ট্রান্সট্রোমারের কবিতা: পর্ব- ২

 

সমাপিকা সংগীত

ক্ষুদ্র একটা নোঙরের মতো আমি পৃথিবীর তলদেশ
দিয়ে হিঁচড়ে যাচ্ছি।
আমার যা প্রয়োজন নেই সে সবকিছুই আমার সঙ্গে আটকে যাচ্ছে।
অবসন্ন ক্ষোভ, উজ্জ্বল ইস্তফা।
জল্লাদেরা পাথর নিয়ে আসছে। ঈশ্বর বালিতে লিখছেন।

শুনসান সব ঘর।
চাঁদের আলোয় উড়াল দেবার জন্যে প্রস্তুত আসবাবপত্র।
ফাঁকা বর্মে ভরা একটি অরণ্যের মধ্যে দিয়ে আমি
ধীরে ধীরে আমার নিজের ভেতরে হাঁটতে থাকি।

…………………

[Robin Fulton অনূদিত  Postludium থেকে।]

 

হিমাঙ্কের নিচে

আমরা একটা পার্টিতে রয়েছি যেটা আমাদের ভালবাসে না। শেষমেশ পার্টিটা তার
মুখোশ খসিয়ে ফেলল এবং দেখাল সেটা কী: রেলওয়ের একটা শান্টিং স্টেশন।
কুয়াশার ভেতর হিম দানবগুলো লাইনের ওপর দাঁড়িয়েছিল। একটা চক গাড়িগুলোর
দরজায় হিজিবিজি এঁকে রেখেছে।

এটা অবশ্যই বলা ঠিক হবে না, কিন্তু এখানে বিপুল অবদমিত হিংস্রতা। সেইজন্যেই
এখানে খুঁটিনাঁটিগুলোও এত ভারি ভারি। আর সেইজন্যেই এখানে আরও যা রয়েছে
সেটা দেখাটা এত কঠিন: ঘরবাড়ির দেয়ালের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া, ঝিকিমিকি
মুখের অজ্ঞাত অরণ্যের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া একটা আলোবিড়াল, যে ঝিকিমিকি
মুখগুলি হলো অলিখিত একটা বাইবেলীয় উক্তি: “আমার কাছে আইসো, কারণ
আমিও তোমার মতোই দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ।”

কাল আমি অন্য একটা শহরে কাজকম্ম করব। মৃদু এক গুঞ্জনে আমি সকালের প্রহরের
ভেতর দিয়ে সেখানে ছুটে যাব, যে সকালটা হলো বিশাল একটা ঘননীল সিলিন্ডার।
বরফপ্রান্তরের উপর ঝুলে আছে কালপুরুষ। নিঃশব্দগুচ্ছে শিশুরা স্কুলবাসের অপেক্ষায়
দাঁড়িয়ে রয়েছে, যে শিশুদের জন্যে কেউই প্রার্থনা করে না। আলো আমাদের চুলের
মতো ধীরবর্ধমান।

………….
শান্টিং ইয়ার্ড: (মূল: växlingsbangård); রেলওয়ের সেই অংশ যেখানে গাড়ি বা ইঞ্জিনের লাইন পরিবর্তন বা পুনর্বিন্যাস করা হয়। ।
আলোবিড়াল: (SWE: Solkatt); lit.: sun cat; সূর্যের প্রতিফলিত আলোর উজ্জ্বল আলোকবিন্দু।

[Robert Bly অনূদিত  Below Freezing থেকে।]

 

ঝড়

হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ সেই পুরোনো
দৈত্যাকার ওক বৃক্ষটার সামনে এসে পড়ে, যে
ওক বৃক্ষটা হলো সেপ্টেম্বরের কালচে-সবুজ
সাগরদূর্গের সামনে মাইল মাইল বিস্তৃত মুকুটসহ
শিলীভূত এক মহাহরিণ।

উত্তুরে ঝড়। রোয়ানবেরি পাকার সময় হয়ে এল।
অন্ধকারে জেগে সে শোনে, ওক বৃক্ষের বহু উপরে
নিজ নিজ আস্তাবলের ভেতর তারকাপুঞ্জের
খুরাঘাত।

