আবদুর রবের ভ্রমণগদ্য: রোম যেমন একদিনে গড়ে ওঠেনি, তেমনি মনট্রিয়লও

এই নিয়ে চারবার মনট্রিয়লে আসা হলো। প্রত্যেকবার হাতে মাস খানেক সময় নিয়ে এসেছি যাতে মনের মতো ঘুরতে পারি। কিন্তু প্রতিবারই ফেরার সময় মনে হয় আহা যা দেখতে চেয়েছিলাম তার অনেকগুলোই ভালো করে দেখা হল না। সারাবছর এখানে নানারকম সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। অবস্থানগত দিক দিয়ে মনট্রিয়লের জুড়ি মেলা ভার। সেন্ট লরেন্ট আর আর অটোয়া নদীর মোহনায় এ এক অপূর্ব  নগরী । নিউ ইয়র্ক এর পর সব চেয়ে বেশী রেস্টুরেন্ট আছে মনট্রিয়লে। প্রায় সারা পৃথিবীর নানা পদের খাবার পাওয়া যায় এসব রেস্টুরেন্ট। মনট্রিয়ল স্টাইলের বেগেল কিংবা পাউটিন বা স্মোকড মিট দিয়ে বানানো হয় এই স্যন্ডউইচ। প্রায় আড়াইশ’ গ্রাম স্মোকড বীফ আর ব্রেড থাকে এক একটা স্যন্ডউইচে। এখানে এলে খেতে ভুলবেন না।

রোম যেমন একদিনে গড়ে ওঠেনি, তেমনি মনট্রিয়লও। এখানে রেয়েছে আট হাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাস। তবে আধুনিক মনট্রিয়লের যাত্রা শুরু প্রথম ইউরোপীয় জ্যাক কার্টিয়ের হাতে, ১৫৩৫ সালে। ঠিক এর সত্তর বছর পর স্যামুয়েল ডি চ্যামপ্লেইন এসে শুরু করেন ফার এর ব্যবসা। ১৬৪২ সালে কিছু ফ্রেঞ্চ নাগরিক এসে এখানে বসতি গড়ে তোলে। ভিলে মারে নাম দিয়ে প্রকৃত কলোনি প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন। অবশ্য এজন্য তাদেরকে এখানকার আদিবাসীদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে হয়। তবে ১৭০১ সালে তারা আদিবাসীদের সাথে সমঝোতা চুক্তিতে আসে। এরপর ১৭৬০ বৃটিশরা মনট্রিয়ল দখল করে নেয়। তখন মনট্রিয়লের জনসংখ্যা ছিল ৫০০০। আঠারো শতকের স্টান্ডার্ডে এই সংখ্যা কোনো অংশে কম ছিল না।

১৭৭৫ সালে আমেরিকা মনট্রিয়ল দখল করে। কিন্তু সাত মাসের মাথায় তারা ফিরে যায়। মনট্রিয়ল নগর হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৮৩২। আজকের মনট্রিয়ল যেন রূপকথার ভষ্মস্তুপের ভিতর থেকে উঠে আসা এক নগরী। নানা বিপর্যায় পার হয়ে আসতে হয়েছে এই সুন্দর নগরটিকে। ১৮৩২ সালে মনট্রিয়লে কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৭ সালে  আবার আরেক মহামারী আকারে দেখা দেয় টাইফাস। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় মনট্রিয়ল। এতসব বিপর্যয়ের পরও মনট্রিয়লের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। এই সময় মনট্রিয়লের জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় প্রায় ষাট হাজার। ১৯১৪ সাল নাগাদ তা বেড়ে  পাঁচ লাখ ।

শুধু জসংখ্যা নয় নানা অবকাঠামোও গড়ে উঠতে থাকে এখানে। ১৯৩০ সালে জ্যাক কার্টিয়ের ব্রিজের পর ১৯৩১ সালে মনট্রিয়ল বোটানিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা হয়। সান লাইফ ভবনের কাজ শেষ হয় এই সালে। অ্যাটওয়াটার মার্কেট চালু হয় ১৯৩৩ সালে। মাঝে ১৯৩০ সালে মনট্রিয়লে ভয়াবহ মন্দা দেখা দেয়। তবে তা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যেতে থাকে মনট্রিয়ল। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়  বিখ্যাত ভবন প্যালেস বোনাভেঞ্চার । ইতিমধ্যে ১৯৬৩ সালে প্যালেস ভারসাইলস শপিং মল, ১৯৬৬ সালে মেট্র সিস্টেম, ১৯৬৭ সালে ওয়ার্ল্ড এক্সপজিশন, ১৯৭২ সালে অলিম্পিক বিল্ডিং, ১৯৮৩ প্যালেস ডি কংগ্রেস এবং ১৯৯২ সালে ওয়ার্ল্ড  ট্রেড সেন্টার চালু হয়।

