ফারহানা রহমানের একগুচ্ছ কবিতা
জাদুবাস্তবতা ‘চাঁদের উপর জোনাকির জ্বালে জ্বালে সেদ্ধ হচ্ছে আউশের রাঙা চাল’ অস্বচ্ছ পুরনো ক্যানভাসে আঁকা নানা রঙের মায়াবী স্নানে সাদা মৃত্তিকার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা পুণ্যবতী মায়াগাছগুলো কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নায় গান গায়… …
জাদুবাস্তবতা ‘চাঁদের উপর জোনাকির জ্বালে জ্বালে সেদ্ধ হচ্ছে আউশের রাঙা চাল’ অস্বচ্ছ পুরনো ক্যানভাসে আঁকা নানা রঙের মায়াবী স্নানে সাদা মৃত্তিকার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা পুণ্যবতী মায়াগাছগুলো কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নায় গান গায়… …
রোজ ঠান্ডা মাথায় শরীর হেলিয়ে টেবিলে তুলে রাখি পা, অবহেলায় হাতের আঙুলে ধ’রে থাকি সিগারেট। অথচ কেউ জানে না, মাথার ভেতর ধিকিধিকি আগুন জ্বলে – সে আগুন পোড়াতে পারে না …
একটা পাপ আছে জমা (১) পাংশু নদীর লহু জলে— ডলন, ডলান, গহীন তলে— লুকিয়ে রাখা সিন্দুকেতে— আমার একটা পাপ আছে জমা। রঙিন মেঘে ডানার ছায়ায় পরীর আনাগোনা; গাছের কাছে, দীঘির …
চট জলদি সেরে নিই অবসর জীবন শব্দবন্দি বাড়ি প্রতিদিন মন থেকে মন ছুঁয়ে দেখি ঊষরভূমিতে ঈশ্বর ঘুমোয় ।। রামচন্দ্ররা এখনো বনবাসে যায় ত্র্যহকাল পোড়ে সংস্কারে বদ্ধভূমিতে হনন যজ্ঞ নদী ও …
মিউট একটা ঝাপসা রাতের ভেতর জুড়ে বসে আছে আরেকটা কুয়াশা মোড়া রাত। মর্মরের ঘুঙুর বাজার অপেক্ষায় খোলা ছিল একটি জানালা। তখন। যখন আমরা শিখে নিয়েছিলাম অন্ধকারের স্যাঁতসেঁতে আলোয়ানের ভেতর থেকে …
নিজেতে আবির্ভাবের সময় আমি আমার দুচোখকে প্রচণ্ড রকম বন্ধ রাখি। নিজের চোখে সেঁটে দেই ধারাপাত। আমি আমার অহংকারকে স্থাপন করছি নিয়ত লজ্জায়। আর আমি আমার প্রার্থণাগুলো সযত্নে রেখেছি, একান্ত শয্যায়। …
শিশিরের ষোড়শী সময় সুরম্য স্থাপত্যরাজি ধ্বসে যাবে — ধ্বসে যাবে একদিন আমি তার শব্দ শুনি ….. মগজে চুন, সুরকি, কড়িকাঠের মাতম নিয়ে যখনই তুলোটে তোমার নক্সা আঁকি, যুগল কুচের মতো …
উৎসর্গ: ঋতুপর্ণ ঘোষ মহিমার্ণব এ কেমন পাখি তুমি ফেলে যাও রোজ রোজ দুটো মাত্র পালকের ভার ভেবে নিচ্ছি এ তোমার নাচের মুহূর্ত ভেবে নিচ্ছি মিলনের আগে পাওয়া আনন্দ সামান্য জলাধার …
হিন্দি থেকে ভাষান্তর: অজিত দাশ [রিতা পেত্রৌ আধুনিক আলবেনিয়ান কবিতায় এক সুপরিচিত নাম। তাঁর জন্ম আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় ১৩ মার্চ ১৯৬২ সালে। আশি দশকে তিনি তিরানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলবেনিয় ভাষা …