……………
রোয়ানবেরি: Rowanberry; লাল রঙের এক ধরনের ফল।

[Robert Bly অনূদিত  Storm থেকে]

 

বালাকিরভের স্বপ্ন (১৯০৫)

কালো গ্র্যান্ড পিয়ানোটা, চকচকে একটা মাকড়সা,
তার সুরজালের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল।

কনসার্ট হলের ভেতর একটা রাজ্য তৈরি হয়েছে
যেখানে পাথর শিশিরের চেয়ে ভারি নয়।

কিন্তু বালাকিরভ সংগীতের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন
এবং জারের শকটের একটা স্বপ্ন দেখতে লাগলেন।

সেটা নুড়িপাথরের ওপর দিয়ে সোজা কাকডাকা
অন্ধকারের ভেতর গড়িয়ে যাচ্ছিল।

একাকী তিনি শকটটার ভেতরে বসে বাইরে
তাকিয়ে ছিলেন,
আবার একইসাথে সেটার পাশাপাশি রাস্তার ওপর
দিয়েও দৌড়ুচ্ছিলেন।

তিনি জানতেন এই যাত্রাটা বহুকাল ধরে চলমান,
এবং তাঁর ঘড়িটা ঘণ্টা নয়, বছর প্রদর্শন করছিল।

সেখানে একটা ক্ষেতের ওপর একটা লাঙল পড়ে ছিল
এবং লাঙলটা ছিল ভূপাতিত একটা পাখি।

সেখানে একটা খাঁড়িতে একটা জাহাজ দাঁড়িয়ে ছিল,
বরফরুদ্ধ, নিস্তব্ধ, ডেকের ওপর লোকজন।

শকটটা বরফের ওপর দিয়ে সেখানে ছুটে গেল, আর তার
চাকাগুলো ঘুরতে ঘুরতে সিল্কের মতো শব্দ করছিল।

ছোটখাট একটা রণতরী: “সেভাস্তপোল”।
তিনি সেটার ওপরে। নাবিকেরা এগিয়ে এল।

“তুমি মরবে না যদি তুমি বাজাতে পারো।”
তারা তাঁকে অদ্ভুত একটা যন্ত্র দেখাল।

সেটা দেখতে অনেকটা টিউবা, বা একটা
ফোনোগ্রাফের মতো, বা অজানা কোনো যন্ত্রাংশের মতো।

ভয়ে আড়ষ্ট অসহায় তিনি বুঝলেন:
এই যন্ত্রটাই রণতরীটাকে চালায়।

তিনি সবচেয়ে কাছের নাবিকটার দিকে ফিরলেন,
হাত দিয়ে মরিয়া ইশারা করে আকুতি করলেন:

“আমার মতো ক্রুশ আঁকো, ক্রুশ আঁকো!”
নাবিকটা অন্ধের মতো বিষণ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল,

হাত দুটি প্রসারিত করে, মাথাটা নুইয়ে─
তিনি ঝুলে রইলেন যেন শূন্যে পেরেকবিদ্ধ।

ড্রামের ধ্বনি। ড্রামের ধ্বনি। করতালি!
বালাকিরভ তাঁর স্বপ্ন থেকে জেগে উঠলেন।

সমস্ত হলজুড়ে তখন করতালির ডানার ঝাপট।
গ্রান্ড পিয়ানোয় বসা লোকটাকে তিনি উঠে দাঁড়াতে দেখলেন।

বাইরের রাস্তাগুলো তখন ধর্মঘটহেতু অন্ধকার।
শকটগুলো দ্রুত অন্ধকারের ভেতর গড়িয়ে যাচ্ছিল।

