নান্নু মাহবুব
মন্দ্রপুরাণ
শিশুটি লাফ দিয়া রাজার কোল হইতে আমার কোলে চলিয়া
আসিল। আমি একটু সরিয়া দাঁড়াইলাম। পুরোহিত হাসিলেন,
কহিলেন, ‘অভিজ্ঞতা কি পাথর যে উহা লাভ করিবেন?’
তখন চারিদিক হইতে ইস্টক নিক্ষেপ শুরু হইল। তবে ইস্টকগুলি
কাছে আসিবামাত্র তুষারের মণ্ডের ন্যায় বিদীর্ণ হইয়া পেঁজা তুলার
ন্যায় উড়িতে লাগিল। ভারি ভারি বর্শার আঘাতে মৃত্তিকা মুহুর্মুহু
দুলিয়া উঠিল। রাজা পুনর্বার ক্রুদ্ধ হইলেন। তাহার রাজ্যের
অনাচারে তিনি নিজেই বিস্মিত হইলেন।
পুরোহিত ঠা ঠা করিয়া হাসিয়া বলিলেন, ‘ঈশ্বরের বিধান কখনো
লঙ্ঘন করা যায় না। ইহাই ঈশ্বরের বিধান।’
শিশুটি একবার আমার দিকে, একবার আর-সকলের দিকে
তাকাইল। তাহার দুইচোখে একঝলক প্রবল কৌতুক খেলিয়া
গেল।
ধর্মতলা
কাকতাড়ুয়া মিলে যাচ্ছে উল্কির সঙ্গে, নৌকাগুলো মিলে যাচ্ছে
ঘূর্ণির সঙ্গে, দোতারা মিলে যাচ্ছে বাতাসের সঙ্গে।
থোকা থোকা জোনাকির সাথে তুড়ি দিয়ে বাঁশবন অকস্মাৎ উধাও
হয়ে গেল। সেইখানে হিমশীতল এক বাড়ি, পুনর্বার রক্তকাণ্ডের
জন্যে কেবলই নিরিবিলি অপেক্ষায় থাকে। তাল তাল জ্যোৎস্না
গড়িয়ে যায় মধ্যযামের নিশুতিতে। জ্যোৎস্না আর ছাতিমের মিলিত
সৌরভে সয়লাব অন্দর আর আঙিনা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার
আগেই বুড়ির ঘরবাড়ি আবার আযানের ছদ্মবেশ পরে নেয়,
নিমগ্নতার ভান করে নিস্পন্দ তলিয়ে যায়।
কী কী অঞ্জলি এনেছিস?
বাসকপাতার ফুল, বনশটির তোড়া, ক্ষুদে ক্ষুদে আত্মাহুতি।
‘আমরাও একদিন…’ এই বলে ছেলে তার ক্ষীণ দুই বাহু মেলে
উড়ে গেল সবুজ ধানক্ষেতের উপর দিয়ে। সবুজ দোলনচাপার
ঝাড় থেকে বেরিয়ে এলো সিরসির পতঙ্গ এক। আতসকাচের ভুল
বেয়ে উঠে এলো ঊর্ধ্বমুখি ডগায়।
নিরীক্ষণে নক্ষত্র উঁকি দেয়। দূরে শুকতারা। মায়াবি পথঘাট।
আমাদের ভেলায় আর কারো জায়গা হবে না, শুধু এক
সবুজসোনালি সাপ দোল খায়, রশ্মি ছড়ায়, রঙধনু…।
একাকার নদী থেকে উঠে আসে বাতাসের কারসাজি, ভ্রম আর
মাছের ঝিলিক…