১ আমার জন্ম গ্রামে, প্রাকৃতিক প্রসবের পর নান্দনিক বৃক্ষরাজি গ্রামশোভা প্রভূত বাড়াল, অনেক দূরের নদী পাড় ভেঙ্গে নিকটস্থ হল আলো-ছায়ার তীরে রাত্রিদিন জোয়ারের স্বর । পৃথিবীর যাত্রা প্রাগৈতিহাসিক গ্রামের সজল …
যারা ছিলো সব বেশরম চোখ যখন লিখলাম মেয়েদের দেখতে আমার ভালো লাগে, ভাবীরা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করলেন আর চোখ খুলে নিয়ে পেরেক মেরে লাগালেন একজন আরেকজনের কপালে
সূর্য উঠবেই আলোর শহর তেমনি সম্মোহক, শুধু উধাও জীবনের তাপ-উত্তাপ, অন্ধকার কোণাগুলো ঝুম নির্জন, আলো অন্ধকারের পরিক্রমায় রাত্রির বয়স বাড়ে, আমাদেরও, এবং ক্রমশ: আমরা দূরের হয়ে যাই, দূর হতে চায় …
মোহকাল এ পথেই বসে থাকি অনন্ত ঋতুকাল মৃত পাথরের মতো তরঙ্গহীন অভিশপ্ত পাখির নিদ্রাহীন আয়তচোখে যেভাবে তীরকাঁটা বিঁধে আছে শূন্য করোটিতে ঝুলে আছে স্তব্ধতার ইতিহাস এমনই এক চিরচেনা দূরত্বের মাঝে …
কথোপকথন পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম। -হুমায়ুন আজাদ গোমর ফাঁস হলে গোবর মারে মুখে, অমন তরুণীর সঙগ আর নয়। আমি তো নই স্বামী, সন্ততির দিকে তাকিয়ে …
২৪ ঘণ্টার পালা কাঠপিঁপড়েটা শূন্যদৃষ্টিতে চুপচাপ পাহারা দিচ্ছিল। আর অন্ধকার পত্রালির ফোঁটা ফোঁটা শব্দ এবং গ্রীষ্মের গিরিখাতের গভীরের রাত্রির মর্মর ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। ফারগাছটা ঘড়ির খাঁজকাটা একটা …
অশ্বশক্তি ভবঘুরে স্মৃতিগুলো ফেলে আসি দূরে রঙময় জীবন সারি সারি মেঘ নিঝুম রাত্রি বুজে আসে দুচোখের পাতায় শব্দরা এখন জবানবন্দি পোয়াতি স্বপ্নগুলো সেই থেকে বরাবর রোদ মাখে গায়ে অসাড় বিকেল …
সকালবেলার পাখি গাড়িটাকে জাগিয়ে তুললাম যার উইন্ডশিল্ডটা ঢেকে আছে পরাগরেণুতে। সানগ্লাসটা চোখে দিলাম। পাখির কূজন অন্ধকার হয়ে এলো। ঠিক তখনই আরেকটা লোক রেলস্টেশনে একটা বিশাল মালগাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে একটা খবরের …
ফিরিয়ে নাও, গোলাপকাঁটা সব উপেক্ষা ফিরিয়ে নাও ফিরিয়ে নাও পায়ে হাঁটা সব পথ, অনিদ্রারাত ফিরিয়ে নাও মুখের দিকে চেয়ে থাকা যাবতীয় বিস্ময়, অপেক্ষার সব নদী ও গাছ সেই কবে …
অখণ্ড প্রেম প্রহরে প্রহরে ঝরা পাতার নৃত্য গাছেরা সেজেছে রঙিন পার্লারে লাল, কমলা, হলুদ, মেরুন ঢঙে। নির্জন বনতলে আমরা দুজন আর পাখিদের কুহু কুহু কুঞ্জন, হেমন্তের প্রণয়ে বিলাসী বসন্ত সুরার …
