ইউ. জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ৫

ইউ. জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ১ ।। ইউ. জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ২ ।। ইউ. জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ৩  ।। ইউ. জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ৪

প্রেম শুধু এক তুরুপের তাস

বাংলা অনুবাদ: নান্নু মাহবুব

সবকিছু যখন ব্যর্থ হয়, তখন তুমি শেষ তাসটা ব্যবহার করো, প্যাকের তুরুপের তাসটা, এবং এটাকেই বলো প্রেম।
……………….
যতকাল পর্যন্ত আমরা সম্পর্ক চাইবো, বিবাহ প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হবে না। কোনো না কোনোভাবে এটা চলতেই থাকবে।
অবিবাহিত যুগলদের অবস্থা বিবাহিত যুগলদের চেয়ে বেশি শোচনীয়।
……………….
নারী যতকাল তার যৌনচাহিদার ক্ষেত্রে পুরুষের ওপর নির্ভর করবে ততকাল পর্যন্ত নারীবাদী আন্দোলন সফল হবে না।
……………….
‘‘ওই সম্পর্কটা থেকে আমি কী পাবো?’’─এই মাত্রাটা ছাড়া তোমার কাছেরজন এবং প্রিয়জনসহ তোমার চারপাশের কারো সাথেই কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মানুষ আজ যে বিচ্ছিন্নতা আর নৈঃসঙ্গের মধ্যে বসবাস করে সেখান থেকেই এই সমগ্র ব্যাপারটার উৎপত্তি।
……………….
যৌনতাকে যদি তার নিজের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়, অন্যান্য প্রজাতিতে যেমনটি রয়েছে, সেটা শুধুই একটা সাধারণ জৈবিক চাহিদা মাত্র। টিকে থাকা এবং নিজের পুনরুৎপাদনই হলো প্রাণীটির উদ্দেশ্য। এর ওপর চাপানো যেকোনো কিছুই প্রাণীটির সাথে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন। কিন্তু আমরা যৌনতাকে, যা কিনা প্রকৃতিগতভাবেই জৈবিক, একটা ভোগকর্ম বানিয়ে নিয়েছি।
……………….
আজ আমরা যা-কিছুরই মুখোমুখি সেটা মানুষের ধর্মচিন্তাপ্রসূত। কিন্তু মানবজাতির ভবিষ্যতের কোনো মীমাংসা ধর্মের হাতে নেই।
……………….
সমস্ত অভিজ্ঞতা, তা সে যত অসাধারণই হোক, সবই ইন্দ্রিয়পর ক্ষেত্রের ভেতরে।
……………….
০       ০       ০

 

সাক্ষাৎকারগ্রাহক: মানুষ যখন সর্বত্রই একইরকম, তাহলে মানুষে মানুষে এত পার্থক্য কেন? ইউরোপ-আমেরিকা আর অনুন্নত দেশের মানুষের সমস্যার ভেতরে একটা পার্থক্য দেখি। যেমন আমেরিকা আর পশ্চিম ইউরোপের সমস্যা মাদক, যৌনতা, অপরাধ, ভোগ, কিন্তু অনুন্নত দেশগুলোর সমস্যা দারিদ্র, অশিক্ষা, অপুষ্টিজনিত মৃত্যু।

ইউ জী: পার্থক্যটা পশ্চিমা জাতিগুলির মাধ্যমে সৃষ্ট। তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছিলো, শিল্পবিপ্লব থেকে যার সৃষ্টি। এই বিপ্লব যখন আমেরিকায় গেছে, ওই প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে তারা সেখানকার অঢেল সম্পদ কাজে লাগিয়েছে। একটা সময় তো পাসপোর্ট ছাড়াই যে-কেউ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারতো। ১৯১১’তে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার ক্ষেত্রে পাসপোর্টের প্রবর্তন করলো। ১৯২৩’এ তারা অভিবাসন আইন প্রবর্তন করে। কোথাও একবার নিজেকে এবং নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেই হলো। (আমি একটা উদাহরণ হিসেবে এইটা বলছি, কিন্তু প্রত্যেকটি দেশের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।) যেকোনো গ্রহের যেকোনো জায়গায় নেমে কেউ বসতি গড়ে তুললেই সেখানে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং অন্যসমস্ত জাতির অবতরণকে আটকে দেবে। আমেরিকানরা ঠিক এই অধিকারটাই প্রতিষ্ঠা করেছে। অঢেল প্রাচুর্য এই জাতিকে তাদের যা আছে সেটা বিকশিত করতে আর ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। কিন্তু তারা নিজেদের সম্পদের সাথে সাথে বাদবাকি পৃথিবীর সম্পদও শোষণ করে চলেছে। এমনকি আজও তারা তাই করে যাচ্ছে। তারা ছাড়তে চায় না।