……………
বালাকিরভ: Mily Balakirev (1837-1910), রাশান কম্পোজার, পিয়ানিস্ট। (এই
কবিতাটি বালাকিরভকে নিয়ে দেখা কবির একটি স্বপ্নের ভিত্তিতে রচিত। ১৯০৫ সালের
রুশ বিপ্লবের পটভূমিতে। ‘সেভাস্তপোল’ রাশিয়ার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ, যেটি ঐ বছর
বিদ্রোহে অংশ নেয়। ধর্মঘট ও অন্ধকারের ইঙ্গিত সেই সময়কার শ্রমিক আন্দোলনের দিকে।)
শকট: ‘droshky’; ‘দ্রস্কি’ হলো রাশিয়ায় আগেকার দিনে ব্যবহৃত চার-চাকার ছাদখোলা
ঘোড়ার গাড়ি।
টিউবা: tuba; তাম্রনির্মিত বাদ্যযন্ত্রবিশেষ।
ফোনোগ্রাফ: phonograph; গ্রামোফোন।

[Robin Fulton অনূদিত Balakirev’s Dream (1905) থেকে।]

 

জেব্রা ক্রসিং

আমার চোখে বরফের ঝাপটা এসে লাগছিল আর
চোখের জলের ক্যালাইডোস্কোপে সূর্যেরা নাচানাচি করছিল,
যখন আমি রাস্তাটা পার হচ্ছিলাম, যে রাস্তাটা বহুকাল ধরে
আমাকে অনুসরণ করে আসছে, যে রাস্তায় ডোবাগুলো
থেকে গ্রীনল্যান্ডের গ্রীষ্ম ঝলমল করে।

রাস্তার সমস্ত শক্তিটা আমার চারপাশে জড়ো হচ্ছিল,
যে শক্তিটা কিছুই মনে রাখে না এবং কিছুই চায় না।
যানপ্রবাহের বহু নিচে, মাটির গভীরে, অনাগত অরণ্য
হাজার বছর ধরে স্থিরভাবে অপেক্ষমাণ।

মনে হলো যেন রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছে আমাকে।
তার দৃষ্টিটা এতই ক্ষীণ যে খোদ সূর্যটা অন্ধকার মহাশূন্যে
একটা ধূসর গোলকে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এই মুহূর্তে আমি জ্বলজ্বল করছি! রাস্তাটা দেখছে আমাকে।

……………
ক্যালাইডোস্কোপ: kaleidoscope; দুই বা ততোধিক আয়নার সাহায্যে তৈরি একটি
অপটিক্যাল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যে প্রতিবিম্বের সাহায্যে বহুবিধ নকশা সৃষ্টি হয়।

[Robin Fulton অনূদিত  The Crossing-Place থেকে।]

 

উথলে আসে আলো

জানালার বাইরে বসন্তের দীর্ঘ জন্তুটা
রোদ্দুরের স্বচ্ছ এক ড্রাগন,
অন্তহীন এক লোকাল ট্রেনের মতো ধাবমান─
আমরা কখনও তার মুণ্ডটা দেখি নাই।

তটরেখার ভিলাগুলো এক পাশে সরে সরে যাচ্ছে
এবং তারা কাঁকড়ার মতো গর্বিত।
রোদ্দুরে মূর্তিগুলোর চোখ পিটপিট করে।

মহাশুন্যের উন্মত্ত অগ্নিসমুদ্র
একটা কোমল ছোঁয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে।
ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে।

……………

[Robin Fulton অনূদিত The Light Streams In থেকে।]

 

চিঠির উত্তর

নিচের ড্রয়ারে একটা চিঠি দেখতে পেলাম যেটা প্রথমবার এসেছিল
ছাব্বিশ বছর আগে। আতঙ্কের একটা চিঠি, যেটা এই দ্বিতীয়বারের মতো
এসেও সমানে নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে।

একটি বাড়ির পাঁচটি জানালা; তার চারটাতে উজ্জ্বল স্থির দিন ঝলমল
করছে। পঞ্চমটাতে ঘোর আকাশ, বজ্র এবং ঝড়। আমি পঞ্চম জানালাটির
কাছে দাঁড়াই। চিঠি।

কখনও কখনও মঙ্গলবার আর বুধবারের মধ্যে একটা অতল গহ্বর বিস্তৃত
হয়ে থাকে, কিন্তু ছাব্বিশটি বছর মুহূর্তেই অতিক্রম করা যেতে পারে।
সময় কোনো সরলরেখা নয়, সেটা মূলত একটা গোলকধাঁধা। এবং কেউ
যদি দেয়ালের ঠিক ঠিক জায়গাটায় নিজেকে চেপে ধরে, তাহলে সে
দ্রুতগামী পদক্ষেপ এবং কণ্ঠস্বর শুনতে পাবে, অন্য পারে তার চলে যাবার
শব্দটাও শুনতে পাবে।