মনট্রিয়ল আজ কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। আর পৃথিবীতে ফরাসী ভাষায় কথা বলা পাঁচটা নগরীর একটা হল মনট্রিয়ল। প্যারিস প্রথম। ইউনেস্কো যেসব সিটিকে ডিজাইন সিটি বলে মন্ট্রিয়ল তার অন্যতম। কোবে, সাংহাই, সিউল, গ্রাজ, বার্লিন, বুৱেনস আইরেস এবং সেনজেন এই ক্যাটেগরিতে পড়ে।

উইন্টারে মনট্রিয়লে তাপ মাত্রা মাইনাসে নেমে আসে। ১৯৫৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারীতে সর্বনিম্ন মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এখানে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে শীতের সময় অতি শীত আর গরমের সময় অতি গরম  পড়ছে।

মন্ট্রিয়লের কুইন এলিজাবেথ হোটেলে থাকার সময় জন লেনন তার ‘Give peace a chance’ গানটি লেখেন।

মন্ট্রিয়ল যেন উৎসবের নগরী । মন্ট্রিয়লের দি জাজ ফেস্টভ্যাল, গ্রাফিতি ফেস্টভ্যাল, ম্যুরাল ফেস্টভ্যাল, ইগ্লু ফেস্টভ্যাল অত্যন্ত জনপ্রিয়।

 

মনট্রিয়ল সিটির অলিতে গলিতে দেখা যায় স্ট্রিট আর্ট – নানা রঙের ও আকৃতির ম্যুরাল আর গ্রাফিতি। বিশাল বিশাল এসব চিত্র না দেখলে মনট্রিয়লের আরবান আর্ট কালচার সম্পর্কে জানা থেকে যাবে অসম্পূর্ণ। পর্যটকদের জন্য এটা ‘মাস্ট সি’ বিষয় ।

সারা শহরে আছে বিশাল বিশাল দেওয়াল চিত্র। এগুলোর কোন কোনটা নয় তলা ভবন পর্যন্ত উচু। তবে সেন্ট লরেন্টে গেলে অনেকগুলো দেখা যায়। জুন মাসে যখন ম্যুরাল উৎসব হয় তখন তা সত্যি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। প্রতিটি ছবি গল্প বলে।ছবিগুলো ভালো করে দেখলে দর্শক নিজেও পেয়ে যান তার নিজের কোনো গল্প।

কোন ঋতু তা বিষয় নয়, প্রায় প্রতিদিনই উঠে আসছে একটা না একটা নতুন দেওয়ালচিত্র। এভাবেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার দেওয়ালচিত্র। এদিক দিয়ে বিচার করলে ফিলি (Fhilly) বা অন্যান্য ইউরোপীয় শহরের তুলনায় মনট্রিয়ল কোনো অংশে কম নয়। মনট্রিয়ল সিটি কর্তৃপক্ষ ষাট বছরেরও বেশী সময় ধরে স্ট্রিট আর্টের ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। তাই এসব দেওয়ালচিত্রগুলো গড়ে ওঠার পিছনে সরকারের ভূমিকা আছে।

কুইবেক সরকারের নিয়ম অনুযায়ী পাবিলিক বিল্ডিং প্রকল্পগুলোর ১ শতাংশতে দেওয়ালচিত্র থাকতে হবে। এই নীতি অনুসরণ করায় এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার দেওয়ালচিত্র গড়ে উঠেছে এখানে। বছরের প্রথম দিকে হয় Under Pressure শীর্ষক বার্ষিক গ্রাফিতি উৎসব যা প্রায় বিশ বছর ধরে চলে আসছে মনট্রিয়লে। স্ট্রিট আর্ট নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এধরনের কোনো অনুষ্ঠান নর্থ আমেরিকায় এটাই প্রথম।

