সুধাংশু শেখর বিশ্বাসের ছোটগল্প: ইলেকশন

কুকুরটা বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক কি হয়ে গেল। কিন্তু এটুকু অনুভব করল, একটা বেদনাবোধ যেন সাঁ করে তার পাঁজরের ভেতর দিয়ে ঢুকে গেছে। অবিশ্বাস্য বোবা দৃষ্টি মেলে সে সামনের লোকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বোঝার চেষ্টা করে বিষয়টা।

হঠাৎ তার এই বোধের উদয় হয় যে, সে নিরাপদ নয়। এই মানুষগুলো তার জন্য বিপজ্জনক। পালাতে হবে তাকে। ছুটতে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরে উঠে কুকুরটা। তা সত্ত্বেও কুঁই কুঁই আর্ত চিৎকারে পাড়া কাঁপিয়ে পা টেনে টেনে সে দৌড়ানোর চেষ্টা করতেই থাকে।

হাঃ হাঃ হাঃ… হেসে উঠে আলেফ। কেমন জান্তব, নেশাগ্রস্থ অট্টহাসি যেন। সে হাসির তীব্রতা তার বন্ধুদের মধ্যে সংক্রামিত হয়। তারাও হাসতে থাকে নির্লজ্জের মতো। আলেফ নিচু হয়ে তার সেভেন গিয়ারের চাকুর ফলাটা ঘাসের মধ্যে এপাশ ওপাশ করে মুছে নেয়। তারপর মুখ বিকৃত করে যতটা সম্ভব জোরের সাথে একদলা থুথু মাটিতে ফেলে বলে – শালা কুত্তার বাচ্চা। এত্তবড় সাহস! আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করিস!

ঘটনাটা জটিল কিছু ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের নেতার পক্ষে বিশাল শো ডাউন হবে। গাড়ির বহর থাকবে। সাথে কয়েক’শ মোটর সাইকেল। ব্যান্ড পার্টি। তারই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পাড়ায় পাড়ায় চলছে মিছিল। মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে আলেফ। উঠতি মাস্তান হিসেবে ইদানিং বেশ নামডাক হয়েছে তার। কথায় কথায় চাকু বের করে। সেভেন গিয়ারের চাকু ওপেন করার সময় কটকট করে শব্দ হয়। সেই শব্দ আলেফের রক্তে নেশা ধরিয়ে দেয়।

কুকুরটার নাম ভোলা। নামটা পাড়ার ছেলেরাই রেখেছে। কিভাবে কবে একদিন ভোলা এই পাড়ায় এসে জুটেছিল তা আজ আর কারো মনে নেই। লাত্থি গুঁতা খেতে খেতে একটু একটু করে বড় হওয়া ভোলা এখন তাগড়াই জোয়ান। নিজে নিজেই সে এ পাড়ার সিকিউরিটির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। তার শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে পাড়ায় ঢুকে পড়া খুবই কঠিন। চেনা হলে লেজ নাড়ানো অভ্যর্থনা, অচেনা হলে তারস্বরে ঘেউঘেউ।

পাড়ার লোকজন এখন আর তাকে লাথি মারে না, বরং স্নেহ করে সবাই। এটা তার অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার অর্জন। সেবার যখন পাড়ার পুকুরে পড়ে যাওয়া হালিম মিয়ার ছেলেটার জীবন বাঁচাল, অর্জনের ষোলকলা তখন পূর্ণ হলো ভোলার। বাচ্চাটা পুকুরে ডুবে যাচ্ছিল। কেউ সেটা খেয়াল করে নি। প্রাণপণ চিৎকারে ভোলা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সাঁতরে গিয়ে বাচ্চাটার প্যান্ট কামড়ে ধরে তীরে আনার হাকুপাকু চেষ্টায় উদ্ধার হল ছেলেটা। রাতারাতি হিরো বনে কেয়ার-লেস ভাব নিয়ে ভোলা দিব্যি চড়ে বেড়াচ্ছিল পাড়াময়।

এহেন আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল পাড়ার লোকজন ছুটল পশুসম্পদ অফিসে। জেলা শহরে পশু হাসপাতাল নেই, সার্জনও নেই। পশুসম্পদ অফিসার মলম টলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বললেন, ভিতরের ইনজুরি ঠিক কতখানি তা বোঝা যাচ্ছে না। অপারেশন করতে হলে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। এই শহরে দৌড়াদৌড়ি পর্যন্ত ঠিক আছে। ভোলাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে কে? মুখে কাউকে কিছু বলতে হল না, আপনা আপনিই ঠিক হয়ে গেল, ঢাকা নয়। এখানকার সর্বোচ্চ চিকিৎসাই ভোলার প্রাপ্য হবে। বাকিটা তার কপাল!