চিঠিটার কি কোনো উত্তর দেওয়া হয়েছিল? মনে পড়ছে না, সে বহুকাল
আগের কথা। সাগরের অগণিত চৌকাঠ নিরন্তর ভেসে চলেছে। এক
অগাস্টরাত্রির ভেজা ঘাসের ভেতরকার ব্যাঙটির মতো হৃদয় মুহূর্তে মুহূর্তে
লাফিয়ে উঠছে।

উত্তর না দেওয়া চিঠিগুলোর স্তূপ উঁচু হতে থাকে, যেন অলক মেঘের
ঝড়ের পূর্বাভাস। তারা সূর্যরশ্মিকে ম্লান করে দেয়। একদিন আমি উত্তর
দেবো। একদিন যখন আমি মৃত এবং শেষমেশ সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে
পারব। বা এখান থেকে এতটাই দূরে থাকব যে আবার নিজেকে খুঁজে পাবো।
যখন সদ্য আগত আমি হাঁটব এই বিশাল শহরে, ১২৫ নম্বর স্ট্রিটে, নৃত্যপর
আবর্জনার ঝোড়ো রাস্তায়। যে আমি ঘুরে বেড়াতে আর জনতার মধ্যে
হারিয়ে যেতে ভালবাসি, অসীম লেখালিখির ভেতরে বড় হাতের একটা ‘T’।

…………..
অলক মেঘ: উঁচু আকাশে পালকের মতো নরম হালকা মেঘ।

[Göran Malmqvist অনূদিত  Reply to a Letter থেকে।]

 

ভোরের পন্থা

কালো পিঠের শঙ্খচিল, সূর্যসারথী এক,
ধরে আছে তার পথ।
তার নিচে জলরাশি।
পৃথিবীটা এখনও জলের ভিতরে বহুরঙা একটা
পাথরের মতো ঘুমিয়ে রয়েছে।
দুর্বোধ্য দিন। দিনগুলি─
আজটেক চিত্রলিপির মতো!

সংগীত। এবং আমি সেই সংগীতের
গোবেলাঁ বুননে আটকে গিয়ে উত্তোলিতহস্ত হয়ে
দাঁড়িয়ে আছি─লোকশিল্পের একটা
চরিত্রের মতো।

………..
আজটেক চিত্রলিপি: Aztec Hieroglyphs.
গোবেলাঁ বুনন: gobelin tapestry. gobelin একটি বিখ্যাত তাঁতশিল্পের নাম
(Les Gobelins manufactory), যারা রাজকীয় ট্যাপেস্ট্রি তৈরি করত।

[Robin Fulton অনূদিত  Morning Approach থেকে।]

 

রেললাইন

রাত দুটো: চন্দ্রালোক। প্রান্তরের মাঝখানে ট্রেনটা থেমে
গেছে। বহুদূরের একটা শহরের আলোকবিন্দুগুলি শীতলভাবে
দিগন্তে ঝিকমিক করছিল।

যেমন লোকেরা যখন তাদের স্বপ্নের এমন গভীরে চলে যায় যে
আবার নিজের ঘরে ফিরে আসার পর সেই জায়গাটার কথা
আর কিছুতেই মনে করতে পারে না।

বা কেউ যখন এমন গভীর অসুখে পড়ে যে তার সমস্ত
ফেলে আসা দিনগুলো দিগন্তের শীতল, ক্ষীণ কিছু ঝিকমিকে
বিন্দুর একটা ঝাঁকে পরিণত হয়।

ট্রেনটা পুরোপুরি স্থির হয়ে আছে।
রাত দুটো: তীব্র চন্দ্রালোক, গুটিকয় নক্ষত্র।

…………
[May Swenson অনূদিত  Tracks থেকে।]

 