এরপর আসে ম্যুরাল উৎসবের কথা। ১৯১২ সাল থেকে শুরু হয় এই উৎসব। দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে এই উৎসব। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে উৎসবে যোগ দিতে। সাধারণত প্লাটু মন্ট রয়েলের প্রাণকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।

তুরীয়’র গ্রাজুয়েশনের সময় আমরা প্রথম আসি মনট্রিয়লে। গ্রীষ্মে আসায় ফুলে ফুলে আর নানা উৎসবে মেতে উঠেছিল মনট্রিয়ল।

স্ট্রিট আর্টগুলো ছিল দারুণ। তখন থেকে ডাউন টাউনের প্রেমে পড়ে যাই। এরপর যতবার এসেছি ততবার বেবী আর আমি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে বেড়িয়েছি ডাউন টাউনে কিংবা ওল্ডপোর্ট এলাকায়। এবার এসেও কয়েকদিন ঘুরেছি আর স্ট্রিট আর্টের ছবি তুলেছি। আজকেও সারাদিন ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছি। তুরীয় ও বেবী আমাকে সাহায্য করেছে। দিন শেষে মন্ট্রিয়লের বিখ্যাত Schwartz’s থেকে স্মোকড মিট স্যান্ডুইচ খেয়ে বাসায় ফিরলাম।

 

এবার মন্ট্রিয়লে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল উইন্টার ও বড়দিনের উৎসব উদযাপন করা। তাই চার্চ পরিদর্শন দিয়ে শুরু। মন্ট্রিয়লের দুটি বিখ্যাত চার্চের একটি নটরড্যাম ব্যাসিলিকা মনট্রিয়ল। অন্যাটি সেন্ট জোসেফ ওরেটরি

বড়দিন উপলক্ষ্যে লো ঝলমল করছিল নটরড্যাম ব্যাসিলিকা মনট্রিয়ল । সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম আমরা। প্রচুর দর্শনার্থী। চার্চের ইনটেরিওরে গথিক আর্কিটেকচারের নাটকীয় উপস্থাপন। কানাডায় গথিক স্টাইলের চার্চ এটাই প্রথম। এ যেন ধর্ম, ও আর্ট আর্কিটেকচারের এক মিলিত প্রকাশ। ১৮২৪ সালে আমেরিকান আর্কিটেক্ট জেমস ও ডোনেলস এই চার্চের ডিজাইনে

গথিক রিভাইবালের চেষ্টা  করে দারুণ ফল পেলেন। তিনি ছিলেন আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্ট। কিন্তু নিজের ডিজাইন করা চার্চের এমন প্রেমে পড়লেন যে তিনি শেষ পর্যন্ত ক্যাথলিজমকে বরণ করে নিলেন।  এর নীল ছাদের নিচে এক সাথে ৪০০০ উপাসক এক সঙ্গে বসতে পারে। প্রতিবছর ১১মিলিয়ন দর্শনার্থী আসে এই চার্চটি দেখতে! এই চার্চে ঢোকার জন্য ফি দিতে হয়। বড়দের জন্য ৬ আর ছোটদের জন্য ৪ কানাডিয়ান ডলার।

উইকিপিডিয়া অনুযায়ী মাউন্ট রয়েলের উপরে অবস্থিত  সেন্ট জোসেফ ওরেটরি কানাডার সবচেয়ে বড় রোমান ক্যাথলিক চার্চ। একসাথে ১০০০০ লোক ধরে এবং আড়াই হাজার লোক বসার ব্যবস্থা আছে চার্চটিতে। দাবি করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডোম ওয়ালা চার্চগুলোর একটি হচ্ছে সেন্ট জোসেফ ওরেটরি।

ব্রাদার আন্দ্রের ব্রেন চাইল্ড হচ্ছে  এই সেন্ট জোসেফ ওরেটরি। ১৮৭০ সালে ব্রাদার হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁর একটা কাজ ছিল নটরডেম কলেজের দরোজায় দাঁড়িয়ে ছাত্র ও অভিবাবকদের স্বাগত জানানো। কাজটি তিনি আনন্দচিত্তেই করতেন। করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিনি অনেক অসুস্থ মানুষকে বলতে শুনেছেন  যে ব্রাদার আপনি আমাকে ভালো করে দিন। তিনি শুধরে দিয়ে বলতেন, আমি নয় কেবল সেন্ট যোসেফ তা করতে পারে। যদি তাঁর প্রতি বিশ্বাস থাকে তবে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন।

