ঈভলিনের শহর ও অন্যান্য সম্পর্কগুলি

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

 

জগিং

সোনার পাতা গুঁড়িয়ে দেবার মুহূর্তে
পৃথিবীতে জলের ধারণা হলো।
সেই ভরসায়
তোমার চোখ থেকে চুলে তাকালাম।
এই প্রথম উড়তে
উড়তে
নাম না-জানা পাহাড়ে পাখি হয়ে আছো।
মেঘ থেকে মেঘে ঠোঁট দিয়ে খুঁচিয়ে
জড়ো করে রাখছো বরফ হয়ে থাকা জলগুলি।

 

পিকনিক

পিকনিক শেষে এগিয়ে আসলো ঈভলিন
কোয়ার্ক কোয়ার্ক শব্দের সাথে ইউ আর বিউটিফুল
অন্ধকারে একাকার চুল ও ঝর্ণা।
হঠাৎ গাড়ি ভেঙ্গে
ইউ আর বিউটিফুল গাইতে
গাইতে
যেভাবে পাটাতন থেকে লাফিয়ে পড়ল জেমস ব্লান্ড
সেই সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কোনো গানই দেখি নি।
ঈভলিন তো আরো নাদান।
হাসিমুখে ক্লান্ত চোখে
পেছনের মাফলার থেকে বের হওয়া
ধোঁয়ার পাল থেকে আস্তে আস্তে সরে গেল
সন্ধ্যাখামারের খরগোশ।

ডি -ট্যুর

নতুন বানানো স্টেশন
হলুদ দাগে এক দেশ থেকে আর এক দেশে যাওয়া
পর করার সীমানা খবরের কাগজে ক্রমশ
না-জাগা সূর্য।
স্টেশনে থাকা যাত্রী
টিকেট করা না-যাত্রী
আরো ধীর পায়ে অধীরে
ডি-ট্যুর করা পায়ের কাছে পাখি
বাঁধাহাস মার্বেল সিঁড়িগলি।
লাল নীল হারানো মোজা উন্নত নত শির
আকারের আড়ালে আরো নিরাকার
আরো ছায়া দেয়াল।
নিতম্ব অটো ট্র্যাম্পোলিন লাফিয়ে চলা হরিণ
এইসব দেখা রোজ রোজ
নতুন বানানো স্টেশন
আগের সুরত আর পায় না।

 

কমলা

হাসপাতাল থেকে অচেনা প্রতিবেশী
৩নং ওয়ার্ড থেকে ৯ নং ওয়ার্ডের পাজামা
পুল‌ ওভারের তাঁবু মেশিন
ভাড়া করা সিনেমা
রাত্রি শেষ না-হওয়ার হাইডওয়ে
নিঝুম নিরালা।
মাঝখানে শাদা পোশাকের ভাষা
ভাষাহীন যন্ত্র।
হঠাৎ
তাকিয়ে আছে কমলার ছিলকা
সবুজ রঙের রৌদ্র গলে আসছে রোগীটির চোখ থেকে
যে গাছে পাতা– তার সর্বনাশ শীর্ষে জেনে
একা থাকার ব্যথায় জানালা থেকে
এক টুকরো ক্যামেলিয়া ।
পরপারের ঠিকানা গুগল ম্যাপে আর হয় না।

 

রাত তিনটা

রাত্রি লিখে রাখে সবকিছু
এই খোলা ঠ্যাঙ ডানা জিন পরি
উড়াল
ঘাম থেকে শ্যানেলের বন জঙ্গল মহুয়া
জঙ্গলের মনি ও মুক্তা জমে যায়
লোম আর পিপাসায়।
ফলে
হাজারো অপেরা
লুকোনোর কিছুই নেই লুকিয়ে পড়ায়
সেনা ক্রমাগত গেরিলা
আসছে অন্য মুখেরা- আস্তে আস্তে
বন্ধনের ভার কাটাতাঁর পেরিয়ে
বর্বন ডিবানে মধ্যরাত্রির পরিখা।
তার সাথে
ভেসে থাকা ছায়া আর কায়া ধীর ওঠানামা
সমুদ্র থেকে সমুদ্রে কার বিজয়লেখা উড়ছে।

টেবিলের আয়নায় ভিক্টোরিয়ার ফেনায়
যারা ঝুলছে নক্ষত্রের ভাবনায়
তাদের হারিয়ে যাওয়া বাচ্চা শুয়ে আছে কোন
কোকাকোলার ছাদে।

 