ভারত রাশিয়া আমেরিকা আফ্রিকা যেখানকারই হোক, মনুষ্যপ্রকৃতি মূলত অবিকল একই। মনুষ্যসমস্যাও অবিকল একই। মনুষ্যচিন্তাজাত নানান কাঠামোর মাধ্যমেই যাবতীয় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমি যা বলেছি, মনুষ্যদেহে একধরনের (সুনির্দিষ্টভাবে আমি বলতে পারি না) স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে। মনুষ্যপ্রজাতির এই স্নায়বিক ত্রু টি থেকেই মনুষ্যচিন্তার উৎপত্তি। যা-কিছু মনুষ্যচিন্তাজাত তা-ই ধ্বংসাত্মক। চিন্তা ধ্বংসাত্মক। চিন্তা একটা রক্ষণাত্মক প্রক্রিয়া। এটা নিজের চারপাশে একটা সীমানা টেনে দেয় আর নিজেকে রক্ষা করতে চায়। একই কারণে আমরা এই গ্রহের ওপরেও সীমান্ত টেনে দিই আর যতদূর পারি সেগুলো প্রসারিত করি। তোমার কি মনে হয় এই সীমান্তগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে? হবে না। যারা গেড়ে বসেছে, সমস্ত পৃথিবীর সম্পদের ওপর এতকাল এবং দীর্ঘকাল ধরে যাদের একচ্ছত্র আধিপত্য, তারা যদি উৎখাত হওয়ার ভয় পায়, তারা কী করবে তা কেউ জানে না। আজ আমাদের যত বিধ্বংসী মারণাস্ত্র সবই শুধু ওই একচ্ছত্র আধিপত্যটা ধরে রাখার জন্যেই।

কিন্তু আমি নিশ্চিত যে লোকেদের এইটা অনুধাবনের সময় এসেছে যে, এতকাল পর্যন্ত যত অস্ত্র আমরা বানিয়েছি তা প্রয়োজনের অধিক এবং সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। আমরা এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি যেখানে নিজেকে ধ্বংস না করে তুমি তোমার শত্রু কে ধ্বংস করতে পারবে না। তো যৌথভাবে বাঁচতে সহায়ক হবে বলে শত শত বছর ধরে যেটা আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেই প্রীতি বা ভ্রাতৃত্ব নয়, এটা হলো ওই আতঙ্ক, যা আমাদের যৌথভাবে বাঁচতে সাহায্য করবে। কিন্তু এই উপলব্ধি মানুষের চেতনার স্তরে আসতে হবে (‘চেতনা’ বা ‘মনুষ্যচেতনা’ শব্দগুলো আমি ব্যবহার করতে চাই না, কারণ চেতনা বলেই কিছু নেই। শুধু যোগাযোগের স্বার্থে আমি শব্দটা ব্যবহার করি)। নিজেকে ধ্বংস না করে তার প্রতিবেশীকে ধ্বংস করা যায় না, এই উপলব্ধি মানুষের চেতনার স্তরে না এলে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। আমি নিশ্চিত আমরা সেখানেই পৌঁছে গেছি। যেখানেই তোমার শত্রু  বা তোমার প্রতিবেশীর ওপর তোমার সীমানা রয়েছে, শত শত বছর ধরে তুমি যা ধরে রেখেছো, সেটা তুমি ধরেই রাখবে। তাহলে কীভাবে তুমি সমস্যাটার সমাধান করবে? সমস্ত স্বপ্নরাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়েছে।

মানুষের ধর্মভাবনা থেকেই সমস্ত নষ্টামীর উৎপত্তি। এখন আর মানুষের ধর্মভাবনাকে দায়ী করে লাভ নেই, কেননা সকল রাজনৈতিক মতাদর্শ, এমনকি তোমার আইনী কাঠামোও মানুষের ধর্মভাবনার টিউমারের মতো বিস্তার। শত শত বছর ধরে সঞ্চিত সমগ্র অভিজ্ঞতাপরম্পরা, যার ভিত্তি হলো মানুষের ধর্মভাবনা, সেটা ধুয়েমুছে ফেলাটা খুব সহজ নয়। এক বিশ্বাসের জায়গায় আরেক বিশ্বাস, এক মায়ার জায়গায় আরেক মায়া প্রতিস্থাপন করার একটা প্রবণতা রয়েছে। আমরা শুধু এ-ই পারি।