১৯০৪ সালে সেন্ট জোসেফ ওরেটরি উদ্বোধন করা হয়। ভোটিভ চ্যাপেলই এই চার্চের প্রাণ। এখানে ১০ হাজার মোমবাতি জ্বালানো হয় একসাথে এই বিশ্বাস থেকে যে এক একটি প্রজ্জলিত মোমবাতি এক একটি ভক্তের প্রার্থনা যা তাঁরা চলে গেলেও মোমশিখার মতো জ্বলতে থাকে।

বড়দিন উপলক্ষ্যে উভয় চার্চই  রঙিন সাজে সেজে উঠছিল।

 

এরপর একদিন গেলাম ইল্যুমি (ILLUMI)— উজ্জ্বল আলোর পৃথিবী দেখতে। এবার লাভালে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হল এই আলো উৎসব। তাপমাত্রা মাইনাস ১৩ তবু সন্ধ্যায় তুরীয় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে এলো এখানে। মিলিলিয়ন মিলিয়ন এলিডি লাইট দিয়ে সাতটা এনএফএল ফুটবল মাঠের সমান এলাকা জুড়ে এক আলোর ভূবন গড়ে তোলা হয়েছে।

তীব্র তুষারপাত উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নামে সেই মাঠে। বিভিন্ন ধরণের মনুমেন্টাল শব্দ আর আলোরমূর্তির  অপূর্ব শো। সহস্র রঙয়ের আলো ঝলমল এডভেঞ্চার দর্শকদের বিস্ময়ে  বিমূড় করে তোলে।

হাত বের করে ছবি তুলতে কষ্ট হচ্ছিল। ঝটপট কিছু ছবি তুলে হাত গুটিয়ে নিতে হয় হাত মোজার ভিতরে। কিছুক্ষণ পর হাত বের করে আবার ছবি তুলি। এইভাবে কয়েক রাউণ্ড ছবি তুলে তবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। তবে আমাদের ছেলে তূরীয়ও কিছু ছবি তুলে দিয়ে বেশ সাহায্য করেছিল। প্রতিবছর শীতে এই আলো উৎসবের আয়োজন  করা হয়। একটা প্রাইভেট কোম্পানি পিএনপিইল্যুমি এবার এই উৎসবের আয়োজন  করে অত্যন্ত সফলতার সাথে। তবে প্রবেশমূল্য বেশ চড়া। জনপ্রতি ২৫ ডলার।

গুড়ি গুড়ি তুষাড়পাতের ভিতর  সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম মন্ট-ট্রেম্বেলেন্ট-এর উদ্দেশ্যে। শীতে মন্ট-ট্রেম্বেলেন্ট যেন হয়ে ওঠে নর্থপোল, এস্কিমোদের রাজ্য। মট্রিয়লের উত্তর-পশ্চিমে লরেনশিয়ান মাউন্টেইনে অবস্থিত অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক পর্যটন নগরী। আয়তন ২৭৬ হেক্টর। ৯৬ টা ট্রেইল আছে এখানে। এর শতকরা ৫৩ ভাগ হল প্রাথমিক ও মধ্যমানের স্কি-প্লেয়ারদের উপযোগী। আর ৪৭ ভাগ দক্ষদের জন্য। মনট্রিয়ল থেকে আশি মাইল বা ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মন্ট হচ্ছে মাউন্টেন আর ট্রেম্বেলিং অর্থাৎ কম্পন শব্দ থেকে মন্ট-ট্রেম্বেলেন্ট এর উৎপত্তি। এখানকার আদি বাসিন্দারা মনে করতেন এই পাহাড়ের অভ্যন্তরে এক অপদেবতা থাকত । সে যখন রেগে যেত তখন সারা পাহাড় কাঁপত থরথর করে।

১৮৯৩ সালে কুইবেকের অধীনে তিনটি জাতীয় উদ্যান গড়ে তোলা হয় যার একটি হল মন্ট-ট্রেমম্বেলেন্ট।

