ধা রা বা হি ক আত্মজীবনী: মায়াপারাবার (পর্ব-২)

পাপড়ি রহমান

আব্বাকে নিয়ে ভিন্ন হতে চাই

রোজের গরুর দুধ আমাকে বেশ ভরসা দিত। বাসায় আর কোনো খাবার না থাক দুধটা যে থাকবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম।অথচ দুধের যে দাম দিতে হয়-মাস কাবারে আব্বাকে এক থোক টাকা গুনতে হয়, এ নিয়ে কিন্তু আমার ভাবনা হয়নি!বা ভাবনা করার মতো বয়স বা বুদ্ধি ছিলনা।

প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার সময় আব্বাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। কারন আমি কিছুতেই আব্বাকে অফিসে যেতে দিতে চাইতাম না।আব্বা শার্ট-প্যান্ট পরলেই আমি তুমুল কান্না জুড়ে দিতাম।আব্বা কেন আমাকে ফেলে কোথাও যাবে তা ভাবতেই পারতাম না!(অথচ আব্বাকে ছাড়া তো দিব্যি দশ বছর বেঁচে আছি। আব্বা মাটির তলায় ঘুমুচ্ছেন আর আমি মাটির উপরে জেগে আছি! কি নির্লজ্জ আমি!আব্বাকে ছাড়া কিভাবে বেঁচে আছি?)
আব্বাকে আমি অফিসে যেতে দিব না। আব্বা আমাকে বলতেন
‘অফিসে না গেলে খাবি কি?’
আমি চট করে উত্তর দিতাম
‘কেন দুধ খাবো।‘

আমার কথা শুনে আব্বা হাসতেন। আমাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন। তারপর আমাকে লুকিয়ে অফিসে চলে যেতেন।

তা ইঁদুরছানাটিকে বাসায় আনার পর আমার কাছে সব কেমন যেন গণ্ডগোল গণ্ডগোল লাগে। সে ট্যাঁ ট্যাঁ করে কাঁদে। আবার বেতের চেয়ারে বসে বাবু হয়ে হাগুমুতু করে।তাকে কত মানুষজন দেখতে আসে। আবার রাজ্যির জিনিসপত্র নিয়ে আসে!কাপড়-চোপড়,আংটি, চেইন,দুধের বোতল,মশারি আরো কত কি!তার জন্য কেউ

খেলনা কিনে আনলে আমার খুব মন খারাপ হয়। ওর এত কিছু আর আমার মাত্র একটা দুইটা! ওর চারটা আংটি আর আমার মাত্র দুইটা! আমার কান্নার জ্বালায় আব্বা নিউমার্কেট থেকে আরেকটা আংটি কিনে দিলেন আমায়।
আমি লালচে মানুষের আদরের বহর দেখে আব্বাকে একদিন বললাম
‘আব্বা ওদের আলাদা করে দাও’
আব্বা হেসে ফেলে বললেন
‘আলাদা মানে কি ভিন্ন করে দেব?’
আমি মাথা নাড়লাম।
আব্বা বললো ‘আলাদা করে দিলে ওরা খাবে কি?’
আমি ফের চট করে বললাম
‘কেন দুধ খাবে’

হয়তো আমার কাছে বিষয়টি এমন ছিল ওরা খালি দুধ খাবে, আর আব্বা যে রাজ্যির মজার মজার খাবার-দাবার আনেন সেসব আমি আর আব্বা খাবো।

ওরা খালি দুধ খাবে শুনে আব্বা হো হো করে হাসেন। কিন্তু ওদের আর ভিন্ন করে দেননা। আমিও ভুলে যাই ওদের ভিন্ন করার কথা। আমিও গোয়ালার রোজের দুধ খাই। ওরাও আব্বার আনা সব খাবার খায়।ফলে আমাদের পরিবার অভিন্ন রইল…।

 

ছেলেধরার ডাক পেলাম !