উন্নত দেশগুলি ভালই জানে যে আজ কোনো যুদ্ধ বাধলে তারা একটা সামগ্রিক বিনাশের মুখোমুখি হবে। কোথাও কোনো বিজেতা অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু তারপরও সবখানে এই দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগেই আছে এবং সর্বত্রই বিপুল হিংসা। এইরকম কেন? তার কারণ কি এই যে, (কিছু লোক যেরকম বলে থাকেন) মনুষ্যপ্রকৃতি মূলত সহিংস?

হ্যাঁ। তাই। কারণ চিন্তা সহিংস। যা কিছুরই উৎপত্তি চিন্তা থেকে তাই-ই ধ্বংসাত্মক। যত রাজ্যের সুন্দর আর রোমান্টিক ভাষায় তুমি এটাকে আড়াল করতে পারো: ‘‘তোমার প্রতিবেশীকেও নিজের মতো ভালবাসো,’’…ভুলে যেও না ‘‘তোমার প্রতিবেশীকেও নিজের মতো ভালবাসো’’ এই কথার জন্যেই কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সাম্প্রতিককালের সমস্ত যুদ্ধ এক করলেও অত প্রাণহানি হবে না। কিন্তু আজ আমরা এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি যেখানে আমরা বুঝতে পারছি যে, হিংসা কোনো সমাধান নয়, মানুষের সমস্যা সমাধানে এই হিংসা কোনো পন্থা নয়। তাই আতঙ্কই বোধহয় একমাত্র পন্থা। আমি গীর্জা মন্দির বা এইজাতীয় সবকিছু সন্ত্রাসবাদী বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেবার কথা বলছি না, কিন্তু তোমার প্রতিবেশীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করলে তুমিও হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে এই আতঙ্কের কথা বলছি। এই উপলব্ধি সাধারণ মানুষের স্তরে আসতে হবে।

মনুষ্যপ্রাণীও এই একই প্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল। প্রত্যেকটি কোষের আগ্রহ তার নিজের টিকে থাকায়। কোনোভাবে সে জানে যে তার টিকে থাকা নির্ভর করে তার পাশের কোষটির ওপর। এই কারণে কোষের মধ্যে রয়েছে একধরনের সহযোগিতা। সমস্ত প্রাণীটি এইভাবেই টিকে আছে। এটা স্বপ্নরাষ্ট্রে আগ্রহী নয়। এটা তোমার বিস্ময়কর ধর্মীয় ধারণায় আগ্রহী নয়। এটা শান্তি, মোক্ষ, নির্বাণ, এইসমস্ত কোনো কিছুতেই আগ্রহী নয়। এর একমাত্র আগ্রহ টিকে থাকায়। এতেই এর সমস্ত আগ্রহ। একটি কোষের টিকে থাকা তার পাশের কোষটির টিকে থাকার ওপর নির্ভরশীল। এবং তোমার আমার টিকে থাকা নির্ভর করে আমাদের প্রতিবেশীর টিকে থাকার ওপর।

তুমি যাই বলো, আমার মনে হয় হৃদয়ের একটা পরিবর্তনই মানবতার টিকে থাকার একমাত্র উপায়─এবং সেটা হলো প্রেম।

না, আদৌ না, কারণ প্রেম মানেই হলো বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা। যতকাল বিভক্তি থাকবে, যতকাল তোমার নিজের ভেতরে বিচ্ছিন্নতা থাকবে, ততকাল তুমি তোমার চারপাশে ওই বিচ্ছিন্নতা রক্ষা করে যাবে। সবকিছু যখন ব্যর্থ হয়, তখন তুমি শেষ তাসটা ব্যবহার করো, প্যাকের তুরুপের তাসটা, এবং এটাকেই বলো প্রেম। কিন্তু এতে কোনো কাজ হবে না, এবং এতে আদৌ কোনো কাজ হয় নাই। এমনকি ধর্মও মানুষকে হিংসা এবং আরো দশরকম যেসব জিনিস থেকে সেটা আমাদের মুক্ত করতে চায়, সেসব থেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা দেখ নতুন তত্ত্ব, নতুন ধারণা, নতুন চিন্তা বা নতুন বিশ্বাস খুঁজে বের করার প্রশ্ন নয়।