১৯৩৮ সালে যোসেফ রিয়ান, টম হুইলার আর আর সাংবাদিক লোয়েল থমাস নামের অভিযাত্রী এখানে আসেন স্বর্ণের সন্ধানে। তিনজন উঠলেন মনট্রেম্বেলেন্ট পাহাড়ের শীর্ষে বা সামিটে। রিয়ান চারিদিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন এটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। শুধু একটাই সমস্যা। আর তা হল এই পাহাড়ের মাথায় ওঠা। আমাকে এর একটা বিহিত করতে হবে।

তারপর রিয়ান ১৯৩৯ সালে এখানে কিছু জমি কিনে প্রথমে চেয়ার লিফট বসালেন আর মন্ট-ট্রেম্বেলেন্ট লজ খুললেন পর্যটকদের থাকার জন্য। লজটি এখনও আছে। ১৯৫০ সালে রিয়ান মারা যাবার পর তার স্ত্রী লজটি পনের বছর ধরে চালাবার পর বিক্রি করে দেয় কিউবেকের তিনজন ব্যবসায়ীর কাছে।

ষাট ও সত্তুর দশকে আরও অনেক বিনিয়োগ আসে এখানকার পর্যটন খাতে। ১৯৯১ সালে মনট্রেম্বেলেন্ট কিনে নেয় ইন্ট্রাওয়েস্ট। এরা নর্থ আমেরিকায় আরো অনেকগুলি স্কি-রিসোর্টের মালিক। এরা ইউরোপিয়ন স্টাইলের আলপাইন ভিলেজের মত করে গড়ে তুলেছে মন্ট-ট্রেম্বেলেন্টকে।

২০০৯ সালে এখানে বড় বিনিয়োগ হয় মন-ট্রেম্বেলেন্ট ক্যাসিনো স্থাপনে। বর্তমানে মনট্রেম্বেলেন্ট স্কি, স্পা, অক্যাসিনো আর রেস্টুরেন্টের নগরী। পৃথিবীর সেরা স্কী রিসোর্টগুলো আছে এই নগরীতে।

ছয় তারিখে তুরীয় অফিসে যোগ দেবে। তাই আজ সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়া। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মের সময় প্রথম এসেছিলাম। তখনই ঠিক করেছিলাম। শীতের সময় এখানে আসতেই হবে। চার বছর বাদে আবার সে সুযোগ হল।

যেতে যেতে দেখলাম হালকা তুষার পড়ছে। মনে মনে ভাবলাম মন্ট-ট্রেম্বেলেণ্টে আজ জমে উঠবে স্কি’র আসর। হলোও তাই। প্রচুর লোক সমাগম। সবাই স্কি করার পোশাক পরে সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েছে। রেন্টেও নিচ্ছে। আমরা কেবলকারে চড়ে সামিটে গিয়ে নামলাম।

ক্ষণিকের জন্য হলেও আমরাও মিশে গেলাম সে আনন্দ যজ্ঞে। তারপর এক সময় সামিট থেকে নেমে গেলাম মন্ট-ট্রেম্বেলেন্ট লেকের ধারে। লেকের জল জমে বরফ হয়ে গেছে। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এক অপ্রার্থিব শ্বেতসৌন্দর্য। মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকি সেই সৌন্দর্য। মনে হল আর কি চাই? জীবন যেন হল পরিপূর্ণ।

মনে হচ্ছিল আরও থাকি। কিন্তু ফিরতে হবে। অতএব ছবি তুলে ফিরে আসি গাড়িতে।

 

আবদুর রব

কবি, অনুবাদক, অনলাইন ম্যাগাজিন সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদ।পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি।পৈত্রিক নিবাস যশোর। বর্তমান বসবাস ঢাকায়। একটি আন্তর্জাতিক কন্সাল্ট্যান্সি ফার্মে কর্মরত। শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু। এ পর্যন্ত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ছোটদের জন্য চিনা গল্পের ৩টি অনুবাদ গ্রন্থও আছে তাঁর। বেশকিছু ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন তিনি। বর্তমান ভ্রমণগদ্যটি লেখা হয়েছে তাঁর  মন্ট্রিয়ল সফরের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top