 

পাড়ার ছেলে কিরণ ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। দ্বারে দ্বারে ঘুরে সবাইকে অনুরোধ করে বেড়াতে লাগল – থানায় কেস করা দরকার। মিটিং করে এর একটা প্রতিবাদ জানানো দরকার। মুখে বিপুল সমর্থন পেলেও শেষমেশ আলেফের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে কেউ এগিয়ে এলো না।

সম্প্রতি কিরণের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয়েছে। কলম হাতে সে উসখুস করতে থাকে। কিন্তু নিউজটা ঠিক কিভাবে লিখবে তা ভেবে পায় না। সারা রাত ব্যয় করে ভোরের দিকে একটা স্কুপ মতো বক্স আইটেম এর নিউজ বানিয়ে ফেলল কিরণ। হেডিংটা করে দিলেন বার্তা সম্পাদক ‘কি অপরাধ ছিল কুকুরটার!’

সংবাদটা প্রকাশিত হবার সাথে সাথে শহর জুড়ে তুমুল আলোচনা, ভোলা একটা কুকুর… অবোধ প্রাণী… তাকেও রেহাই দিল না ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা? ছিঃ ছিঃ ছিঃ…

মোচে তা দিচ্ছেন বিরোধী দলের সভাপতি শরাফত খান। আনন্দে ডগমগ, ঝলমল নেশাগ্রস্থ চোখদুটো। গ্লাসটা মুখে তুলে চুমুক দিয়ে অকারণেই হাঃ হাঃ করে হাসতে লাগলেন তিনি। হাসির দমকে ভুঁড়িটা দুলে-দুলে উঠে।

: আল্লার মার দুনিয়ার বার। ব্রহ্মাস্ত্র আপনা আপনিই হাতে এসে গেছে। কিছুই করতে হল না। ওরা রাঁধল, ওরা বাড়ল। বাড়া ভাতটা দলা পাকিয়ে কপাৎ করে গিলে ফেললাম আমরা। ওঃ ভোলা… মাই ডিয়ার… হাঃ হাঃ হাঃ…

আয়েশের সাথে ভুঁড়িতে হাত বোলাতে লাগলেন শরাফত খান। সামনের ইলেকশনে বিজয়ী হওয়া তার ঠেকায় কে? তুরুপের তাস তো হাতের মুঠোয়! কুত্তাটারে চুমা খেতে ইচ্ছে করল শরাফত খানের। মনে হল, যেন এটা কুকুরের মুখ না। ব্যাংককের সেই খুবসুরাত কাঁচাহলুদ বরণ ডাঁসা কচি মেয়েটার মুখ। সেই অসহ্য সুখের চাইতেও কড়া মিষ্টি এই আরাম। আঃ কি রিলিফ!

খান সাহেব ঠিক করলেন, ইলেকশনে জেতার পর সহসাই একবার ব্যাংকক ঘুরে আসবেন। ওদের ম্যাসাজটা বড়ই সুখপ্রদ। শরাফত খানের নিচের দিকটা কেমন টনটন করতে থাকে। জিভটা সুরসুর। দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন তিনি।

: লিডার, কাল ঐ পাড়ায় একটা মিটিং করা দরকার। গরম বক্তৃতা দিতে হবে। ভোলার চিকিৎসার দায়িত্ব নেবার কথা হাজারো কণ্ঠে প্রচার করতে হবে।

: লিফলেটের খবর কি? ছাপা হয়ে গেছে?

: জ্বি লিডার। আজ রাতেই বিলি হবে।

: ভোলার ছবিটা ঠিকমতো এসেছে?