‘ছেলেধরারা’ প্রায়ই নাকি বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়-একথা আব্বা-আম্মা প্রায়ই বলেন। তারা নাকি বাচ্চাদের ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে!নইলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়!চোখ উপড়ে, হাত-পা ভেঙ্গে ভিক্ষা করার জন্য রাস্তায় বসিয়ে দেয়।‘ছেলেধরার’ গল্প আব্বা-আম্মার কাছে শুনে ভাবতাম আমাকে কেউ ধরবে না।কারণ আমি তো মেয়ে। এখানে তো ‘মেয়েধরার’ কথা কেউ বলেনা।কিন্তু আব্বা-আম্মা তবুও সাবধান করতেন–
‘অপরিচিত কেউ ডাকলে কাছে যাবে না, বুঝলা’
‘খবরদার, কোনো অচেনা মানুষের কাছ থেকে কিছু খাবা না, বুঝলা?’
ছেলেধরারা নাকি বাচ্চাদের গায়ে সোনার গয়না দেখলে তাকে কিছুতেই নিস্তার দেয় না। এদিকে আমি আছি বিপদে।আম্মা নানাভাইকে দিয়ে আমার জন্য গলার হার বানিয়ে এনেছেন। এই হার নিয়েও কাহিনীর অন্ত নাই! যতদিন নানাভাই হার বানিয়ে আনেননি-দাদজান আমাকে ক্ষেপিয়ে একশেষ করেছেন।
দাদার মুখে এক ছবক–
‘তোমার নানা তো ধামরাইয়ের জোলা।জোলাগো কি বুদ্ধি আক্কেল আছে নাকি? তোমার হার বানানোর টাকা দিয়ে সে দেখগা কদমা কিনা খাইছে।‘

শুনে আমি কত যে কান্নাকাটি করেছি! আমার নানাভাই এত খারাপ! একেতো সে তাঁতি তার উপর আমার হার বানানো টাকায় কদমাও কিনে খেয়ে ফেলেছে!হায়!আমার হারের কি হবে? কিন্তু দাদাজানের কথা মিথ্যা প্রমাণ করে নানাভাই ঠিক ঠিকই আমার হার নিয়ে এলেন। সুন্দর গোলাপী পাতলা কাগজে মোড়ানো এক ছড়া সোনার হার!হারের গোল লকেটের মাঝখানে আমার নাম লিখা ’পাপড়ী’। আমি তখনো ইশকুলে যাইনা, লেখা-পড়া জানিনা, কিন্তু নানাভাই দেখিয়ে দিয়েছেন আমার নাম আছে ওতে। সেই থেকে আমি গলায় পরে আছি সোনার হার। পরবর্তীতে সোনারুদের লেখা ভুল বানানে নিজের নাম ‘পাপড়ী’ লিখেছি ম্যালা দিন। আজও সোনারুদের ভুল বানানেই চাচা আমাকে চিঠি লিখেন।

আমি সোনার হার পরার পর আব্বা আরও সতর্ক। বললেন ছেলেধরাদের হাতে রুমাল থাকে। আর সেই রুমাল নাকে ধরলেই বাচ্চারা অজ্ঞান হয়ে যায়। সাবধান করলেন গলায় হার পরে আমি যেন কিছুতেই বাইরে না যাই।