একটু আগে যা বলছিলাম, এই দুনিয়ায় তুমি কী ধরনের মানুষ চাও? আদর্শ মানুষের অনুকরণে মানুষ হওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মডেল দিয়ে কিছুই হয় নাই। নৈতিক মূল্যবোধই মানুষের ব্যাধি, মানুষের ট্র্যাজেডি, সেটাই সবাইকে ওই আদর্শে খাপ খাওয়াতে বলপ্রয়োগ করে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কী করবো? নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে তুমি কিছুই করতে পারবে না, কারণ একটা নৈতিক মূল্যবোধের জায়গায় তুমি আরেকটা নৈতিক মূল্যবোধ দাঁড় করাবে। এমনকি যারা ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মতো, তারাই আবার আরেক ধরনের নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং বিপ্লব অর্থ কোনো কিছুর অবসান নয়। এটা কেবল আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের পুনর্মূল্যায়ন। কাজেই তার জন্যে আবার আরেকটা বিপ্লবের দরকার হচ্ছে, এইভাবে চলতেই থাকবে। কোনো পথ নেই।

মূল যে প্রশ্নটি আমাদের নিজেদের করা উচিৎ তাহলো, কেমন ধরনের মানুষ তুমি চাও। এই মনুষ্যসমস্যার একমাত্র সমাধান, যদি কোনো সমাধান থেকে থাকে, সেটা, নতুন চিন্তা, নতুন ধারণা, নতুন মতবাদের মধ্যে দিয়ে পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে মনুষ্যদেহের রসায়নে পরিবর্তন ঘটিয়ে। কিন্তু সেখানেও বিপদ। যখনই আমরা জিন প্রকৌশল সুসম্পন্ন করে মানুষকে পাল্টে ফেলবো, এই প্রযুক্তি রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবার প্রবণতাও থাকবে। তখন তাদের পক্ষে সমস্ত জনগণকে যুদ্ধে ঠেলে দিয়ে অবলীলায় মানুষ খুন করাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে। মানুষকে মগজ ধোলাই করতে হবে না। তাদেরকে প্রীতি আর স্বাদেশিকতা শেখাতে হবে না। মগজ ধোলাই করতে শত শত বছর লেগে যায়, (যেমন,) শত শত বছর লেগেছে মানুষকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করাতে। সমাজতন্ত্রীরা মানুষকে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী করাতে কয়েক যুগ নিয়েছে। কিন্তু জিনপ্রযুক্তিতে এরকম মগজ ধোলাই করতে হবে না। শুধু একটা ইনজেকশন দিয়েই মানুষকে পাল্টে দেওয়াটা অনেক সহজ।

পশ্চিমা বিশ্বে বলা হয় যে জনগণ সেখানে খুবই সুখী আর যে পরিবর্তনগুলো ঘটে চলেছে তাতে তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট: সেখানে আইনের শাসন আছে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে, মুক্তবাজার অর্থনীতি, বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তোমার কি সত্যিই মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে? একজন অনাহারী মানুষের কাছে বাকস্বাধীনতা, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অর্থ কী? সংবাদপত্র কীভাবে পড়তে হয় সে জানে না এবং তাতে তার কোনো আগ্রহও নেই। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তারা অন্তত জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছিল, যদিও ওইসব রাষ্ট্রে এখন এইসমস্ত প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। এখন সেখানে বেকারত্ব পশ্চিমা দেশগুলোর আগের যেকোনো অবস্থা থেকে অনেক বেশি। আমি মনে করিনা সমগ্র মানবজাতির জন্য এইটা আদর্শ।