কালো গাড়ি

শেষ রাইফেলের কার্তুজ নিয়ে
বেরিয়ে পড়ছে শত্রু
এস এম এস করো ভাড়া করা খুনি।
তার হলিডে বোটে সূর্যমাছগুলি
পুড়িয়ে মারো ফেলে যাওয়া রানীদের
শেষ রাবারের দানি।
দরোজা খুলে
তেরছা কোনো বীর ঢুকে পড়ছে আপেল বাগানে।
ধরো তাকে নিখোঁজ করে আনো
সেই অপরূপ ঘোড়ারা।
কারা থাকে– না থাকে সবকিছু
ঝেঁকে ধরছে ট্রা ট্রা ইন্ট্রানেটে।
আদম
খুন হওয়ার আগে আর একবার তাকায় উন্মুক্ত হাওয়া।
তার দাঁড়িয়ে পড়া ইঞ্জিন থেকে
গড়িয়ে পড়ছে কফিনের নীল আলো।

 

বালিলেখা

কিনারে ডোবা সূর্য না-ডোবা সূর্য
হাতে এক ও অনেকগুলি লালচে আকার
পড়ন্ত
পয়সা ও চাকতি ডাবের পানি।

এই মুখরিত বালি বালিলেখা
তার বুকে ছড়িয়ে পড়া
খাঁজ ভেঙ্গে ঘর পালানো কাঁকড়ারা
কামড় দেবে কি দেবে না
ফিশ আর চিপসের পোড়া গন্ধে
সেই নীল ছোট জামা না-থাকা জামা
সেই গোল বলের মতো ট্র্যাক করা
স্তনগুলি
কিভাবে সমুদ্র গিলছে!

 

বারবিকিউ

ওল্ড মগো টাউনে পোড়া মাংস মুখে দিতে দিতে
হরিণীরা আরো উজ্জ্বল।
তাদের ঘাড় বেঁকে
গাঢ় বনে সূর্য না আসলেও সকালগুলি হানা দিচ্ছে
বন্ধুদের বাথরুমে।
স্বপ্নে পাওয়া কাপড়
কাপড়ের আয়না থেকে বান্ধবীর নিপল!
আহা যারা স্বাদ পায় তারা
পথহারা জিরাফের দাগ দেখে
আফ্রিকার যায়।
সেখানে মা হওয়া বেবুনের
মাতৃথলিতে ইংরেজি ব্রেকফাস্ট।
হাত বদল করে যারা হাঁটছে তাদের অন্ধ পেরিয়ে
আরো ম্যাজিক জানালা খুলছে কয়লায় আগুনে।

দূরে
হারিয়ে যাওয়া একটি রোদের রঙ
আর একটির মতো হয় না।

 

মিউজিক

গান শুনতে শুনতে ধ্যান করছে ঈভলিন
ব্রেকফাস্ট বা ডিনারে মোরগের ঝুঁটিতে
গিটারের ভাষা শূন্যতায় শত শহীদে।
যত রঙ তত মুখ উড়ে
চেনা আর অচেনার গাঙচিলে।
ট্র্যাক থেকে
ডি-ট্র্যাকে গানে পাগল
দম মারা পাখি ও শিকারি।
ফুল ও ফলতো ছিল আগেই কারো বাগানে
এখন কান থেকে কানে মিউজিকে দোয়া করছে
চোখ বুঁজে- ইমামের ভঙ্গিতে।
সেই গানে কোন দরবেশ ফিরে আসছে
রাস্তা আর গাড়িতে।
গান শোনে নিরুদ্দেশ বিকেলবেলার মায়েরা
শিশুগুলি নাইবা ফুটল হাসপাতালে
ডেলিভারি মৌসুমে।

 

সবুজ ট্রেন

শীতট্রেন সবুজে এক চক্কর দুই চক্কর
হুর রে সেন্ট্রাল আর মিউজিয়ামে।
ঘুরে ঘুরে ভেতরে বিড়ালের
মিউ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দগুলি।
পাশে একাকি জলরাস্তা সেতারে
আর হোটেলে
মেয়েদের কফিনে যাদের হিংসা- তারাও নামছে।
শাদা মার্বেল হয়ে লাগেজ আর কটেজে
এই হলিডে ভ্রমণ এই শ্রমণের আশা
পাশাপাশি
কপাল ভেদ করে জেগে থাকা জেলখানা
যেমন যোগাযোগহীন প্রেম ঘরে ঘরে।

ঈভলিন জানে সব
তাই পাতাল ট্রেনের কাচ ভেঙ্গে
আরো পাতালে যেদিকে এশিয়া আফ্রিকায়
শান্তি চড়িয়ে ভাত ঝরছে চুলো থেকে
সেদিকে ঈভলিন গিটার বাজিয়ে শোনে-
শেষ আগুনের চিঁহিগুলি কোন মহাদেশের ঘোড়া!

২৫/০৫/২০১২

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top