্প্যাগেটি পুড়ে যাচ্ছে…’
ও হেসে ফেললো, ‘ওকে, বাই।’ বললো, ‘আমার পক্ষ থেকে তোমার স্প্যাগেটিকে হাই বলো। আশা করি রান্না ভালো হবে।’
‘হুমম, বাই।’
যখন ফোন রাখলাম ফ্লোরের উপর পড়ে থাকা আলোটা দু’এক ইঞ্চি সরে গেছে। আমি নিজেও সরে আবার রোদের নিচে শুয়ে পড়লাম, তারপর তাকিয়ে থাকলাম সিলিঙের দিকে।
*
যেসব স্প্যাগেটি অসীম সময় ধরে রান্না হতে থাকে তাদের নিয়ে ভাবা খুব বিষণ্ন, বিষণ্ন ব্যাপার। এখন আমার মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, সামান্য, আমি মেয়েটাকে কিছু বলিনি। হয়তো বলা উচিৎ ছিল। তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ভাবার কিছু নেই। খালি মাথার একটা মানুষ, যে নিজেকে শিল্পমনা ভাবে, যে ভালো কথা বলতে পারে কিন্তু তার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। মেয়েটার কথা শুনে মনে হয়েছে সে আসলেই টাকা ফেরৎ দিতে চায়। যে অবস্থাই হোক, প্রত্যেককে তার ধার ফিরিয়ে দিতে হয়।
মাঝে মাঝে ভাবি এরপর মেয়েটার কী হলো; গরম স্প্যাগেটির প্লেটের দিকে তাকালে ওর কথা মনে আসে। ফোন রেখে দেওয়ার পর কি সে আসলেই বিকেল সাড়ে চারটার ছায়ায় হারিয়ে গেছে? এর মানে কি আমিও এর জন্যে খানিকটা দায়ী? আমি অবশ্য চাই সবাই আমার অবস্থাটা বুঝুক। ঐ সময়টায় আমি কারো সাথে জড়াতে চাইনি। তাই আমি কেবল স্প্যাগেটি রান্না করে গেছি, পুরোপুরি একা, সেই বিশাল কড়াইটায়, যেটাতে একটা এ্যালসেশিয়ান এঁটে যায়।
*
ডিউরাম সেমোলিনা, স্বর্ণালী গমের গাছ, ইটালির মাঠে মাঠে মাথা দোলাচ্ছে। ভাবতে পারেন, ইটালিয়ানরা কতটা অবাক হতো যদি তারা জানতে পারতো, ১৯৭১ সালে তারা যা রপ্তানী করতো তা হলো নিঃসঙ্গতা?