পশ্চিমা জাতিগুলির স্বার্থে পৃথিবীর সম্পদ শোষণের ওপর সমস্ত ব্যাপারটা নির্ভরশীল। তুমি যে আইনের কথা বলছো সেটার পিছনে সর্বদাই আছে বলপ্রয়োগ। একজন আইনজ্ঞ হিসাবে তুমি জানো যে একজন বিচারকের মাধ্যমে যে রায়, তার পিছনে সর্বদাই থাকে বলপ্রয়োগ। শেষ পর্যন্ত এই বলটাই ব্যাপার। আমরা সবাই বিচারকের রায়ের অধীনতা মেনে নিই। যদি তুমি সেখানে অধীনতা না মানো তোমার একমাত্র অবলম্বন হবে বলপ্রয়োগ। তাই সমস্ত দুর্বৃত্তগুলো একজোট হয়ে এমন একটা আইনী কাঠামো গঠন করে যেটা তাদের পক্ষে যাবে। এইভাবে তারা হিংস্রতা দিয়ে, শক্তিমত্তা দিয়ে অন্যের ওপর বলপ্রয়োগ করে।

যেমন আজ তোমার ইরাকে এই অবরোধ আরোপের কী অধিকার আছে? এইসব লোকেরা যে আন্তর্জাতিক আইনের কথা বলে সেটা কী? আমি জানতে চাই। একজন আইনজীবী হিসেবে তুমি জানো। আমেরিকা যখন গ্রানাডার মতো ছোট্ট একটা রাষ্ট্র আক্রমণ করে দখল করে নিল তখন কী হয়েছিলো? কেউ কোনো আপত্তি তোলে নাই; কেউ সেখানে একটা অবরোধ পর্যন্ত দেয় নাই। আন্তর্জাতিক আইন আর এর আইনী কাঠামো নিয়ে আমি অভিভূত নই। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা তোমার জন্য সুবিধাজনক, তুমি আইনের কথা বলছো। আইন যখন ব্যর্থ হচ্ছে তুমি বলপ্রয়োগ করছো, করছো না?

মানুষের অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নে ফিরতে পারি কিনা?

তুমি একজন আইনজীবী এবং আইনটা রয়েছে বোধহয় ‘স্ট্যাটাস কৌ’ রক্ষার জন্যেই। তাই না? কাজেই ‘স্ট্যাটাস কৌ’র বিরুদ্ধে তুমি কথা বলতে পারবে না।

কিন্তু আইনের ক্ষেত্রে আরো নানা ধরনের মতবাদ রয়েছে।

সেটা শুধুই একটা ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা। সমস্ত ধর্মবিদরা যা নিয়ে মেতে থাকেন─ঈশ্বর ইহা, ঈশ্বর তাহা, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে মহাবিশ্বতাত্ত্বিক, তত্ত্ববিদ্যাগত, পরমকারণবাদী তর্কবিতর্ক। তুমি যেসব আইনগত মতবাদের কথা বলছো তার সাথে ধর্মবিদদের আলোচনার কোনো পার্থক্য নেই।

বিবাহ আর পরিবার প্রতিষ্ঠান নিয়ে কী বলবে?

বিবাহ প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে না। যতকাল পর্যন্ত আমরা সম্পর্ক চাইবো, কোনো না কোনোভাবে এটা চলতেই থাকবে। এটা মূলত অধিকারিত্বের প্রশ্ন। একসময় আমার বিশ্বাস ছিল নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভারতের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু আমেরিকায় আমি ভীষণ বিস্মিত হয়ে দেখলাম অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন মহিলারাও তাদের মাতাল স্বামীদের ধরে রাখতে চায়। স্বামী তাকে প্রত্যেকদিন পেটায় এবং রোববারে পেটায় দুইবার। এইরকম অনেক ঘটনা আমি জানি। আমি কোনো সরলীকরণ করছি না কিন্তু অধিকারিত্বই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্পর্কের ভিত্তিটা হলো: ‘‘সম্পর্কটা থেকে আমি কী পাচ্ছি?’’ এটাই যাবতীয় মনুষ্যসম্পর্কের ভিত্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি যা চাই সেটা পাচ্ছি ততক্ষণই সম্পর্ক।

কোনো না কোনোভাবে বিবাহ প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে কারণ এটা কেবল দুইজন মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক নয়, সন্তান আর সম্পত্তিও এর সাথে জড়িত। তাই এটা মোটেও রাতারাতি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে না। এবং সন্তান আর সম্পত্তি আমরা বিবাহ প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন রাখতে একটা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করি। সমস্যাটা খুবই দুরূহ এবং জটিল। কারো পক্ষেই বহুকালের এই বিবাহ প্রতিষ্ঠানের সমাধান দেওয়াটা খুব সহজ নয়।