: এসেছে মানে? সুপার। ওই মতু প্রেসে ফোন লাগা তো। কয়েক কপি লিফলেট দিয়ে যাক। লিডার দেখে খুশি হোক।

 

সভা শুরু হয়ে গেছে। কুঁই কুঁই করছে ভোলা। ঝাপসা তার দু’চোখ। সামনে মাটির সানকিতে নানাবিধ খাবার। ভোলা ফিরেও তাকায় না সেদিকে। ইনজুরিতে পচন ধরেছে। ভনভন করে মাছি উড়ছে। লেজ নেড়ে মাছি তাড়ানোর চেষ্টা করতেই টনটনে ব্যথায় আবার কুঁই কুঁই করে উঠে সে।

: ভাইসব, দেশ আজ জালিমের হাতে। অবোধ  প্রাণীও নিরাপদ নয় ওদের কাছে। কি অপরাধ ছিল এই ভোলার! তবু চাকু মেরেছে। ওরা খুনি। এই খুনি লুটেরাদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে হবে। রক্ষা করতে হবে জাতিকে। ভোলার চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করব আমি। ঢাকায় পাঠাব ভোলাকে। দরকার হলে সিংগাপুরে – মাউন্ট এলিজাবেথে।

: লিডার, মাউন্ট এলিজাবেথ মানুষের হাসপাতাল। পশুর না। ফিস্ ফিস্ করে কানের কাছে কেউ একজন বলল।

: না, মানে দরকার হলে ভোলাকে ইউরোপ আমেরিকায় চিকিৎসার জন্যে পাঠাব। ওরা মারবে, আমরা বাঁচাব। ওরা অত্যাচার করবে, আমরা সেবা করব। তাই ভাইসব আসন্ন নির্বাচনে আমাদেরকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। মুহুর্মুহু শ্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে এলাকা। তোমার ভাই আমার ভাই… শরাফত ভাই, শরাফত ভাই…

 

নেশার আমেজ জমে উঠেছে কেবল। হালকা লালচে আভা চোখের কোনায়। নাহ্ এলেম আছে মেয়েটার। সমুদ্রের সফেন ঢেউ শরীরে। চোখে বিজলি। যতবার কোমর ঘুরিয়ে বাঁকা চোখে তাকায়, ততবার মনে হয় বুকের গহীনে চাক্কুর ফলা ঢুকে যায়। গুলশানের এই ফ্লাটটায় সুযোগ পেলেই আসেন সরকারি দলের নেতা কায়সার সাহেব। চাক্কুর কথা মনে হতেই তিনি ফোন করলেন আলেফকে।

: হ্যালো…

: জ্বি লিডার।

: খবর সব ভাল তো?

: জ্বি ভাল। তবে ওই যে রাগের মাথায় চাকু মেরেছিলাম কুকুরটাকে। ওইটা নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে।

: কি রকম?

: ওই শালার এক চুটকে সাংবাদিক নিউজ করেছে লোকাল কাগজে। বিরোধী দল এটাকে নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। আপনি চিন্তা করবেন না বস্। আমি সবকিছু সামলে নেব।

তড়াক করে উঠে বসেন তিনি। চটে যায় নেশা। মনের সুখে একটু ফুর্তি ফার্তা করবেন তারও উপায় নেই। যত্তসব!

তড়িৎ এ্যাকশনে চলে গেলেন কায়সার সাহেব। গেন্ডারিয়ার একটা ক্লিনিক থেকে এম্বুলেন্স ভাড়া করলেন। স্থানীয় কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কুকুর বহনের জন্যে এম্বুলেন্স দিতে রাজি হয় নি। শেষমেশ তাই ঢাকা থেকেই নিতে হচ্ছে। ভালই হল, এম্বুলেন্সে করেই রওয়ানা হয়ে গেলেন কায়সার সাহেব।

: ভাইসব! আপনারা জানেন বিরোধীদল সবসময় ঘোলাজলে মাছ শিকারের সুযোগ খোঁজে। ভোলাকে ছুরি মেরে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন করে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করছে আমাদের উপর। কিন্তু তা হতে দেয়া যাবে না…