একদিন দুপুরের দিকে আমি উদলা গায়ে বাসার গেইটে দাঁড়িয়ে আছি-হঠাৎ দেখি লম্বা-ঢ্যাঙা মতো একটা লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।তার পরণে কালো প্যান্ট আর চেক শার্ট।আমাকে দেখে চাপা গলায় বলল–
‘এই খুকী শোনো, এদিকে শুনে যাও একটু’
আমি ভাবছি যাবো কি যাবো না, কিন্তু এই মানুষকে তো আমি চিনিনা। তাকিয়ে দেখি তার হাতের ভেতর লাল রঙের রুমাল। আরে! আব্বা না আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিল? এইতো সেই ছেলেধরা। আজ কি সে ছেলেদের না ধরে মেয়েদের ধরতে এসেছে? নইলে আমায় কেন ডাকছে?
লোকটা ফের মিনমিনিয়ে ডাকে–
‘এই খুকী, শুনে যাও।ডাকতেছি শোনোনা কেন?’
এবার আমি ভয়ে কেঁপে উঠি।ভোঁ দৌড়ে বাসায় ঢুকেই ঝাঁপিয়ে পড়ি দিদির পিঠে।দিদি স্টোভে রান্না করছেন। চমকে বলেন-
‘কি হইছে? কাঁপতেছস ক্যান?’
‘দিদি ছেলেধরা আমারে ধরতে আসছে’
দিদির রান্না মাথায় ওঠে-
‘কই, চলতো দেখি’
দিদি দ্রুত গেইটে গিয়ে দাঁড়ান আর আঁতিপাতি করে খোঁজেন-
‘কই কাউরে তো দেখি না।কেরা তোরে ডাকে?’
আমি অবাক হয়ে দেখি সত্যি লোকটা নেই!পলকেই যেন হাওয়া হয়ে গেছে!
আমাকে কোলে তুলে নিয়ে পানের খুশবু ছুটিয়ে বলেন-
‘কই ছেলেধরা? তুমি বুঝলা কেমনে যে সে ছেলেধরা?’
‘আমারে যে ডাকলো! আর তার হাতে লাল রুমাল ছিল’
দিদি পান খাওয়া ঠোঁটে আমার গালে চুমু দিয়ে বলেন
‘বইনে কেউ ডাকলে কিন্তু যাইবা না, বুঝলা?’
আমি ততক্ষণে দিদির স্তন নিয়ে খেলতে শুরু করেছি…।

 

এই সেই ঘাট সই, এই সেই জল
এই সেই ছায়াতল, বকুল-হিজল…

আব্বা হঠাৎ করেই আমাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। ঢাকা তখন ক্রমে আন্দোলনে উত্তাল হতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে গণ অভ্যুত্থান।চলছে নানান মিছিল মিটিং। আব্বা চাইলেন ঢাকা থেকে সরে আমরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকি। দাদাজান/দিদির কাছাকাছি থাকি।
বাংলার মানুষ চাইছে একটা যুদ্ধ। নিজেদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ। চাইছে নিজেদের স্বাধীন ভূখণ্ড-আমার বাংলাদেশ!
এসবই আমার বড় হয়ে জানা।

গ্রামের বাড়িতে আসতেই ঢাকা শহর, যে শহরে আমার জন্ম- তা কেন যেন আমার কাছে খুব আবছা হয়ে গেল! এবং সেই থেকে ঢাকা আর আমার কাছে কোনোদিন আপন হতে পারে নাই।

আমাদের গ্রামের বাড়িতে তিন/চার ঘর শরিক। আর এত বড় বাড়ি যে, চোখের দৃষ্টি মেললে শেষ সীমানা দেখা যায় না! আমাদের দুইটা পুকুর। আর বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে গেছে মস্ত খাল। খাল চলে যায় পুকুরের মাঝ দিয়ে। পুকুরের অন্য পাশেই জমিদার বাড়ি।

খালের ধারে বকুল গাছ। ঝাকড়া-তরতাজা বকুল। পাশে প্রায় ন্যাড়া হিজল আর বইন্যা গাছ। বইন্যা দেখতে কদবেলের মতো। ঢুস ঢুস করে পানিতে পড়ে। আর পচে উঠলে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