একটা জিনিস তোমাকে বলি। প্রচুর যুগল তাদের সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, অবিবাহিত, অপরিণীত যুগলরা, তাদের কাহিনি শুনলে তুমি তাদের দুর্দশা কল্পনাও করতে পারবে না। এবং তারপরও তারা আলাদা হতে পারে না।

অবিবাহিত যুগলদের অবস্থা বিবাহিত যুগলদের চেয়ে বেশি শোচনীয়। মীমাংসাটা খুব সহজ নয়। যতকাল আমরা সম্পর্ক গড়তে চাইবো, ততকাল এই প্রতিষ্ঠান থেকে যাবে। পরিবর্তমান অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এটা হয়তো খানিকটা সংস্কার করা হবে, পাল্টানো হবে।

নারীবাদী আন্দোলনের এক নেত্রী আমার সাথে (আমি একটা অশিষ্ঠ আর নিষ্ঠুর মানুষ) দেখা করতে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘নারীবাদী আন্দোলন নিয়ে তোমার চিন্তাভাবনা কী?’’ আমি বললাম, ‘‘আমি তোমার পক্ষে আছি; অবশ্যই তোমার অধিকারের জন্যে লড়াই করবে, কিন্তু মনে রাখবে যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার যৌনচাহিদায় কোনো পুরুষের ওপর নির্ভর করছো, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি মুক্ত নও। উল্টোদিক থেকেও সেটা সত্যি: যদি একটা ভাইব্রেটর দিয়ে তুমি তোমার যৌনচাহিদা মেটাও─সেটা আলাদা কথা। কিন্তু তোমার যৌনচাহিদা মেটাতে যদি কোনো পুরুষকে চাও, তুমি মুক্ত নও।’’

তুমি বলছো পরিবারপ্রথা সমাধান নয়, অবৈবাহিক সম্পর্ক সমাধান নয়। আর কী ধরনের প্রতিষ্ঠানের কথা তুমি ভাবছো?

মানবজাতির দুর্দশার কারণই হলো এইসমস্ত প্রতিষ্ঠান। এইসমস্ত প্রতিষ্ঠান পাল্টানোর বা এদিক-ওদিক করার কোনো রাস্তা নেই। ভারতীয়দের পক্ষে এখন আগেকার দিনের তুলনায় বিবাহবিচ্ছেদে যাওয়াটা অনেক সহজ। সেইসময় আমার পক্ষে স্ত্রীকে বা স্ত্রীর পক্ষে আমাকে ত্যাগ করার কোনো প্রশ্নই ছিল না। এখন এটা অনেক সহজ। পরিবর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের চিন্তাভাবনা পাল্টে গেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সমস্যাটার কোনো সহজসরল সমাধান হয়ে গেছে।

নারীপুরুষ সম্পর্ক আর পরিবারপ্রথা সমর্থন না করলে সেটা কি নৈরাজ্য হবে না?

তারা যদি দুর্দশাটা মেনে নিতে রাজী থাকে [হাসি], তাহলে তো ভালোই। কিন্তু অবস্থাটা খুবই খারাপ। তারা এতে সুখী নয়। চরম নৈরাজ্য কোনো কর্মকাণ্ডের দশা নয়, সেটা বরং অস্তিত্বের একটা দশা। চরম নৈরাজ্যে কোনো ক্রিয়া নেই; এটা শুধু অস্তিত্বের একটা দশা। তাহলে আমরা নৈরাজ্য নিয়ে ভীত কেন? তুমি যে নৈরাজ্যের কথা বলছো সেটা হলো প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের কথা, সাংঘাতিক যত্নে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা গড়ে তুলেছি, এবং এই বিশ্বাস নিয়ে গড়ে তুলেছি যে, প্রতিষ্ঠানগুলো চিরকাল চলতেই থাকবে। তো সেইজন্যেই আমরা লড়াই করে যাচ্ছি─প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আদি ও অকৃত্রিম শুদ্ধতায় ধরে রাখার জন্যেই।

পরিবার না থাকলে তখন বৃদ্ধ বয়সের অবস্থা আর সন্ততিদের ভবিষ্যৎ চিন্তার ব্যাপার নয়?