জ্বালো রে জ্বালো… আগুন জ্বালো, সন্ত্রাসের কালো হাত ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও। মুহুর্মুহু শ্লোগানে পাড়া কেঁপে উঠতে লাগল।

: সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়া হবে। খবর শুনেই আমি এম্বুলেন্স নিয়ে এসেছি। ঢাকায় নিয়ে ভোলার চিকিৎসা করাবো। বিরোধী দলের মতো ফাঁকা বুলি নয়। ভোলাকে বাঁচিয়ে তুলব। তাকে বীরের সংবর্ধনা দেব। ভোলা আমাদের মুক্তির সৈনিক। কুকুর আর মানুষে কোন তফাৎ করি না আমরা।

: হায় বস্ এটা কি বললেন। কুকুরের সাথে মানুষের তুলনা করে ফেললেন। বিরোধী দল সুযোগ নিয়ে এখুনি বলতে শুরু করবে যে, আপনি মানুষকে কুকুর বলেছেন। কথা ঘুরিয়ে ফেলেন বস্…

চলছে মিটিং… পাল্টা মিটিং। চলছে মিছিল… পাল্টা মিছিল।

ভোলা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে ক্রমশ। লেজ নাড়িয়ে মাছি তাড়ানোর সামর্থ্যও তার নেই। জীবনের অর্থ তার কাছে দুর্বোধ্য। নির্মোহ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে মেঘমুক্ত নীল আকাশের দিকে।

 

পচা ঘা থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভনভন করে উড়ছে মাছি। কেউ আর ভোলার কাছে ঘেঁষে না। পল্টু, ভোলা যাকে বাঁচিয়েছিল, সে শুধু কৃতজ্ঞতার বশে নাকি অন্তরের অদৃশ্য কোন টানে ভোলার পাশে রাতদিন অনড় বসে থাকে।

: খা, ভোলা খা… নইলে তোর শরীর খারাপ হয়ে যাবে…

ভোলা মুখ খোলে না। ভোলা খায় না। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে অবিরত। পল্টুর বুকের ভিতরে ভাঙচুর হতে থাকে।

: ভাল হয়ে যাবি তুই। দেখিস…

ভোলার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের জলে বিড়বিড় করতে থাকে পল্টু। অনেকক্ষণ আগেই নিথর হয়ে গেছে ভোলা। পল্টু তা বুঝতে পারে না।

মাইকে ভেসে আসে –

: ভাইসব, অবলা নিরীহ প্রাণীর উপর ক্ষমতাসীন দলের নির্মম অত্যাচারের প্রতিশোধ আমরা নেবই নেব…

: ভাইসব, ঘোলা জলে মাছ শিকারের বিরোধী দলীয় ষড়যন্ত্র যে কোন মূল্যে আমরা রুখে দেবই দেব…

 

সুধাংশু শেখর বিশ্বাস

জন্ম ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার প্রত্যন্ত বিলের মধ্যে মধুপুর গ্রামে। পড়াশুনা  করেছেন অর্থনীতিতে এমএ। বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের সহকারী সচিব হিসেবে কর্মজীবন শুরু। মাঠ পর্যায়ে ছিলেন ইউএনও, এডিসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিএ, বগুড়ার পরিচালক। কাজ করেছেন উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। অবসর নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। সরকারি কাজে ঘুরেছেন বহু দেশ। অবসর জীবন কাটে ঘোরাঘুরি আর লেখালিখি করে।

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আঠারো। ভ্রমণ কাহিণি-৬ (সাগিনো ভ্যালি, হোটেল সিয়াম, মস্কোর ঘন্টা, হোয়াইট চ্যাপেল, ঘুরে দেখা আমেরিকা),

ছোটগল্প-১ (স্ট্যাটাস),  

গবেষণা গ্রন্থ-১ (বিলের জীবনঃ নমশূদ্রদের বার মাসের তের পার্বণ), ২ নমসপুত্র আর ৩ নমস উপাখ্যান। এই দু’টি গ্রন্থের জন্য  তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত। 

কিশোর উপন্যাস-১ (সুরুজ দ্য গ্রেট) স্মৃতিগল্প-৩ (সোনালী ডানার চিল- শৈশব, কৈশোর, যৌবন)।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top