বাড়ির সামনে যে বয়ে যাওয়া খাল, তার এমন অদ্ভু্ত রূপ! এই খাল বাইস্যা মাসে জলে থইথই আর উইন্যা মাসে এতে গভীর খাঁদ! উইন্যা মাসে এই গভীর খাঁদে আমাদের খেলাধুলা চলে। খাঁদের ভেতর লাফিয়ে আমরা খেলি কুম্ভির-কুম্ভির। একজন কেউ কুমীর হয় আর সে আমাদের হা করে খেতে আসে। আমরা সজোরে দৌড়াই আর সমস্বরে বলি–
কুম্ভীর তর গাঙে নাইমাছি
কুম্ভীর তর গাঙে নাইমাছি…

এই কুম্ভীর গাঙে নামতে না নামতেই একদিন ভোরবেলায় দেখি অন্য রূপ! একেবারে অপরূপ দৃশ্য! খালের মাঝ দিয়ে তিরতির করে জল বইছে! ঠিক চার আঙ্গুল সমান এই জলের ধারা। তারপর তা প্রতিদিন বাড়তে থাকতো। নতুন জলের ধারায় ভেসে আসত রঙিন কাপড় পরা পুঁটি মাছের ঝাঁক। একেবারে গিন্দিগিন্দি মলা, ঢেলা, চাপিলা।  দারকিনা। কাকিলা। আর প্রতিদিল ফুলতে থাকতো জল;জলের সাথে মাছ! জল বিনে মীন, আর মীনহীন জীবন ভাবাই যেত না।

জল বাড়তে বাড়তে খালের এমন রূপ যেন কোনো নদী নাকি সমুদ্দুর! আমরা ভাবতাম এই বুঝি খাল থেকে উঠে আসছে কোনো জলকন্যা! দিদির কাছে শুনতাম এই খাল দিয়ে শিশু (শুশুক)ভেসে যায়। শিশু নাকি হঠাৎ করেই তার পাছা জলের উপর তুলে ধরে। এই খাল দিয়েই ভেসে চলে যায় ধান বোঝাই নৌকা গয়না। ভেসে যায় কোষা, ডিঙি। কখনো পানসি নাও। পানসি বা বড় কোনো গয়না আসতে দেখলেই আমরা সার বেধে খাল পারে দাঁড়িয়ে যেতাম। আর বড়দের কাছ থেকে শোনা শ্লোক বলতাম–
পানসি নাও পানসি নাও
পান খাইয়া যাও
পান্নার শাশুড়ির ঢবলা গুয়া
তুইল্যা নিয়া যাও…।

এই ‘গুয়া’ শব্দটি বলতে গিয়ে আমরা বেশ আড়ষ্ট হয়ে উঠতাম। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ‘গুয়া’ মানে ‘পাছা’। এই গুয়া নামক লজ্জাকর শব্দটির সাথে যুক্ত কারো শাশুড়ি! এই পান্নাদের বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে অন্য সীমানায়। ওর মা ও দাদী আমাদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতো। ওদের বাড়িতে যাওয়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। কারণ ওরা হলো ‘গেরস্ত’ আর আমরা হলাম ‘মিয়া’। কিন্তু ওই ‘গেরস্ত’ বাড়িতেই আমার মন চলে যেত। মনে হতো যাই, গিয়ে দেখে আসি ওরা কি খায়? কেমনে ঘুমায়? মিয়ারা কখনো গেরস্ত বাড়ির চৌহদ্দি মারাতো না। দিদিকে দেখতাম কাজের দরকার হলে গলা বাড়িয়ে আমাদের শেষ সীমানায় গিয়ে ডাক দিত–
‘ও ময়নার মা, ময়নার মা-এট্টু আইসো তো, শুইন্যা যাইও’
পান্নার সব চাইতে বড় বোনের নাম ময়না। তার পরের জন পাখি। আমি জন্মানোর পর এই পাখি আম্মার কাছে ছিল। পাখি আমা্র দেখাশোনা করতো। পাখির ছোট আঁখি। তারপর আন্না, পান্না।