সমাজকেই ওই সমস্যার দেখভাল করতে হবে। সরকারের যেটা করার কথা সেটা না করলে কেন সবাই সরকারকে কর দিয়ে যাবে? যে যেটা করার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেটা করা তার দায়। সমস্যাটা হলো যখনই তুমি এইসব লোকজনকে ক্ষমতার গদিতে বসাচ্ছো, তখনই তাদের অন্যদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার সম্ভাবনা গেল কমে। আর তুমি তাদের সাংঘাতিক সব ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্রও জোগান দিলে। আমার মতো মানুষ, যে এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, সে হবে রাষ্ট্রের শত্রু । তারা আমাকে বিনাশ করতে দ্বিধা করবে না। আমি বিনাশ হলেও কিছু এসে যায় না। তারা যদি বলে, ‘‘কথা বোলো না,’’ আমি কথা বলবো না। আমি আদৌ বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি না। তারা যদি বলে, ‘‘কথা বোলো না। তোমার কথা মানবজাতি আর তার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হুমকি,’’ বিদায়, আমি কথা বলতে চাই না। জগত পাল্টানোয় আমি আগ্রহী নই। তারা কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তুমি তাদেরকে প্রশাসনে নির্বাচিত করেছো; মসনদে বসিয়েছো এবং দুর্ভাগ্যক্রমে সবচে’ ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্রগুলো জুগিয়েছো। তোমার আমার বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করতে তারা দ্বিধা করবে না।

কিন্তু আজকের দিনে আর তোমার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ব্যবহার করার কোনো উপায় নেই। আমি প্রায়ই বলি যে ভুটান ভারত দখল করতে যাবে না যদি-না তার পেছনে কিছু শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্র থাকে। কাজেই, আমরা এইসব লোকেদের হাতের পুতুল। প্রতিরক্ষাখাতে আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢালি। কিসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা? আমরা বাকস্বাধীনতার কথা বলছি। তারা যদি বলে, ‘‘কথা বোলো না,’’ আমার কথা বলার ইচ্ছে নেই। ব্যক্তিমানুষকে রক্ষা করায় আমি আগ্রহী নই, এবং মানবজাতিকে রক্ষা করায় আমি আগ্রহী নই।

তুমি রাষ্ট্রের কর আদায়ের বিষয়টা বলছো, আর বলছো যে জনগণ আর তাদের সন্তানসন্ততির নিরাপত্তায় রাষ্ট্রের সবকিছুই করা উচিৎ।

কেন এই গ্রহে একটি মানুষও অনাহারে থাকবে আমি তার কোনো কারণ দেখি না। এইসব সমস্যা সমাধানে তুমি কী করছো? ওই একই প্রশ্ন তুমি আমাকেও করতে পারো। কিন্তু আমি এই বিশ্ব চালু রাখার কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করি নাই। তারাই এই দেশ ওই দেশ শাসন করার কাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। এই যে আজ ভারতে শতকরা চল্লিশভাগ মানুষকে অনাহারে রাখা হয়, এর পেছনে তোমার যুক্তিটা কী? এটা কোনো আধ্যাত্মিক ব্যাপার নয়, মানবিক ব্যাপারও নয়। তোমার পাশের মানুষটা অনাহারে থাকবে এটা অমানবিক। ধর্ম এই আশ্চর্য জিনিসটা উদ্ভাবন করেছে─দয়া। শুধু তাই নয়, তুমি সেখানেই থামছো না, কাউকে কাউকে তার দয়াদাক্ষিণ্যের কাজের জন্যে একটা নোবেল পুরস্কারও দিচ্ছো। দয়া─এটা হলো সবচেয়ে কলুষিত আর নোংরা জিনিস─ধর্মীয় একজন মানুষ আজ যা দিতে পারে।

প্রত্যেকেরই অন্ন সংস্থানের অধিকার রয়েছে। প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে অঢেল। কিন্তু এই পৃথিবীর অসাম্যের জন্যে আমরা প্রত্যেকে এককভাবে দায়ী। আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না, ‘‘এক্ষেত্রে তুমি কী করছো?’’ এই লোকগুলির বিরুদ্ধে জিহাদ চালানোর জন্যে আমি এইখানে নেই। এইসব সমস্যা সমাধানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছো তুমি। তুমি যদি সেটার সমাধান না করো, গোলমালটা ওইসব নেতাদের নয় বরং যারা তাদেরকে ওই ক্ষমতার আসনে বসিয়েছে, তাদের। তারা যা করবে বলে আশা করা হয়েছিল সেটা না করলে দুর্বৃত্তগুলোকে পাল্টে দাও। কীভাবে এইসব সরকার চালাতে হবে সেটা আমার কাউকে বলার অধিকার নেই। আমি মোটেও এইসব সরকার চালাচ্ছি না। তোমাদের এইভাবে সরকার চালানো উচিৎ─তাদেরকে এইকথা বলার আমার কী অধিকার আছে? শক্তিসামর্থ অনুযায়ী অংশ নেওয়াটা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। কিন্তু পৃথিবীটা চিরকাল যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটিই রয়ে গেছে। কেউ কোনো পরিবর্তন চায় না।