ঋজুকায়া

মুহূর্তের মনোযোগে আমি মুরগিটাকে ধরে ফেললাম, তারপর সেটাকে হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে রইলাম। অদ্ভুত ব্যাপার, সেটাকে ঠিক জীবন্ত মনে হচ্ছিল না: শক্ত, শুষ্ক, সাদা
পালকে সজ্জিত একটা ‘প্রবীণার হ্যাট’, যেটা চিৎকার করে ১৯১২ সালের সত্যোচ্চারণ
করছিল। বাতাসে বজ্র ঝুলছিল। মানুষগুলোকে আর চেনা যায় না এরকম খুব পুরোনো
একটা ফটো অ্যালবাম খুললে যেরকম গন্ধ বেরোয়, তক্তাগুলো থেকে সেরকম
একটা গন্ধ আসছিল।

মুরগিটাকে আমি তার বেড়ার ভিতরে নিয়ে ছেড়ে দিলাম। সে হঠাৎ খুব জীবন্ত হয়ে
উঠল, নিজেকে চিনতে পারল, এবং নিয়মানুযায়ী ছুট দিল। মুরগির খামারটা বিধিনিষেধে
পরিপূর্ণ। কিন্তু তার বাইরের পৃথিবীটা ভালবাসা আর অদম্য মনোবলে ভরা। অর্ধেকটা
সবুজে ছাওয়া একটা নিচু পাথরের দেয়াল। গোধূলির সময় পাথরগুলো তাদের নির্মাতা
হাতগুলোর শতবর্ষ-প্রাচীন উষ্ণতা থেকে মৃদু মৃদু জ্বলতে শুরু করে।

শীতকালটা খুব দুরূহ ছিল কিন্তু এখন গ্রীষ্মকাল এবং ধরণী আমাদেরকে সোজা হয়ে
উঠতে বলছে। স্বাধীন কিন্তু সতর্ক, যেমন কেউ যখন একটা সরু নৌকার ওপরে দাঁড়িয়ে
আছে। আফ্রিকার একটা স্মৃতি মনে পড়ল: শরি নদীর তীর: অনেক নৌকা, খুব বন্ধুসুলভ
একটা আবহ, দুই গালে সমান্তরাল তিনটে কাটা দাগ নিয়ে প্রায় নীল-কালো সব
লোকজন (সারা উপজাতি)। কুচকুচে কালো কাঠের একটা ডিঙি আমাকে তার
ওপরে উঠতে বলছে। সেটা ছিল আশ্চর্যরকম টলমলে, এমনকী যখন আমি উবু হয়ে
আছি তখনও। ভারসাম্যের একটা খেলা। হৃদয়টা যদি তোমার বাম দিকে থাকে, তাহলে
তোমার মাথাটা সামান্য ডান দিকে কাত করতে হবে, পকেটে কিছু থাকা চলবে না,
বড় কোনো অঙ্গভঙ্গি চলবে না, সমস্ত বাগাড়ম্বর পিছনে ফেলে আসতে হবে।
মোট কথা: বাগাড়ম্বর এখানে অসম্ভব। ডিঙিটা ভেসে যাচ্ছে জলের ওপর।

………….
অদম্য মনোবল: sisu; ফিনিশ ভাষায় এক ধরনের অন্তর্র্নিহিত সাহস আর মানসিক দৃঢ়তা।
শরি নদী: Chari; মধ্য আফ্রিকার একটি নদী।
সারা উপজাতি: SARA tribe; মধ্য সুদানীয় একটি জাতিগোষ্ঠি।

[Robert Bly অনূদিত Standing Up থেকে।]

 

নান্নু মাহবুব

জন্ম: ১১ জুন, ১৯৬৪, যশোর। লেখালেখির শুরু ৮০’র দশকে।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ: রাত্রিকালীন ডাকঘর (প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫)
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ: পুনরুত্থিত শহর (প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৫)
তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ: আজ কী ফুল ফুটিয়েছো, অরণ্য? (প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)

প্রতিভাস, কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ইউ জী কৃষ্ণমূর্তির
সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৪টি অনূদিত গ্রন্থ:মাইন্ড ইজ আ মিথ, নো ওয়ে আউট, থট ইজ
ইয়োর এনিমি, ও মিস্টিক অব এনলাইটেনমেন্ট।

 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top