ওরা আমাদের খেলার সময় হলে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাদের সাথে খেলতে নামবে এমন সাহস ওদের ছিলনা। আমি ওদের হাত ধরে টেনে খেলায় নামাতাম। আমাদের বাড়ির বড়রা কেউ এসে পড়লে ওরা খেলে ফেলে দাঁড়িয়ে পড়তো। ‘মিয়া বাড়ির মেয়ে’ হয়েও আমি ‘গেরস্ত বাড়ির মেয়েদের’ সাথে মিশতাম বলে আম্মা আমাকে খুব বকতেন। কিন্তু আমি কোনোকালেই ‘মিয়া’ হতে পারলাম না, ‘গেরস্তও’ না-এর মাঝামাঝি কিছুতে যেন থেকে আটকে থাকলাম! ’গেরস্তদের’ খেলায় না নিয়ে আমাদের উপায় কি? আমরা তো মাত্র কয়েক ঘর ‘মিয়া’। আর গ্রামের বেশির ভাগ ঘরই তো ‘গেরস্তদের’।

এদিকে আমাদের দিদি আমের একটা মস্তপানা ডাল কাটিয়ে রেখেছে। শুকিয়ে জ্বালানি করবে। এই ডালে চেপে আমাদের ‘রেলগাড়ি’ ‘রেলগাড়ি’ খেলতে হবে যে! ফলে বড়দের রক্তচক্ষু ফাঁকি দিয়ে আন্না-পান্নাদের আমরা খেলায় নিতাম। ওদের গায়ের রঙ ছিল ভয়ানক কালো। আমাদের বড়দের কেউ কেউ ওদের ‘বকরী’ (ছাগল) ডাকতো! অমন শিশুবেলাতেই আমার মন বিষন্ন হয়ে উঠতো। মানুষকে কেন জন্তু-জানোয়ারের নামে ডাকতে হবে?

বাইস্যা মাসে ভরা খাল মানে তো নদী নইলে সমুদ্দুর! দিদিরা গোসল করতে নামলে তেমন বিপত্তি হতো না। বিপত্তি হতো আম্মা-চাচীমারা গোসল করতে নামলে। তাদের যৌবন ভর-ভরন্ত শরীর। ফলে প্রায় সকলেই শাড়ির উপর গামছা পেঁচিয়ে খালে নামতো। হঠাৎ করে পানসি বা গয়না নৌকা এসে পড়লে দেখতাম আম্মা-চাচীমা-ফুপুরা গলা জলে নড়ন-চড়নহীন দাঁড়িয়ে আছে। মাঝিরা নৌকা নিয়ে চলে না যাওয়া পর্যন্ত তারা এমন জলশাস্তি ভোগ করতো। কারণ মিয়াবাড়ির বউ-ঝিদের গোসল অন্যেরা দেখে ফেললে সে ছিল ভারি মুশকিলের কথা! খালের পারে দাঁড়িয়ে আমরা ছোটরা দেখতাম আম্মা-চাচীমা-ফুপুরা জলে জলকন্যার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তাদের সামনে দিয়ে স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে অজস্র হিজলফুল।কখনোবা বেগুনী ফুল সমেত দামের দঙ্গল।

কাপড়-চোপড় ধোয়াও চলতো এই খালের পানিতে। এই খালেই আব্বা-চাচারা জিয়ালা দিয়ে ধরতো বোয়াল, বাইন, রুই, কই, কাতলা মাছ।

আসলে বাইস্যা মাস মানেই ছিল জলের উৎসব। আব্বা-চাচাদের প্রচণ্ড মাছ মারার নেশা ছিল। ছুটি-ছাটায় বাড়ি এলেই তারা মাছ মারতে ছুটে যেতেন দুর-দূরান্তে। দেউলি,কাশিল,দাঁতমাজর নদীবর্তী গ্রামে। পারে দাঁড়ানো হিজল গাছটির অর্ধেক পানিতে ডুবে যেত। পানি যখন কমতে শুরু করতো, গাছের শরীরে পানির দাগ দেখে আমরা বুঝতে পারতাম পানি কতটুকু কমেছে…।

 

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top