রাত্রিগীতি রাত্তিরে একটা গ্রামের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, আর বাড়িগুলো সব আমার হেডলাইটের তীব্র আলোয় উঠে আসছিল─ তারা এখন জাগ্রত, তারা এখন পান করতে চায়। ঘরবাড়ি, গোলাঘর, …
যাবার সময় সময় হয়ে যায় আস্তে আস্তে কেমন করে যে সময় হয়ে যায় কেউ বোঝে না বিদায় নিতে গেলেই ফ্যাসাদ বাধে রাতে রাতে অনেক আহার হয়ে গেছে একেবারে পানাহার স্বভাব …
হিয়ার পরশ লাগি তোমার যৌনতা চাই না মরদ— আশ্বিনের এই তুমুল তপ্ত দুপুরে এমন কথা কী করে বলি! চাই— তোমার ঘোরলাগা চোখ উঠানের ওপার দেখে আমাকে দেখুক; ঘুঘুর ডাক পড়ে …
সমাপিকা সঙ্গীত ছোট্ট একটা নোঙরের মতো আমি ভূপৃষ্ঠ দিয়ে হিঁচড়ে যাচ্ছি। আমার যা প্রয়োজন নেই সে সবকিছুই আমার সঙ্গে আটকে যাচ্ছে। অবসন্ন ক্ষোভ, প্রজ্বলিত ইস্তফা। জল্লাদেরা পাথর নিয়ে …
পুনর্জন্ম নিয়েছি নিজেরই বাঁকাহাড়ে আমাকে নাশ করতে দিও না, গির্জা এখনও কেঁপে ওঠে প্রশ্বাস, ঝুঁকি রয়ে গেছে পরাধীন দৌড়ের প্রত্যাদিষ্ট হলে একটুকরো পাথর কি শোনে নি কণ্ঠস্বর? অন্য বাসনায়, অথবা …
ভেঙে গেলে সান্নিধ্যের সাঁকো ডানা ঝাঁপটায় অস্থির জল ঘুম আর জাগরণের মধ্যে— স্নান সারে নির্জনতা নাকফুলে নেমে এলে সন্ধ্যাতারা জাহাজ ডাকে দূরের বন্দরে প্রতি সন্ধ্যায় একটি খরগোশ ঢুকে পড়ে পাতাল …
অপরিচিত আবার দুইজন মুখোমুখি; তাদের মাঝখানে অপরিচয়ের প্রগাঢ় ছায়া ঝালরের মতো দুলে থাকে। আকস্মিক স্মৃতির ঝাপটায় তৈরি দৃশ্যপট সে কেবল একটা দেজাভ্যু। শুধু একটা কথাই সত্যি বলে মনে হয়; স্পর্শের …
টমাস ট্রান্সট্রোমারের কবিতা অনেকেই অনুবাদ করেছেন, সে-সবের অনেকগুলো তেমন নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ কবিতা অনুবাদ করতে গেলে তাতে এমনভাবে আকৃষ্ট হতে হয় তা যেন সেই কবিতার সাথে বসবাস করার শামিল। তারপর …
আমি এ ভিলায় থাকব না, ভূতে কিলাচ্ছে নব নব সৌকর্য দেখায়ে— পুনরায় টানছে প্রাচীনে। দরোজা নি-খিল, পর্দা গেছে উড়ে গতকাল, এসেছে গর্ভিণী বেরাল সে চায় না সন্তান আর, মনুষ্য-স্বভাব বর্তনের- …
১ ডলুং নদীর কথা ভেবে গেছি বরফ জমলে কেমন দেখাতো? আমাদের ফেব্রুয়ারি সামান্য একধরণের ঔজ্জ্বল্য আচমকা বিদ্যুৎ শুধু জঙ্গল অথচ তার অদূরেই ব্রিজ অপরিহার্য রাস্তা যেমন বজ্র ও দিগন্ত, যেমন …
ঢেউ ডুবে যায় ঢেউ ডুবে যায় চোখের ভেতর বুকের ভেতর তুফান; সবুজতর বাতাসে কাঁপে নতুন রোয়া ধান। জলে ভাসে চোখের তারা নয়নে অবিশ্বাস হারিয়ে যায় রোদের পাহাড় সমূলে সর্বনাশ। …