কিন্তু তুমি বলছো জনগণের জন্যে রাষ্ট্রের কতগুলো বিশেষ জিনিস করতেই হবে।

প্রথমত, প্রত্যেকের জন্যে রাষ্ট্রের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ, যাদের এত সমৃদ্ধি, মোট জাতীয় আয় এত ওপরে, সেখানে এই সর্বোচ্চ সংখ্যক আত্মহত্যা, সর্বোচ্চ সংখ্যক এইডস কেস, এর কারণটা কী?

সেটা একটা ভিন্ন সমস্যা। ‘এইডস’ বলতে তুমি কী বুঝাচ্ছো? এইডস ব্যাধি তো?

হ্যাঁ, এইডস ব্যাধি।

ওইটেই আমাদের সেই ভুলটা। কোনো একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গোলমাল হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষে সমকামীদের ওপর দোষ চাপানোটা সহজ, কিন্তু এর উৎস আসলে অন্য কোথাও। তুমি কি ওইটা পড়েছো─বোধহয় সংবাদপত্রেই ছিল যে, ভারতে নিজামের স্ত্রী মারা গেছেন এইডসে: হ্যাঁ, সেখানকার সোসাইটি ম্যাগাজিনে সেটা ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করলেন যে তাঁর স্ত্রী এইডসেই মারা গেছেন। জানি না কে এর জন্যে দায়ী। কেউ কেউ বলছেন রক্ত পরিসঞ্চালনই এর জন্যে দায়ী। কি জানি! লেখাটা আমি পড়ি নাই। মতামত ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে আমি খুবই চপল। সেটা কোনো ব্যাপার নয়। এই দুনিয়ার যে-কারোর মতোই আমিও অনেক কিছু জানি। দুনিয়াটা আমি দেখেছি।

অনেক ধন্যবাদ।

ব্যাধি থেকে বিভূতি পর্যন্ত, সবকিছু নিয়ে আমরা মতামত ব্যক্ত করেছি। সেটাই আমি পারি। দুনিয়ার আমি দেখেছি অনেক।

 

 

………………………………
১.‘‘তোমার প্রতিবেশীকেও নিজের মতো ভালবাসো’’: “Love thy neighbor as thyself;” (ম্যাথিউ ২২:৩৭-৩৯)।
২. স্ট্যাটাস কৌ: status quo; বর্তমান সামাজিক অবস্থা; স্থিতাবস্থা।
৩. মহাবিশ্বতত্ত্ব: (জ্যোতির্বিজ্ঞান) cosmology; সমগ্র মহাবিশ্ব সম্বন্ধীয় তত্ত্ব-গবেষণা।
তত্ত্ববিদ্যা: (মনোবিজ্ঞান) ontology; অস্তিত্বের স্বরূপ দর্শনের যে শাখার বিষয়বস্তু।
পরমকারণবাদ: (ধর্মতত্ত্ব) teleology; বস্তুবিশ্বের নকশা এবং উদ্দেশ্যবিষয়ক মতবাদ। পৃথিবীর সবকিছু একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে, বিশেষ পরিকল্পনামাফিক সৃষ্টি হয়েছে এমন বিশ্বাস বা মতবাদ।
…………
[Conversation with U.G. Krishnamurti: 5; এটি Thought Is Your Enemy গ্রন্থের Love is Only a Trump Card পর্বটির বাংলা অনুবাদ। অনুবাদের স্বত্ব সংরক্ষিত।]

Facebook Comments

2 Comments

  1. Pingback: ইউ.জী. কৃষ্ণমূর্তি (আত্মজীবনীপর্ব) » সাহিত্য ক্যাফে

  2. Pingback: ইউ.জী. কৃষ্ণমূর্তির সাথে কথোপকথন: ৭ » সাহিত্য ক্যাফে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top